নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ অনেক নীল । মানুষ অনেক লাল । মানুষ অনেক বাদামী ।

মানুষ অনেক নীল । মানুষ অনেক লাল । মানুষ অনেক বাদামী ।

জাহিদ ১৯৯

মেহরাব হাসান

জাহিদ ১৯৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আফসানা\'রা

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৩

আমরা আফসানাকে চিনি। রোজ ছাতা মাথায় দিয়ে মেইন রোডে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। ছাপান্ন হাজার বর্গ মাইলের চেয়ে তার এই কম ব্যসার্ধের ছাতার আয়তনটাই অনেক বেশী নিরাপদ, নিশ্চিন্তে রোদে, বৃষ্টিতে মাথা গুঁজতে পারে।

-আপা রিকশা লাগবে? মেইন রোডের পাশে পান দোকানদার বলল। আপা ডাকটা নিশ্চিন্তের, প্রতিনিয়ত পুরুষ দেখা আফসানার চোখ একটু হলেও মানুষ দেখে।
-না লাগবে না, আফসানা উত্তর দেয়।
-কেমন আছেন আপা?
-ভালো। আপনি?
-জে ভালো।
দোকানদারটি রোজ রোজ একই প্রশ্ন গুলো করে। অন্যদেরকে কেনো সে করেনা? নাকি সে মেয়ে বলে আলাপ জমানোর চেষ্টা! আফসানা এসবের কিছুই ভাবতে চায়না। কেউ একজন তার প্রতিদিন খোঁজ নিচ্ছে এটা সে বিশ্বাস করতে চায়।

আমরা আফসানাকে বাসে দেখি,মহিলাদের সংরক্ষিত আসনে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। পুরুষদের আসনে বসে শহরটা দেখার ইচ্ছে তার খুব, শাসকের চোখে শহরটাকে দেখবে। খুব ইচ্ছে তার কারোও চোখে চোখ রেখে আদরের শাসনে বলবে, এত দেরী করে আসলে কেনো? আফসানা এখন জানে তার দিকে কতগুলো চোখ তাকিয়ে আছে। হয়তো জানে ছাপান্ন হাজার বর্গ মাইলের সকল পুরুষ চোখই তাকিয়ে আছে এই মুহূর্তে। আফসানা বিশ্বাস করতে চায় এত সবের ভীড়েও কেউ একদিন তার চোখে চোখ রেখে কাজল দাওনি কেনো জিজ্ঞেস করবে। বাস হেলপার ভাড়া চায়।
-আপা ভাড়াটা দ্যান।আফসানা ব্যাগ থেকে টাকা বের করে। টাকা নেওয়ার অজুহাতে বাস হেলপার হাত ধরে। আফসানা বোঝেনা প্রতিদিন ওয়াশিং পাউডার দিয়ে কাপড় কাঁচা নিছক চামড়ার এই হাত দুটো ধরতে কেনো পুরুষরা উদগ্রীব। কই! কেউ তো কোনদিন হাত দুটো ধরে বলল না, আফসানা তোমার এই হাত দুটো ধরে একসাথে অনেক বছর পূর্ণিমা দেখবো।

আমরা আফসানাদের অনেক গুলো কলিগ দেখি। যারা অনেক কেয়ার নেয় আফসানার শাড়ীর,আফসানার চুলের,আফসানার শরীরের রঙের।
-শাড়ীটাতে বেশ লাগছে। এক কলিগ জিজ্ঞেস করে, যে পাশের ডেক্সে বসে আছে।
মুখের হাসি ফুটিয়ে উত্তর দেয় ধন্যবাদ। হাসতেই হবে এটাই নিয়ম। আফসানা জানেনা কেনো তাকে হাসতে হবে? তার হাসার কোনো সুযোগ নেই। ছাপান্ন হাজার বর্গ মাইল জুড়ে এত আততায়ীর তীঘ্ন দৃষ্টির মাঝে ভয় ছাড়া হাসার কোনো সুযোগ কখনো থাকেনা। আফসানা জানে তাকে লক্ষ্য করা হচ্ছে তার চুল থেকে নখ পর্যন্ত। তার মনটাকে কেউ কখনো লক্ষ্য করেতে চায়নি।

আফসানার রাত সন্ধ্যায় হয়, ছাতাটা ব্যাগে গুছিয়ে মেইন রোডে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। সারাদিন বোঝা হয়ে থাকা শরীরটাকে বাসায় ফিরে সঁপে দিতে হবে আরেক শাসকের কাছে। আফসানা তাকে ভালোবাসে, ছাপান্ন হাজার বর্গ মাইলের এত শাসকের চোখ থেকে শরীরটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে শুধু তার জন্য। আফসানার মনটা বেঁচে নেই। আমরা আফসানাদের চিনি, কয়েকহাত পোশাকের মাঝে বন্দী লাখ লাখ আফসানারা।...

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪০

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
নিত্যদিনের চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার অসজ্ঞায়িত সম্পর্কের জীবন কর্ষণের মর্মকথন ৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.