| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানব ও মানবতা
রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।
মূল- আলি আহমদ বাকাছির/ অনুবাদ- তামীম রায়হান
এক.
হজরত আবু জর গিফারি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশিষ্ট সাহাবি। নিজের ঘরে বিশ্রাম করছেন তিনি। এমন সময় একজন যুবক এসে ঘরে প্রবেশ করল। আগত যুবকটির নাম ছালাবা।
ছালাবা ঃ ক্ষমা করবেন, আপনি নবীজির সম্মানিত সাহাবি। আপনাকে না জানিয়ে আপনার ঘরে এসে উপস্থিত হয়েছি।
আবুজর ঃ তাতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু বলো, তুমি কে?
ছালাবা ঃ আমার নাম ছালাবা বিন হাতেব।
আবুজর ঃ তুমি কি আনসারদের কেউ?
ছালাবা ঃ জি। বনু আমর বিন আউফ আমার গোত্রের নাম।
আবুজর ঃ আহলান ওয়া ছাহলান। বসো। তুমি বসো।
ছালাবা ঃ আমি নিতান্তই হতদরিদ্র একজন যুবক। আমি জেনেছি, আপনি নিয়মিত দান-খয়রাত করতে ভালোবাসেন। আমি সেই আশায় এসেছি, যদি আপনি আমাকে কিছু অনুগ্রহ করেন।
আবুজর ঃ (একটু অবাক হয়ে) তুমি গরীব?!
ছালাবা ঃ জি অবশ্যই। আপনি আমার কথা বিশ্বাস করুন।
আবুজর ঃ এসব তুমি কী বলছো! নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে এক-দু লোকমা কিংবা দুয়েকটি খেজুর ভিক্ষা করে, সে তো মিসকিন নয়। বরং মিসকিন হচ্ছে মুতাআফফিফ। দেখো, আল্লাহ পাক কী বলেছেন, তারা মানুষের কাছে কিছু চায় না লজ্জাবশত। আমি নবীজিকে এমনও বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মানুষের কাছে চেয়ে চেয়ে ঘুরে বেড়ায়, কিয়ামতের দিন তার চেহারায় একটুকরো মাংসও থাকবে না।
ছালাবা ঃ কিন্তু আপনি আমাকে এসব শোনাচ্ছেন যে! আপনি কি আমাকে কিছু দিতে চাচ্ছেন না!
আবুজর ঃ আমি চাইছি, তুমি কর্মঠ হও। কাজ করে খাও। তুমি শক্ত সামর্থবান যুবক। কাজে নেমে পড়ো।
ছালাবা ঃ কিন্তু আমি কী কাজ করবো?
আবুজর ঃ যা পাও, তা-ই করো। যদিও কাঠ কাটতে হয়। আমি নবীজিকে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ যদি কুঠার কাঁধে পাহাড়ে চলে যায় এবং সেখান থেকে কিছু কাঠ কেটে এনে বিক্রি করে, ফলে সে মানুষের কাছে ভিক্ষা করা থেকে মুক্ত থাকে- এটা তার জন্য অনেক ভালো। মানুষের কাছে চাওয়া এবং তারপর কেউ দেবে কেউ ফেরাবে- এর চেয়েও সেটা উত্তম।
ছালাবা ঃ হে নবীজির সান্নিধ্যপ্রাপ্ত সাহাবি! আমার স্ত্রী গর্ভবতী। যে কোনো সময় তিনি সন্তান প্রসব করবেন। আর আপনি আমাকে উপদেশ দিচ্ছেন পাহাড়-জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে আনার জন্য!
আবুজর ঃ সত্যিই তোমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা!
ছালাবা ঃ এমন না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না।
আবুজর ঃ (তিনি বাড়ির ভেতর চলে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর দু হাতে দুটি ব্যাগ নিয়ে ফিরে এলেন। তারপর বললেন,) আমার কাছে এই এক ছা খেজুর আর এক ছা গম ছাড়া আর কিছুই নেই। তুমি এ দুটো ব্যাগ নিয়ে যাও তোমার স্ত্রীর জন্য। ছালাবা, শোনো, আমার কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু থাকলে আমি তাও দিয়ে দিতাম।
ছালাবা ঃ আল্লাহ আপনাকে বিনিময় দান করুন। এতেই আমাদের কয়েকদিন চলে যাবে।
দুই
ছালাবার ঘর। তিনি ঘরে এসে দুটি ব্যাগ তার স্ত্রী জুহাইরার সামনে রাখলেন। তারপর বললেন-
ছালাবা ঃ জুহাইরা, নাও। এগুলো রেখে দাও। তোমার সন্তানপ্রসবের দিন লাগবে।
জুহাইরা ঃ আপনি এসব কী বলছেন, আমার সন্তান হতে তো অনেক দেরি, মাত্র ছয় মাস গেল, এখনও প্রায় চার মাস বাকি!
ছালাবা ঃ নয় মাস হতে আর মাত্র কিছুদিন। যে কোনো সময় এ খাদ্য-খাবার তোমার প্রয়োজন হতে পারে। তোমার সন্তানপ্রসবের আগে এখান থেকে এক মুঠো খাবারও তুলবে না।
জুহাইরা ঃ কিন্তু যদি আমাদের প্রয়োজন হয়, তখন না হয় দু-এক মুঠো খাবার নেব।
ছালাবা ঃ মোটেও না। সন্তান জন্মদানের একদিন আগেও এ থলি খোলা যাবে না।
জুহাইরা ঃ কিন্তু কেন?
ছালাবা ঃ আমি সাহাবি আবু জরকে বলে এসেছি, এ খাদ্য তোমার সন্তান প্রসবের দিনের জন্য। আমি কথার বরখেলাফ করে তার সঙ্গে প্রতারণা করতে চাচ্ছি না।
জুহাইরা ঃ আর কতদিন এভাবে মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইবে? এর চেয়ে কি আর কোনো ভালো কাজ তুমি খুঁজে পাও না?
ছালাবা ঃ (রাগ হয়ে) চুপ থাকো জুহাইরা। তোমার বাবা ধনী থাকলে তো আর আজ আমার এমন দুর্দশা হতো না।
চলবে.....
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৫
ইমরান আশফাক বলেছেন: পরবর্তী পর্ব কি আর পাবো না? আপনার মতো অনেকেই দেখি অর্ধেক কিছু পোস্ট করে তারপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।