নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Criticism is our fundamental right. The revolution will come only from our pen #save constitution

Titanic

এক সময় আমরা সবাই মানুষ ছিলাম।হঠাৎ করে তখন এক ভণ্ডু খোদার আবিষ্কার হল।শুরু হয়ে গেলে ধর্মের/খোদার দলের দালালী(মানুষের মধ্যে মারামারি হানাহানি)ভণ্ডু খোদার এক বিশেষ দালাল হল ইসলামধর্মের নবী মুহাম্মদ।ধর্মিয় বই নাকি আসমান থেকে এসেছ,আরে বোকার দল তাহলে তদের মালিককে বল আমাকে একটি আইটির বিশেষ বই দিতে।আমি আইটির ব্যবহার ও উন্নত মান দিয়ে তোদের খোদা হওয়ার দাবী করব।তোমরা বল কোরান,বাইবেল, গীতা আরও কত্তকিছু উপর হতে এসেছে।তোমরা কি দেখনা এখন মানুষ উপর(চন্দ্র,মংগল ইত্যাদিতে ভ্রমণ করছে)চোখ খুল মানুষ, চোখ খুল।

Titanic › বিস্তারিত পোস্টঃ

এত জাত-ফাত, ছুঁৎ-অচ্ছুৎ, ফর্সা-কালো, ধর্ম-অধর্মের ভেদাভেদ করে লাভটা কী হল?

২০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৪৪


এত জাত-ফাত, ছুঁৎ-অচ্ছুৎ, ফর্সা-কালো, ধর্ম-অধর্মের ভেদাভেদ করে লাভটা কী হল?
জমসর আলি

এত জাতপাত, ব্রাহ্মণ-শূদ্র ছুঁৎ-অচ্ছুৎ, কে গরু খায় আর কে শুয়োর, কে ফর্সা, কে কালো, কে পৈতা পরে আর কে টুপি – এ নিয়ে নিরন্তর মারামারি, কাটাকাটি, দাঙ্গাদাঙ্গির পরে দিনশেষে কী জানা গেল? নাহ আমরা নাকি মূলত তিন ঐতিহাসিক গোষ্ঠীর শঙ্কর – যেভাবেই কড়ি গুনি না কেন, আমাদের জিনের ‘ষোল আনা’র বেশীরভাগই ভরেছে এই তিন দলের আনা-আনা অবদানে। কেউ কম, কেউ বেশী; অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে কেউ এর সাথে মিশ খেয়েছে বেশী, কেউ বা ওর সাথে।

আমাদের, অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অধিবাসীদের উদ্ভব ঘটেছে এই তিন জনগোষ্ঠীর মিলনের ফলে – ৫০ থেকে ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে এসে ভারতে বসতিস্থাপনকারী প্রাচীন শিকারি-সংগ্রাহক গোষ্ঠী, খ্রিস্টপূর্ব ৫-৭ হাজার বছর আগে পারস্য থেকে আসা ‘চাষাভুষা’ মানুষ আর তারপর খ্রিস্টপূর্ব ১-২ হাজার বছর আগে আফগানিস্তানের উত্তর থেকে আসা ‘পশুপালকদের’ দল।

যাক বাবা, আমার ছোটবেলার পাড়ার খালাম্মাদের একটা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল এতদিনে, এত বড় বড় গবেষকদের কাজের ফলে! ওনাদের সেই হাহাকার, ‘আহারে আপা আপনার দুইটা মেয়ে কী সুন্দর ফর্সা, বড়টা কালো হইল ক্যামনে’র উত্তর পাওয়া গেল। বংশগতির মিক্স-আপের খেলায় আমার গায়ের রঙের জিনে নিশ্চয়ই অপেক্ষাকৃত ফর্সা পারস্য ‘চাষী’ এবং তার চেয়ে আরেকটু বেশী ফর্সা স্তেপবাসী ‘মেষপালকদের’ চেয়ে ভারতীয় আদিবাসীদের জিনটাই বেশি পড়ে গেছিল!

ফাজলামি রেখে এবার তাহলে এই গুরুগম্ভীর গবেষণাটা নিয়ে দুটো কথা বলি। বিখ্যাত বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২ জন গবেষক (জীববিজ্ঞানী, জেনেটিসিস্ট, প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসবিদসহ বিভিন্ন শাখার গবেষকরা একসাথে হয়েছেন এখানে) বংশগতীয় (genetic) এই গবেষণাটিতে কাজ করে আসছেন অনেক বছর ধরে। সেই গবেষণার একাংশের উপর ভিত্তি করে সম্প্রতি এই রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়। ওনারা ইরান, আফগানিস্তান এবং তার উত্তরের উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কাজাকাস্তানের মত দেশগুলো থেকে সংগৃহীত ৬১২ জন প্রাচীন পূর্বসূরীর ডিএনএর সাথে এখনকার দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের ২৪৬টি গ্রুপের মানুষের ডিএনএর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। গবেষণার সারমর্মটা মোটামুটি এরকম:

১) সিন্ধু উপত্যকার সভ্যতার উদ্ভব ঘটেছিল বহু আগে আফ্রিকা থেকে আসা প্রাচীন শিকারি-সংগ্রাহক গোষ্ঠী এবং পরে পারস্য থেকে অভিবাসিত গোষ্ঠীর সমন্বয়ে। এদেরকে সিন্ধু উপত্যকার পূর্বসূরী (Indus Valley ancestors) হিসেবে অভিহিত করা হয়। পারস্য থেকে আসা এই নতুন জনগোষ্ঠীদের আগমনের পূর্বেই সম্ভবত ভারতে কৃষি কাজের সূচনা হয়েছিল, তবে এদের আগমনের পরে সিন্ধু উপত্যকায় কৃষিকার্যের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। এরাই বোধ হয় পশ্চিম এশিয়া থেকে ধানচাষের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছিল।

২) এক-দুই হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে স্তেপ অঞ্চলের প্যাস্টোরাল বা পশুপালক গোষ্ঠীর মানুষেরা উত্তর-পশ্চিমে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে আর এদিকে দক্ষিণ-পূর্বে সিন্ধু উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এদেরকেই আমরা আর্য বলে চিনি।

৩) ধারণা করা হয়, সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলে খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার বছরের দিকে বেশ বড় কিছু পরিবর্তন ঘটেছিল। কিন্তু কেন ঘটেছিল সেটা এখনো একটা রহস্য। অনেক গবেষক মনে করেন সিন্ধু নদের গতিপথের পরিবর্তন এবং বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ায় এ অঞ্চল ক্রমশঃ চাষবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সম্ভবত এ কারণেই সিন্ধু উপত্যকার প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতাটি ভেঙে পড়তে শুরু করে এবং এর পরপরই শুরু হয় উত্তর থেকে আসা আর্যদের অভিবাসন।

সে-সময়ে সিন্ধু উপত্যকার অধিবাসীদের যে অংশটি উত্তরাঞ্চলে স্থায়ীভাবে থেকে যায় তারা আর্যদের সাথে মিশে জন্ম দেয় উত্তর ভারতীয় পূর্বসূরীদের (Ancesteral North Indians-ANI)। আর ওদিকে সিন্ধু উপত্যকার এই পূর্বসূরীদের আরেক অংশ দক্ষিণের দিকে সরে যেতে শুরু করে। এরা তেমনভাবে আর্যদের সাথে মিশ খায়নি; এরাই দক্ষিণ ভারতীয় পূর্বসূরীদের(Ancesteral South Indians-ASI) জন্ম দেন। এদের উত্তরসূরীরাই পরবর্তীতে আদিম ভারতীয়দের সাথে মিশতে মিশতে আরও পূর্বদিকে বসতি স্থাপন করতে থাকে। পরবর্তীতে আবার ব্যবসা এবং রাজ্য-জয়ের অভিপ্রায়ে আসা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর এদের সবার মিশ্রণ ঘটতে থাকে।

ব্যাপারটা এমন নয় যে, এখান থেকে ANI এবং ASI রা বংশগতীয়ভাবে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গিয়েছিল। এদের নিজেদের মধ্যেও অনেক মিশ্রণ ঘটেছিল – তাই আধুনিক ভারতীয় উপমহাদেশীয়দের সবার মধ্যেই কম বেশী ANI এবং ASI এর সংমিশ্রণ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, জাতপ্রথার কারণে, গত দুই হাজার বছরে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সম-জাতীয় বিবাহ-প্রথা গেড়ে বসার ফলে এই মিশ্রণ কমতে শুরু করে – এখন উত্তর ভারতে ANI এর প্রভাব আর দক্ষিণে ASI জিনের প্রভাবই বেশি দেখা যায়। মুক্তমনার সদস্য, Sarthak, একটি চমৎকার মন্তব্য করেছেন, ওনার মন্তব্যের কিছু অংশ এখানে হুবহু তুলে দিচ্ছিঃ

‘….ANI এর প্রভাব বেশি আর দক্ষিণে ASI এর প্রভাব বেশি কিন্তু এরা (উত্তর বা দক্ষিণের) কেউই আর জিনগত ভাবে শুধুই ANI বা ASI এর জিন বহন করে না। এক মতে ANI আর ASI তৈরি হওয়ার পর প্রথম হাজার থেকে দুহাজার বছর দুইয়ের মধ্যে অনেক মিশ্রণ হয়। কিন্তু তারপর মানে শেষ দুহাজার বছর জিন গত বৈশিষ্ঠ মোটামুটি একই থেকে গেছে। এর কারণ ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মে উচ্চবর্ণের মধ্যে সমজাতির মধ্যে বিবাহ-প্রথা গেড়ে বসা।
এছাড়া রিসার্চাররা আরো অনুমান করেছেন, ভারতের যে ভারতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্তেপ জিন তুলনায় অনেকটাই বেশী পাওয়া গেছে তারা হয়ত ব্রাহ্মণ্যবাদি ধর্ম ও ভাষা মূল জিম্মেদার ছিল। এবং সমজাতির মধ্যে বিয়ে করে এই ধারাটা তারা ধরে রেখেছিল, এমনকি এখনো ধরে রেখেছে। আমার মনে হয় এই শ্রেণীই এবং এই শ্রেণীর প্রতি ভক্তিই উপমহাদেশের মানুষের মনে ফর্সা চামড়ার ফেটিস তৈরি করেছে যুগ যুগ ধরে।’

(আমার মনে হয় শুধু এই শ্রেণীর প্রতি ভক্তিই নয়, পরবর্তীতে পশ্চিম থেকে আসা সব ভারত-বিজেতারাই আমাদের সাধারণ মানুষের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ‘ফর্সা’ ছিল। এই সব বিজেতাদের প্রতি লালাঝড়া-ভক্তিও ওই ফর্সা চামড়ার ফেটিসের সাথে যুক্ত হয়েছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও অপেক্ষাকৃত ফর্সা-কালো নিয়ে একই ধরণের সংস্কার কাজ করতে দেখেছি।)

৪) তাহলে ব্যাপারটা এই দাঁড়াচ্ছে যে, আর্যেরা আসার আগে সিন্ধু উপত্যকার এই প্রাচীন মানুষেরাই আমাদের সবার পূর্বসূরী। এরাই পরবর্তীকালে আরও অনেক জাতির সাথে মিশ খেতে খেতে আজকের দক্ষিণ এশিয়ার মূল আধুনিক জনগোষ্ঠীর জন্ম দিয়েছে। পৃথিবীর বেশীরভাগ জনগোষ্ঠীর মতই আমরা সবাইও দিনশেষে একগাদি ‘ভ্যাজালে’ ভরা শঙ্কর বই আর কিছু নই ??। রবীন্দ্রনাথ এতকিছু না জেনেই কিন্তু লিখেছিলেন, হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন- শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন।

৫) কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক হলেও, বাংলাদেশি পাঠকদের কথা মনে করে, প্রফেসর রিচার্ড ইটনের বিখ্যাত গবেষণার কথাটা একটু উল্লেখ না-করে পারছি না। আগে যে ধারণাটা ছিল যে, বাঙালিদের মধ্যে, মূলত পূর্ববঙ্গের, বেশির ভাগ মানুষ নিম্নবর্ণের হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছিলেন তিনি তা ভুল বলে প্রমাণ করেন। উনি দেখান, এগার’শ-বার’শ সাল থেকে দিল্লীর মুসলমান শাসকেরা কিছু মুসলমানকে (এবং সেই সাথে কিছু ব্রাহ্মণকে) জায়গির দিয়ে পূর্বের বদ্বীপ অঞ্চলের জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপন করার জন্য পাঠাতে শুরু করে। আর তখন থেকেই স্থানীয় অনেক আদি ভারতীয় শিকারি-সংগ্রাহক গোষ্ঠী(এরাই সম্ভবত জায়গিরদারদের জন্য জঙ্গল পরিষ্কার করা এবং কৃষিকাজগুলো করতো) সচেতন-অসচেতনভাবে, শত শত বছরের প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে মুসলমানদের আচার-ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। ক্রমান্বয়ে দুই গোষ্ঠীর সংমিশ্রণও ঘটতে থাকে এবং এভাবে আমাদের দেশের একটা বড় জনগোষ্ঠি মুসলমান হয়। এজন্যই আমাদের দেশের মুসলমানদের মধ্যে এত আদিম ও লোকজ রীতিনীতির প্রচলন দেখা যায়।

১৮৭০ বা ১৮৭২ সালের আদমশুমারিতে প্রথমবারের মত জানা যায়, পূর্ববঙ্গে হিন্দুর চেয়ে মুসলমানের সংখ্যা অনেক বেশি, এবং সেটা দেখে সবাই খুব অবাকও হয়েছিল। এরপর থেকেই ধারণা করা হত, নিশ্চয়ই নিম্নবর্ণের হিন্দুরাই দলে দলে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছিল যদিও এর কোন ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। হয়তো ভবিষ্যতে বংশগতীয় গবেষণা থেকে এ-ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

সে যাই হোক এই গবেষণাটিতে ফেরত যাই। এর ফলে কিছু মিথও ভেঙ্গেছে নতুন করে, যেমন ধরুন,

১) আজকাল ভারতের হিন্দু জাতীয়বাদীদের তত্ত্বের কোন শেষ নেই, এর মধ্যে আবার খুব পছন্দের একটি তত্ত্ব হচ্ছে আউট অফ ইন্ডিয়া থিওরি – যেখানে ওরা দাবী করে যে আর্যেরা ভারতের আদিম অধিবাসী এবং ভারত থেকেই এরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে উন্নত সভ্যতা ছড়িয়ে দিয়েছিল। এই গবেষণা প্রমাণ করে, এই নব্য হিন্দু/আর্য জাতীয়তাবাদী তত্ত্বটি সম্পূর্নভাবে ভুল।

২) হিটলার বা ইউরোপের ইদানীংকালে আবার গজিয়ে ওঠা নাজি সাদা জাতীয়তাবাদীদের আর্যপ্রীতিও যে কতটা হাস্যকর সেটাও বোধ হয় এই গবেষণা থেকে আবার বোঝা গেল। যে আর্যদের এরা বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী কোন ‘বিশেষ মানুষ’ বলে ভাবছে তারা আমাদের আরও অন্যান্য পূর্বসূরীদের মতই আরেকটি জাতি মাত্র। ব্যাপারটা খুবই সাধারণ, বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছে, আর্যেরাও কয়েক হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়া থেকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কালের পরিক্রমায় একদিকে ইউরোপে আর অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য জাতির সাথে তাদের সংমিশ্রণ ঘটে।

৩) বৃটিশ রাজত্বকালে উনিশ শতাব্দীতে প্রথম ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাগুলোর(হিন্দি, বাংলা, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, পর্তুগিজ ইত্যাদি) উৎস আবিষ্কৃত হয়। জানা যায়, মধ্য এশিয়া থেকেই তা একদিকে ভারত এবং অন্যদিকে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ঔপনিবেশিক মানসিকতাসম্পন্ন কিছু ইউরোপিয়ান রাজনীতিবিদ এবং গবেষক তখন প্রচার করে যে, ভারতের মূল আদিবাসীদের কোন উন্নত সভ্যতা গড়ার ক্ষমতা ছিল না; শক্তি, বুদ্ধি, জ্ঞানবিজ্ঞানে অনেক উন্নত আর্যেরা এসেই উন্নত প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতাগুলো তৈরি করেছিল। অর্থাৎ সবসময়ে আর্য এবং বৃটিশদের মত বিদেশি কোন উন্নত সব সভ্যতা এসেই যেন ভারতীয়দের উদ্ধার করেছে! তবে ১৯২০ সালে হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, লোথালের উন্নত প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার অস্তিত্ব আবিষ্কার হওয়ার পরে বোঝা যায়, আর্যেরা এসে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা তৈরি করেনি বরং এই সভ্যতাগুলো উন্নতির শিখর থেকে পড়ে-যাওয়ার অনেক পরে এখানে আযর্দের আগমন ঘটে। এই গবেষণা থেকে এটি আবারো পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হল যে হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, লোথালের উন্নত সভ্যতার প্রতিষ্ঠায় আযর্দের কোন ভূমিকা ছিল না।

৪) আর্যদের হাত ধরেই বৈদিক সংস্কৃতির আগমন ঘটে ভারতে। হিন্দু ধর্মে আর্যদের ‘দেবত্ব-ব্রাহ্মণত্বের যে মহান’ আসনে বসানো হয় সেটাও হাস্যকরভাবে ভিত্তিহীন। জাতপাতের ব্যাপারটা সম্ভবত আর্য ব্রাহ্মণ-পুরোহিত-ক্ষত্রিয়-রাজারাই শুরু করেছিল। শূদ্রেরা যদি ভারতের সিন্ধু উপত্যকার সেই আদিবাসী হয়ে থাকেন তাহলে তাঁরা শুধু ভারতের মৌলিক আদি অধিবাসী নন, তাঁরাই আমাদের সবার পূর্বসূরী!

সিন্ধু উপত্যকার রাখিগাড়ি অঞ্চলে প্রাচীন ডিএনএর উপর ভিত্তি করে আরও কিছু গবেষণার কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে, এই গবেষণার কাজ সমাপ্ত হলে আমরা এ-বিষয়ে হয়তো আরও অনেক কিছু জানতে পারব।

এটা আমার আরেকটি খুব প্রিয় বিষয়, এ নিয়ে লিখলে অনেক কিছুই লেখা যায় কিন্তু আজকে আর লেখাটা বড় করবো না। লিখতে লিখতে শুধু ভাবছিলাম মানুষের সচেতনতা (consciousness) ব্যাপারটা বড়ই আজব এক জিনিস। একদিকে এর কারণেই যেমন আমরা প্রকৃতিতে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করি আবার আরেকদিকে এর কারণেই যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন সত্যি-মিথ্যা, সংস্কার-কুসংস্কার/মিথ তৈরি করি; কত ভুল, হাস্যকর এবং ক্ষতিকর মূল্যবোধই না ধারণ করে বসে থাকি! আমাদের অস্তিত্বটাই দ্বন্দ্বে ভরা, সচেতনতার এই দ্বান্দ্বিক দিকটিও হয়তো তারই অংশ। জ্ঞানের বিকাশের সাথে সাথে আমরা যত এইসব ক্ষতিকর প্রথা এবং সংস্কারগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারব ততই ‘মানুষ’ হিসেবে হয়তো সামনে এগুতে পারব। হয়তো এর মাধ্যমেই একদিন প্রমাণিত হবে আমাদের সত্যিকারের ‘শ্রেষ্ঠত্ব’!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.