নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ঘুরতে ভাল লাগে। ভাল লাগে প্রকৃতি বিজ্ঞান নিয়ে ভাবতে। ভাল লাগে নিজেকে নিজের মধ্যে হারিয়ে ফেলতে।

একটি পেন্সিল

একটি পেন্সিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের দেশে জব করলে সম্মান আছে, লেখা পড়া করলে বাস কন্ট্রাক্টাররাও বাস থেকে ঠেলে নিচে ফেলে দেয়..

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৫



আমাদের দেশে জব করলে, টাকা পয়সা আয় করলে সম্মান আছে, লেখা পড়া করলে তার কোন সম্মান নাই। যারা লেখা পড়া করে, তাদের বাসা ভাড়াও দিতে চায় না শহরের বাড়িওয়ালারা।
কলেজে থাকতে বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য ফোন করেছিলাম এক বাড়িওয়ালার কাছে। তার বাসায় না গিয়েই প্রশ্ন করে করে বাড়ি সম্পর্কে একটা ধারনা নিয়ে নিলাম, বাসাটা পছন্দ মত হয় কিনা। যদি বাসা ঠিকঠাক আছে বলে মনে হয়, তাহলে দেখতে যাব, না হয় না। কিন্তু পরিকল্পনা আর ঠিক রইল না। বাড়ি ওয়ালা হঠাৎ প্রশ্ন করলেন, আপনি কি করেন? আমি বললাম, আমি লেখাপড়া করি।
শুনে মুখ বিকৃতি করে কিছু একটা বললেন, তারপর আমার কোন কথা না শুনেই ফোন কেটে দিলেন। কিছু না বলে ফোন কাটার কারনে আমি আবার ফোন দিলাম। ফোন রিসিব করেই লোকটা বলল, শোনেন আমরা ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দিনা। বলেই আবার ফোন কেটে দিলেন। আমি আবার ফোন দিলাম, কিন্তু লোকটা কেন যেন ফোন রিসিভ করল না। তারপর রাগ করে আর ফোন দিলাম না লোকটাকে। ভাবলাম, এত বড় শহর, বাসা ভাড়ার অভাব নেই, কেন একজন কে বার বার ফোন করে বিরক্ত করব।
আসলে আমার এক চাচি তার ফেমিলি নিয়ে থাকবেন বলে বাসা ভাডা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমাকে। বাসা কেমন হবে, কয় রুম হবে তাও বলে দিয়েছিলেন।
আমরা যখন লোকাল বাসে যাই, তখন প্রতিদিন একটা দৃশ্য দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। সেটা হল, ছাত্র ছাত্রীদের কেউ বাসে তুলতে চায় না। তুললেও বসতে দিতে চায় না। অনেক সময় বাস থেকে ঠেলে ফেলেদেয় কন্টাক্টাররা। আবার যদি বাসে নিতে রাজি হয়, তাহলে আগেই বলে নেয়, পকেটে টাকা আছে তো, টাকা ঠিকমত থাকলে ওঠেন কম থাকলে নেমে যান। দশ টাকা ভাড়া দিতে হবে, পারলে থাকেন, না হয় নামেন।
অনেক উন্নতে দেশ আছে যেদেশের মানুষ ছাত্র ছাত্রীদের অনেক সম্মান করে থাকে। লেখাপড়াকে তারা দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি বলে মনে করে। পথে কোন ছাত্রছাত্রীকে যদি তারা দেখে গাড়ী না পেয়ে স্কুল মিস করতে যাচ্ছে, তাহলে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করে। অনেক সময় নিজের গাড়ীতে নিয়ে স্কুলে পৌছে দেয় তারা। আর যদি কিছু সাহায্য করতে না পারে, আপসোস করে ছাত্রটি স্কুল মিস করতে যাচ্ছে বলে। আমরা যেমন একজন রোগীকে বা একজন বয়স্ক মানুষকে দেখলে যেভাবে মূল্যায়ন করি, ঠিক সেভাবে। আহারে ছেলেটা স্কুল মিস করতে যাচ্ছে, লেখা পড়া কত ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে ওর! কারন, তারা লেখাপড়ার গুরুত্ব বুঝতে পারেন। আমাদের এই আধুনিক যুগে, লেখপড়ার লেখা পড়ার সম্মান যেন দিন দিন কমছে। অথচ অশিক্ষার যুগে এদেশে যদি কেউ ফাইব পাশও করে বসত, দশ গ্রামের লোক তাকে দেখার জন্য আসত।
আমি এস এস সি তে মোটামুটি ভাল রেজাল্ট করেছিলাম। তখন সদ্য এস এস সি পাশ করেছি, তার মানে তখন জ্ঞান বুদ্ধিতে ছিলাম কাঁচা। একদিন আমাদের গ্রামের এক লোক আমাকে বলল, এসব লেখপড়া টেখাপড়া করে কি হবে, চাকরী পাওয়া যায় না, লেখা পড়া করে মানুষ চাকরী না পেয়ে ঘোড়ার ঘাস কেটে বেড়াচ্ছে। আমি কোন কথা বললাম না। কি বলব, লোকটা যা বলছে, তাতো ঠিকই। অনেকগুলো এক্সাম্পলও পেয়ে গেলাম মনে মনে, আসলেইতো আমাদের গ্রামে অনেকেইতো লেখাপড়া করে বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে, চাকরী পাচ্ছেনা। তাহলে লেখাপড়া করে কি হল! আমাদের গ্রামের ওই লোকটা এই চিন্তাভাবনার উপর ভিত্তি করেই তার পাঁচ পাঁচটা ছেলেকে আগ্রহ নিয়ে লেখা পড়া করান নি। আমার তখনও এই চিন্তা করার ক্ষমতা আসেনি যে, একটি গ্রামে পাঁচজন মানুষ শিক্ষিত থাকা আর পাঁচ জন মানুষ অশিক্ষিত থাকার মাঝে পার্থক্য কতটুকু। তবে আস্তে আস্তে উপলব্ধি করতে শিখেছি সব কিছু।
আমাদের গ্রামের ওই লোকটার মত অসংখ্য মানুষ আছে, যারা লেখা পড়া নিয়ে নেগিটিভ চিন্তা করে। করবেইতো, তারা বাইরের চোখ দিয়ে যেটা দেখবে সেটাইতো বলবে! তাদের ভেতরের চোঁখের পাওয়ারতো কম। তাদের পূর্বপুরুষরা তাদের ভেতরের চোঁখটাকে আলোকিত করে যান নি।
আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে অনার্সে ভর্তি হয়েছি, তখন আমার সম্পর্কে জানতে চেয়ে কিছু মানুষ যখন জানতে পারে যে আমি চাকরী না লেখা পড়া করছি- তখন তাদের কাছ থেকে লেখা পড়া নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়। যেমন তারা বলে, এত টাকা পয়সা খরচ করে লেখা পড়া করে কি হয়, চাকরী পাওয়া যায় না। সব ক্ষেত্রেই মানুষের ধারনা, লেখাপড়া বুঝি চাকরী পাওয়ার জন্য করতে হয়। আমি তাদের পালটা প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা লেখা পড়া কি মানুষ শুধু চাকরীর জন্য করে? তারা বলল, তাছাড়া কি? আমি তাদের কি করে বুঝাব, বুঝাতে গে সে অন্তত অ আ ক খ থেকে শুরু করতে হবে। কিন্তু আমার ততটা ধৈর্য বা সময় কোনটাই না।
আমি বললাম, আচ্ছা চাচা আমি লেখা পড়া করতে এ পর্যন্ত কত টাকা খরচ করেছি বলে মনে হয়। উত্তর, জানিনা। আমি মোটামুটি একটা হিসাব দিয়ে বললাম, আমি যে এত টাকা এখন পর্যন্ত খরচ করেছি, তার একটাকাও লস হয়েছে বলে মনে হয় না। তারপর বললাম, এই টাকার পরিমানটতো অনেক কম, যদি এর চেয়ে বেশি খরচ করে, এমন কি আমাদের জমিজমার এক অংশ বিক্রি করেও লেখাপড়া করতে হত, তবুও তার একটাকাও লসের মধ্যে পরত না। শহরে অনেক ধনী মানুষ আছে যারা প্রতি মাসে সন্তানের লেখা পড়ার পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করার জন্য নয়, সন্তানকে মানুষ বানানোর জন্য।
তারপরেও তাদের প্রশ্ন লেখাপড়ার জন্য মানুষ এত টাকা খরচ করে কেন?
আমি বললাম, আমরা যে কারনে খাই, ঘুমাই, সেকারনেই আমাদের লেখা পড়া করা প্রয়োজন। মানুষের চাকরী আর টাকার জন্য লেখা পড়া করা উচিৎ নয়, বরং লেখা পড়া করার জন্যই চাকরী করা যেতে পারে।
আমি আমার অপরিপক্ব জ্ঞানে সং ক্ষেপে আর কি বলতে পারি। এই অল্প কথায় তারা কি বুঝতে পেরেছে আমি নিজেই জানিনা। তবুও একটু হলেও যদি তারা কিছু বুঝে থাকে তবে আমি সার্থক। কিন্তু আমার ব্যর্থতা, তাদের লেখাপড়ার গুরুত্ব বোঝানোর মত ধৈর্য আমার ছিলনা। শেষ কথা, এ জাতীর তখনই উন্নতি হবে যখন তারা লেখাপড়াকে অনেক বেশি সম্মানের চোখে দেখবে, লেখাপড়ার গুরুত্ব বুঝতে পারে। লেখা পড়া মানুষের জ্ঞান বাড়ায় আর সেই জ্ঞান পৃথিবী জুড়ে আলো ছড়ায়, এটা সবার বুঝতে হবে। লেখা পড়ার কারনে কোন জাতী কখনও পিছিয়ে যায়না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:০৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভাই, আপনার এই লেখা পড়ে কিছু সমস্যার কথা জানলাম। কিন্তু এই সমস্যাগুলোর কারণ কী, তা' জানতে পারলাম না।


ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৩

একটি পেন্সিল বলেছেন: আসলে লেখার মধ্যে কারনের কথা বলা হয়ে গেছে এক হিসেবে। যেমন লেখা পড়া নিয়ে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারনা তৈরি হয়েছে, লেখা পড়া করে চাকরী পাওয়া যায় না বেকার ঘুরতে হয়, অযথা টাকা নষ্ট ইত্যাদি। তাছাড়া যারা লেখা পড়া করে বেকার রয়েছে, তাদেরও সমস্যা আছে, তারাও বলে লেখা পড়া করে কি হল! এভাবেক নেতিবাচক ধারনাগুলো ছড়াচ্ছে।

৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫৯

চাঁদগাজী বলেছেন:




আমাদের সব সন্তানদের ফ্রি পড়ানোর মত ও চাকুরী দেয়ার মত সম্পদ জাতির কাছে আছে; কিন্তু যারা আয় করার ও খরচ করার বড় পদে বসে আছেন, উনারা দক্ষ নন; উনারা অনেকই ছাত্র রাজনীতিবিদ ছিলেন, এরা মোটামুটি অপদার্থ।

৪| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০৭

একটি পেন্সিল বলেছেন: ঠিক বলেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ চাঁদগাজী।

৫| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

প্রামানিক বলেছেন: এদেশের নীতি নির্ধারকদের কারণে দেশে বেকার বাড়ছে।

৬| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২৬

একটি পেন্সিল বলেছেন: সহমত। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.