![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।
সবাই জানতে পারলো, মরহুম বাদশাহ হারুনুর রশিদ তার পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত হিসেবে আমিনকে নির্বাচিত করে গেছেন। সেনাবাহিনীর সবাই নতুন খলিফা হিসেবে আমিন-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলো। আমিন-এর হাতে খেলাফতের আংটি এবং জোব্বা পরিয়ে দিলেন তার ভাই মুতাসিম। মা জোবায়দা তার হাতে তুলে দিলেন রাজ্যের ধনভাণ্ডারের চাবি এবং সমুদয় সম্পদের দলীলপত্রগুলো।
ওসিয়তপত্রে বাদশাহ হারুনুর রশিদ লিখেছেন, আমার পর খেলাফতের দায়িত্ব অর্পিত হবে আমার পুত্র আমিন-এর হাতে। আমিন-এর ঔরসে কোনো পুত্র সন্তান জন্ম না হলে তার মৃত্যুর পর এ দায়িত্ব পাবে মামুন এবং তারপর পাবে মুতাসিম। ওসিয়তপত্রে সবাইকে আল্লাহর ভয়, প্রজাদের সঙ্গে ন্যায় ইনসাফ এবং জনসাধারণের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছেন তাদের মরহুম পিতা, মুসলিম জাহানের খলিফা হারুনুর রশিদ।
হারুনুর রশিদ এর সব পুত্রের মধ্যে আমিনকে বেছে নেয়ার রহস্য কী?
মামুন এবং মুতাসিম দুজনই আমিনের চেয়ে বয়সে বড়। এমন বড় ছেলেদেরকে বাদ দিয়ে কেন কনিষ্ঠপুত্রের হাতে সুবিশাল সাম্রাজ্যের দায়িত্ব!
বাদশাহ হারুনুর রশিদ অনারব গোত্রগুলো এবং তুর্কিদের সম্পর্কে কিছুটা সংশয়ে ছিলেন। তিনি জানতেন, এদের মধ্যে স্বজনপ্রীতি বেশ শক্তিশালী। আরবদের উপর আধিপত্য বিস্তার এবং মুসলিম জাহানের শাসনভার নিজেদের হাতে পেতে এরা মরিয়া এবং সুযোগের অপেক্ষায়। মামুনের মা একজন অনারব মহিলা। মুতাসিমের মা একজন তুর্কি মহিলা। এদের যে কাউকে খলিফা বানালে অনারব কিংতা তুর্কিরা তাদেরকে নিজেদের হাত করে নেবে। কিন্তু শুধুমাত্র আমিন এর মা জোবায়দা আরব নারী এবং তার ধমনীতে আরবীয় ঐতিহ্য প্রবাহিত। সাধারণ কোনো আরবও নয়, বরং বেশ সম্ভ্রান্ত এবং মর্যাদাবান পরিবারের জোবায়দা তার পুত্র আমিনকে সেভাবেই গড়ে তুলেছেন, যেভাবে একজন খাঁটি আরব তরুণ বেড়ে ওঠে। কাজেই নিজের ওই দুজন অনারব স্ত্রীর চেয়ে আরব স্ত্রীকে তিনি খুব বেশি আপন ও বিশ্বস্ত ভাবতেন। সেসব বিবেচনা করেই আমিনকে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে বেছে নিয়েছেন হারুনুর রশিদ।
এজন্যই হারুনুর রশিদ লিখে গেছেন, আমিন-এর ঔরসে কোনে পুত্র জন্ম না হলে মামুন এবং এরপর মুতাসিম এ দায়িত্ব পাবে। আর যদি আমিন কোনো পুত্রসন্তানের বাবা হতে পারেন, তবে মামুন এবং মুতাসিম আর খেলাফতের যোগ্যতায় থাকবেন না।
আমিনের জন্মের পর বাদশাহ হারুনুর রশিদ তার শিক্ষাদীক্ষার জন্য সেকালের প্রাজ্ঞ পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব কাসাঈকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কাসাঈ শিশুপুত্র আমিনকে আরবি ভাষার সব নিয়মকানুনসহ যাবতীয় বিষয়গুলো বেশ ভালোভাবে শিখিয়েছিলেন। আরবি কাব্য-কবিতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও তিনি এই রাজপুত্রকে শেখালেন। মেধাবী এবং প্রতিভাবান আমিনকে তিনি ছাত্র এবং পুত্রের মতো ভালোবাসতেন। কথায় কথায় একদিন কাসাঈ বাদশাহ হারুনুর রশিদকে বলে ফেললেন, আমার স্ত্রী নেই, দাসী-বাঁদিও নেই। যেদিন থেকে আমিন আমার সঙ্গে, সেদিন থেকে আমিনই আমার সব।
উসতাদের মুখে নিজের ছেলের এমন ভালোবাসা ও মমতা দেখে খুশি হয়েছিলেন হারুনুর রশিদ। তিনি কাসাঈকে সেদিন দশ হাজার দিরহাম হাদিয়া দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, পনেরো বছর বয়সী একজন সুদর্শনা দাসীও তিনি উপহার দিয়েছিলেন কাসাঈকে।
হারুনুর রশিদ তার ছেলের মহান শিক্ষক কাসাঈকে যে মেয়েটি উপহার দিয়েছিলেন, সে শুধু সুদর্শনা নয়, বরং একইসঙ্গে সুনয়না, বুদ্ধিমতী, সবল দেহ ও সুঠাম গঠন এবং সুকণ্ঠ গায়কীর অধিকারী ছিল। সচরাচর দাসী-বাঁদীদের মধ্যে এমন অপরূপ রূপসী কন্যা দেখা যায় না বলে এ মেয়েটি হারুনুর রশিদের প্রাসাদের সবার কাছে পরিচিত ছিল।
এ মেয়েটির নাম মারইয়াম। ধর্মবিশ্বাসে খ্রিস্টান। জন্মস্থান আমুরিয়া। তাকে কেন্দ্র করেই এ রচনা এবং বাগদাদবাসীর সব জল্পনা-কল্পনা। মারইয়াম নাম্নী এ যুবতীকে নিয়ে রচিত হয়েছে সেকালের রহস্যময় ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনা।
কাসাঈ একা একা থাকতেন। বয়স ষাট পেরিয়েছে। এই বার্ধক্যে তিনি নিরব নিঃসঙ্গ। স্ত্রী নেই, ঘরে কোনো দাসীও নেই। পুত্র-কন্যা কেউ নেই। কিন্তু খলিফা হারুনুর রশিদের দেয়া উপহার মারইয়াম আসার পর তিনি আর একা নন। এই যুবতী কন্যা তার কাজগুলো করে দেন। বিছানা বিছিয়ে দেন। খাবার-দাবার গুছিয়ে দেন। কাসাঈ দিন দিন তার প্রতি স্নেহ-মমতা ও ভালোবাসায় আরও বেশি জীর্ণ হয়ে পড়েন। মায়া করে তাকে ডাকেন কাতরুননাদা বলে। সময়ে-অসময়ে ডেকে ওঠেন, কাতরুননাদা, কাছে এসো আমার!
রোজসকালে কাসাঈর কাছে পড়তে আসেন আমিন। কৈশর পেরিয়ে যায় যায় তার বয়স। চোখে মুখে উদ্দীপনা। অবয়বে তারুণ্যের রঙিন আভাস। রাজপুত্র বলে তার চলাফেরা সবার মধ্যে মুগ্ধতা ছড়িয়ে রাখে সবসময়। বলবান দেহ, আভিজাত্য ও সৌন্দর্যে বাগদাদে আমিনের মতো তরুণ সেকালে দ্বিতীয় ছিল না বলা চলে। তার শারীরিক শক্তির বর্ণনায় সেকালের লোকজন বলাবলি করতো, দু আঙুলের ঘষায় তিনি মুদ্রার উপর অঙ্কিত চিত্র ও লেখা মুছে ফেলতে পারেন। লোহার দণ্ড ধরে বাঁকা করে ফেলেন খুব সহজে।
মারইয়াম জানতেন, যে তরুণ তার মনিব কাসাঈর কাছে নিয়মিত পড়তে আসেন, তিনি এ বাগদাদের সেরা ও সম্মানিতদের একজন। ভবিষ্যতের রাজমুকুট তার মাথায় বেশ মানাবে। কাজেই, রূপ সৌন্দর্যে কিংবা গুণ মুগ্ধতায় তাকে বশে রাখলে অনেক কাজ হবে।
মাঝেমাঝে আমিন চলে আসেন। কাসাঈ তখন ঘরের বাইরে। আমিনকে একা পেয়ে কাছে এসে বসেন মারইয়াম। নিজেকে পরিচয় দেন কাতরুননাদা নামে। তাকে নিজের গান শোনান মধুমাখা গলায়, আমিনও মাঝে মাঝে সলাজ চোখে তার দিকে তাকান, হৃদয়কাটা হাসি হেসে মাথা নিচু করেন কাতরুননাদা, যে ভাব কেবল প্রেমিক-প্রেমিকাকে মানায়। সময়ের স্রোত তাদেরকে ধীরে ধীরে নিয়ে চলে প্রেমমোহনায়।
সকাল পেরিয়ে বেলা হয়। আমিনের পড়া শেষ হয়। তিনি ঘোড়ায় চড়ে ছুটে চলেন শাহী প্রাসাদে। বাবা হারুনুর রশিদ ও মা জোবায়দার কাছে। পেছনে পড়ে থাকে উসতাদ কাসাঈর ঘর। প্রেয়সী কাতরুননাদা। ধীরে ধীরে যার জন্য প্রশস্ত হচ্ছে হৃদয়ের সীমানা। কাল আবারও দেখা হবে। এটুকুই সান্ত্বনা।
কাসাঈ হয়তো টের পেতেন। তারই দাসী ঘনিষ্ঠ হচ্ছে রাজপুত্র আমিনের। কিন্তু কখনোই কিছু বলেননি। এই ষাটোর্ধ্ব বুড়ো বয়সে বেচারী কাতরুননাদাকে তিনি কোনো সুখ দিতে পারছেন না। তবুও তো সে তার কাজকর্ম গুছিয়ে দিচ্ছে। এর চেয়ে বেশি আপাতত তিনি কিছুই চাইতে পারেন না এই রূপসী দাসীর কাছে।
কাতরুননাদা টের পাচ্ছিলেন, যার সঙ্গে তিনি ভালোবাসায় জড়িয়ে যাচ্ছেন, তিনি যেনতেন কেউ নন। মুসলিম জাহানের খলিফা হারুনুর রশিদের সবচেয়ে আদরের কনিষ্ঠ পুত্র। তাঁর সঙ্গে বিস্তর তফাত কাতরুননাদার। কোথায় শাহজাদা আর কোথায় একজন দাসকন্যা। পরিচয় ও সম্মান তো বটেই, ধর্মও দুজনের দুটি। তবুও কাতরুননাদা স্বপ্ন দেখেন, তারা দুজন প্রেমকাননের মধুর জুটি। কাতরুননাদা লক্ষ্যভেদে সব প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আমিনের হৃদয়ে তার অবস্থান পোক্ত করতে মেধা ও রূপের মোহনীয় সবটুকু কৌশল কাজে লাগালেন। তবুও ক্ষণে ক্ষণে চিন্তা, উঁকি দেয় আশঙ্কা, প্রেমের এমন মনভোলানো খেলায় শাহজাদা আমিন হার মানবেন!
এরপর কেটে গেল অনেক দিন।
বাদশাহ হারুনুর রশিদের মৃত্যুর পর খলিফা হলেন শাহজাদা আমিন। আজ থেকে তিনি আমিরুল মুমিনিন। ইরাক-বাগদাদের সীমানা পেরিয়ে মুসলিম ভূখণ্ডের সর্বত্র মসজিদগুলোতে জুমার খুতবায় উচ্চারিত হতে থাকলো তার নাম। নতুন খলিফার খেলাফত উপলক্ষে আমির-উমারাদের হাদিয়া-উপটৌকনে ভরে উঠলো রাজপ্রাসাদ। সেনাবাহিনী সদস্যরা ঘুরে ঘুরে জনতার সঙ্গে মেতে থাকলো এ রঙিন উৎসবে। পারস্য, রোম, ফিরিঙ্গি এবং ভারতের রাজা-মহারাজাদের তরফ থেকেও সম্মান ও সম্ভাষণ জানানো হলো নতুন খলিফা আমিনকে। তারাও মূল্যবান তোহফা ও সামগ্রী পাঠাচ্ছেন দরবারে। বাগদাদ প্লাবিত হচ্ছে খুশির উচ্ছল জোয়ারে। তবে কি কাতরুননাদা হারিয়ে যাবেন কাসাঈর কাছে, অজানার অন্ধকারে!
চলবে.........
২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৯
ইমরান আশফাক বলেছেন: এবং বরাবরের মতো এইবারও তিনি মাঝপথেই থেমে গেলেন। সম্ভবত: এটা উনার মুদ্রাদোষ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৫১
একজন ঘূণপোকা বলেছেন: আপনাকে অনুসারিত তালিকায় রাখাটা যে ভুল নয়, আবার প্রমান হলো।
অনেক ভাল লেখা।