নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভরসার গান

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা

মানব ও মানবতা

রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।

মানব ও মানবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনীতির নামে বর্বরতা এবং ভয়াবহতা

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬

গত কয়েকদিন ধরে টানা অবরোধ এবং হরতালসহ নানা রাজনৈতিক কর্মসূচীতে উত্তপ্ত ও আক্রান্ত গোটা বাংলাদেশ। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজনৈতিক দল ও কর্মীদের প্রতিবাদের ভাষাও যেন বদলে যাচ্ছে। মিছিল কিংবা মানববন্ধন অথবা অনশন বদলে গিয়ে এখন তা পরিণত হয়েছে অমানবিক হিংস্রতা ও বর্বরতায়। ক্ষমতার স্বার্থান্ধ রাজনীতি এভাবেই প্রতিনিয়ত আমাদের মানবিক অধঃপতনের করুণ পরিণতি ডেকে আনছে।

আমাদের চারপাশে অস্থিরতা ও আতঙ্কের এ অসহনীয় পরিবেশে আসুন, বিদায় হজে দেয়া মহানবীর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ আরেকবার পড়ে দেখি। এর প্রথম দিকেই মানবতার মুক্তিদূত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফাতের মাঠে সমবেত লাখ লাখ সাহাবীগণকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, ‘তোমরা মনে রেখো, তোমাদের পরস্পরের ধন সম্পদ এবং তোমাদের রক্ত একে অপরের কাছে তেমনই সম্মানিত যেমন আজকের এ মাসের এ মহান দিনটি এবং এ পবিত্র নগরী তোমাদের কাছে সম্মানিত। এ আদেশ এবং সিদ্ধান্ত তোমাদের মহান রবের সঙ্গে সাক্ষাত হওয়া পর্যন্ত কার্যকর।’

আমরা এবং আমাদের রাজনীতিকরা নির্বিশেষ সবাই হজের মাসকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, আরাফাতের পবিত্র দিন এবং মক্কা নগরীকে কতই সম্মানিত ও পবিত্র ভেবে থাকি, অথচ আমাদের প্রিয়তম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের পরস্পরে একে অন্যের যে জীবন ও সম্পদকে এমন অমূল্য সম্মানিত ও স্পর্শকাতর বলে গেলেন, সে বিষয়ে আমরা একেবারেই উদাসীন। মুসলমান হিসেবে এ উদাসীনতা আমাদের কাম্য নয়।

ভালো কিংবা মন্দ যে কোনো কাজে সীমালঙ্ঘন ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। পৃথিবীর স্থিতিশীলতা এবং মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা রক্ষায় এ সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। মানবসমাজে বিদ্যমান আল্লাহ পাকের প্রদত্ত নেয়ামতসমূহের মধ্যে ‘শান্তি ও নিরাপত্তা’ অন্যতম নেয়ামত। আর সেজন্যই তৎকালে কুরাইশ বংশকে আল্লাহপাক এ নেয়ামতের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, ‘তারা যেন এ কাবা ঘরের মালিকের ইবাদত করে। যে মালিক তাদেরকে ক্ষুধা থেকে রেহাই দিয়ে খাদ্য দিয়েছেন এবং ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন।’ (সূরা কুরাইশ)

অন্যায় সহ্য করে মুখ বুঁজে বসে থাকা ইসলামের শিক্ষা নয়, বরং মানুষের অধিকার এবং দাবী আদায়ে ইসলামের ভূমিকা এবং নির্দেশনা সর্বোৎকৃষ্ট। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অন্যায়ভাবে যে কারোর সম্পদ কিংবা সম্মানে ক্ষতি করা সম্পর্কেও কঠিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে। শাসক এবং শোষিত, আল্লাহপাকের কাছে সবাইকে প্রতিটি ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতেই হবে। জনগণের অধিকার সম্পর্কে প্রতিজন দায়িত্বশীলকে প্রশ্ন করা হবে। যে কোন স্বার্থে জনগণের কিংবা ব্যক্তিগত সম্পদ বিনষ্ট করা নিয়ে জবাব দিতে হবে আমাদেরকেও। ইসলামে যেখানে বিনাপ্রয়োজনে একটি গাছ কাটার অনুমতি নেই, সেখানে এভাবে নির্বিচারে দেশ ও জনগণের ক্ষতিসাধন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক যে কোন দাবী আদায়ের জন্য নিরীহ মানুষকে কষ্ট দেয়া আমাদের অজান্তে ধ্বংস করে দিচ্ছে পরকালের সঞ্চিত সবপূণ্যকে। আজকের সময়ে যতই ক্ষমতাশালী কিংবা প্রভাববিস্তারকারী হোন, সেদিন এ প্রতিটি ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির দায় শোধ না করা পর্যন্ত মুক্তি মিলবে না কারো।

পবিত্র কাবা ঘরের সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য মহান আল্লাহ কাবার আঙিনায় সব ধরণের রক্তপ্রবাহ এবং যুদ্ধ-বিগ্রহকে হারাম ঘোষণা করেছেন। ভূমন্ডলের সবচেয়ে দামী এ কাবার চেয়েও মহান আল্লাহ পাকের কাছে একজন মুসলমানের দাম অনেক বেশি। অকারণে কোনো মুসলমানকে অপদস্থ কিংবা অপমান করাও যেখানে নিন্দনীয় এবং গোনাহ, সেখানে নিরাপরাধ মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করার শাস্তি কত ভয়াবহ হতে পারে, ভাবা যায়!

নাসাঈ শরীফে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শপথ ওই মহান মালিকের যার হাতে আমার প্রাণ, একজন মুসলমানকে হত্যা করা আল্লাহ পাকের কাছে পুরো দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়ার চেয়েও বেশি ভয়াবহ ও জঘন্য অপরাধ।’

আরেক হাদীসে তিনি বলেছেন, কিয়ামতের মাঠে অন্যায় ভাবে নিহত ব্যক্তি তার বিচ্ছিন্ন মাথা হাতে নিয়ে রক্তমাখা অবস্থায় আল্লাহ পাকের কাছে নালিশ করবে, হে আল্লাহ, তাকে জিজ্ঞেস করো, কেন সে আমাকে মেরে ফেলেছিল? আল্লাহ পাক তখন তাকে আরশের কাছে টেনে নেবেন। পবিত্র কুরআনের কয়েক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ পাক নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না।’

সা¤প্রতিক সময়ে বিশেষ করে যানবাহনে পেট্রোলবোমা ছুঁড়ে যাত্রীদেরকে অগ্নিদগ্ধ ও আহত করার যে ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে, এর ভয়াবহতায় আমাদেরকে নির্বাক হয়ে যেতে হয়। আগুনে ঝলসে দেয়া কিংবা পুড়িয়ে মারা একমাত্র আল্লাহ পাকের শাস্তি। কোনো কারণেই তা আমাদের জন্য বৈধ নয়। বুুখারী শরীফের হাদীসে স্পষ্টভাবে এ ব্যাপারে প্রিয়নবী সা. বলেছেন, তোমরা আল্লাহর শাস্তি দিয়ে কাউকে কষ্ট দিও না।

নিছক পার্থিব ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা টিকে থাকার জন্য আমরা যা করছি, ধর্মের জন্য বিধর্মীদের সঙ্গে ধর্মযুদ্ধেও এসব কর্মকাণ্ড আল্লাহর নবী নিষেধ করেছেন। ধর্মবিরোধী শত্র“র সঙ্গে যুদ্ধে মুসলমানদের রীতিনীতি সম্পর্কে হাদীসের গ্রন্থসমূহে যা কিছু উল্লেখিত হয়েছে, সেসবের কোথাও এমন আগুনবোমা তো দূরের কথা, বিপক্ষবাহিনীর কোনো নিরস্ত্র শত্র“র গায়ে হাত তোলারও বৈধতা দেয়া হয়নি। চলন্ত গাড়িতে আগুন তো দূরের কথা, সামান্য চারাগাছও উপড়ে ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে কঠোরভাবে। কিন্তু হায়, আমরা কী করছি, কাদের সঙ্গে এসব করছি- একবারও কি ভেবে দেখেছি!

আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং তাদের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা একটু কি সময় করে ভেবে দেখবেন, রাজনীতির নামে তারা যা করছেন, তাতে ক্ষমতার পথ প্রশস্ত কিংবা সংকীর্ণ যা-ই হচ্ছে, পরকালের খাতায় তারা দিনদিন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছেন। রাজপথে ঝরে পড়া প্রতিটি রক্তফোঁটা এবং নিহত মানুষগুলোর পরিবারের বুকভাঙা কান্না সেদিন তাদেরকে কোথায় ঠেলে নিয়ে যাবে- তারা কি তা জানেন!



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪

শহিদশানু বলেছেন: ভাই এই কুলাংগার রাজনীতিবিদেরা তাদের স্বার্থ নিয়ে এতই ব্যস্তা যে, সেই বিদায় হজ্বের স্মরণী বাণীর কথা তাদের এ মুহুর্তে মনে নেই ।আসুন আমরা যারা ব্লগার আছি প্রত্যেকেই প্রত্যেকের অবস্থানে থেকে কি-বোর্ড যুদ্ধের মাধ্যমে গনসচেতনা তৈরী করি যে,এখনও সময় আছে তোমরা সংশোধন হও। না হলে আমরা কি-বোর্ড যোদ্ধরা তোমাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। তখন তোমরা পালানোর আর পথ খুঁজে পাবেনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.