নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জামাল উদ্দীন

i would like to read and write

জামাল উদ্দীন

i would like to read and write.

জামাল উদ্দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফাইল সই

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৪

এমন সুন্দর বাড়ি জুলিয়ানা আগে আর দেখেনি। গুলশান, বারিধারার নাম শুনেছে সে। এখানকার বাড়িগুলো যে এত সুন্দর, তা আগে থেকে অনুমানও করতে পারেনি। চার দেয়ালে ঘেরা। ভেতরে বাগান। লনের পাশে সবুজ ঘাসের গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে যেন। লতাগুল্মের সারি দেখে মনে হয় কতই না যতœ এদের। গাছে ফুল ফোটাতে কত যতœআত্মি করা হয়। যে বাড়িতে গাছেদের এত যতœ, সে বাড়ির মানুষগুলোর না জানি কত দাম!

আক্ষেপের স্বরে জুলিয়ানা বলে- আমরাও মানুষ। ওরা তাহলে কি?

জুলিয়ানার চোখ পড়ে বারান্দার কোনে কুকুরটির দিকে। ও ভয় পায়। কুকুরে ভীষণ ভয় জুলিয়ানার। ছোট বেলা থেকেই কুকুরকে ভয় পায় সে। আগে জানলে এ বাড়িতে ঢুকতো না। জুলিয়ানা খেয়াল করে বাড়ির সামনে সকর্ত বাণী ছিল কি না। সাধারণত যে বাড়িতে কুকুর থাকে, সে বাড়ির গেটে লেখা থাকে কুকুর থেকে সাবধান। এ বাড়ির গেটে এমন কোন লেখা ছিল বলে মনে পড়ছে না।

জুলিয়ানা দেখে ধবধবে সাদা রঙের কুকুরটি ওর দিকে তাকিয়ে আছে। গায়ের লোমগুলো বড় বড়। ওর লম্বা জিহ্বা লিকলিক করছে। জুলিয়ানা দুপা পিছিয়ে যায়। ওকে অভয় দিয়ে শুভজিত বলে, ভয় পেয়ো না। কামড়াবে না।

না কামড়ালেও কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। জুলিয়ানা আরো দু’পা পিছিয়ে যায়। যেন কুকুরটি ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। শুভজিতকে লক্ষ্য করে বলে- ক্ত্তুাঅলা বাড়িতে কেন আনলেন? কুত্তাদের আমার একদম ভাল্লাগে না।

শুভজিত বলে, এসব কুকুর সবাইকে কামড়ায় না। তুমি ভয় পেয়ো না।

ওদের কথাবার্তা শুনে পেছন ফিরে তাকায় ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি আর আলখেল্লা পরা এক লোক। ইশারায় ওদেরকে বারান্দার সোফায় গিয়ে বসতে বলে। শুভজিত আর জুলিয়ানা সোফায় গিয়ে বসে।

শুভজিত আগেই বলেছিল, বিদেশীর বাসায় যেতে হবে। বহু টাকা ইনাম পাওয়া যাবে। কিন্তুু বহু টাকা মানে কত টাকা তার হিসাবটাও কষতে চেয়েছিল জুলিয়ানা। শুভজিত বলেছিল, তুমি খুশি না হলে বাকিটা আমার কাছ থেকেই দিয়ে দেব।

শুভজিতকে এত বিশ্বাসের কোন কারণ নেই। তবু জুলিয়ানার আশা, বড় লোক বাবু নিশ্চয়ই খুশি করে দেবেন। সেই আশাতেই তার এখানে আসা। তারচেয়ে বড় কথা যদি নিয়মিত বড় লোক বাবুর বাসায় যাতায়াত করা যায়, তাতেই বরং লাভটা বেশি। জুলিয়ানা বাড়ির এপাশওপাশ তাকায়। তার চোখ আটকায় দেয়ালের ঝুলানো জলরংয়ের ছবিগুলোর দিকে। ওসব ছবিই যেন বলে দিচ্ছে এ বাড়িতে বিদেশী লোক থাকে। শুভজিতকে জিজ্ঞেস করে- ব্যাটার বউপোলাপান নাই? শুভজিত উত্তরে বলে, তা নিয়ে তোমার চিন্তা কি? তোমার ধান্ধা হলেই হলো।

একটু পরেই ওদের সামনে এক লোক এসে বললো- ভেতরে যান।

ভেতরে ঢুকতেই জুলিয়ানা আরো অবাক। এত সুন্দর ড্রয়িং রুম! নরম সোফায় বসে যেন ও তলিয়ে যাবে। দেয়ালে দেয়ালে মানুষ আর প্রকৃতির আরো কত ছবি। সুন্দর গাছগাছালি আর ফুলের ছবি আঁকা। এরমধ্যে মেয়ে মানুষের ছবিও আছে। লুজিয়ানা দেখে লজ্জা পায়। মেয়েটির বুকে ওড়না নেই। সাদা কাশফুলের মাঝখানে মেয়েটিকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। মেয়েটি কি ওড়না টেনে নিতে ভুলে গিয়েছিল? জুলিয়ানা তার গলায় জড়ানো ওড়নাটা মাথায় টেনে দেয়। যেন লজ্জা পেয়েছে ও।

ভেতর থেকে ধবধবে সাদা রঙের আলখেল্লা পরা, যাকে কুত্তার সঙ্গে দেখেছে, ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ির সেই লোকটি ড্রয়িং রুমে এলো। কি যেন বললো, তা বুঝতে পারে না জুলিয়ানা। শুভজিতও বিদেশী ভাষায় উত্তর দিল। লোকটি আবার ভেতরে চলে গেল।

জুলিয়ানা জানতে চাইলো লোকটি কি বললো। শুভজিত বললো- কাজী সাহেবের কথা জিজ্ঞেস করেছে। আমি বলছি কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন।

- কাজীর কাজ কি এখানে?

- তুমি বুঝবে না। ওরা বিদেশি লোক।

- ও, বিদেশীরা কিন্তুু খারাপ লোক।

- না, এই লোকটি ভাল। তুমি চিন্তা করো না। একটু বসো। আমি দেখি কাজী সাহেব কত দূরে আছে।

শুভজিত উঠে গেল। একাকী বিশাল ড্রয়িং রুমে বসে কিছুটা ভয় পাচ্ছিল জুলিয়ানা। শুনশান নিরবতা। বিদেশী লোকের খপ্পরে পড়ে না জানি কোন বিপদ আসে। অস্থির হয়ে ওঠে তার মন। শুভজিত বললো, কাজী আসবে। এখানে কি বিয়ে হবে কারো? তাহলে আমাকে কেন আনা হলো? জুলিয়ানার ভেতরে এমন নানা প্রশ্নের উদ্রেক হতে লাগলো। রুমের ভেতরে ঠান্ডা আর মাঝে মাঝে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এমন পরিবেশে এর আগে আসেনি ও। সোফা থেকে উঠে রুমের ভেতর পায়চারি করতে থাকে। মাঝেমধ্যে উঁকি দিয়ে শুভজিতকে দেখে। কিন্তুু শুভজিত নেই। তাকে দেখা যাচ্ছে না।

জুলিয়ানা ভাবে, এটি এক ধরণের কৌশল হতে পারে। ইচ্ছে করেই হয়তো শুভজিত এখান থেকে সরে গিয়েছে। ভেতর থেকে কেউ নিশ্চয়ই আসবে। কিংবা ভেতরে ডেকে নেবে। ভেতরে ভেতরে নিজেকে তৈরি করে নেয় জুলিয়ানা।

জুলিয়ানার নাম জুলেখা বেগম। শুভজিত বলেছে তার নাম হবে জুলিয়ানা। জুলেখা নাকি গেঁয়ো নাম। গুলশান, বারিধারার মানুষ ওসব পছন্দ করে না। তাই জুলিয়ানা বললে স্মার্ট বোঝা যাবে। শুভজিতের কথায় দ্বিমত করেনি জুলেখা বেগম ওরফে জুলিয়ানা। সংক্ষেপে যদি ওকে জুলি বলা হয় তাহলেও সমস্যা নেই। শুভজিত বলেছিল, যার বাড়িতে যাচ্ছো সে হয়তো আদর করে জুলি বলবে। তুমি তাতে সায় দিও।

কিছুক্ষণ বসার পর ডাক না পড়ায় জুলির ধৈয্যের ব্যাঘাত ঘটার উপক্রম হয়। এভাবে বসে থাকার কোন মানে হয় না। যে কাজে এসেছে তা সেরে দ্রুত বাসায় ফিরতে চায় সে। তার একমাত্র শিশুপুত্রটির কথা মনে পড়ে। দু’দিন ধরে ছেলেটির শরীর ভাল যাচ্ছে না। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার সুযোগও হয়নি। সংসার খরচ চালিয়ে মাসে বাড়তি খরচ মেটানো কস্টের। চাল আটা তেলের দাম রোজ বাড়ছে।

জুলিয়ানা, তুমি রেডি তো? শুভজিত ড্রয়িং রুমে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করে। জুলিয়ানা দেখে শুভজিত ছাড়াও আরো তিনজন লোক এসেছে। একজনের মুখে দাঁড়ি, মাথায় টুপি। বোগলদাবা করে মোটা খাতার মত কি একটা নিয়ে এসেছে। বাকি দু’জন শ্যুটটাই পরা। ওরা সবাই অন্য একটি সোফায় বসলো। জুলিয়ানা ওদের দিকে তাকায়। দেখে তারা সবাই এক যোগে ওর দিকে চেয়ে আছে।

শুভজিত পরিচয় করিয়ে দেয় তাদের সঙ্গে। একজন কাজী, বাকি দু’জন শুভজিতের বস্।

মিনিট কয়েক পর ভেতর থেকে আলখেল্লা পরা লোকটি বেরিয়ে এলো। শুভজিত ইংরেজিতে বললো- আমরা রেডি। ইনি কাজী সাহেব।

কাজী সাহেব বললেন, পাত্রী রাজি আছে তো? পাত্রীর পক্ষের লোক কে?

শুভজিত নিজেকে পাত্রীর পক্ষের লোক বলে দাবি করলো। কাজী সাহেব বিয়ের পড়ানোর প্রস্তুুতি নিচ্ছেন। তিনি শুরু করেছেন....।

জুলিয়ানা শুভজিতকে ইশারায় কিছু জিজ্ঞস করতে চাইলে প্রথমে শুভজিত ওকে থামিয়ে দেয়। পরে উঠে এসে বলে, তুমি ভয় পেয়ো না। কাজী সাহেব বিয়ে পড়াবেন। তারপর দুলামিয়া তোমাকে ভেতরে নিয়ে যাবেন।

- বিয়ে?

- আঁৎকে উঠে জুলিয়ানা। এ আবার কেমন কথা। বিয়ের কথা শুনলেই ওর ভয় ধরে যায়। বিশ্বাস করেই তো ঘর থেকে বেরিয়েছিল পাশার সঙ্গে। তারপর বিদেশে নেয়ার কথা বলে ওকে ঠেলে দিয়েছিল জাহান্নামে। যে আগুনে এখনো সে পুড়ছে। পাশা তো পালিয়ে বেঁচেছে। নাকি আরো কোন মেয়ের ক্ষতি করে চলেছে কে জানে? তাই দ্বিতীয়বার বিয়ের ফাঁদে পড়তে চায় না সে।

- তুমি কিচ্ছু ভেবো না। ভদ্রলোক বিদেশী। জুলিয়ানাকে অভয় দেয় শুভজিত।

- তাতে কি? তাকে বিয়ে করতে হবে কেন?

- তোমাকে তো জীবনভর তার সঙ্গে থাকতে হচ্ছে না। ভয় পাচ্ছো কেন?

- পরে যদি সমস্যা হয়।

শুভজিত আর জুলিয়ানার কথা শুনে এগিয়ে আসেন শুভজিতের বস্। তিনি জানতে চান কি হয়েছে? শুভজিতকে বলেন, তুমি ওকে সব বুঝিয়ে বলো। ওর অমতে কিছু করা ঠিক হবে না।

কাজী সাহেবও ভ্রু কুঁচকে তাকান। প্রথম প্রথম তিনিও ভেবেছিলেন এ কেমন বিয়ে। এখন তিনি অভ্যস্ত। এর আগে এ বাড়িতে তিনি ডজন খানেক বিয়ে পড়িয়েছেন। বিনিময়ে টাকার বান্ডেল পকেটে পুরেছেন।

শুভজিত জুলিয়ানাকে নিয়ে ভেতরের একটি কামরায় চলে যায়। সেখানে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে কামরাটি। লাল নীল রঙের হালকা বাতির আলো আর কাঁচা ফুলের সুবাসে ঘর উদ্ভাসিত হতে লাগলো। খাটের এক কোনে বসিয়ে জুলিয়ানাকে শুভজিত বললো, আজ রাতে তুমি এ ঘরেই থাকবে। ঘরটা পছন্দ হয়েছে তো?

জুলিয়ানার মনে তখনো উদ্বেগ, বললো- কাহিনী কি?

জুলিয়ানার কথার উত্তর দেয়ার আগেই কামরায় প্রবেশ করলো বিদেশী লোকটি। শুভজিতকে ইংরেজিতে যা বললো তার বাংলা এরকম: আমি ফাইল সই করে দিলাম।

- আমার বস্ কে দিয়ে দাও। ও ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা করছে।

- ঠিক আছে।

- ওকে তোমার পছন্দ হয়েছো তো?

- বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর না হয় মন্তব্য করবো।

শুভজিত বললো- ওকে।

লোকটি চলে যাওয়ার পর শুভজিত জুলিয়ানাকে আসল ঘটনা খুলে বললো। বিদেশী লোকটি এখানে একটি দেশের প্রতিনিধি। তার দেশে বাংলাদেশ থেকে বহু লোক কাজ করতে যায়। সে কাজে এই লোকের স্বাক্ষর লাগে। তাই তাকে খুশি করতে হয়।

জুলিয়ানা অত কিছু না বুঝলেও শুভজিতের কথা মন দিয়ে শোনে। বলে, তারপর..

- লোকটি ঘুষ নেয় না। তাকে খুশি করার জন্যই তোমার মত পেশাদারকে নিয়ে এলাম। মজার বিষয় লোকটি পেশাদারিত্বেও বিশ্বাস করে না। বিয়ে করেই সে তোমার কাছে আসবে।

- তারপর..

- সকালে তোমাকে তালাক দেবে। মোহরানার টাকাটাও বুঝিয়ে দেবে ঠিকমত। তুমি ওর কাছ থেকে মোহরানার টাকা পাবে, আমাদের কাছ থেকেও কিছু টাকা পাবে।

- এই অবস্থা, আহারে আমার সাধু.. জুলিয়ানা বলে, এবারে বুঝেছি। কিন্তুু ঐ লোকগুলো কেন এসেছে।

- বারে, বিয়েতে তিনজন সাক্ষীর দরকার হয়। সে কারণেই তিনজনের উপস্থিতি। তারাও আমাদেরই লোক। তুমি কোন চিন্তা করো না।

জুলিয়ানা হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যায়। শুভজিত চলে যায় ড্রয়িং রুমে। একটু পরে ফিরে এসে বলে, বলো কবুল।

জুলিয়ানা বলে, কবুল।

শুভজিত বলে, আমি যাই, সকালে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।

জুলিয়ানার হাসি আর থামে না। হঠাৎ দেখে রুমে প্রবেশ করে ঐ লোকটি। তাকে দেখে জুলিয়ানার হাসি থেমে যায়। তার চোখের সামনে ভেসে উঠে বাড়ির লনে দেখা ধবধবে সাদা কুত্তার লম্বা জিহ্বাটা, যেন লিকলিকিয়ে এগিয়ে আসছে জুলিয়ানার দিকে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৭

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: অসাধারন লেখা
ভাললাগা +

২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৩

জামাল উদ্দীন বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.