নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভরসার গান

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা

মানব ও মানবতা

রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।

মানব ও মানবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই এবং বইপ্রেমিকদের গল্প

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:৩২

মূল লেখাটি এখানে



সময় বদলে যাচ্ছে। প্রতিদিন নয়, বরং প্রতিক্ষণে। কিন্তু কিছু বিষয় রয়ে যায় চিরন্তন। সময়ের পরিবর্তন কিংবা মানুষের রুচির বিবর্তন সেই চিরন্তন বিষয়গুলোতে থমকে যায়। যুগ যুগ ধরে সেসব একই নিয়ম ও আকারে থেকে যায়। এ চিরন্তন বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে সত্য ও সুন্দর বিষয়টি হলো- যদি কিছু হতে চাও তবে পড়ে নাও। যাদু কিংবা অলৌকিক বলে অনেক কিছুই হয়তো সম্ভব একালে, কিন্তু কেবল সম্ভব নয় সত্যিকারের মানুষ হওয়া। যে বিবেক এবং বোধশক্তির গুণে আমরা মানুষ, সেটার প্রথম খোরাকই হচ্ছে জ্ঞান। আর জ্ঞানের প্রথম উপকরণ হলো বই। অতীত কিংবা বর্তমান অথবা ভবিষ্যত, বই চিরকাল আমাদের সবচেয়ে আপন।

প্রতিদিন পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্ত থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন সময়ের জ্ঞানী মানুষেরা। যতই দিন যাচ্ছে, ততই কমে আসছে গুণী মানুষের সংখ্যা। যারা চলে যাচ্ছেন, তারা হারিয়ে যাচ্ছেন চিরতরে। আমরা যারা তাদেরকে পাইনি, সময় কিংবা স্থানগত দূরত্বের কারণে তাদের আলোয় আলোকিত হতে পারিনি- আমাদের জন্য সেইসব সোনালি মানুষদের জ্ঞান ও গুণ সম্পর্কে জানা এবং সেগুলো থেকে জীবন গড়ার রসদ নেওয়ার একমাত্র ও বিশ্বস্ত মাধ্যম হলো বই।

বইয়ের সবচেয়ে উত্তম ব্যবহার হলো পড়া। বই কেনা কিংবা সংগ্রহের চেয়েও সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে- বই থেকে নিজের আত্মার প্রয়োজনীয় খোরাক সংগ্রহ করা। বই আমাদের সঙ্গে কথা বলে, আমাদেরকে ডেকে চলে- সেই কথা এবং সেই ডাক শোনার জন্য চাই একনিষ্ঠ ও সমর্পিত এবং মনোযোগী হৃদয়। চারপাশের অস্থির পরিবেশে বই-ই আমাদের মনে শান্তি ও স্বস্তি এবং স্থিরতার সুবাতাস ছড়িয়ে দিতে পারে- যদি সেটি হয় আদর্শ লেখকের আদর্শ বই।

ইসলামী ইতিহাসের যুগ যুগান্তরে এজন্যই হয়তো যতো মনীষী এসেছেন পৃথিবীতে, তারা সবাই স্থান, কাল এবং বংশ পরিচয় ও কর্মগুণে ভিন্ন ভিন্ন হলেও একটি বিষয়ে তারা সবাই এক। সেটি হলোÑ বইয়ের প্রতি তারা সবাই ছিলেন মনোযোগী। অভাব, দারিদ্য কিংবা সংগ্রহের সব অসাধ্য তারা সাধন করেছেন। সব ব্যস্ততা পায়ে ঠেলে বইয়ের ভেতর ডুবে থেকেছেন অবিরাম। তাদের বইপ্রেম এবং বিস্ময় নিমগ্নতা নিয়ে ঘটনা ও দৃশ্যের শেষ নেই। এ লেখাটি লেখার আগমুহূর্তে যে কয়েকটি দৃশ্য বিভিন্ন বইয়ের পাতায় চোখে ভাসছেÑ সেখান থেকে কয়েকটি তুলে ধরে লেখাটির সমাপ্তি টানছি।

ইবনে শিহাব যুহরী একজন প্রখ্যাত আলেম। বইপত্র এবং কিতাবাদির প্রতি তার আসক্তি ছিল প্রবাদবাক্যের মতো। সারাক্ষণ বই পড়ায় ডুবে থাকতেন এই জ্ঞানী মানুষ। মাঝেমধ্যেই ভুলে যেতেন সংসারদুনিয়ার কথা। এসব দেখে তার স্ত্রী প্রায়ই বলতেন, আল্লাহর কসম, এই কিতাবগুলো আমার কাছে তিন সতীনের চেয়েও অসহনীয় যন্ত্রণা।

ইবনুল জাওযী তার নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি এ পর্যন্ত প্রায় বিশহাজার কিতাব মুতালাআ করে শেষ করেছি, কিন্তু আমি এখনও নতুন নতুন কিতাবের সন্ধানে অস্থির হয়ে আছি। নিজেকে আমি এখনও ছাত্র মনে করি। আমি যখন এমন কোনো নতুন কিতাব দেখি, যা আমি আগে দেখিনি, মনে হয় যেন আমি অমূল্য খনি পেয়ে গেছি।

ইমাম ইবনে তাইমিয়ার নাম জানে না, এমন জ্ঞানী মানুষ হয়তো আজকের পৃথিবীতে হাতে গোনা। তার কথা লিখতে গেলে হাজার হাজার পৃষ্ঠা লেগে যাবে। তারচে বরং তার বাবার কথা বলি। তার বাবা যখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে শৌচাগারে যেতেন, তখন তার ছেলে কিংবা নাতিদের কাউকে ডেকে বলতেন, তুমি অমুক কিতাবটির অমুক পাতা থেকে জোর আওয়াজে পড়ো, আমি বাথরুমে বসে ওই অংশটুকু শুনে নিচ্ছি।

কেউ একজন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারককে এসে বললো, আপনি এতো দীর্ঘ সময় বাড়িতে একা একা বসে থেকে কী করেন? তারচেয়ে বরং আমাদের সঙ্গে বসুন, এখানে সময় দিন। ইবনে মুবারক বললেন, কোথায় একা! আমি তো রাসুল সা. এবং তাঁর সম্মানিত সাহাবীগণের সঙ্গে সময় কাটাই। আর তোমরা তো এখানে বসে বসে মানুষের গীবত বলে বলে সময় পার করো।’ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, আমার ঘরে যে হাদীসের কিতাবগুলো আছে, আমি সেসব নিয়ে অধ্যয়নে ডুবে থাকি। যেহেতু এগুলো হাদীসের অধ্যয়ন, আমি তখন নিজেকে নবী সা. এবং সাহাবীদের সান্নিধ্যে মনে করি।

হাসান আললুলুই নিজের প্রসঙ্গে বলেছিলেন, গত চল্লিশ বছর ধরে আমি যখনই ঘুমিয়েছি কিংবা ঘুম থেকে জেগে উঠেছি, আমার বুকে তখনও কিতাব রাখা ছিল। আমি পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে যেতাম, ঘুম ভেঙে গেলে আবারও পড়া শুরু করতাম। কিতাব হাতে নেই অথচ আমি ঘুমিয়ে পড়েছি- বিগত চল্লিশ বছরে এমন কখনো ঘটেনি আমার বেলায়।

প্রসিদ্ধ আলেম ফিরোজাবাদী তার জীবনে বইপত্র কেনার জন্য যে অর্থ ব্যয় করেছিলেন, তার পরিমাণ ছিল পঞ্চাশ হাজার মিসকাল স্বর্ণমুদ্রা। তিনি যেখানেই যেতেন, সঙ্গে কিতাবের সুবিশাল স্তুপ নিয়ে যেতেন।

বইয়ের প্রতি এমন গভীর আগ্রহ এবং ইলম অর্জনে এত অসীম উৎসাহ, ধৈর্য এবং সাহসিকতার বলেই আজও তারা অমর হয়ে আছেন। কতো অজস্র কিতাবের পাতায় তাদের নাম উচ্চারিত হয় বিনম্র সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। তাদের রেখে যাওয়া কীর্তি ও কর্মের আলোয় যুগ যুগ ধরে উদ্ভাসিত হয়ে আছে আমাদের জ্ঞান ও ইলমী জগতের সুবিশাল সাম্রাজ্য। এ সামান্য কয়েকটি নমুনাদৃশ্য পড়েও কি আমাদের হৃদয়ে বই সংগ্রহ, পড়া এবং লেখালেখির প্রতি কোনো আগ্রহ এভং ভালোবাসা জাগবে না! সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন!



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.