![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক সময় আমরা সবাই মানুষ ছিলাম।হঠাৎ করে তখন এক ভণ্ডু খোদার আবিষ্কার হল।শুরু হয়ে গেলে ধর্মের/খোদার দলের দালালী(মানুষের মধ্যে মারামারি হানাহানি)ভণ্ডু খোদার এক বিশেষ দালাল হল ইসলামধর্মের নবী মুহাম্মদ।ধর্মিয় বই নাকি আসমান থেকে এসেছ,আরে বোকার দল তাহলে তদের মালিককে বল আমাকে একটি আইটির বিশেষ বই দিতে।আমি আইটির ব্যবহার ও উন্নত মান দিয়ে তোদের খোদা হওয়ার দাবী করব।তোমরা বল কোরান,বাইবেল, গীতা আরও কত্তকিছু উপর হতে এসেছে।তোমরা কি দেখনা এখন মানুষ উপর(চন্দ্র,মংগল ইত্যাদিতে ভ্রমণ করছে)চোখ খুল মানুষ, চোখ খুল।
যারা অভিজিৎ রায়কে কুপিয়েছেন, অথবা যারা অভিজিৎ রায়কে কোপ খাইয়েছেন, আর একটু অন্যভাবে বললে, এই কোপের উপর যাদের একটা প্রচ্ছন্ন সমর্থন আর উল্লাস জড়িত- তারা নিঃসন্দেহে অভিজিৎ রায়ের কোন বই পড়েন নি, অথবা পড়েন নি তাঁর লিখা ব্লগপোস্টগুলোও। অভিজিৎ রায়কে কোপানোর জন্যে তাদের নাস্তিক পরিচয়টিই যথেষ্ট ছিল, আর যথেষ্ট ছিল অভিজিৎ রায়ের অপ্রধান ছিটকে পড়া বক্তব্যগুলোকেই একটা কিছু গুরুতর ভেবে ঝাল মেটানো।
এসব জায়গা থেকে ভাবতে গেলে- একজন নাস্তিকের কাছে একজন চরমপন্থির মোটের উপর যৌক্তিক প্রত্যাশা কি- তা আমি কোনভাবেই ভেবে পাই না। একজন নরম কোমল ধার্মিক প্রত্যাশা করতেই পারেন কেউ তাকে আঘাত দিয়ে কথা না-বলুক। অথচ একজন চরমপন্থি, উনি মৌলবাদীও- উনি চান ইসলাম ইসলাম ইসলাম, একটি অকাট শান্তি, একটি চিরস্থায়ী শান্তি, একটি মুসলমানপূর্ণ পৃথিবী- উনি কিভাবে আশা করে থাকতে পারেন যে, একটা নাস্তিক ঠিক ভয় পেয়ে ঠিক হয়ে যাবে আর তার অর্জন করা বিদ্যাগুলো স্রেফ গিলে ফেলবেন একটি কোপহীন জীবনের স্বপ্ন দেখতে দেখতে!
একজন চরমপন্থি, যিনি এভাবে রাস্তায় একটি আস্ত মানুষকে একের পর এক কোপ দিতে পারেন, তাকে ভয় না পাওয়ার কিছু নেই, তাকে ভালবাসারও কিছু নেই, তাকে ঘৃণা করারও কিছু নেই; ব্যক্তিগতভাবে বলতে গেলে, জঙ্গিদের সাথে আমার আতংক ছাড়া কোন সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ, ওদের জন্যে আমার করুণা হয় যারা আত্মহুতি দেয় একটি স্বর্ণালী স্বর্গের কথা ভেবে।
কি হত- যে রাজু ভাস্কর্যের দিকে দৌড় দিয়েছে তাকে ধরতে পারলে? সে বেশ গর্ব করেই ধরা খেত। তাদের মাথা নিচু করে, চোখে আতংকে নিয়ে কারো সামনে দাঁড়ানোর অর্থই হয় না, আর অনুতাপ করার তো কোন সুযোগই নেই, তারা অন্তত তাদের কাছে নিশ্চিত হতে পেরেছে- তারা এমন এক কাজে এসেছে যার পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং নিজ হাতে তাদের দেবেন। কি মস্ত বড় ধোঁকা! নিজের সাথে এবং একই সাথে অসংখ্য কত মানুষের সাথে কত বড় একটা প্রতারণা! কি মস্ত বড় একটা ফাঁদ!
আমি অনেক ভাবে ভাবার চেষ্টা করেছি একটা চরমপন্থি কিভাবে ভাবতে পারে; অথবা যে অভিজিৎ রায়ের ঘাড়ে কোপ বসিয়েছিল সে কিভাবে ভেবেছে! আমরা সবাই জানি তার ভাবনার সীমানা কিভাবে কিভাবে তাকে একটা আদর্শ দিতে পারে যেখান থেকে সে এই কাজটি করেছে অনুতাপহীনভাবে। সে যখন চাপাতি নিয়ে হাঁটছিল- আমরা ধারণা করতে পারি সে কি ভেবেছে, পৃথিবীর কাছে তার প্রত্যাশা কি, অথবা জীবনের কাছে।
সমগ্র কোরান পড়ে, যদি কেউ এভাবে একটি রাতে, অথবা একটি প্রশান্ত সুন্দর রাতে, এভাবে একজন মানুষকে পেছন থেকে আক্রমণ করতে পারে যুক্তি জ্ঞানের কোন তোয়াক্কা না করেই, আর এভাবে কোপাতে থাকে আর কোপাতেই থাকে- ঠিক এমনভাবে যে- দেখলেই মনে হবে- এভাবে কুপিয়ে একজন মানুষ নিঃশেষ করার জন্যেই তার জন্ম, এখানেই তার পূর্ণতা, আর এ-সমস্ত করার পর তারা যদি দাবি করে তারা একটা পরিপূর্ণ জীবনদর্শনের কথা বলছে, আর সাথে সাথে তারা চিৎকার করে এটাও বলতে থাকে যে তারা ঠিক কাজটিই করেছে, আর গর্ব করতে থাকে একটি কাজ এভাবে সমাধান করার জন্যে; তাহলে সবশেষে আপনি যখন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে পেয়ে যাবেন অভিজিৎ রায়কে, দেখবেন ওনার শরীরটা কাঁপছে, আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে আশপাশ, পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আরেকজন মানুষ, তারও সমস্ত শরীরে রক্ত,- তখন আপনার সে মৃতদেহ আর পাশের আস্ত একজন আতংকিত চোখের মানুষকে দেখে মনে হবে না- তারা যে-জীবনদর্শনের ধোঁয়া তুলে বেড়ায় সেগুলো এখন রক্ত ছাড়া আর কিছুই ঝড়াতে পারে না?
আর হ্যাঁ, এভাবে যদি ভাবা যেতে পারে, তাহলে, বাংলাদেশে আরেকটি নাস্তিকের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্যে দায় ধার্মিকদেরই নিতে হবে। কোন সন্দেহ নেই অভিজিৎ রায়কে হত্যার পর নাস্তিকের সংখ্যা বেড়ে যাবে। যারা অভিজিৎ রায়ের বই পড়েন নি তারা পড়বেন, আর তারা ক্রমেই বের হয়ে আসবেন একটি জল্পনা-কল্পনাযুক্ত ভবিষ্যৎ দেখার ভাবনা থেকে। আর তাই আমি মনে করি, যারা ধর্ম-নাশকতার অভিযোগে অন্যের উপরে কোপ চালিয়েছেন, তাদের নিজের ঘাড়ে নিজেদেরই কোপ বসানোর সময় এসেছে। তারা কি এই কাজটি করতে পারবে?
দিবালোকের মত স্পষ্ট যে একসময় পৃথিবীটাতে ভরে যাবে নাস্তিকরাই। এটাই স্বাভাবিক। চরমপন্থিরা নিজেদের ধর্মের প্রতি আবেগটা বিসর্জন দিলেই দেখতে পাবে ধর্ম কিভাবে ক্রমশ সংকোচিত হয়ে যাচ্ছে নিজের ভারে নিজে, আর অপর দিকে কিভাবে অপ্রতিরোধ্যভাবে ছড়িয়ে পড়ছে মানুষ। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলো হয়ত অনেক বড়সড় ক্ষতিই করে ফেলবে এর মাঝে, তবে তা কতদিন! নাস্তিক বেড়ে যাওয়ার মানে এটা কখনোই নয় সবকিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বরং এটাই যে, মানুষ সচেতন হচ্ছে, নিজের বোধের উপর ভরসা বেড়েছে, সত্যের দিকে পা-রাখার মত একটা নির্দয়তা অর্জন করেছে। নির্দয়তা নয় তো কি? আপনার একদম প্রথমে কখনোই ভাবতে ভাল লাগবে না- আপনার যা হচ্ছে মঙ্গলের জন্যে হচ্ছে না, আর মৃত্যুর পর আপনি একদম ভেনিশ হয়ে যাচ্ছেন, আপনার নিজেরটা নিজেরই করতে হবে, উপর থেকে কিছুই আপনার কপালে চুমো খাবে না। এসব ভাবার জন্যে একজনকে নির্দয় হতে হয়, আর এ-নির্দয়তা একটি সত্যকে অতিক্রম করে আরেকটি সত্যে পৌঁছানোর প্রস্তুতিমাত্র। নাস্তিকতা কখনোই একজন মানুষের পরিচয় হতে পারে না, এটা সম্ভবত এমন একটা শব্দ, যেটা ঠিক বুঝাতে চায়- ‘আমি সমস্ত কিছু শোনার জন্যে এখন মানসিকভাবে প্রস্তুত’।
সমগ্র কোরানকে জীবনদর্শন হিসেবে ধরা হলে আপনি ঠিক বিভ্রান্ত হয়ে যাবেন আপনার করণীয় কি। আপনি হয়ত গলা উচিয়ে বলতেই পারবেন, ‘এখানেই আছে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা’, তবে আমি নিশ্চিত আপনি আপনার প্রত্যাহিক জীবনে চলার পথে একবার কোরান খুলে দেখেন না এখানে কি বিধান দেয়া আছে, আপনি সর্বোচ্চ নামাজ রোজা করার নিয়মগুলো শিখতে পারেন মাসলা মাসায়াল থেকে। আমাকে অনেক লোক ধর্ম শেখাতে এসেছেন, তারা এসেছেন তাদের নিজ উদ্যোগেই, তাদের চরিত্রের নেতিবাচক দিকগুলো বাদ দিয়েই লাখো লাখো ভুল ধরা যায় কোরানের আলোকেই, তারা নিজেরা কখনো কোরানটা খুলে দেখে না; আদতে তাদের আগ্রহও হয় না, আর এটাই স্বাভাবিক, তাদের সমস্ত কিছুই তাদের একটু একটু করে দাঁড়া করিয়েছে ধর্মের বাইরে যা তারা জানতেও পারে নি। তারা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অসংখ্য পাপের সাথে শিরক, কাফরি সমস্ত কিছুই করে যায়, অথচ তাদের ঠোঁটের ডগায় এমনভাবে ‘ইসলাম, কোরান, আল্লাহ’ শব্দগুলো থাকে যেগুলো তারা মুহূর্তে মুহূর্তে একটা টোকায় বের করে দিতে পারে। তাদের ধর্ম বলতে এই তিনটি শব্দ ঠোঁটের পেছনে সংরক্ষিত রাখাকেই বুঝায়। তাদের ভেতরটা আর কাফেরের ভেতরে কোন পার্থক্য নেই। তারা নির্ঘাত টাকা গুণতে গুণতে আল্লাহর কথা ভুলে যায়; অথচ লোক দেখানো জুম্মার নামাজটা পড়েই কত অহংকার আর সাহস! ভাবলেই অবাক লাগে, এই জোর তারা কোথা থেকে পায়? তারা যে আল্লাহর গায়ের উপর দাঁড়িয়ে এত জোর দিয়ে চিৎকার করে তারা তো বেশ্যার বুকের উপর শুয়ে অনবরত অনুতাপহীনভাবে চুষতেই থাকে একটিবারও সে আল্লাহর কথা না-ভেবে। আর তারা যখন আমাকে ধর্ম শেখাতে আসে, আর তারা বিশ্বাস করে জাকের নায়েকের সামনে দাঁড়ালেই আমি ঠিক হয়ে যাব, তাদের আমার কিছুই বলতে ইচ্ছে করে না এখন। তাদের বলার তেমন কিছু নেইও;
অথচ, তারা ঠিক বিভ্রান্ত হয়ে যাবে এটা ঠিক করতে করতেই যে, এভাবে অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে মারা ঠিক হয়েছে কীনা। কোরানে এত নিয়মকানুন এত পরিস্থিতি অনুযায়ী তৈরী হয়েছে যে, কেউ একজন চাইলেই একটি আয়াতকে নাকচ করে দিতে পারেন জীবনদর্শনের বাইরে বলে। আর এটা এখন করাও হচ্ছে, আর সেটা করছে মুসলমানেরাই। কোরানের যেই কনটেক্সটভিত্তিক ব্যখ্যা দিয়ে কোরানকে পংকিলতাহীন একটা বইয়ে রুপ দেয়া হচ্ছে, সেখানে কোরান জীবনদর্শন হিসেবে ঠিক বরবাদ হয়ে যায়। আর হ্যাঁ, এই বরবাদের কাজটাও নাস্তিকরা করেন না, ধার্মিকরাই করেন।
আচ্ছা, আমি এখন সবাইকেই একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি, আপনাদের কি মনে হয় না- আমার মৃত্যুর জন্যে এই পোস্টই যথেষ্ট সেটা আমি যত শালীনভাবেই লিখি না কেন? আর তাছাড়া, এই পোস্টটি যদি আমাকে হত্যার জন্যে যথেষ্ট হয়, আপনি যত বড় ধার্মিকই হন না কেন, আপনার মনে হয় না- সামথিং ইজ মিসিং- যেটার অভাবই কোন-না-কোনভাবে আপনাকে অপ্রয়োজনীয় কিছু খোলা রক্ত দেখাতে বাধ্য করছে?
©somewhere in net ltd.