![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলাম মানুষের সহজাত ও প্রকৃতিগত একটি ধর্ম। ইসলাম সুস্হ ও শালীন ধারা সংস্কৃতিতে সযতনে লালন করে। যে কোনো ধরনের সুস্হ, সুন্দর, মননশীল সংস্কৃতির পক্ষে ইসলামের অবস্হান। সংস্কৃতির উৎসব বা উপাদান বিভিন্ন হতে পারে। তবে সংস্কৃতির প্রধান উপাদান তিনটি-এক. ভুখন্ড, দুই. ভাষা এবং তিন. ধর্ম। যে ধর্মের ওপর ভিত্তি করে সংস্কৃতির উৎপত্তি সেটা সে ধর্মেরই সংস্কৃতি। প্রত্যেক ধর্মেরই নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি থাকতে পারে। নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমেই সেই ধর্মের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যবোধের প্রকাশ ঘটে। এর আবরণেই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর পরিচয় পর্বটাও সম্পন্ন হয়ে যায়। সে হিসেবে বাংলাদেশে বাস করে যারা বাংলায় কথা বলে এবং ইসলামী অনুশাসন মেনে চলে তাদের সংস্কৃতিতে বাংলাদেশের মুসলিম সংস্কৃতি বলতে হয়। পয়লা বৈশাখ আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপুর্ণ দিন। এদিনটিকে বাংলাদেশের মুসিলম সংস্কৃতি বলাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। কেননা বঙ্গাব্দ বা বাংলা সাল প্রবর্তনের পেছনে অবদান মুসলমানদেরই। মুসলমানদের প্রয়োজনে মুসলিম সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করেই এর উৎপত্তি।
সাল ও তারিখ গণনার শুরুর ইতিহাস সঠিকভাবে জানা না গেলেও এ কথা বলা যায়, এটা প্রাচীন যুগ থেকে চলে আসছে। আর প্রয়োজনের তাগিদেই এর উৎপত্তি। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ জাতীয় প্রয়োজনেই জন্ম হয়েছিল হিজরি সালের। সে যুগে অন্য কোনো সন গণনা না করে হিজরি সন গণনা করার পেছনে ছিল ধর্মীয় অনুভুতি। হজরত ওমর, (রা.) এর সময় থেকে প্রবর্তিত হয় হিজরি সাল। তখন খেজিস্তানের বাদশা হরমুজান তার থেকে ‘হরমুজ সন’ গণনার প্রস্তাব করে। কিন্তু আলী (রা.) প্রস্তাব করেন হিজরতের দিন থেকে হিজরি সাল গণনা করা হবে। আলী (রা.) এর প্রস্তাবই সবার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়। পরবর্তী সময়ে তা গৃহীত হয় এবং হিজরি সাল গণনা শুরু হয়। ১০০৩ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৬০০ হিজরিতে বখতিয়ার খিলজি বঙ্গ বিজয় করেন। তখন এদেশেও হিজরি সালের গণনা চলে। প্রায় ৩৬৩ বছর পর্যন্ত ভারতবর্ষে এ তারিখের প্রচলন থাকে।
তদানীন্তন সময়ে এ অঞ্চলটি কৃষিনির্ভর। সে সময় জমিতে ফসল উৎপাদনের সময়ের ওপর ভিত্তি করে জমির খাজনা আদায় করা হতো। এ ক্ষেত্রে হিসাব করা হতো হিজরি সালের। কিন্তু হিজরি সাল চন্দ্রমাসভিত্তিক হওয়ায় তা কোনো ফসলি মৌসুম মেনে চলত না। তাই খাজনা আদায়ের হিসাব-নিকাশ সংরক্ষণে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হয়। তখন ছিল মোগল বাদশা সম্রাট আকবরের শাসনামল। তার শাসনামলের ২৯ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এ সমস্যা সমাধানের পন্হা নিয়ে কথা ওঠে। এর আশু সমাধান বের করতে আকবর তার রাজসভার রাজজ্যোতিষ বিজ্ঞপন্ডিত ফতেহউল্লাহ সিরাজীকে নির্দেশ দেন। ফতেহউল্লাহ সম্রাটের নির্দেশ অনুযায়ী সৌরমাসভিত্তিক ফসলি সাল প্রণয়ন করেন। সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ ১৪ ফেব্রুয়ারি মোতাবিক ৯৬৩ হিজরি ২৮ রবিউস সানি। সম্রাটের সিংহাসনে আরোহণের এ স্মৃতিকে চিরভাস্বর করে রাখতে ফতেহউল্লাহ ১৫৫৬ সালের ১১ এপ্রিলকে পয়লা বৈশাখ ধরে ৯৬৩ সনকে মুল ধরে ফসলি সন গননা শুরু করন। ১৫৮৫ খিষ্টাব্দ এই ফসলি সন ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। পরবর্তী সময়ে এ ফসলি সনই বাংলা সাল বা বঙ্গাব্দ নাম ধারণ করে। এখানে বঙ্গাব্দের সঙ্গে হিজরি সনের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। ৯৬৩ হিজরিতে জন্মলাভ করে ৯৬৩ বছর ধরে গণনা শুরু অর্থাৎ জন্ম থেকেই বাংলা সালের বয়স ৯৬৩ বছর। তাই হিজরি সনকে বাংলা সনের ভিত্তি বলা চলে। যেহেতু চন্দ্রবর্ষ ও সৌরবর্ষের মধ্যে ১১ দিনের পার্থক্য রয়েছে এজন্য এ দুটি মধ্যে পরবর্তী সময়ে সমতা রাখা সম্ভব হয়নি।
এ থেকে আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, বাংলা সনে মুসলিম সংস্কৃতিরই একটি অঙ্গ। সুতরাং পয়লা বৈশাখ উদযাপনও মুসলিম সংস্কৃতি অনুযায়ী হওয়াই
বাঞ্ছনীয়। আনুষ্ঠানিকভাবে পয়লা বৈশাখ পালন করতে হলে ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ীই করা উচিত। সাংস্কৃতিক ভাবনায় ইসলাম নির্দেশিত নীতিমালা অনুসরণই এক্ষেত্রে যথাযথ।
©somewhere in net ltd.