![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিজ্ঞানী নিউটনের জন্ম যদি বাংলাদেশের বরিশালে হত....
আমাদের মহাবিশ্বে কোন কিছু ঘটছে, কেন ঘটছে, তার কারন সম্পর্কে জানতাম না। এই প্রকৃতি সম্পর্কে আমরা ছিলাম অজ্ঞ, ফলে বিভিন্ন কুসংস্কার এসে আমাদের মাথায় ভর করত; যার ফলে আমরা করে বসতাম বিভিন্ন ধরনের জঘন্য অপকর্ম। কুসংস্কারে বিশ্বাস করে আমরা মানুষে মানুষে যুদ্ধ করতাম, নিরর্থক মানুষকে হত্যা করতাম। এক কথায় আমরা ছিলাম অসভ্য। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই পৃথিবীতে অনেক মানুষ এসেছেন, যারা তাদের জ্ঞান বিজ্ঞান দিয়ে এই পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন, দূর করার চেষ্টা করেছেন, মানুষের মধ্যে থাকা কুসংস্কার, মানুষকে বানিয়েছেন সভ্য। এই পৃথিবীকে যারা আলো দান করেছেন, মানুষের ভাবনায় প্রভাব ফেলতে পেরেছেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন বিজ্ঞানী নিউটন। বিজ্ঞানী নিউটন মহাকর্ষ তত্ত্ব, গতির তিন সূত্র, আলোর কনা তত্ত্ব ইত্যাদি আবিষ্কার করে মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞান জগতে বিশাল প্রভাব সৃষ্টি করতে পেরেছেন। সে দিক দিয়ে পৃথিবীর মানুষকে সভ্যতা দানের ক্ষেত্রে তার রয়েছে বিশাল অবদান। আমরা এই মহাবিশ্ব নিয়ে যতটা আধুনিক ভাবে ভাবতে পারছি, বিজ্ঞানী নিউটন জন্ম না নিলে হয়ত সেভাবে ভাবতে পারতাম না। যে কোন ভাল কাজের ক্ষেত্রেই বাধা থাকে, বিজ্ঞানী নিউটনের ক্ষেত্রেও বাধা ছিল। কিন্তু মহা মানবের কাজ, সে বাধাকে উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। বিজ্ঞানী নিউটন যে দেশে জন্ম নিয়েছিলেন, সে দেশে তার কাজে যে বাধা এসেছিল, সে তুলনায় মানুষ তাকে বেশি সমর্থন দিয়েছিল, সহযোগীতা করেছিল, উৎসাহ দিয়েছিল। আমাদের সমাজে একটা কথা প্রচলিত আছে, যে দেশে গুনীজনের কদর নেই, সে দেশে গুণীজন জন্মায় না। কথাটা আসলেই সত্য। তবে কথাটি আমাদের বাংলাদেশের জন্য বেশি সত্য। আমাদের বাংলাদেশে গুণীজনের কদর নাই, সেকারনেই বুঝি আমাদের বাংলাদেশে গুণীজন জন্মায় না। বিজ্ঞানী নিউটন একজন মহাগুনী ব্যক্তি ছিলেন। এখন প্রশ্ন হল, এত বড় গুনী বিজ্ঞানী যদি বাংলাদেশে জন্ম নিতেন, তা হলে কি ঘটত। আমি বরিশালের কালচারে বেড়ে উঠেছি, তাই বরিশাল সম্পর্কেই আমার ধারনা বেশি। ধরি বিজ্ঞানী নিউটনের মত মেধাবী কেউ একজন বাংলাদেশে জন্ম নিল, নাম আক্কাস। এখন চলুন দেখা যাক, এই মেধাবী মানুষ আক্কাস সম্পর্কে তার মা বাবা, আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশি কি মন্তব্য করে সারা দিন। ধরুন, আক্কাসেরা দুই বোন এক ভাই, মায়ের নাম ছখিনা, বাবার নাম আবুল।
আমরা জানি, গুনীজনের আচার আচরন, চাল চলন, স্বাধারন মানুষের থেকে আলাদা হয়ে থাকে। যেহেতু আক্কাস নিউটনের মত মেধাবী, তাই তার আচার আচরনও হবে নিউটনের মত। নিউটন, মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার করতে গিয়ে সারা দিন না খেয়ে আপেল গাছের তলায় খাতা পেন্সিল নিয়ে বসে থাকত, ঝড়ের সময় বাতাসের মধ্যে রাস্তায় রাস্তায় বানরের মত লাফিয়ে বেড়াতো, একটা কাঁচের খন্ড নিয়ে সারা দিন রোদের আলোয় বসে থাকত, ক্লাসের পড়া বাদ দিয়ে পেন্সিল নিয়ে খাতায় যত আজেবাজে ছবি একে বেড়াতো। বরিশালের ছেলে আক্কাস যেহেতু নিউটনের মত মেধাবী, তাই তার আচার আচরণও অনেকটা নিউটনের মত হবে এটাই স্বাভাবিক।
এবার চলুন দেখা যাক বরিশালে জন্মনেয়া আক্কাসকে নিয়ে তার আচার আচারন দেখে মানুষ কি মন্তব্য করে।
প্রথমেই আক্কাসের বাবা আবুল। আক্কাসের বাবা আবুল এসে দেখল তার ছেলে আপেল গাছের পরিবর্তে নারকেল গাছের তলায় বসে আছে সকাল থেকে। লাঠি একটা নিয়ে ছুটে এল আক্কাসের বাবা আর রাগান্বিত কন্ঠে বলতে লাগল, ""হালারপো হালা তুই খারা... এহনই তোর ঠ্যাং ভাইঙ্গা দেতাছি, হেই ব্যান হইতে নাহোইল গাছের গোরায় বইয়া রইছ, তোর কাম নাই, কাম চোরার বাচ্চা কাম চোরা...""
আক্কাস তার বাবার পিটুনি থেকে বাচতে খাতা পেন্সিল নিয়ে নারকেল গাছের তলা থেকে দ্রুত দৌড়ে পালাবে।
আক্কাসের মা সখিনাঃ "মোর পোলাডার যে কি হইছে, কিচ্ছু কইতে পারিনা, জ্বীনে পাইছে না ভূতে... পোলাডারে একটু ডাক্তার কবিরাজ দেহান লাগে.. হারাদিন দেহি খাতা কলম লইয়া নাহোইল গাছের তলে বইয়া থাহে, ল্যাহা পড়াতোনাই,, মানসে খেতি হরছে নি ক্যমমে কম!""
আক্কাসের দুই বোনঃ ভাইয়া ভাইয়া, তুই নাহোইল গাছের গোড়ায় বইয়া যে খাতা গুলা দাগাইয়া নষ্ট হরছ, হেইগুলা দে.. কটকড়ি কিন্না খামু।""
আক্কাসের বন্ধুরাঃ হালারপো হালা আক্কাইসসা, তুই কাইলগো পোঞ্চাস টাহা দিবি, পিকনিক খামু, হালারপো হালা, মোগো লগে খ্যালা বাদ দিয়া রাস্তায় রাস্তায় লাফাও আর নাহোইল গাছের গোরায় এলহা এলহা বইয়া থাহ,,, হালারে মনে হয় ভূতে পাইছে,,, এ ল ল ল. ওর লগে মিসিস না, হেলে মোগোও ভূতে পাইবে।""
পাড়ার চায়ের দোকান দারঃ আবুলল্লার একটা পোলা অইছে বুদ্দি প্রতিবন্ধী, কোন কামের না,,, হারাদিন খালি তানি বানি।""
আক্কাস মাঠে বসে গবেষণা করতে ছিল, কিভাবে আকাশে ওড়া যায়। তার পাশ দিয়া কিছু অপরিচিত লোক যাইতে ছিল। বলল, এই পোলা, আবুইল্লার বাড়ি কোন দিকে?"
কিন্তু আক্কাস শুনতে পাইল না। অপরিচিত লোকরা আবার ডাকল, বারবার ডাকল, কিন্তু আক্কাস কিছুতেই শুনতে পাইল না। শুনিবে কি করে, আক্কাস তো এখন গবেষণা করছে। অবশেষ, অপরিচিত লোকেরা চলে গেল। কিছুক্ষন পর আক্কাসের বাবা আবুল এসে আক্কাসকে কান ধরে মাঠ থেকে বাড়ি নিয়ে আসল। আক্কাস বাড়ি এসে দেখল, ওঝা আর কবিরাজ এসেছে বাড়ি। আক্কাসের বাবা আক্কাসের সাথের জ্বীন ভূত সরাতে ওঝা কবিরাজ খবর দিয়ে নিয়ে এসেছে। ওঝা কবিরাজরা আক্কাসকে ঝার ফুক আর তাবিজ কবজ দিয়ে চলে গেল, বলে গেল, আক্কাস এক সপ্তার মধ্যে ভাল হয়ে যাবে, কিন্তু ওকে ঘরের বাইরে যেতে দেয়া যাবেনা। আক্কাসের বাবা আবুল আক্কাসকে এক সপ্তাহ আটকে রাখল ঘরে। এক সপ্তা পর আক্কাসের মাথা থেকে জ্বীন ভূত নেমে গেল। আক্কাস বুঝতে পারল, এভাবে গবেষনা করা যাবেনা, গবেষনা করতে হবে গোপনে। তাই আক্কাস এবার গোপনে গোপনে গবেষণা করছে। গবেষনা করতে করতে আকাশে ওড়ার কৌশল আবিস্কার করল। এখন তার অন্যের সাহায্য দরকার। তাই সে তার শিক্ষকে জানালো।
শিক্ষক বললঃ আকাম বাদ দিয়া ল্যাহাপরা কর, গত দুই পরীক্ষায়তো ইংরেজীতে আন্ডা পাইছ। অবশেষ আক্কাস কি করবে বুঝতে পারল না। আক্কাস যখন একটু বড় হল, তখন অনেক কষ্টে কিছু টাকা গুছিয়ে তার সূত্র কাজে লাগিয়ে আকাশে ওড়ার যন্ত্র বানালো একা একা। কিন্তু যন্ত্রটা যেই চালু করে আক্কাস আকাসে উড়তে গেল, অমনি কিছুদুর উঠেই ঠাস করে নিচে পড়ে গেল। আক্কাসের পা একটা গেল ভেংগে। আক্কাস এখন হাসপাতালে ভর্তি। আক্কাসের বাবা আবুল বলল, " হালার পোলায় মরলে আরো খুশি অইতাম"
আক্কাসের মা বলল"" পোড়া কপাল মোর, মানসের পোলারা কত ভাল অয়, আর মোর কপালে জোটছে প্রতি বন্দী পোলা,, সব কপালের খ্যালা।"
এরপর আক্কাসের আর লেখা পড়া হল না। আক্কাসের বাবা জানিয়ে দিয়েছে, সে তার ছেলেরে কামাই করে খাওয়াতে পারবে না। সুতারাং আক্কাস এবার নিজে কাজ করে আয় করতে লাগল। নিজের আয় দিয়ে নিজের আর পরিবারের ভরন পোষন করতে লাগল। তাদের সংসার ভালই চলছে। আক্কাসের বাবা আবুলও ভাল খুশি। আক্কাসের বাবা ভাবল তাদের ছেলে ভাল হইয়া গেছে, জ্বীন ভূতের আচর এখন নাই। যাইহোক, আক্কাস কিন্তু থেমে নাই। সে কাজের ফাঁকে ফাঁকে গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছে, কোন কিছু আবিস্কার করার জন্য। অবশেষে সে কিছু আবিস্কার করতে পারল। সে তার আবিস্কারগুলো বই আকারে প্রকাশ পেল। তার বইগুলো কিছু মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেল, কিছু মানুষ সেটাকে প্রচণ্ড অপছন্দ করল। আক্কাসের গ্রামের মুয়াজ্জিন তার আবিষ্কার সম্পর্কে জানতে পেরে বলল, " হালায় একটা নাস্তিক" আক্কাস আস্তে আস্তে নাস্তিক পরিচিতি পেল সারা দেশে। নাস্তিক বিরোধীরা আক্কাসকে হত্যা করার পরিকল্পনা করল। কিছু মানুষ আক্কাসের বই নিষিদ্ধ করার আন্দলন করল। চাপের মুখে আক্কাসের বই নিষিদ্ধ করে দিল সরকার। কিছুদিন পর আক্কাসের লাশ পাওয়া গেল রাস্তায়, রক্তাক্ত অবস্থায়। অনেক মানুষ বাহ বাহ দিতে লাগল নাস্তিকবাদীকে হত্যা করার জন্য।
আক্কাসের মা কাঁদতে কাঁদতে বললঃ হায়রে মোর পোড়া কপাল্লাইয়া পোলা, ক্যা যে তুই নাস্তিক অইতে গেলি আর ক্যাইবা তোরে মানষে মারতে আইব।
এরপর আক্কাসের আবার জন্ম হল, তবে বাংলাদেশে না, ইংল্যান্ডে। সেখানে আক্কাসের নাম, স্যার আইজ্যাক নিউটন।
২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪৬
একটি পেন্সিল বলেছেন: আমাদের বাংলাদেশে অনেক জ্ঞানী গুনি জন্মেছেন, কিন্তু তারা নিজ দেশে অবহেলিত হয়েছেন; কিন্তু অন্য দেশে তারা সম্মান পেয়েছেন। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি কি অভেলিত?
৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৪৮
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: আমাদের একটা সমস্যা হল - আমরা তাকেই কদর করি যে কিছু অর্জন করতে সফল হয়েছে। কিন্তু, কখনোই তাকে কদর করি না - যার মাঝে সামর্থ্য আছে, যে কিছু করতে পারবে - এমন মানুষদেরকে।
এইজন্যই যা হয়, এই সামর্থ্যবান মানুষগুলোই আস্তে আস্তে এই পরিবেশে হারিয়ে যায়। তাদের আর কিছু করা হয় না। এই পরিবেশটা বদলালেই সে তার সামর্থ্যকে সাফল্যে রূপ দিতে পারে।
আমরা কদর দেই ঠিকই জ্ঞানীদের, কিন্তু একটু পরে দেই। আর, যেহেতু - ঐ মানুষগুলো জ্ঞানী - তাই তারা কদর পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে ততটা মন ভার করে না। সফল হওয়ার পর বা আগে, সবসময় নিজের মাতৃভূমিকেই স্মরণ করে। মাতৃভূমিকে সম্মানিত করতে চায়।
আর, এইসব কারণেই - আমাদের এই কদর না করতে পারার অদক্ষতাও কখনো ঠিক হয়নি।
নিউটন না শুধু, পৃথিবীর বেশির বিজ্ঞানীই - আমাদের কালচারে থাকলে কখনোই বিজ্ঞানী হয়ে উঠতে পারতো না। ইভেন, দেখা যেত - তারাও তখন - অন্য কারো কর্মকান্ডকে অনুৎসাহী করতো।
৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:২৫
একটি পেন্সিল বলেছেন: রক্তিম দিগন্ত কে অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আমিও এটাই বুঝাতে চেয়েছি।
৬| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:২৬
একটি পেন্সিল বলেছেন: আমারতো অবহেলিত হবার মত কোন যোগ্যতাই নাই @ চাঁদগাজী @ ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৯
ইফতি সৌরভ বলেছেন: আক্কাসের আবার জন্ম হল, তবে বাংলাদেশে না, ইংল্যান্ডে। সেখানে আক্কাসের নাম, স্যার আইজ্যাক নিউটন।
কথা সত্য! একমত