![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীতে এমন কোন সমাজ থাকা প্রায় অসম্ভব যেখানে কুসংস্কার নেই। কুসংস্কারবিহীন সমাজ থাকা প্রায় অসম্ভব হলেও, কুসংস্কারবিহীন ব্যক্তি থাকা অসম্ভব নয়। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের সবার মধ্যেই কম বেশি কুসংস্কার রয়েছে, যা অনেকক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই বুঝতে পারিনা; বুঝতে পারলেতো কুসংস্কারে বিশ্বাস করতাম না-এটাও ঠিক!
কুসংস্কারগুলোর মধ্যে যেটাকে আধুনিক কুসংস্কার বলা যায়, তার নাম বৈজ্ঞানিক কুসংস্কার, আবার প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন ধর্মের বা বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে যে কুসংস্কারগুলো সামাজিকভাবে বিবর্তিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে, তা সামাজিক কুসংস্কার। বৈজ্ঞানিক কুসংস্কার সমাজের জন্য ক্ষতির তেমন কারন না হলেও, সামাজিক কুসংস্কারগুলো আমাদের সমাজে ভয়ানক রূপে বিরাজ করছে। আর তা মানুষের জীবন, অর্থনীতি, সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। এমনকি, একমাত্র কুসংস্কারের কারনেই পৃথিবীতে অনেক নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিদিন। এক সময় হিন্দু সমাজে সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল যার শিকার হয়ে বহু নিরীহ নারীকে প্রান হারাতে হয়েছে।
বর্তমান আধুনিক যুগেও কুসংস্কারের প্রভাব কম নয়, আফ্রিকার বিভিন্ন উপজাতীদের মধ্যে প্রচলিত কুসংস্কারগুলো দেখলে আপনার গা শিউরে উঠবে। তারা তাদের কাল্পনিক দেবতাকে খুশি করার জন্য কত কিছুই না করছে। কুসংস্কারে বিশ্বাস করে কিভাবে একজন মানুষকে রক্তাক্ত করা হচ্ছে, কিভাবে মরন যন্ত্রণাময় খেলায় মেতে উঠছে, তা দেখলে ভয়ে আপনার গা শিউরে উঠবে। মায়া উপজাতীদের উপর নির্মিত Apocalypto নামক একটা ছবি আছে যেটায় অত্যন্ত নিখুঁত ভাবেই বিভিন্ন ভয়ংকর কুসংস্কারের দৃশ্য তুলে ধরতে পেরেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক। কুসংস্কার নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি দেখলে রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারবেন না আপনি। অবাস্তব আর ভয়ানক অনেক কিছু চলচ্চিত্রে দেখানো হয়, কিন্তু পৃথিবীতে প্রচলিত ভয়ংকর কুসংস্কারগুলোতো আর চলচ্চিত্র নয়।
যারা ডিসকোভারী চ্যানেলে অনুষ্ঠান দেখেন, তাদের হয়ত এই ভয়ানক দৃশ্যগুলো দেখার অভিজ্ঞতা আছে। তাছাড়া একটা অনুষ্ঠান হত ডিসকোভারী চ্যানেলে, Taboo India নামে, যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্ডিয়ায় বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে প্রচলিত কুসংস্কার গুলোকে তুলে ধরা হয়। এসব কুসংস্কার দেখে আধুনিক মানুষ হয়ে আপনার অনুভুতি এমন হবে যে, হাসবেন না কাদবেন বুঝতে পারবেন না। তবে আফ্রিকায় প্রচলিত ভয়ানক কুসংস্কারের তুলনায় তা কিছুই না। অনেক দিন ধরে ডিস্কোভারী চ্যানেলে অনুষ্ঠান দেখা হয় না, Taboo India এখনও প্রচারিত হয় কিনা জানিনা। যদি প্রচারিত হয়, তবে দেখবেন, আলাদা মজাতো পাবেনই, সেই সাথে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। আমি কুসংস্কার শিক্ষার কথা বলছি না, আমি বলছি, অনুষ্ঠানটি দেখার মাধ্যমে কোনগুলো কুসংস্কার আর কোনগুলো কুসংস্কার নয় তা জানতে পারবেন। অবশ্য একথা এখানে না বললেই হত। কারন যারা ব্লগ ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে কুসংস্কার না থাকাটাই স্বাভাবিক।
অনেকেই ভাবতে পারেন
হঠাৎ করে কুসংস্কার নিয়ে লেখতে বসার কারন কি?
আমি আজ অনেক দিন পর বাগেরহাটের খান জাহান আলী মাজারে গিয়েছিলাম। অনেক ভির সেখানে, লোকজন আসছে যাচ্ছে। আমার জানা মতে সব সময় এরকম ভির থাকেনা। নিশ্চয় আজ কোন দিবস টিবস ছিল মাজারের। তাই এত লোকজনের আনাগোনা। কি দিবস হতে পারে তা জানার প্রয়োজন মনে করলাম না, তাই কাউকে প্রশ্ন করে জেনেও নিলাম না। যে দিবসই হোক সেটা জেনে আমার কাজ নেই, কারন এখানে সবাই যার জন্য আসে আমি তার জন্য আসিনায়। আমি এসেছি পর্যটক হিসেবে ভ্রমন করতে।
আমি এখানে এসে অনেক ধরনের কুসংস্কার দেখতে পেলাম, যা আমার মনে নাড়া দিয়ে গেল। কিন্তু মন খুলে বলার মত কাউকে খুজে পেলাম না। তাই কুসংস্কার নিয়ে লিখতে বসা। আমার কেউ না থাকলেও ব্লগাররা আছেন, যাদের আমি মন খুলে অনেক কিছু বলতে পারি।
আমি শত মানুষের ভিরে বসার জন্য একটা যায়গা পেলাম, যায়গাটা খানজাহান আলীর দিঘির পাশে অবস্থিত একটা পাকা শিড়ি।
হঠাৎ দেখলাম, কিছু মহিলা পুরুষ কয়েকটা মুরগী নিয়ে এসে দিঘিতে ছুড়ে মারতে লাগল। মুরগীরা সাতার কাটতে পারেনা ঠিকমত আর তাদের গা থাকে লোমে ভরা, তাই বিড়াল ভেজা হয়ে গেল সবগুলো। একটা মুরগীতো সাথে সাথে মারাই গেল। একজন এসে জিজ্ঞেস করল, এগুলো কি করছেন? তারা সবাই বলল, মাজারের কুমিরের উদ্দেশ্যে মুরগী মানত ছিল। আপনারা যারা খানজাহান আলীর মাঝারে গিয়েছেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন, মাজারের দিঘিতে কয়েকটি কুমির আছে। আর এই কুমিরকে ঘিরেই ফকিরদের রমরমা ব্যবসা চলে। একটা মুরগী তারা মানুষের কাছে কয়েকশো বার বেচাকেনা করে নিজেদের পকেট ভারী করে আর কখন দেখে মুরগীটি এর হাত ওর হাত যেতে যেতে আধমরা হয়, তখন সেটাকে রান্না করে ভোজন করে তারা। যাইহোক ঘটনায় ফিরে আসি। লোকজন দিঘিতে মুরগী ছুড়ে মেরেছিল কুমিরকে খাওয়ানোর জন্য, কিন্তু কুমির বাবাজির তো খোজ নেই। তার পেটতো ভরা, কত খেয়ে পারা যায়! তাই বেচারা চুপটি মেরে কোথাও বসে আছে, আর কি! একটি কুমির সারা দিনে সর্বোচ্চ আধা কেজি মাংশ খেতে পারলে তার ভোজন শেষ হয়ে যায় সারা দিনের মত। আর দিঘিতে কুমির আছে দুই থেকে তিনটা। সে হিসেবে এক দেড় কেজি মাংশ হলেই তাদের ফুল ভোজনের কাজ হয়ে যায়। কিন্তু মাজারে সারা দিন ভর মানতের উদ্দেশ্য হাস মুরগী, ছাগল ভেড়া এমনকি কখনও কখনও গরু নিয়েও হাজির হয় মানুষ। আর সেগুলো বিভিন্ন কৌশলে ফকিররা নিজেদের হাত করে। এভাবেই চলতে থাকে ব্যবসা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন মানুষজন মাজারে এভাবে অযথা মানত করে থাকে, কেনই বা মানুষ অনেক দূর দুরান্ত থেকে এসে এত টাকা খরচ করে মানত করে? এক কথায় এর উত্তর, কুসংস্কার! আর কুসংস্কারগুলো আফ্রিকার মানুষের মধ্যে প্রচলিত কুসংস্কারের মতই!
কেউ ব্যবসায় সফল হবার উদ্দেশ্যে, কেউ রোগ মুক্তির উদ্দেশ্যে, কেউ প্রেম ভালবাসায় সফল হবার উদ্দেশ্যে, কেউ লটারী জেতার উদ্দেশ্যে এভাবে মাজারে মানত করে থাকে। এরকম হাজার হাজার উদ্দেশ্য পূরনের লক্ষ্যে মানুষ দূর দূরান্ত থেকে এসে মানত শোধ করার জন্য। কত ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষ আসে, তা বলে শেষ করা যাবেনা। যতই যা হোক এগুলো যে কুসংস্কার তা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন নেই।
বিভিন্ন কারনে মানুষের মধ্যে কুসংস্কারের জন্ম হয়। অশিক্ষা কুশিক্ষা, অভাব অনটন হল তাদের মধ্যে অন্যতম।
২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০০
একটি পেন্সিল বলেছেন: সব ধর্মেই কম বেশি কুসংস্কার আছে। ধন্যবাদ বিবেক ও সত্য
৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩৫
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: মায়ান উপজাতি আফ্রিকার? এই তথ্য কোথায় পেলেন? জানতাম তো ওরা মেসো আমেরিকান।
বৈজ্ঞানিক কুসংস্কার বলতেও আপনি কী বুঝাতে চাইছেন? সেটাও পরিষ্কার বলা দরকার। বিজ্ঞান কুসংস্কারের ঠিক উল্টোটা বলে জানে সবাই।
আর যে ঘটনাটির কথা বললেন - সেটিকে আমার মনে হচ্ছে মানুষগুলোর নিজেদের উপরই বিশ্বাস কম। তাই এই অদ্ভুত রীতি তারা বিনাবাক্য ব্যয়েই মেনে যাচ্ছে। নিজেদের প্রতি আত্নবিশ্বাস না আনতে পারলেই মানুষ কুসংস্কারের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০২
একটি পেন্সিল বলেছেন: ঠিকই ধরেছেন, আসলে ওই লাইনটায় ভূল ছিল, ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আর বিজ্ঞান কুসংস্কার বলতে প্রচলিত অর্থে বৈজ্ঞানিক কুসংস্কারকে বোঝায়, একই কথা। বিজ্ঞানের মধ্যে অনেক কুসংস্কার আছে, খোঁজ খবর নিলেই জানতে পারবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৬
বিবেক ও সত্য বলেছেন: আপনি যে ধর্মে বিশ্বাস করেন সেটা যে কুসংস্কার না তার গ্যরান্টি কিভাবে দিবেন?