নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Criticism is our fundamental right. The revolution will come only from our pen #save constitution

Titanic

এক সময় আমরা সবাই মানুষ ছিলাম।হঠাৎ করে তখন এক ভণ্ডু খোদার আবিষ্কার হল।শুরু হয়ে গেলে ধর্মের/খোদার দলের দালালী(মানুষের মধ্যে মারামারি হানাহানি)ভণ্ডু খোদার এক বিশেষ দালাল হল ইসলামধর্মের নবী মুহাম্মদ।ধর্মিয় বই নাকি আসমান থেকে এসেছ,আরে বোকার দল তাহলে তদের মালিককে বল আমাকে একটি আইটির বিশেষ বই দিতে।আমি আইটির ব্যবহার ও উন্নত মান দিয়ে তোদের খোদা হওয়ার দাবী করব।তোমরা বল কোরান,বাইবেল, গীতা আরও কত্তকিছু উপর হতে এসেছে।তোমরা কি দেখনা এখন মানুষ উপর(চন্দ্র,মংগল ইত্যাদিতে ভ্রমণ করছে)চোখ খুল মানুষ, চোখ খুল।

Titanic › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিজ্ঞান ও ধর্মের সেতু-সম্পর্কিত চারটি সহজ টোটকা

৩১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ২:০১



এক.

এই পোস্টটি চর্বিত-চর্বন মনে হতে পারে। একটি অতি-পুরাতন বিতর্ককে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি। ইব্রাহিমীয় ধর্মের অনুসারীদের সাথে বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রায়শই কিছু বিষয় ঘুরে-ফিরে আসতে থাকে। অনেকবার অনেকভাবেই বিবর্তন-অজ্ঞদের এসকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, বিভ্রান্তি দূর করে সঠিক সত্যটি জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও তর্কগুলো শেষ হয় না। নতুন নতুন আঙ্গিকে পুরানো প্রশ্নই উত্থাপিত হতে থাকে। এজন্যই হয়তো কবীর সুমন গেয়েছেন, “প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা…”

সেদিকে যাচ্ছি না। সম্প্রতি ফেসবুকে মাশরুফ হোসেন বিবর্তন, বিজ্ঞান এবং ধর্ম সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেখানে আলোচনা যখন সমাপ্ত হলো আর সবাই নিজ নিজ তালগাছ নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন, তখন পুরো আলোচনাটি আবার পড়লাম। পড়ে ভাবলাম একটু অন্য আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করা যায় কি না। প্রথমেই মূল লেখাটি পড়ে নেয়া যাক। স্ট্যাটাসদাতার অনুমতিসাপেক্ষে পাবলিক স্ট্যাটাসটি হুবহু নিচে তুলে দিচ্ছি।

দুহাজার পনের সালে এসে এই শিরোনামে একটি লেখা লিখবার মানে একটাই, এদেশের বিজ্ঞানমনস্কতার অবস্থা শোচনীয়। তাও লিখতে হচ্ছে, কারণ বিবর্তনবাদকে “শুধুমাত্র একটা থিওরি, এটা নিউটনের সূত্রের মত মেনে নেবার কোন কারণ নাই” বলার মত লোকের সংখ্যা অগণিত। প্রচন্ড লজ্জার বিষয়, এই কথাটা বলে মূলতঃ ছদ্মশিক্ষিতরা, সার্টিফিকেট থাকলেও জ্ঞান যাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। এদের মধ্যে মেডিকেল স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র‍্যাজুয়েট করা সায়েন্স টিচারও আছে।
বাংলাদেশী আমেরিকান বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার ঋতু সরকার আমার ক্ষুদ্র জীবনে দেখা সবচাইতে আলোকিত মানুষদের একজন। অসামান্য ধীশক্তির অধিকারী এই তরুনী সম্প্রতি আমার একটি পোস্টে এই “থিওরি বনাম ল” ডিবেট এর একেবারে পরিপূর্ণভাবে সমাপ্তি টেনেছে। Sauropod Fossil এর উপর ভিত্তি করে সর্বপ্রথম ত্রিমাত্রিক প্রিন্টেড রবোটিক ডায়নোসর প্রজেক্টে কাজ করে আসা ঋতু যে ওর বিষয়ে প্রচন্ড দখল রাখে, তা ওর কথাতেই বোঝা যায়। ওর সুদীর্ঘ কমেন্টের কিছু অংশ বাদে বাকি সারসংক্ষেপই হচ্ছে আজকের স্বচ্ছচিন্তা:
নিউটনের সূত্র কাজ করে সীমিত পদার্থ সংক্রান্ত পরিবেশে। পরিবেশ যখন অসীম এবং আমরা যখন আলোর গতি নিয়ে পরীক্ষা করছি, তখন নিউটনের সূত্র(Law) কাজ করেনা, আইন্সটাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (Special Theory of Relativity) ব্যবহার করতে হয়। কাজেই , থিওরি আর সূত্র নিয়ে এত কচলাকচলির কিছু নেই। এই দ্বিধা ক্লাস সিক্সের বাচ্চার থাকতে পারে, ন্যূনতম বায়োলজি জানা কোন ধাড়ী খোকার নয়।
নিউটনের মত ডারউইনেরও সীমাবদ্ধতা আছে। ডারউইন তাঁর থিওরি দিয়েছিলেন গালাপাগোস দ্বীপের পর্যবেক্ষণ থেকে, সেখানের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তিনি কিছু নতুন ধারণার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলেছিলেন তাঁর তত্ত্বের কিছু কিছু জিনিস মিলছেনা( যেটা নিয়ে ত্যানাবিদেরা ত্যানা প্যাঁচায়)। এর কারণ, ডারউইন Gene এবং Mutation সম্পর্কে জানতেন না। এ কারণে তিনি তাঁর তত্ত্ব পুরোপুরি প্রমাণ করে যেতে পারেননি, যেটা আমরা পারি। ডারউইনের সময় গুগল এবং ইমেইল থাকলে মেন্ডেল তাঁকে সহায়তা করতে পারতেন এবং দুজন মিলে ফাঁকগুলো ভরাট করতে পারতেন।
মেন্ডেলের জেনেটিক্স একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও স্টার্টিং পয়েন্ট হিসেবে দারুন। এ যুগে আমাদের হাতে অকাট্য সব প্রমাণ আছে, যা ক্ষুদ্র (জেনেটিক্স এবং বায়োকেমিকেল ডাটা) ও বৃহৎ (ফসিল এবং জীবন্ত প্রাণী) দুই ক্ষেত্রেই সন্দেহাতীতভাবে বিবর্তনবাদকে প্রমাণ করে এবং ক্রিয়েশনিস্ট থিওরিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
কাজেই, ধর্মকে এর স্পিরিচুয়াল জায়গায় রাখুন, আত্মিক উন্নতিতে এর সহায়তা নিন। বিজ্ঞানের নিক্তি দিয়ে ধর্মকে জায়েজ করতে গেলে শুধু নিজেকেই নন, যে ধর্মকে আপনি জায়েজ করতে যাচ্ছেন সেটাকেও হাসির খোরাক বানাবেন।
ঋতুর বক্তব্য এখানেই শেষ, আমাদের চিন্তার শুরু।
অন্ধকার কেটে যাক জ্ঞানের আলোয়!

এবারে আসি মন্তব্যের ঘরে। স্বভাবতই বিতর্কিত বিষয় বলে এই পোস্টে প্রায় তিনশতাধিক মন্তব্য হয়েছে। বাকি সমস্ত মন্তব্য বাদ দিয়ে আমি যে তর্কে অংশ নিয়েছি সেটুকুতে ফোকাস করবো। মূল পোস্টের কিছু পরেই একজন প্রশ্ন তুললেন, ধরি তার নাম “বিবর্তন-সন্দিহান“।

বিবর্তন-সন্দিহানঃ

১. আপনার পোস্টে কীভাবে ক্রিয়েশনিস্ট থিওরি বানচাল হলো? বিবর্তন সত্যি হলেও প্রথম প্রজাতিটা তো কোন না কোনভাবে সৃষ্টি হয়েইছিল, নাকি? সবকিছু শূন্য থেকে এসে, তাহলে শূন্যটা কোথা থেকে এলো?
২. ফসিল থেকে বিবর্তন তত্ত্বকে প্রমাণ করার কাজটা বিজ্ঞানের কোন প্রজেক্টে হয়েছে?
৩. এই তত্ত্বকে নিউটন আর আইনস্টাইনের সাথে মেলাবেন না, কারণ নিউটনের তত্ত্বের প্রমাণ আমরা দৈনন্দিন জীবনেই দেখতে পাই। আর আইনস্টাইনের তত্ত্বকেও আণবিক শক্তি তৈরির সময় ব্যবহার করে প্রমাণ করা গেছে।
৪. আপনি যে বললেন, “এই কথাটা বলে মূলত: ছদ্মশিক্ষিতরা” এটা আসলে ঠিক না। কারণ এমন অনেক বিজ্ঞানীই আছে যারা এর ব্যাপারে সন্দিহান, আর তারা আপনার চেয়ে বেশিই জানেন। আপনি তাদেরকে ছদ্মশিক্ষিত বলতে পারেন না।
৫. জিন এর কোডিং আর ফসিল কীভাবে বিবর্তন তত্ত্ব প্রমাণ করে সেটার লিংক দিবেন আশা করি।

এই প্রশ্নগুলো আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। অত্যন্ত “যুক্তিযুক্ত” প্রশ্ন। বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের সাধারণ জ্ঞান অতি সীমিত, প্রায় নেই বললেই চলে, আর সাথে আছে প্রচলিত ভুল- ও মিথ্যা-বয়ান। একজন এগিয়ে আসলেন উত্তর দিতে-

উত্তরদাতা১- “বিবর্তন-সন্দিহান, আমরা তো অহরহই বিবর্তনের প্রমাণ দেখছি। অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া অথবা কীটনাশক-রেজিস্ট্যান্ট কীটপতঙ্গের কথা শুনে থাকবেন নিশ্চয়ই। এছাড়াও হালকা রঙের মথ পাওয়া যায়, যেগুলো শিল্পবিপ্লবের পরে ছাইরঙা হয়ে গেছে।”
বিবর্তন-সন্দিহানঃ “কিন্তু এই ঘটনাগুলো দিয়ে তো সৃষ্টির উৎপত্তিকে নাকচ করা যায় না। আর এগুলো প্রমাণ ঠিক শক্তপোক্ত নয়। কারণ নইলে এই “থিওরি” সবাই গ্রহণ করে নিতো। মথের রঙবদল শিল্পবিপ্লব থেকে তেজস্ক্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘটতে পারে, যেমন তেজস্ক্রিয়তা থেকে অনেকের ক্যান্সার হয়।”
উত্তরদাতা১- “শক্তপোক্ত না কে বলেছে? বহু-প্রতিষেধক-রোধী যক্ষা একটা ভয়ানক রোগ, ভারতকে জিজ্ঞেস করে দেখেন। মথের রঙ তেজস্ক্রিয়তার কারণে বদলায় না। শিল্প-কারখানা থেকে আসা ছাইয়ের সাথে ক্যামোফ্ল্যাজ নিতে মথের জিন “নির্বাচন-চাপ” থেকে এই রঙ বেছে নেয়। মানুষ বিবর্তনকে মেনে নিতে পারে না কারণ ইব্রাহিমীয় ধর্মে আদম ও ইভকে প্রথম মানব-মানবী বলা হয়েছে। এরকম অনেক কিছুই যেমন সমকামীদের বিয়ের অধিকার মানুষ মেনে নিতে চায় না কারণ ধর্মে নিষেধ করেছে। কিন্তু তারপরও সমকামীরা ঠিকই বিয়ে করছে।”
বিবর্তন-সন্দিহানঃ “হাসালেন। আমি “মানুষ” নিয়ে কথা বলছি না, আমি বিজ্ঞানীদের কথা বলছি। গুগল করেই দেখেন কতজন বিজ্ঞানী এই “থিওরি”কে মেনে নিয়েছেন আর তাদের মধ্যে কতজন বিশ্বাসী। আর হ্যাঁ, এই পরিবর্তনগুলো ভৌগলিক কারণে হয়েছে নাকি বিবর্তনের কারণে, তা পরিষ্কার না। পরিবেশ বদল, তেজস্ক্রিয়তা এসব কারণেও এমন পরিবর্তন ঘটে। এটা বিবর্তন না। আর তারপরেও মোদ্দা কথা থেকেই যায় যে বিবর্তন সৃষ্টিতত্ত্বকে বাতিল করতে পারে না।”

এই পর্যায়ে আমি বিবর্তন-সন্দিহানের সাথে সরাসরি আলোচনায় যোগ দিলাম। খেয়াল করলাম, “থিওরি” বলতে তিনি বিজ্ঞানের ভাষাকে অনুসরণ করছেন না। বিজ্ঞানের ভাষায় থিওরি বা তত্ত্ব একটি পুনঃপুনঃপরীক্ষিত বিষয়, তিনি “থিওরি” বলতে “হাইপোথিসিস” বুঝাচ্ছেন, যা আদতে একটি প্রস্তাবনা যা এখনো সম্পূর্ণরূপে (তথ্য-উপাত্ত-পরীক্ষণ দ্বারা) প্রমাণিত হয় নি। এছাড়াও খেয়াল করলাম তিনি বিবর্তন বিষয়ে সন্দিহান, তাই প্রথমেই সেই সন্দেহের ভিত্তিটিকে বুঝে নিতে চাইলাম, “বিবর্তন-সন্দিহান, দয়া করে একজন বিজ্ঞানীর লিখিত পিয়ার-রিভিউড জার্নাল দেখাতে পারবেন যিনি বিবর্তনকে মিথ্যা/সঠিক না/ঘটে নি বলে দাবি করেছেন এবং প্রমাণ করে দেখিয়েছেন?”

উত্তরে বিবর্তন-সন্দিহান বললেন, “আপনি দয়া করে একজন বিজ্ঞানীর লিংক দেখান যিনি এটাকে সত্যি বলে প্রমাণ করেছেন”।

[স্বভাবতই, প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন আসলে কালক্ষেপণ ছাড়া কিছু না। তাই একটু বিরত হলাম।]

এরই ফাঁকে উত্তরদাতা১-এর সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে বিবর্তন-সন্দিহান এমন একটি কথা বললেন, যা থেকেই এই পোস্টের অবতারণা!

উত্তরদাতা১- “যিনি প্রাকৃতিক নির্বাচনই বুঝেন না, তার সাথে বিবর্তনের সত্যমিথ্যা নিয়ে আলাপ করা আমার পক্ষে সম্ভব না! হাল ছাড়ছি।”

বিবর্তন-সন্দিহানঃ “প্রাকৃতিক নির্বাচন তো বিবর্তনেরই একটি প্রক্রিয়া, আর আমি বিবর্তন নিয়েই সন্দিহান। তাই আমি প্রাকৃতিক নির্বাচন নিয়েও সন্দিহান। যা বলছিলাম, ওসব পরিবর্তনের পেছনে তেজস্ক্রিয়তা বা অন্য কোন কারণ যে নেই তা কেউ প্রমাণ করে দেখাতে পারে নি। আরেকটা বিষয় পরিষ্কার করি, বিবর্তন ইসলামের বিরুদ্ধে যায়, এজন্য কিন্তু আমি তর্ক করছি না। কারণ একটা সম্ভাবনা আছে যে ইসলাম বিবর্তনকে সমর্থন করে, এমনকি অনেক ইসলামী পণ্ডিতও এটা সমর্থন করেন। হতে পারে আদম ও হাওয়ার আগেও সৃষ্টি ছিল, হতে পারে আদম এবং হাওয়া পৃথিবীতে মিলিত হবার পর থেকেই বিবর্তন শুরু হয়েছে। আমি তর্ক করছি কারণ বিবর্তন তত্ত্বটি নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।”

বোল্ড করা লাইনগুলো আজকে আবার পড়তেই একটু থমকে গেলাম। একটু চিন্তা করা দরকার এখানে। চলুন, বিবর্তন-সন্দিহানের কথার পেছনে উদ্দেশ্যকে সৎ ধরে নিয়েই এই অবস্থানটিকে একটু বিশ্লেষণ করি। তিনি আস্তিক, অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন, এবং ধার্মিক, অর্থাৎ ধর্মগ্রন্থের নিয়ম-কানুন মেনে চলেন বা চলার চেষ্টা করেন। আর দশজনের মতোই ধর্মের সকল বিষয়কেই তিনি সত্য ভাবেন, মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। এ নিয়ে আমার আসলেই কোন বিরোধিতা নেই। আমার মতে প্রত্যেক মানুষেরই অন্যের কোনরূপ ক্ষতি না করে নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাস ও বিশ্বাস পালনের অধিকার আছে। এটাও পরিষ্কার যে বিবর্তন-সন্দিহান বিজ্ঞানের প্রতি অনুকূল ভাবনা পোষণ করেন। তিনি তাদের দলেও পড়েন না, যারা ধর্মের আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে বিজ্ঞানকে প্রতিপক্ষ ও ক্ষতিকর বিদ্যা হিসেবে গণ্য করে। বৈজ্ঞানিক সত্য যখন ধর্মীয় লিখিত রূপের সাথে অমিল বা বিরোধ সৃষ্টি করছে, তখন স্বভাবতই তিনি ধর্মের অনুকূলে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন, আবার একটি সেতু নির্মাণের চেষ্টা করছেন ধর্মীয় টেক্সট থেকে বিজ্ঞানের টেক্সট অবধি। যে সেতুটির মাধ্যমে তিনি সহজে ধর্মবিশ্বাস ও বৈজ্ঞানিক সত্যের মাঝে সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। “বিজ্ঞানময় কিতাব” ধরনের গ্রন্থ এবং অজস্য ওয়েবসাইটগুলো এই সেতুর প্রকৌশলী, রাজমিস্ত্রি, ও শ্রমিক। এগুলোরই উদয়াস্ত শ্রমে গড়ে ওঠে “নির্ভেজাল” ও “টেকসই” সেতুটি।

যারা এই সেতু নির্মাণ করেন, তারা দুটো বিষয় সবসময় খেয়াল রাখেন। এক. ধর্মগ্রন্থের বাণীর কাব্যময় ভাষা থেকে উৎপন্ন দ্ব্যর্থবোধকতা (ambiguity) এবং অনিশ্চিত অর্থ, এবং দুই. বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট ধারণার ব্যাপারে ভাসাভাসা জ্ঞান (popular knowledge)। এ যেন সেতুর সুদৃঢ় দুই থাম, দুই তীরের আছড়ে পড়া স্রোতকে বেঁধে রেখেছে। বিবর্তন তত্ত্বের ব্যাপারে এই বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সৃষ্টিবাদীরা (creationists) প্রধানত ইব্রাহিমীয় ধর্মগ্রন্থগুলোর কাব্যিক ও প্রাগৈতিহাসিক ভাষাকে আশ্রয় করে নিজের বক্তব্যের সমর্থনে বিভিন্ন টুকরো বাক্য ও অনুচ্ছেদ তুলে আনে। কিন্তু অপ্রামাণ্য এসব বাক্য জীববিজ্ঞান কিংবা জিনবিজ্ঞানে মূল্যহীন। প্রাণিজগতের বিভিন্ন খুঁত ও গরমিল দেখিয়ে আমরা “নিখুঁত” বলে দাবি করা এই সৃষ্টিবাদকে ভুল প্রমাণ করতে পারি। তাই পরবর্তী ধাপে অচিরেই এর পাল্টা-জবাব হিসেবে সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তন মিলিয়ে একটি জগাখিচুড়ি বানানোর প্রক্রিয়া চলে। সৃষ্টির পর স্রষ্টার আদেশে/নির্দেশেই বিবর্তন নাকি চালু হয়েছে। একটি ঘরানা দাবি করছে প্রাণিকূলে একমাত্র মানুষ ব্যতিরেকে বাকি সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ বিবর্তন মেনে চলছে। মানুষকে স্রষ্টার আদলে গড়া হয়েছে বিধায় তা বিবর্তনের উর্ধ্বে। আদিমানুষ প্রজাতিগুলোর ফসিল সেই দাবিকে বাতিল করে দেয়। সেক্ষেত্রে আবার বলা হচ্ছে, মানুষেরও ক্রমবিবর্তন ঘটেছে, তবে তা কেবলই উন্নতির দিকে। এই দাবিকেও বানচাল করে দেয়া যায়। কিন্তু দেখা যায় এই দাবি উত্থাপনকারীদের বিবর্তনের ব্যাপারে উচ্চতর জ্ঞান নেই। তারা শুধুই ধর্মগ্রন্থ পড়েছেন, বিবর্তনের খুঁটিনাটি বিষয়-আশয় তারা তেমন বোঝেন না। ফলিত জিনবিদ্যার বিভিন্ন গবেষণাপত্র তাদের মাথার দুই মাইল উপরে উড়তে থাকে। অনেকে বিবর্তন বলতে বোঝেন “বানর থেকে মানুষ এসেছে এই থিওরি”, অনেকে এটা দাবি না করলেও মানুষের বিবর্তনের আধুনিক আবিষ্কারগুলোর ব্যাপারে কিছুই জানেন না। সুতরাং ধর্মগ্রন্থের দ্ব্যর্থবোধক বাক্য এবং বিজ্ঞানে দুর্বল ভিত্তি – এই দুইয়ে মিলে গড়ে তোলে গ্রন্থময়-বিজ্ঞান কিংবা বিজ্ঞানময়-গ্রন্থের ধ্যানধারণা।

দুই.

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই একগুঁয়ে সেতুটিকে ভাঙার উপায় কী? সেই উত্তর-সন্ধানের আগেও প্রশ্ন হলো, আদৌ কি ধর্ম ও বিজ্ঞানের এই সেতুবন্ধন ভাঙার দরকার আছে? বিজ্ঞানের শনৈ শনৈ উন্নতির কালের বয়স খুব বেশি নয়, মোটের ওপর পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ বছর। এই অল্প সময়েই ধর্মের মত প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের অচলায়তন ভেঙে পড়েছে। মানুষের সম্মিলিত জ্ঞানের সমষ্টিকে মানুষই সংরক্ষণ করছে, এবং সেই জ্ঞান সহসা বিলুপ্ত হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। বরং মননশীলতার সুযোগ ও স্বাধীনতা পেয়ে মানুষ ক্রমেই নিজের জ্ঞান বাড়িয়ে চলেছে। এই তো, গতকালই মানুষের বানানো নভোযান প্লুটোবাবুর উঠোন দিয়ে “হাই! হ্যালো!” বলতে বলতে উড়ে গেল। আধুনিকতম যুগের মানুষ ধর্মের প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করা কমিয়ে দিয়েছে অনেকাংশেই। রোগবালাই হলে আধুনিক মানুষ দোয়া পড়ার আগে ডাক্তারের কাছে যায়, রাস্তাঘাটে বেরুনোর আগে গন্তব্য দেখে নেয় গুগল ম্যাপে। আবার এটাও ঠিক যে পৃথিবীর অনেক অংশেই এই জ্ঞানের আলো পৌঁছায় নি। এখনো সেখানে অন্ধত্ব ও অন্ধকার বাস করে। এই বৈপরীত্যের দূরত্বও যেন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি যে অমন অন্ধকারেই ধর্মীয় অন্ধত্ব ও গোঁড়ামি ঘাঁটি গেড়ে বসে। পাঁচশ’ বা এক হাজার বছর আগে যে অন্ধত্ব দূর করতে শিক্ষাদীক্ষার আলোই যথেষ্ট হতো, এখন সেখানে ভিন্ন উপায় প্রয়োজন হয়। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের জগদ্দল পাথরের প্রতিরোধক্ষমতা বেড়েছে। এই প্রতিষ্ঠানও আধুনিক হয়ে উঠেছে। সাধারণ জনগোষ্ঠীর বিজ্ঞান-মূর্খতার কারণে ধর্ম ও বিজ্ঞানকে মিশিয়ে উপরে বর্ণিত একত্রীকরণ (amalgamation) ঘটেছে, সেতুতে সেতুতে ভরে উঠেছে মগজ। তাই আমার মতে, এই সেতুটিকে যুক্তির পথে ভেঙে দেয়াই যুক্তিযুক্ত। সেতুটি ভেঙে পড়লে উপকার ব্যক্তিমানুষেরই। আমরা যদি তা বুঝতে ও বোঝাতে সক্ষম হই, তাহলে হয়তো “ডেমোলিশন” দ্রুত ও সহজ হবে।

এবারে আসি সেই প্রশ্নে, এই সেতু ভাঙার উপায় কী? বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি আর বৈচিত্র্যময় মানুষের মতনই বহুবিধ উপায় থাকতে পারে। আর সত্যি বলতে কী, আমার নিজের মাথাও চাচা চৌধরির মতো প্রখর নয়, যে মুস্কিল আসান এক তুড়িতেই বাতলাতে পারবো। তবুও কিছু কিছু ভাবনা মাথায় এসেছে, যেগুলো গ্রহণ-বর্জন প্রক্রিয়ার ভেতরে আছে। ধাপে ধাপে বলি।

প্রথমত, আমার মনে হয় ধৈর্য আর সময়ের পরীক্ষা এটি। ধৈর্যের সাথে কাউকে এই সেতুবন্ধনের খারাপ দিকটি বুঝাতে পারলে বাকি পথটুকু তিনি নিজেই খুঁজে বের করে নিতে পারবেন। দ্বিতীয়ত এটা খুবই পরিষ্কারভাবে বলতে হবে যে কারো ব্যক্তিগত অধিকারকে খর্ব করার কোন প্রচেষ্টাই এখানে হচ্ছে না। স্রষ্টা মানা ও ধর্ম পালনের অধিকার ব্যক্তির প্রাপ্য, এবং সেখানে অন্যের নাক বা হাত বা অন্য কোন অঙ্গ গলানোর এখতিয়ার নেই। তৃতীয়ত, কাউকে ধর্ম ত্যাগ করতেও বলা হচ্ছে না, বরং ধর্ম এবং বিজ্ঞানের মাঝে গোঁজামিলের সেতুটি ভাঙতে বলা হচ্ছে। ধর্মপালনের সকল অধিকার যেমন তার আছে, তেমনি তার অধিকার আছে আধুনিক বিজ্ঞানে শিক্ষিত হওয়ার। চতুর্থত (এবং সবচেয়ে কঠিন ধাপ), বিজ্ঞানের বক্তব্য যেখানে ধর্মগ্রন্থের সাথে সাংঘর্ষিক, সেখানে তাকে বোঝাতে হবে যে অনেক ধর্মের অনেক পুরানো নিয়মই বাতিল হয়ে গেছে। তার কারণ উন্নত সমাজব্যবস্থায় নতুন নিয়মের দরকার হয়েছে। এখন এই ২০১৫ সালে তিনি যে নিয়মকানুন মেনে চলেন, সেগুলো মূলত এখনো সমাজের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক না বলেই তিনি মানছেন। ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে ক্রমশ এসকল নিয়মও অচল হয়ে পড়বে এবং মানুষ উন্নততর সমাজ গড়ার নিমিত্তে নতুন নিয়ম বানিয়ে নিবে। কাকতালীয়ভাবে এটাও বিবর্তনের মতোই ধীর ও জটিল প্রক্রিয়া। তাই হাতে-নাতে প্রমাণ দেয়ার কিছু নেই। এখন তার কাছে প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি কি পুরাতন আংশিক-অচল নিয়মকে আঁকড়ে ধরে থাকবেন, এবং ক্রমেই ধর্মগ্রন্থের দ্ব্যর্থবোধক বাক্যের সাথে বিজ্ঞানের সূত্রের ভাষা মেলাবেন? নাকি তিনি ধীরে ধীরে গ্রহণ করে নিবেন বৈজ্ঞানিক পন্থা আর যুক্তির শানিত অস্ত্র?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.