নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Always try to think positive

লামাজ

সরল সোজা

লামাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধূমকেতু ``লাভজয় ও আইসনে আকাশের সাজ"

২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২৩

এক জীবনে একই সময়ে দুটি ধূমকেতু দেখার সৌভাগ্য কয়জনের হয়! হলেও সবাই দেখতে পায় না। পৃথিবীতে ৭০০ কোটি মানুষ হলেও সাত কোটি মানুষও দেখতে পায় কি না সন্দেহ। প্রতি রাতে আমরা আকাশ দেখি; কিন্তু কোনটি কোন তারা কয়জন চেনেন? চিনতে চাইলেও কি সহজ? কে চেনাবে গ্রামগঞ্জের মানুষকে। কার দায় পড়েছে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর!



অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগ ১১ নভেম্বর কালের কণ্ঠে খবরটি দিল বাংলার আকাশে শতাব্দীর উজ্জ্বলতম ধূমকেতু 'আইসন'। শিরোনাম দেখেই আমি আকাশ থেকে পড়লাম। আকাশ, তারা, জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে আমার আকর্ষণ পোড় খাওয়া প্রেমিকের মতো। অথচ এই 'আইসন' ধূমকেতু ২০১২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তলস্তয়, গর্কি, মিখাইল শোলকভ ও লেনিনের দেশে প্রথম শনাক্ত করা হয়ে গেছে। ও, সেদিন আমি ছিলাম ঢাকাতেই। কিন্তু কোনো পত্রিকায় দেখিনি। এখন পত্রিকায় পড়ে জানতে পারলাম একটি নয়, দুটি। অন্যটির নাম 'লাভজয়'। সেটিও দেখে ফেলেছে অনুসন্ধিৎসু। নামটিও সাথর্ক। অস্ট্রেলিয়ান পর্যবেক্ষক টেরি লাভজয়কে ধন্যবাদ। ২০১১ সালের ২৭ নভেম্বর তো আমি ঢাকায় ছিলাম। পত্রিকায় দেখেছি বলে মনে পড়ে না তো! এখন অস্ট্রেলিয়ার সেরা গল্প লেখক আমার সমসাময়িক হেলেন গার্নার, বেভারলি ফার্মার, ফ্রংক মুরহাউজ, টিম উইনটন এবং ১৯৬৬ সালে জন্ম নেওয়া লেখকদের কী জবাব দেব!



অনুসন্ধিৎসুর সেলিমকে ফোন করে জানলাম, ১৫ নভেম্বর রাতে তাঁরা ঢাকার নক্ষত্রপ্রেমিকদের ধূমকেতু দেখার জন্য ভালোবাসার ব্যবস্থা করছেন! বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে মাঝরাতের থেকে শেষ রাতে। হরতালের দুর্বিষহ শহরে? গ্রামে চলে যেতে পারি কিন্তু সেখানে টেলিস্কোপ নেই। খালি চোখে দেখা যাবে, কিন্তু চেনাবে কে? আমি শৌখিন অনুসন্ধানী। নক্ষত্রলোক সম্পর্কে তারা-পরিচিতি বইয়ের লেখক প্রাতঃস্মরণীয় মোহাম্মদ আবদুল জব্বারই আমার পথপ্রদর্শক। শতাব্দীর উজ্জ্বলতম লাইসন এখন ভোরের পুব আকাশে কন্যা রাশির (ভার্গো) তারামণ্ডলের কিছুটা নিচে ডানে বর্তমানে ছুটছে। আমার মতো আনাড়ির মতে কন্যা রাশির দিকে ছুটে চলেছে। সেই ছোটা বা গতি পৃথিবীর মতো আমরা বুঝতে পারি না। অনুসন্ধিৎসু ধূমকেতু দেখার আয়োজন করেনি।



আর লাভজয় ধূমকেতু সিংহ রাশির (লিও) তারামণ্ডল থেকে লঘু সিংহ (লিও মাইনর) পার হচ্ছে। সাধারণ দর্শকের মতো বলা যায়, পুব থেকে পশ্চিমে ছুটছে। বারোটি রাশি মণ্ডল সূর্যপথেই পড়ে। যারা তুলা, কন্যা, সিংহ রাশি ইত্যাদি মান্যি করেন, ছবির সঙ্গে ধূমকেতু পথ মিলিয়ে দিন। লাভজয় ও আইসন আপনাদের সঙ্গেই আছে। আমিও তাদের দেখিনি। কিন্তু আকাশের যেখানে অবস্থান করছে, সেই জায়গাটা আমি চিনি। খালি চোখে ধূমকেতুদের চিনতে পারব না এই শুধু দুক্খু, আপসোস। ওপরের চিত্র দেখে অন্তত অবস্থান দেখে নিন ধূমকেতু দুটির। চিত্রটি মে মাসের পয়লা তারিখের ৯টা, ১৬ মে ৮.৩০টা এবং ৩১ মে সন্ধে ৭.৩০টার হলেও এখন শেষ রাতে মোটামুটি এ রকমই দেখাবে।



ধূমকেতুরা নিজের কক্ষপথে মহাকাশে ঘুরতে থাকে এবং গ্রহদের অতিক্রম করে সূর্যের আলোর কিছুটা ভেতরে প্রবেশ করলেই বহুদূর দিয়ে গেলেও টেলিস্কোপে দেখতে পাই। সে সূর্যের কাছাকাছি হতে থাকলেই সূর্যের তাপ ও আলোর প্রভাবে ধূমকেতুর পেছন দিক থেকে এর ধুলো আর গ্যাসের বাষ্প বেরোতে দেখি। এই অবস্থায় ধূমকেতুকে গোল মাথা ও লম্বা লেজে দেখা যায়। যেন ঘুড়ির দীর্ঘ পুচ্ছ। ওই বাষ্প বের হওয়া অংশটিই লেজ। সেটি লাখ লাখ মাইল লম্বা হতে পারে। সেই পুচ্ছ এত পাতলা হয় যে তার ভেতর দিয়ে গ্রহ-নক্ষত্রদের ঝিকিমিকি করতে দেখা যায়। সূর্যের অভিকর্ষী টানে ধূমকেতু সূর্যের কাছাকাছি আসে। কিন্তু ধরা দেয় না, প্রদক্ষিণ করে সুদীর্ঘ ডিম্বাকার কক্ষপথে। তাই পৃথিবীর মানুষের আকাশে আবার দেখা দেয়। এরূপ একটি বিখ্যাত হ্যালির ধূমকেতু। এর আগমন ঘটে ৭৫-৭৬ বছর পর। তার এক চক্করের সময় এটি। মহাকাশে কত লাখ লাখ পথ ভ্রমণ করে? ভাবতেই মাথা ঘুরে যায়।



ধূমকেতু আসলে একটি বিশাল-বিশাল বরফের বল। পৃথিবীর চেয়ে অনেক বড় হতে পারে। মহাকাশের ধুলো, বরফ ও গ্যাস দিয়ে তৈরি। এর কিছু গ্যাস আমাদের বাতাসের মতো, যাতে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়, কিন্তু কিছু গ্যাস বিষাক্ত। গ্রহগুলোর মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানের মধ্য দিয়ে সে চলাফেরা করে নিজের কক্ষপথে। প্রতিবার সূর্যের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার কিছু বরফ গলে যায়, গ্যাস বেরিয়ে যায়। এভাবে ক্ষয় পেতে পেতে একসময় ফতুর হয়ে ভেঙে যায়। ভাঙা টুকরোগুলো ধূমকেতুর মতোই সূর্যের চারদিকে ঘুরতে থাকে। এগুলো একসময় সূর্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছে কিছু খণ্ড আলোর ঝরনার মতো অন্য গ্রহে বা এই পৃথিবীতে নেমে আসে। সেটাও ভারি বিপজ্জনক। সাধারণ মানুষ বলে, ধূমকেতু ওঠা বা দেখা যাওয়া ভীষণ অশুভ। মানুষ ও রাষ্ট্র সবার জন্য। তাহলে জোড়া ধূমকেতু শুভ নাকি দ্বিগুণ অশুভ। এই জন্যই কি আমাদের দেশের রাজনীতিতে এত হানাহানি, মৃত্যু! সামনে আসছে জানুয়ারি মাস, মন তাই ভাবছে, কী হয় কী হয়- কী জানি কী হয়!



ধূমকেতু, উল্কা, নবতারা ও অতি-নবতারা ইত্যাদির সুপ্রাচীন তালিকা একমাত্র চীন দেশেই পাওয়া যায়। চীনের এসব তালিকা থেকেই অনেক ধূমকেতুর গতিপথ ও গতিকাল নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। অনেক নীহারিকার জন্মবৃত্তান্ত গঠন করা হয়েছে। আবার গ্রিক পিথাগোরাস সম্প্রদায়ের মতে ধূমকেতুকে প্রাচীনকালে গ্রহ মনে করা হতো। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮০ অব্দে জ্যোতির্বিদ ও গাণিতিক পিথাগোরাসের জন্ম। হ্যালির ধূমকেতু ১৬৮২ সালে পর্যবেক্ষণ করে প্রতি ৭৫-৭৬ বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে বলে মন্তব্য করেন হ্যালি। এটি খ্রিস্টপূর্ব ২৪০ অব্দে চীনে প্রথম শনাক্ত করা হয়।



বলা হয়, মিসরের আকাশে মেঘ হয় না। অনেকেই বৃষ্টি শব্দটি জানে না, কারণ ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টি হয়। রাতের আকাশ সেখানে নির্মল। ঝকঝকে তারায় আকাশ ভরা থাকে। চাঁদ-তারা শোভিত আকাশ পর্যবেক্ষণে কোনো অসুবিধা হয় না। জ্যোতির্বিদ্যার উদ্ভব সেখানে চীনের মতো প্রথম দিকে হওয়া মোটেই আশ্চর্যের নয়। সুপ্রাচীনকাল থেকে নীল নদের পানি নিয়ন্ত্রণ, বাঁধ ও খাল কেটে চাষবাস শুরু। সেই ৪০০০ খ্রিস্টপূর্ব অব্দের দিকে। নীল নদের বানের কারণে, নদীর বাঁধ বারবার ভাঙার কারণে সেখানে জ্যামিতির উদ্ভব। আকাশের চাঁদ দেখে ৩৬০ দিনে বছর গণনা প্রথম শুরু সেখানে। কিন্তু সৌরবর্ষ ধরে যেহেতু ঋতুর আগমন হয়, সেহেতু চান্দ্রবর্ষ ধরে চাষবাস ও বাঁধ নির্মাণে এই বিপত্তি দেখা দিত। ধূমকেতু বা নক্ষত্রের উদয়ে হেরফের হয়ে যেত। এতে মঙ্গল-অমঙ্গল ধারণা করা হতো।



আর এখন আমরা নতুন তারা বা ধূমকেতু দেখার জন্য হাপিত্যেশ। টেলিস্কোপ না থাকলে দেখব কী করে? ঢাকার আকাশ এমনিতেই ধুলোয় ও ধোঁয়ায় বিশ্বশ্রেষ্ঠ নগরী। তবু অনুসন্ধিৎসু চক্র যদি ব্যবস্থা করে! খবরাখবর জানায়, সেই আশায় থাকি। বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার মণ্ডল নিজেই ব্যবস্থা করতে পারে তাদের পর্দায়। বিদেশ থেকে ধারণ করা চিত্র কিনে এনে আমাদের দেখাতেও তো পারে।

- Source: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.