নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

,

বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা

জাহাঙ্গীর.আলম

..................বিশাল যন্ত্রণার অর্থ হচ্ছে বিশাল শুদ্ধতা ৷৷ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

জাহাঙ্গীর.আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলাপচারিতায় আন্দ্রাস নম্যান

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩৫



আন্দ্রাস নম্যান বাইশ বছর বয়সে তার প্রথম উপন্যাস ‘Bariloche’ প্রকাশ করেন ৷ এ উপন্যাসটি সর্বোচ্চ শীর্ষ স্থানীয়ের তালিকায় অন্যতম হয় স্পেনের প্রভাবশালী হ্যারাল্ড পুরস্কারের জন্য ৷ সাথে অর্জন করে চিলিয়ান শীর্ষ সমালোচক লেখক রবার্তো বোলানোর নজরকাড়া আলোচনা ৷ তাঁর ভাষায় সম্ভবত একুশ শতকের শ্রেষ্ট ঔপন্যসিক লেখকদের মধ্যে আন্দ্রাস নম্যান একজন হবেন ৷ অতিপ্রজ লেখক হিসেবে নম্যানের এপর্যন্ত বিশটির মত বই প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে উপন্যাস, কবিতা, ছোট গল্প, প্রবন্ধ ও প্রবচনসমূহ অন্যতম ৷

.তার অসাধারণ ইংরেজী ভাষায় প্রথম উপন্যাস Traveler of the Century প্রকাশ করে এফএসজি পাবলিকেশন ২০১২ সালে ৷ যা ইউকে ইন্ডিপেন্ডডেন্ট বিদেশী ভাষায় ফিকশন পুরষ্কার ও আন্তর্জাতিক আইএমপিএসি ডাবলিং পুরুস্কার জিতেন ঐ সালেই ৷ এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে অনেক বিখ্যাত পুরষ্কার লাভ করেন ৷

তার সর্বশেষ ইংরেজীতে ভাষান্তরিত উপন্যাস নিজেদের সাথে কথোপকথন প্রকাশকও এফএসজি পাবলিকেশন ৷ এ উপন্যাসে তিনজন কথক একজন বাবা একজন মা ও তাদের সন্তান যারা মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সম্মেলিত হন ও নিজেরা ও পাঠকের সাথে কথোপকথন করে সফল বা অসফলভাবে ৷ ইহা চুড়ান্তভাবে পারিবারিক আলোচনা যখন তারা অসুস্থতার সম্মখীন নানাভাবে যত্নের অনুসঙ্গগুলো যেখানে কেউ জীবনধারায় মৃত্যুর প্রতীক্ষায় রত ৷ এই আলাপনটি হয় যখন লেখক নিউওয়ার্কে পেনস্ওয়াল্ড ভয়েজেস উৎসবে অংশ নেন ৷ কথোপকথন হয় ইলিয়ানা কানের সাথে আধা ইংরেজী ও স্পেনীশ ভাষায় ৷



ইলিয়ানা কানঃ ইংরেজী ভাষায় আমরা শুধু আপনার দুটো উপন্যাস পেয়েছি যা হলো শতাব্দির ভ্রমণকারী (Traveler of the Century)আরেকটি নিজের সাথে কথোপকথন( Talking to Ourselves) কিন্তু আপনি একজন প্রথিতযশা ছোটগল্পকার, কবি ও প্রবন্ধকার ৷ আপনি কি কম বেশি সাবলীল বোধ করেন কবিতায় যেমন অপেক্ষাকৃত উপন্যাস ও ছোটগল্পে ?

আন্দ্রাস নম্যানঃ আমার মনে হয় কবিতা হলো পরিস্থিতিবিমুখতার সুখের সাম্রাজ্য ৷ সত্যি বলতে আমি কবিতার এত ধারা উপধারা বিশ্বাস করি না ৷ তদনুসারে সব ধরণের কাজ আমি করি ৷ আমি আসলে সীমানাহীনতায় অভ্যস্থ ৷ যেরকম আমার নিজস্ব জাতীয়তাবোধ যা আমাকে বাধ্য করেছে দুই জাতির মাঝে বসবাস করতে ৷ এখন তাই মনে হয় স্বদেশ বা ধারা-উপধারার মতই আমি অকৃত্রিম ৷

কিন্তু আমার কাছে মনে হয় কবিতার সুনির্দিষ্ট স্বাধীনতা আছে যা সবসময় জানে না আপনি কি বলতে চান যতক্ষণ না আপনি তা বলেন অথবা আরো সূচারুভাবে বলতে যে বাক্যপ্রকরণে বা বাক্যরীতিতে শতভাগ তাৎক্ষণিক উপস্থাপন করতে সক্ষম ৷ এগুলো এই স্বাধীনতার সূক্ষ্ম দিক যা শক্তিশালী ও ক্ষতিকরও ৷ সহজেই যা কিছু নিয়ে এ স্বাধীনতায় লেখা যায় আর তা বাক্যের শেষে এসে দিক পরিবর্তন করতে পারে যখন বাক্যগুলো জীবন্ত হয়ে কিছু বলতে চায় ৷ আমি মনে করি না এ আমূল মতবাদে আপনি ৫০০পৃষ্টার দীর্ঘ উপন্যাস লিখতে পারবেন ৷



ই.কানঃ আপনি বলতে চাইছেন কবিতা হলো মূলের সন্ধানী একটি ধারা সেখানে উপন্যাসে ধারার প্রয়োজন মূল বিষয়বস্তুকে বিস্তৃত করার প্রয়োজনে ৷

আ.নম্যানঃ আসলে অতটা রূঢ় না, খুব সহজে সেটাই মূল পার্থক্য কবিতা সাথে অন্যদের ৷ সর্বোপুরি সেটাই লেখার সারাংশ- লেখা হল জ্ঞাত করা আপনার চিন্তা বা অনুভূতিকে ৷ বিস্তৃতভাবে বললে যেকোন লেখা আপনার চিন্তা মতবাদকে উপস্থাপনা করে ৷ এই সমস্ত আবিস্কার শতভাগ দখল করে থাকে কবিতায় ৷ সেখানে অন্যান্য ঘরানার লেখায় দরকার কিছু গবেষণা বা বিশ্লেষণ কিছু পূর্বপরিকল্পিত ৷ এমনকি যখন কেউ লিখতে শুরু করেন তখনও পরিকল্পনাগুলো পরিবর্তিত হতে পারে ৷ সেটাই উপন্যাস লেখার সৌন্দর্য্য ৷ আমি অবশ্য লেখা নিয়ে এত চিন্তা করি না তবে পরিকল্পনা করি মঞ্চের বা নির্ভরতার স্থানগুলিতে ৷ অনেকটা ভ্রমণের মত ৷ যতই পরবর্তী সফরের চিন্তা করবেন ততই উত্তেজনা বোধ করবেন ৷ তুমি অনেক জায়গায় যাওয়ার চিন্তা করবেন যখন প্রথম গন্তব্যে পৌছাবেন ৷ তখন হয়ত নতুন কিছু পাবেন সাথে সাথে আপনার পরিকল্পনার সবকিছু হারিয়ে ফেলবেন ৷ কিন্তু আপনি সেখানে আপনার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৷ নির্দিষ্ট প্রথম স্থানটিতে যাওয়া আপনার পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার কারণ ৷

ই.কানঃ আপনি একবার বলেছিলেন কবিতার কোন মাতৃভাষা নেই ৷ যার মানে আপনি বুঝাতে চেয়েছেন ইহা বহুভাষিক ৷ এবং কোন সীমাবদ্ধতা বাধা নেই ?

আ.নম্যানঃ না আমি আসে এত রোমান্টিক নই ৷ কবিতার অনেক পরিশোধক আছে যেমন-সংস্কৃতিগত, আদর্শগত, লৈঙ্গিক দিক ৷ আসলে বোঝাতে চাচ্ছি একধরণের ইন্দিয়বোধ যা জানে না আপনি কি বলতে চাচ্ছেন ৷ আর এ রকমের অভিজ্ঞতা বিদেশী ভাষার অনেকের ভাষ্যে ৷ সেটাই আসলে কবিতার লক্ষ্য ৷ আপনার উচিত হবে অনুভব করা প্রতিটি অনুসঙ্গ যা খুবই অশ্রুতপূর্ব অথবা মনযোগী হয়ে আপনার তৈরী থাকা ভাষার অন্তর্নীহিত অনুভবকে বোঝা ৷ আপনি মুগ্ধ হবেন এর ক্ষুদ্রতম এবং সবচেয়ে অপ্রাসঙ্গিক সুরেলা বিস্তৃতিগুলো আর আমার মনে হয় এই ভঙ্গিই ভাষাকে সামনে এগিয়ে নেয় ৷ যা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার বিপরীত ৷ এতে রোগবিদ্যাতত্ত্বের অনুযায়ী সজ্ঞান করে আপনার ভাষাতত্ত্বের দ্বিধাকে এবং সেই সাথে এ সম্ভব্যতা- এ দুটো ব্যাপার কবিতা ও বিদেশী ভাষার ক্ষেত্রে সাধারণ ৷ তাই প্রতিটি সময় একজন লেখক ভিন্ন ভাষায় লিখেন যেমন কনরাড, নাবোকভ, বে্কেট, চার্লস্ সিমিক আসলে লেখক অতিরঞ্জিত ভাবে প্রয়োগ করেন প্রতিটি সাহিত্যিক কর্মের অন্তর্নীহিত মিথ্যাকে ৷



ই.কানঃ এবং ছোটগল্পে ? স্পেনে আপনার ছোটগল্প অনেক সংখ্যায় আছে ৷ এ ধারাটি আপনাকে কি দিয়েছে ?

আ.নম্যানঃ আসলে আমি খুব উত্তেজিত কারণ আগামী আগস্টে ইউকে-তে আমার বেশ কিছু গল্প ইংরেজীতে অনুবাদে প্রকাশ পাচ্ছে যার শিোনাম The Things We Don’t Do (Las cosas que no hacemos)৷ ছোটগল্পে আমার প্রথম শুরু তখন আমি খুবই পরিশ্রম করেছিলাম ৷ একজন অংশত আর্জেন্টাইন লেখক হিসেবে আমি ছোটগল্পকে সবসময় ভিন্ন উচ্চতায় নিয়েছি ৷ প্রচলিত আমেরিকান বড় গল্প যা ৪, ৫০, ৬০ পৃষ্টার মতন থেকে ব্যতিক্রমী ৷ ইহা ছিল আকর্ষণীয় দৈর্ঘ্যের যা অনেকটা ছোট আকৃতির উপন্যাসের মত ৷ আমি বলছি ঐতিহ্যবাহী লাতিন আমেরিকার সেই সব ছোটগল্প যা লিখেছিলেন বোর্হেস বা করতাজারের মতন দৈর্ঘ্যের ৷ এদিকে ফেলিসবার্ত হার্নানডেজ, হোয়ান হোসে্ আরোলা, ভার্জিলিও পিনে্রা, আগোস্তো মোনতেরোসো এসমস্ত গল্পকারদের গল্প বলতে ২,৩,৪ পৃষ্টার বেশী দরকার ছিল না ৷ এ ধরণের সীমাবদ্ধতার বন্ধন নিয়ে কাজ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই কবিতার মতন কিছু উপস্থাপনা করতে হবে ৷ ফলে ছোটগল্প এ প্রকার বর্ণনামূলক ও কাব্যিক শৈল্পিক সীমানায় আবদ্ধ থাকে ৷ আমি আগ্রহী কবিতার গল্প বলতে সক্ষমতায় এবং গল্প সক্ষম ভাষার সহযোগে অভাবনীয় কিছু করতে ৷

ই.কানঃ আপনি বিশেষভাবে বলেছেন ঐতাহ্যবাহী লাতিন আমেরিকার ছোটগল্পের ব্যাপারে ৷ লেখক হিসেবে অনেক বিস্তৃত বলেছেন আবার একজন সমালোচক ভূমিকায় বলেছেন সীমান্তবর্তী হিসেবে স্পেন ও লাতিন আমেরিকার মধ্যে ৷ কারণ বসবাস স্পেন হলেও আপনার জন্ম আর্জেন্টিনায় ৷ আসলে আপনি কি প্রভাবিত বা আপনার লেখায় ভূমিকা রাখে লাতিন আমেরিকার ঐতিহ্য যেখানে আপনি বাস্তবে শারিরিকভাবে স্পেনের উপস্থিতি পান ?

আ.নম্যানঃ আসলে কোন অস্বাভাবিকতা নেই, জন্ম লাতিন আমেরিকায় পরে অভিবাসন স্পেনে ৷ আমার অভিবাসন ঘটে ছেলেবেলায় আর লাভ করি দু’দেশের শিক্ষা ফলে জাতীয়তার প্রয়োজনীয়তা চিরতরে হারিয়ে ফেলি ৷ এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়, সিদ্ধান্তটা ছিল বাবা-মা’র ৷ আমি বড় স্পর্শকাতর মধ্যবর্তী শহর বুয়েনেস আইরেস্ থেকে ছোট, শান্ত স্পেনের দক্ষিণের শহরে ৷ শুধু প্রাকৃতিকগত ভাবেই বুয়েনেস আইরেস্ থেকে মাদ্রিদে স্থানান্তরে দেশের পরিবর্তন নয় ঘটেছে আমার ছন্দগুলোরও পরিবর্তন ৷ আমার মনে হয় না খুব বেশী বিশেষিত লাতিন আমেরিকান লেখকের গ্রানাডায় অভিবাসন ঘটেছে ৷ যার মানে আমাকে শিখতে হয়েছে সামাজিক রীতিনীতি এমনকি কিভাবে হাটবো সেটাও ৷ সাথে আমাকে মাতৃভাষাও পুনরায় শিখতে হয়েছে ৷ যখন আপনি পরিণত তখন আপনাকে মুগ্ধকর, আকর্ষণীয়, এমনকি যৌন আবেদনময়ী বিদেশী হিসেবে গড়ে নিতে হবে ৷ এসবগুলোই আমার ১২ বছর বয়সে ভাবার কথা নয় ৷ যখন আপনি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়েন তখন আপনাকে কোন অবস্থানে স্থায়ী হওয়া উচিৎ কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ছিল না ৷ ফলে খুব দ্রুত আমাকে আন্দালুসিয়ান রীতিগুলো রপ্ত করতে হয়েছিল যখন কেউ আমাকে শেখায়নি ৷ কারণ প্রথম কয়েক মাস আমি বলতাম “buen día” আর লোকজন হাসতো কারণ এটা ছিল “buenos días” মানে সুপ্রভাত ৷ আমি বলতাম “uds” আসলে হতো “vosotros” বা আপনারা ৷ বিদেশী হিসেবে না দেখে আমি একটিও শব্দ বানাতে পারতাম না ৷

এখন আমার দুটো উচ্চারণ রীতি যখন স্পেনের বাইরে যাই তখন সাবলীলভাবে আর্জেন্টিনার রীতিতে কথা বলি ৷ এদিকে আমি গ্রাণাডাতে বাস করি বিশ বছরের উপরে ৷ আমার স্ত্রী একজন স্পেনীশ আর আমার মা স্পেনেই মারা যান যা আমার কাছে অনেককিছু ৷ আমার মার জন্ম আর্জেন্টিনায় আর মৃত্যু স্পেনে এ অংশগুলো আপনাকে বেছে নিতে হবে ৷ আপনি পারবেন না মায়ের শিকড় আর কবরের মধ্যে একটাকে বেছে নিতে ৷ যা আমি কখনও করিনি ৷ এই ভৌগলিক দূরত্বের গুরুত্ব আমাকে একজন আগন্তকের অনুভূতি দিয়েছে যা একজন গল্পকার গল্প বলার দিকে এগিয়ে নেয়, চরিত্রের শেকড়ের দিকে অগ্রসর করে, আর বহু বছর পর আমার লেখার প্রধান উপজব্য এ বিষয়টি ৷



ই.কানঃ কিভাবে ?

আ.নম্যানঃ কখনও আমার উপন্যাসে এটা অস্পষ্টভাবে কথকের আগমন কোথা থেকে বা তারা এতই চলমান যে অনুল্লেখ্য থাকে কেউ কেউ তার মাতৃভূমিহারা ৷ কিন্তু পাঠক বুঝতেই পারেন না কখন তার মাতৃভূমির কথা শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ যেমন ধরুন ‘নিজের সাথে কথোপকথন’ (Talking To Ourselves) উপন্যাসে এক বাবার সাথে পুত্রের সাথে পথচলা শুরুর কথা ৷ সেখানে এক ট্রাকে করে বড় রাস্তা ধরে পথের কথা বলা যা মনে হতে পারে লাতিন আমেরিকা আর স্পেনের সংযোগ ৷ কখনো মনে হয় পথের পার্শবর্তী ল্যান্ডস্কেপের দৃশ্যকল্প দক্ষিণ স্পেনের তারপরই হঠাৎ করেই পাতাগোনিয়া অথবা যুক্তরাষ্ট ও মেক্সিকোর সীমান্ত অঞ্চল ৷ উপন্যাসে দেখা যায় পিতা-পুত্র এসকল ল্যান্ডস্কেপে অনেক সাচ্ছন্দ বা পূর্বপরিচিত ৷ কিন্তু মুহূর্তে মুহূর্তে চমকে বলবেন ‘কোন নরকে এ দেশটি ?’

আমি আসলে চেষ্টা করেছি তাদেরকে সংযোগ করতে সে বড় রাস্তা ধরে যা আদতেই অস্তিত্ব ছিল ৷ অথবা বড় রাস্তা নয় হারিয়ে যাওয়া ছোট রাস্তাগুলো ৷ কারণ তা অসম্ভব কল্পনার রাস্তাগুলো আমার এরা সংযোগ করেছিল দুই অস্তিত্বকে যা ছিল বিচ্ছিন্ন কিন্তু একই ভাষায় কথা বলে ৷



ই.কানঃ যদিও আপনার কল্পনার স্থানগুলোতে সময়ের কারণে আপনি ফেরত যেতে পারবেন না ৷ ‘Talking to Ourselves’ উপন্যসের শেষভাগে এলেনা কোন ছবিতে তার ও মারিওর প্রতিরূপ খুঁজে পায় যাতে উল্লেখ ছিল ‘ উল্লসিত আমাদের দেখে ভবিষ্যত বোঝা যায় না ৷ আমার সেই প্রিক্রিয়া ছিল তাৎক্ষণিক ৷ আসলে অতীত তো আমার উদ্ভাবিত ছিল না ৷ আমরা ছিলাম ওখানে সময়ের কোন এক পর্যায়ে ৷’ আর এর ফলেই আমি তাৎক্ষণিকভাবে মনে পড়ে ‘La grande bellezza’ ছবিটির কথা ৷ সেখানে প্রধান চরিত্র বারবার পূণর্জন্ম নিতে থাকে আর প্রথম ভালবাসার স্মৃতির কাছে পুণর্বার যেতে থাকে ৷ ফলে এমন ঘটনা মনে অতিবাস্তবের বহিঃপ্রকাশ ৷আপনার প্রথম উপন্যাসে সেই লালচুলের মেয়ে Bariloche এইভাবে ডেমেট্রিয়র জন্য আচরণ করে যা আসলে আদর্শিক অতীতের প্রতীকবাদের স্বরূপ ৷

আ.নম্যানঃ আমি অল্প বয়সে খুব বেশী রোমান্টিক ছিলাম ৷ রোমান্টিক ছিলাম দার্শনিক দৃষ্টিতে ৷ এখন আমি মনে করি না প্রথম ভালবাসা খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না সত্যের মূল্যকেও ৷

ই.কানঃ কিন্তু সেটাই আসলে একমাত্র চমকপ্রদ জায়গা যেখানে মানুষ বারবার স্মৃতির ছলে সেখানেই ফেরত যায়, তাই না ?

আ.নম্যানঃ অবশ্যই, আমার কিছু চরিত্রেরা এরকম বিশ্বাস করে কারণ আমাদের সাংস্কৃতিক আবহ বা পরিবৃত্তটা এই প্রয়োজনশীল শেকড় দিয়েই তৈরী ৷ আমাদের দরকার পর্যায়ক্রমিক সিঁড়ি এভাবেই আমরা শিকড়ের কাছে চলে যেতে পারব ৷ সবারই প্রয়োজন মিথে’দের কিন্তু সেটা একান্ত আমার থাকবে না ৷ আমি এখন বেশী করে চলমানতার দিকের উপর বিশ্বাসী ৷ Talking to Ourselves এতে আমার মনে হয় এলেনা আসলে ভিন্ন কিছু নিয়ে কথা বলেছিল ৷ সে আসলে প্রথম অভিজ্ঞতা বা অস্তিত্বের শিকড় নিয়ে কথা বলে নি ৷ বরং সে আসলে বলেছিল স্মৃতি কি আর স্মৃতি কিভাবে আপনার বর্তমানকে পূণর্গঠন করে ৷ এটাই হয়ত সে গল্পকথার প্রধান প্রতিফলন কারণ তা নাহলে সে মূলত তার বিয়েকে মূল্যায়ন করতে পারবে না ৷ হয়ত তার বিয়ের অস্তিত্বই নেই বা তার স্বামীর অস্তিত্বও কখনও ছিল না ৷ আমার কাছে এই অনু্ছেদখানি কিভাবে ভাষা বা ভাষারূপ অবশ্য এক্ষেত্রে কল্পনা স্থায়িত্ব দেয় যাকে আমরা বলি বাস্তবতা ৷

ই.কানঃ আসলেই ৷ অন্যখানে এলেনা নিজেকে খুঁজে পায়, সাথে তার অনুভূতি, তার অভিজ্ঞতা, যা প্রকাশ পায় অন্যের কথায় নিজের একান্ত অস্তিত্বে নয় অন্যের ব্যবহৃত বাক্যে ৷ আবার সে যখন তার নিজের অভিজ্ঞতাকে প্রকাশের ভাষা পায় না আর সেটা ঘটে তার স্বামীর মৃত্যুশয্যায় সেবারত অবস্থায় ঐতিহ্যগতভাবে অন্যের ব্যবহৃত প্রচলিত অভিজ্ঞতার ভাষাশৈলীতে ৷

আ.নম্যানঃ আমি ‘দখলকৃত’ শব্দটি পছন্দ করি ৷ আমি মনে করি ইহা খুব দখলকৃত ৷ সে(এলেনা) আসলে বাধ্যগত সম্পাদনাকারী ৷ একজন শিক্ষক হিসেবে বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলোকে তুলে আনাই তার কাজ ৷ সে একজন স্নেহময়ী ও পরিবর্তনশীল প্রেমিকা আর সবমিলিয়ে সে মূলত সম্পাদনাকারী ৷ যেমন বইয়ের কিছু অংশে সে বলে “যখন একটি বই আমায় কিছু বলে আসলে আমি যা বলত চেয়েছিলাম ৷ আমি যথার্থ সেই শব্দগুলোকে অনুভব করি যারা আমার মত প্রকাশ করে আর আমিও তাদের প্রতি কথা বলি” ৷



ই.কানঃ এটি কি আসলে আত্মসমার্পনের ঘটনা ৷

আ.নম্যানঃ হ্যাঁ ৷ আসলে তার অনুভূতিবোধের আসল কারণ হয়ত অন্য কেউ একই বোধ করে আর তারা একই সময়েরও না ৷ এলেনার ক্ষেত্রে লাইন সম্পাদনা করা তার নিজস্ব আইডিয়ার একটি উপস্থাপনা ৷ সে ভালবাসার ক্ষেত্রেও একই কাজ করে ৷ পড়া আর যৌনতা হল তার মৃ্ত্যুর বিরূদ্ধে অস্ত্র ৷ আর আমরা এর জন্য তাকে দোষ দিতে পারিনা ৷ আমার মতে এর থেকে উত্তম কিছু নেই ৷

যখন এই দুটো নিয়ে তার সাথে দ্বিধাগ্রস্থ সম্পর্ক তার প্রেমিকের তার মতে একে অপরকে প্রত্যাখান করে জানান দেয় সেটির অস্তিত্ব ৷ তারা মৃত্যুর অভিজ্ঞতাও শেয়ার করে ৷ আসলে প্রিয় কেউ যখন মৃত্যুর মুখোমুখি তখন তার দেহও পাশাপাশি তা অনুভব করে ৷ যদি তার স্মৃতি আসলেই সত্যিকারের ৷ আবার যখন কেউ আপনার জীবনে কাছে গুরুত্বহীন হয় যায় তাহলে আপনার স্মৃতিও তার সম্পর্কে বাতির মতই জ্বলবে আর নিভবে ৷ তাই এলেনার প্রেমিককে দেহ সমার্পন মানে হল মৃত্যুপথযাত্রী প্রেমিকের দেহে এখনও চলমান ৷ একই সাথে সে বইকে ব্যবহার করে বুঝায় তার চিন্তা ও অনুভূতি যারা আগে ছিল সেগুলো এখনও হারিয়ে যায়নি ৷ যারা এখনও কারো বইয়ের পাতায় বিদ্যমান ৷

সেভাবেই আপনি যেমনটা আগে উল্লেখ করেছেন সে বারবার ছবিগুলো পূণর্পাঠ করে- যেখানে সে আসলে মারিওকে ফেরত আনতে চায়নি ৷ সে চায় তার স্মৃতিকে আবার মূল্যায়ন করতে ফলে বারবার স্মৃতিকে বর্ণনা করে ৷ মূলতঃ সেটি তার অতীতকেই বার বার পাঠ ৷ কিন্তু অতীত সবময়ই অর্থগতভাবে ভিন্নতা আনে ৷ তা আবার অতীতমুখিতা নয় আমি বলি পূণর্পাঠ ৷ কারণ কোন বই পুনরায় পাঠে একই অর্থ আনে না একইভাবে স্মৃতির ক্ষেত্রেও ৷ আর সেটাই বলতে চেয়েছি আমি শিকড় সম্পর্কে, কখনোই কোথাও ফেরত যাওয়া নয় ৷

ই.কানঃ তাহলে কি যা সে বারবার পড়ে ?

আ.নম্যানঃ আমার অনেক প্রিয় বইগুলো থেকে বিশেষ কিছু লাইন এলেনা এখানে উদ্ধৃতি করে ৷ যদিও সবগুলো নয় কারণ আমার নির্বাচিত ছিল সব হারানোর সম্পর্কিত ৷ আর এসবগুলো নিয়েই শুধু অসুস্থতার গল্পই নয়, রোগীর যত্নকারীর হারানোর বেদনাবোধও আলোচিত এ বইয়ে ৷ আরো সুক্ষ্মভাবে বললে একজনের অসুস্থতা ও মানবিক বৈকল্য অপরের অসুস্থতারও কারণ ৷ এখানে যত্নকারীর ভূমিকায় এলেনা ও মারিও রোগগ্রস্থর ভূমিকায় অবতীর্ণ ৷ আমি তুলে আনতে চেয়েছিলাম একজনের তিলে তিলে নিঃশেষ হওয়া আর এদিকে একইভাবে ধীরে ধীরে অপরজনের পর্যায়ক্রমে জীবনের উপভোগের অধিকারের দিকে এগিয়ে যাওয়া ৷ যেমন মারিও সোনে বলে ‘জীবন উপভোগ করা কষ্টসাধ্য কাজ’ ৷ এটি একধরণের শিল্পকর্ম যাতে কেউ কখনও বিশেষজ্ঞ হতে পারবে না ৷

ই.কানঃ এবং এলেনার ডায়েরি উদ্ধৃত হয় বাইরের কন্ঠস্বরে, তার নিজের ভাষ্যে নয় ৷ যতোই সে মৃত্যুপথযাত্রী মারিওয়ের কাছাকাছি যায় ততই তার নিকট কঠিন হতে থাকে নিজের জীবনে আনন্দ খোঁজা বা প্রস্ফুটিত হওয়ার প্রচেষ্টায় ৷

আ.নম্যানঃ আসলেই তাই ৷ আমি বস্তুত বাক্যহারা তার জীবনে কি হতে থাকলো, যা যথার্থ শব্দে সে প্রকাশ করতে পারবে ৷ পরিশেষে এসকল প্রতিফলন করে অন্তরের নিস্তব্দতা, আত্ম-অবচেতন মনের আকাঙ্খা এবং অনুভূতি প্রকাশের প্রয়োজনীয়তার মধ্যবর্তী ভারসাম্য ৷ এমনকি একজনের কথাগুলোর অপরজনের মাধ্যমে প্রকাশরূপ ৷ এবং এছাড়াও আরো লেখকদের লিখা আসেনি তার ডায়েরিতে কারণ সেগুলো উপযুক্ত ছিলনা ৷

ই.কানঃ কিভাবে ?

আ.নম্যানঃ কারণ আমি চিন্তা করি নাই, সেগুলো যুক্তিসঙ্গত ৷ আমি ভেবেছিলাম তার পঠন ও রচনাগুলো আরো বেশী কার্যকর ৷ তাই আমার প্রিয় কবিরা- রিলকে্, সেজার, ভেল্লেঝু, উছলায়া জিমবোর্সকা এখানে বহিরাগত ৷ কিন্তু আমার কাছে এখন মনে হয়, যতো না Traveler of the Century বইটি কবিতার ভাষান্তর, এটি দুজন অনুবাদকের মধ্যকার প্রণয়কাহিনী, যথার্থই বিশ্লেষণমূলক আলোকপাতও ৷

তাই আমার মনে হয় আমাদের মধ্য থেকে কেউ বলতে পারে Traveler of the Century হলো একটি প্রেমের গল্প যা কবিতার অনুবাদে দৃশ্যত অথবা Talking to Ourselves হলো বিস্তারিত গল্পকথন যা মূলত বর্ণনাশৈলীতে পঠিত গল্প ৷ আর এটাই যথার্থ ৷

ছবিতে ইলিয়ানা কান



কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল



*___**___**___**___**___**___**___**___**___**

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:২১

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: দারুন একটা পোষ্ট! চমৎকার লাগল!

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:১০

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ৷

২| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:৪২

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: উনার সম্পর্কে জানতাম না । আপনার মাধ্যমে জানলাম । প্রিয়তে নিলাম ।
বর্তমান সময়ের আলোচিত তরুণ লেখকদের সম্পর্কে আরো জানতে চাই ।
আশা করি আপনার মাধ্যমে এই তৃষ্ণা মিটবে ।

ভাল থাকুন জাহাঙ্গীর ভাই ।
শুভকামনা রইল ।




০৮ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:২০

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:

অনেক ধন্যবাদ ৷


ভাল থাকুন প্রিয় মাহমুদ ভাই ৷

৩| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৩১

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: বাহ চমৎকার একটি পোষ্ট। ++++।

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:১১

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে ৷

৪| ০৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৩৬

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
চমৎকার পোস্ট নিঃসন্দেহে।
ধন্যবাদ।।

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:১৯

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:

পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কবি ৷

৫| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:০৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: গল্প বা ছোট গল্পের বিস্তৃতি এবং দৈর্ঘ্য নিয়ে আলোচনা টা বেশি ভালো লাগলো ।

১২ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০২

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:

পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ৷


ভাল থাকুন সবসময় ৷

৬| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:২৮

খাটাস বলেছেন: নম্যানের দৃষ্টি ভঙ্গি অসাধারণ। অর্ধেক পড়েছি। সময় নিয়ে শেষ করব।
অসাধারণ পোস্টের জন্য এক রাশ ভাল লাগা। +++
ভাল থাকবেন অনেক।

১২ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০৩

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:

পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ৷

৭| ১১ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:১৮

জুন বলেছেন: অসাধারন, চমৎকার একটি পোষ্ট পড়লাম । অনেক কিছু জানতে পারলাম অচেনা এক আন্দ্রাস নম্যান সম্পর্কে । তার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জাহাঙ্গীর আলম৫২ ।
+

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৪৮

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
স্বাগতম ৷

অনেক ভাল লাগল আপনার মন্তব্যের জন্য ৷ ভাল থাকুন ৷

৮| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:০০

রাজিব বলেছেন: খুব সুন্দর একটি সাক্ষাতকার। যদি সম্ভব হয় অরিজিনাল ওয়েবপেইজের লিংক দিয়েন। আর আপনার একই কথা দুবার এসেছেঃ
আমি আসলে সীমানাহীনতায় অভ্যস্থ ৷ যেরকম আমার নিজস্ব জাতীয়তাবোধ যা আমাকে বাধ্য করেছে দুই জাতির মাঝে বসবাস করতে ৷ এখন তাই মনে হয় স্বদেশ বা ধারা-উপধারার মতই আমি অকৃত্রিম ৷
আমার মনে হয় কবিতা হলো পরিস্থিতিবিমুখতার সুখের সাম্রাজ্য ৷ সত্যি বলতে আমি কবিতার এত ধারা উপধারা বিশ্বাস করি না ৷ তদনুসারে সব ধরণের কাজ আমি করি ৷ আমি আসলে সীমানাহীনতায় অভ্যস্থ ৷ যেরকম আমার নিজস্ব জাতীয়তাবোধ যা আমাকে বাধ্য করেছে দুই জাতির মাঝে বসবাস করতে ৷ এখন তাই মনে হয় স্বদেশ বা ধারা-উপধারার মতই আমি অকৃত্রিম ৷
তাই পোস্ট এডিট করে নিন।

৩১ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:২৭

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ৷ হার্ডকপি থেকে করা হয়েছিল আর লিংক পেলে সংযোগ করব ৷ এ ধরণের আরো কিছু সাক্ষাৎকার দেওয়ার ইচ্ছা আছে করা হলে বিশেষ কিছু কারণে ৷ ছবিগুলো গুগল থেকে নেওয়া ৷ নামে সার্জ করলে পেয়ে যাবেন ৷

ধন্যবাদ পরামর্শের জন্য ৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.