নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Criticism is our fundamental right. The revolution will come only from our pen #save constitution

Titanic

এক সময় আমরা সবাই মানুষ ছিলাম।হঠাৎ করে তখন এক ভণ্ডু খোদার আবিষ্কার হল।শুরু হয়ে গেলে ধর্মের/খোদার দলের দালালী(মানুষের মধ্যে মারামারি হানাহানি)ভণ্ডু খোদার এক বিশেষ দালাল হল ইসলামধর্মের নবী মুহাম্মদ।ধর্মিয় বই নাকি আসমান থেকে এসেছ,আরে বোকার দল তাহলে তদের মালিককে বল আমাকে একটি আইটির বিশেষ বই দিতে।আমি আইটির ব্যবহার ও উন্নত মান দিয়ে তোদের খোদা হওয়ার দাবী করব।তোমরা বল কোরান,বাইবেল, গীতা আরও কত্তকিছু উপর হতে এসেছে।তোমরা কি দেখনা এখন মানুষ উপর(চন্দ্র,মংগল ইত্যাদিতে ভ্রমণ করছে)চোখ খুল মানুষ, চোখ খুল।

Titanic › বিস্তারিত পোস্টঃ

হেরে যাচ্ছে বিজ্ঞান?

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৯



প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বাড়ছে আমাদের প্রযুক্তি নির্ভরতাও। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র, সব যায়গাতেই আজ আমরা প্রযুক্তির সাথে যুক্ত। দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই এমন স্থান হয়তো পাওয়া যাবে কিন্তু মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই এমন যায়গা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গহীন অরণ্যের মাঝেও দাড়িয়ে থাকে বেরসিক বিটিএস টাওয়ার। গ্রামে গঞ্জে ঘোরার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নিশ্চিত ভাবেই এই সংযুক্তি নতুন নতুন ব্যবসা এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। আমাদের সামাজিক সম্পর্কগুলোও হয়ে গেছে অন্যরকম। কারণ সবাই এখন কয়েকটা বোতাম চাপের দূরত্বে। রোমিও-জুলিয়েটের মত কমিউনিকেশন গ্যাপের কারণে করুণ পরিণতি হবার যুগ আর নেই। তাই আমাদের সাহিত্যও বদলে যাচ্ছে তুমুল বেগে। এ তো গেল তথ্যপ্রযুক্তি। কৃষি, নির্মান, পরিবহন, সংরক্ষণ, সৌর প্রযুক্তিতেও আসছে নতুনের ছোঁয়া। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবেই প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটাকে যতটা না আশার আলো মনে হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে অশনি সংকেত। কারণ এই ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি নির্ভরতার সাথে পাল্লা দিয়ে কমছে আমাদের বিজ্ঞানমনস্কতা, বিজ্ঞানচর্চা। উচ্চ প্রযুক্তির কিছুই আমরা তৈরি করছি না। কিনে আনছি বাইরে থেকে। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তাই সেই আদি ও অকৃত্রিম সস্তা শ্রম। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় এই অবস্থার পরিবর্তনের আশা দেখা যাচ্ছে না।

মুঠোর মাঝে এমন অলৌকিক প্রযুক্তি থাকলেও আমরা কেন যেন কৌতূহলি হয়ে উঠছি না। আমরা স্রেফ ভোক্তা হয়েই সন্তুষ্ট। কীভাবে এসব কাজ করছে সেই শিশুসুলভ কৌতূহলটা কোথায় যেন হারিয়ে ফেলছি আমরা স্কুলে বড় ক্লাসে উঠতে উঠতেই। ক্লাস ফাইভে পড়া ছেলে-মেয়েরাও যতটুকু কৌতূহলী থাকে ক্লাস নাইনে উঠতে না উঠতে তাদের অনেকেই সেই কৌতূহল হারিয়ে ফেলছে। ক্লাস নাইনে বিজ্ঞান বিভাগে নিবন্ধনের সংখ্যা দেখলেই যেটা বোঝা যায়। তার মানে জুনিয়র হাই স্কুলের (সিক্স সেভেন এইট) এই তিন ক্লাসেই আমাদের কৌতূহলমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। এই বয়সশ্রেণীকে লক্ষ্য করে তাই বিশেষ পরিকল্পনা থাকা উচিত। ব্লগে আমরা বিজ্ঞান নিয়ে যে লেখালিখিগুলো করি, সেগুলো জনপ্রিয় ঘরনার হলেও, সেগুলোর উদ্দিষ্ট পাঠক সাধারণত এই বয়সশ্রেনীতে পড়ে না। অধুনা, বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকাগুলো (যেমন জিরো টু ইনফিনিটি) সেই অভাব কিছুটা পূরণ করছে। বিপুল জনগোষ্ঠির তুলনায় এগুলোর বিস্তার অপ্রতুল হলেও বিজ্ঞানের বিষ্ময় মানুষের মাঝে পৌছে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কাজটি এরা করে চলেছে। বিজ্ঞানমনস্কতা সৃষ্টিতে জনপ্রিয় বিজ্ঞানের অবদান অস্বীকার উপায় নেই কিন্তু প্রকৃতিগতকারণেই জনপ্রিয় বিজ্ঞান আর পুরোদস্তুর বিজ্ঞানের মাঝে একটা যোজন দূরত্ব বিরাজ করে। সেই শূন্য স্থান পুরন করার মত কর্মকাণ্ড এদেশে অপ্রতুল। গণিত অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান ক্যাম্প, ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড এগুলো সেই পথের প্রয়াস হলেও, প্রতিটি স্কুলের খুব কম সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীই এসবের আঞ্চলিক পর্বে অংশ নিতে পারছে।

আমাদের তাই দরকার একটু ‘অজনপ্রিয়’ ঘরনার বিজ্ঞান লেখা। জনপ্রিয় বিজ্ঞান, বিজ্ঞানের আবিষ্কার, বিজ্ঞানভাবনা ইত্যাদিকে সহজপাচ্য করে, মানুষের সামনে তুলে ধরে। জনপ্রিয় বিজ্ঞানের চোখে বিজ্ঞান একটা জাদুর কাঠি, বিজ্ঞানীরা হ্যারি পটার, রোমাঞ্চকর তাদের জীবন। এটা সত্যি বিজ্ঞানীদের জীবন রোমাঞ্চকর, কিন্তু এই বিজ্ঞানী জীবনের প্রকৃত রূপ না মেলে তাদের জীবনী গ্রন্থে, না মেলে জনপ্রিয় বিজ্ঞানে, এমনকি তাদের রাশভারী গবেষণাপত্রেও এর খোঁজ পাওয়া যায় না। এই ব্যাপারটা প্রকাশিত হয়েছে এই চমৎকার কার্টুনে,

বিজ্ঞানী একজন রক্তমাংসের মানুষই। তাকে ঐ সব অভাবনীয় আবিষ্কারের জন্য অভাবনীয় পরিশ্রম করতে হয়। অগণিত উপাত্ত ঘেটে তার মধ্যে কোনো অন্তমিল, কোনো ছন্দ খুঁজে বের করা। সেই অনুযায়ী নতুন হাইপোথিসিস দাঁড় করানো। সেইসব হাইপোথিসিসের গাণিতিক ভিত্তি দাঁড় করাতে পাতার পর পাতা অঙ্ক করা। এইসবই বিজ্ঞানীদের দৈনন্দিন কর্ম। বিজ্ঞানীকে কোনো ম্যাজিক্যাল জিনিয়াস ভাবলে চলবে না। পাতার পর পাতা অঙ্ক করতে তাকেও আমার আপনার মতই খাটতে হয়। লোহালক্কড়ের দোকানে যে শ্রমিক মাথায় করে ট্রাক থেকে রড নামায় সে ব্যাপারটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে যে রড নামাতে কম শক্তি খরচ করতে হয় তা নয়। তাই বিজ্ঞানীকে অনায়াসে দেয়ালজুড়ে গাণিতিক সমীকরণ লিখতে দেখে অবাক বা হতাশ হবার কিছু নেই। তার সাথে একজন অবিজ্ঞানীর তফাত স্রেফ ঐ পরিশ্রম করার অভ্যাসে। এ প্রসঙ্গে কেপলারের একটা কথা মনে পড়ে। তিনি তার গ্রহ নক্ষত্রের গতিপথের সূত্র সংক্রান্ত সুদীর্ঘ্য হিসাবনিকাশ পড়তে পড়তে হাফিয়ে ওঠা পাঠককে বলছেন, “তুমি যদি এইসব ক্লান্তিকর হিসাবনিকাশ পড়তে পড়তে ক্লান্ত হও, তাহলে একবার আমার কথা ভাবো, এগুলো করতে আমাকে অন্তত ৭০ বার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করতে হয়েছে”। জনপ্রিয় বিজ্ঞান পড়ে বিজ্ঞানপ্রেমী হয়ে উঠলে বেশিরভাগ সময় (সবার ক্ষেত্রে নয়) বিজ্ঞানের এই সাধনার দিকটা সম্পর্কে ভুল ধারনা সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানীদের জীবনের সিংহভাগই যে কেটে যায় এই নিদারুণ হতাশাজনক কানাগলিতে ঘুরতে ঘুরতে, সে কথা বেশিরভাগ সময়ই উহ্য থাকে। থমাস আলভা এডিসনের, বাল্বের ফিলামেন্ট বানাতে হাজারবার চেষ্টা করার গল্প কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিজ্ঞানের যে কোনো পিএইচডি ছাত্রকেই তার গবেষণার বিষয়গুলো নিয়ে এভাবে হাজার রকম চেষ্টা করতে হয়। মূল গবেষণাপত্রে অবশ্য লেখা থাকে শুধু সফল অ্যাপ্রোচের কথাটাই। ভুললে চলবে না, যে প্রযুক্তিগুলো এখন হাতের মুঠোয় ব্যবহার করছি অনায়াসে, যেগুলোর প্রতিটার পিছনে হাজার বিজ্ঞানীর হাজার ঘন্টা কানাগলিতে ঘোরার ভোগান্তি রয়েছে।

বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি ভীতি সঞ্চার না করে এই কষ্টকর অভিযাত্রার কথাও আমাদের তুলে ধরা উচিৎ। সেটা হচ্ছে না বলেই, ক্লাস ফাইভের ইয়ারবুকে যে ছেলেটা লিখছে, হবে পদার্থবিজ্ঞানী বা জেনেটিসিস্ট সেক্লাস নাইনে উঠে জ্যামিতির ‘এক্সট্রা’, আর উচ্চতরগণিতের সামনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ছুটছে ব্যবসায় প্রসাশনে। যদিও এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিজ্ঞান না পড়ে ব্যবসা (এমনকি সাহিত্যেও) ভালো করার উপায় নেই। তাই বড় হয়ে সে হয়ে উঠছে, রপ্তানিযোগ্য অদক্ষ জনশক্তি। আর যারা কায়ে ক্লেশে বিজ্ঞান বিভাগে টিকে যাচ্ছে তারাও শুরুতেই বুঝতে পারছে না যে উপরের দিকে যেতে যেতে এই যাত্রা ক্রমেই আরো কঠিন হয়ে উঠবে। অনেকটা এভারেস্টে চড়ার মত, যতো উচুতে পথচলা ততোই পরিশ্রমসাধ্য।

তাহলে উপায়? বিজ্ঞান শিক্ষার এই বৈতরণী পাড়ি দিতে ছেলে-মেয়েদের উদ্ভুদ্ধ করবো কী করে? শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় এই পরিশ্রম লাঘব করার আর কোনো উপায় যেহেতু নেই, বাকি থাকে একটাই পথ। সেটা হলো বিজ্ঞান চর্চার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যেন কষ্টকর হলেও ব্যাপারটা স্রেফ জীবনের একটা অংশই হয়ে যায়। স্যোশাল নেটওয়ার্ক, মোবাইলফোন, তরুণদের মধ্যে খুব সহজে আনন্দলাভের নানান উপায় মেলে ধরে। সেটা কাটিয়ে বিজ্ঞানের কষ্টকর পথে টেনে আনার কাজ সহজ সাধ্য নয়। তার জন্য দরকার জনপ্রিয় বিজ্ঞানের চেয়ে আরেকটু সিরিয়াস ঘরনার লেখালিখি, টিভি বা রেডিও অনুষ্ঠান, ইত্যাদি।

টিভি রেডিওর ব্যাপারে কিছু করা না হলেও। বিজ্ঞান নিয়ে সিরিয়াস ঘরনার লেখালিখির হতে দেখেছি মুক্তমনাতেই। বিবর্তন, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে মুক্তমনায় এমন অনেক লেখা আছে যা স্রেফ বিজ্ঞানের আবিষ্কারের জয়গাথা না, রীতিমত কাদামাটিতে নেমে হাতেকলমে বিজ্ঞানের কোনো বিষয় ব্যাখ্যা করার মত। যেটা পাঠকের তরফে সেফ আয়েসী পাঠ নয়, রীতিমত সক্রিয় অংশগ্রহন দাবি করে। এবং এই ধরনের লেখালিখি ও পাঠক মিথোস্ক্রিয়াই মুক্তমনাকে করে তুলেছিলো অনন্য! খেয়াল করুন অতীতকাল ব্যবহার করে ‘তুলেছিলো’ বলছি। আর এখানেই এই লেখার শিরোনামের তাৎপর্য।

বেশ কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছি মুক্তমনায় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা কম আসছে। এমনকি লেখা আসলেও সেটাতে পাঠক মিথোস্ক্রিয়া (কমেন্ট সংখ্যা), বা লেখাটাগুলোতে পাঠকের আগ্রহ (হিট সংখ্যা) আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যাচ্ছে। বিজ্ঞান নিয়ে যে লেখকদের লেখা নীড়পাতা মুখিয়ে রাখতো, তাদের অনেকেই লিখছেন না নিয়মিত। এমনকি বিজ্ঞান নিয়ে লেখা আসলেও সেটা যেন অগোচরেই থেকে যাচ্ছে। সারাদেশে বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহহীনতার মাঝে মুক্তমনা যে উজ্জল ব্যতিক্রম হয়ে ছিলো সেটাই যেন আজ হুমকির সম্মুখীন। এবং এর একটা কারণ হতে পারে, পাঠক ও লেখক রুচিতে বিজ্ঞানের পরিশ্রম সাধ্য তত্ত্বের বদলে রাজনীতির সহজসাধ্য (অগুরুত্বপূর্ণ বলছি না কিন্তু!) আলোচনা বেশি রুচছে। কেননা মোড়ের চা দোকানের আয়েসি মেজাজে রাজনৈতিক আলোচনার তুমুল ঝড় তোলা যায়। যেখানে, বিজ্ঞান সাধনা বেশিরভাগ সময়ই একটা নিসঙ্গ অভিযাত্রা। খুটিনাটি বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলো অনুসরণ করতে অন্য ধরনের মেজাজ দরকার। হয় আমরা (মুক্তমনার লেখক পাঠকরা) সেই মেজাজ হারিয়ে বসছি। অথবা সেই মেজাজের পাঠকরা এদিকে আর আসছেন না। ব্যাপারটা শুধু আমার মনে হচ্ছে নাকি অন্যদেরও মনে হচ্ছে তা নিয়ে একটা জরিপ হতে পারে। কিন্তু সেইসব জরিপের ঝামেলায় না গিয়েও বিজ্ঞান যে হেরে যাচ্ছে সেটা দেখা যায়। এবং তা রীতিমত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই। আমরা এখন সেটাই করবো।

নিবন্ধটির এই অংশে এসে লেখাটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান ঘরণা থেকে ‘অজনপ্রিয়’ বিজ্ঞান ঘরণায় উত্তির্ন করবো আমরা। তার জন্য আমরা কিছু উপাত্তঘাটাঘাটি করবো। আমরা জানি মুক্তমনার লেখাগুলোতে ‘বিষয় শ্রেণী’ যুক্ত করা যায়। এবং লেখকরা বেশ যত্ন নিয়েই বিষয়শ্রেণী যুক্ত করেন। মুক্তমনার নতুন সাইট শুরুর পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রকাশিত বিভিন্ন বিষয়শ্রেণী যুক্ত লেখার সংখ্যা, সেগুলোতে হিট সংখ্যা, এবং মন্তব্য সংখ্যা থেকে লেখক ও পাঠকদের রুচিগত বিবর্তনের একটা ধারা বোঝা সম্ভব। এইসব উপাত্ত আর তার কিছু বিশ্লেষণ আমরা করবো এবং সে থেকে দেখতে চেষ্টা করবো, বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার জনপ্রিয়তা আদৌ কমছে কি না। এই আলোচনায় শুধু মুক্তমনা বাংলা ব্লগ বিবেচনা করা হয়েছে।

শুরুতেই নিচের লেখচিত্রটি দেখি,

বিভিন্ন বিষয়শ্রেনীর পোস্ট সংখ্যা,

চিত্র-১

এখানে বিজ্ঞান, রাজনীতি, ধর্ম, ক্যাটাগরির পোস্ট সংখ্যা দেখানো হয়েছে। x- অক্ষ বরাবর আছে মাস আর y- অক্ষ বরাবর ঐ মাসে প্রকাশিত পোস্ট সংখ্যা। দেখার সুবিধার্থে ডাটাপয়েন্টগুলো একটা স্মুথ কার্ভ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে। এবং একেকটা বিষয় শ্রেণীর ট্রেন্ড বোঝার জন্য স্রেফ ভিজুয়াল এইড হিসাবে একটা সিক্সথ অর্ডার কার্ভ দিয়ে ডাটাগুলো ফিট করা হয়েছে। যা থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১০, ২০১১ সালের দিকে ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে লেখার সংখ্যা বেড়ে গেছিলো, এবং ঐ সময় রাজনীতি নিয়ে লেখা তুলনামূলক ভাবে কম। ইনফ্যাক্ট রাজনীতি নিয়ে লেখায় ২০১০-২০১১ সালের দিকে বরং কিছুটা কমেই গেছে। ফলে এর ডানে ও বামে দুটো কুঁজ তৈরি হয়েছে।

মুক্তমনার বিষয়শ্রেণীটা একটা ক্রমোচ্চ শ্রেণীবিভাগ। ফলে বিজ্ঞান বিষয়শ্রেণীর সকল উপশ্রেণীর লেখাই বিজ্ঞান লেখা হিসাবে ধরা হএয়ছে। একই লেখায় যদি একাধিক উপশ্রেণী ট্যাগ করা থাকে, সেক্ষেত্রে ওই লেখাটি একবার মাত্র গণনায় আনা হয়েছে। রাজনীতি ও ধর্মের ক্ষেত্রেও তাই।
তবে এই উপাত্তের একটা দুর্বলতা হলো, বেশ কিছু লেখার বিষয়শ্রেণী লেখকরা নির্ধারণ করে দেন না। ফলে সেটা “ব্লগাড্ডা” বা un-catagorized হিসাবে থেকে যায়। আমরা ধরে নিচ্ছি, সকল বিষয়শ্রেণীর লেখকরাই একই মাত্রায় বেখেয়ালি, ফলে সকল বিষয়শ্রেনীর লেখাই একই অনুপাতে আনক্যাটাগরাইজড হয়ে থাকে। (নয়েজি বৈজ্ঞানিক উপাত্ত বিশ্লেষণে এই ধরনের সুস্পষ্ট অনুমান করতে হয় প্রায়ই)। তা হয়ে থাকলে, এই গ্রাফের যে হাম্প যত বড় সে তত বেশি সংখ্যক লেখা হারিয়েছে লেখকের বেখেয়ালে। তাই, সব লেখা সঠিকভাবে ক্যাটাগরাইজড করা হলেও, ২০১০-২০১১ সালে বিজ্ঞান ও ধর্মের ‘উন্নতি’ ও ওই অংশে রাজনীতির ‘অবনতি’ থেকেই যাবে।

এ ছাড়া, কোনো লেখায় যদি, একাধিক ভিন্ন বিষয়শ্রেণীর ট্যাগ থাকে। মানে যদি ধর্ম, ও বিজ্ঞান উভয়ই থাকে, তাহলে লেখাটা উভয় অংশেই কাউন্ট হবে। (এটাই হয়তো ধর্ম-বিজ্ঞানের লাইনদুটোর সাদৃশ্যের একটা কারণ। কেননা ধর্মের বিভিন্ন ব্যাপারকে সমালোচনা করে প্রচুর বৈজ্ঞানিক লেখা মুক্তমনায় লেখা হয়, যাতে উভয় ট্যাগ এক সাথে থাকে)। একই লেখায় বিজ্ঞান ও রাজনীতি ট্যাগ থাকার সম্ভাবনা কম। তবে দুয়েকটা থেকে যেতে পারে। অপরদিকে ধর্ম ও রাজনীতি উভয় ট্যাগ আছে এমন লেখাও বেশকিছু থাকবে। (ঠিকঠিক সংখ্যাগুলো একটু সময় পেলে যুক্ত করবো)।

তবে আমরা পরে যে গ্রাফদুইটি দেখবো তাতে এই বেখেয়ালে বিষয়শ্রেণীহীন রয়ে যাওয়া উপাত্তগুলো অতটা প্রভাব ফেলবে না। উল্লেক্ষ্য, বিজ্ঞান, ধর্ম, রাজনীতি, এ ধরনের বৃহত্তর ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে না এমন প্রচুর লেখা মুক্তমনায় আসে, যেমন গল্প, কবিতা, গ্রন্থালোচনা, মানবতাবাদ, ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের মূল ফোকাস থাকবে বিজ্ঞান ও রাজনীতি নিয়ে।

উল্লেক্ষ্য, হিট মানেই পাঠক পড়ছে না, তবে হিট মানেই পাঠক ঐ পোস্ট খুলেছে। মুক্তমনার সিস্টেমে একই পাঠক একাধিকবার ওপেন করলে একাধিক হিট কাউন্ট হয়। অর্থাৎ হিট কাউন্ট ইউনিক নয়। কিন্তু তাতে কি! কোনো লেখায় বেশি হিট থাকা মানে পাঠকের আগ্রহ-উদ্দীপনা ঐ লেখা নিয়ে বেশি; সেটা ধরে নেওয়াই যায়।

তবে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে মন্তব্য সংখ্যা, কোনো পোস্টে মন্তব্য করে যে পাঠক সে নিশ্চিত ভাবেই লেখাটা নিয়ে অনেক বেশি ভাবে। এমনকি কোনো পাঠক একাধিক মন্তব্য করলেও, ব্লগটি পাঠকের সঙ্গে কী পরিমান মিথোস্ক্রিয়া ঘটাচ্ছে সেটা তার মন্তব্য সংখ্যা থেকে বোঝা সম্ভব।

মূল পোস্ট সংখ্যার হ্রাসবৃদ্ধি দেখে যেমন লেখকরা কী নিয়ে লিখতে চাচ্ছেন বেশি সেটা বোঝা যায়, তেমনই এই মন্তব্য আর হিট এর গ্রাফ থেকে অনুমান করা সম্ভব পাঠকরা কোন ধরনের লেখায় আগ্রহ পাচ্ছে।

এখানে উল্লেক্ষ্য, কেউ যদি এখন ২০০৯ সালের কোনো পোস্ট খোলে, তাহলেও সেটার হিট কাউন্ট বাড়বে। আমরা ধরে নিচ্ছি, পোস্ট প্রকাশিত হবার পরপর কিছুদিনের মধ্যেই বেশিরভাগ মন্তব্য ও হিট হয়ে যায়। (বিশেষ ভাবে হাইলাইট করা পোস্ট বাদে। যেগুলো আবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক না)। তাই কোনো একটা মাসের হিট ও মন্তব্য সংখ্যা ঐ মাসের পাঠকদের আগ্রহ উদ্দিপনার নিখুত নির্দেশক না হলেও, কাছাকাছি নির্দেশক।

এতক্ষণ কোন লেখে কোন উপাত্ত কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে সেট আলোচনা করলাম। এখন দেখা যাক, এই লেখগুলো আমাদেরকে আসলে কী বলছে। যেমন চিত্র-১ থেকে আমরা দেখি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে রাজনীতি নিয়ে লেখা এসেছে ৪১ টি। এই স্পাইক পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে কমে আসে। বোঝাই যাচ্ছে, শাহবাগ আন্দোলন এখানে মূল ফ্যাক্টর। এ সময় প্রতি মাসে বিজ্ঞান আর ধর্ম নিয়ে লেখা এসেছে গড়ে ১০ টির কম। আমরা যদি নীল রঙের স্মুথ লাইনটা দেখি, তাহলে দেখবো বিজ্ঞান নিয়ে লেখা সেই ২০১২ এর পর থেকেই যেন ক্রমাগত কমে আসছে।
নিচের লেখচিত্রে, বিজ্ঞান ও রাজনীতি বিষয়ক পোস্টে মাসিক গড় হিট সংখ্যা চিত্রিত হয়েছে,

চিত্র-২

চিত্র-২ অর্থাৎ বিজ্ঞান ও রাজনীতি পোস্টে পোস্ট প্রতি মাসিক গড় হিট এর চিত্র দেখলে দেখা যায়, ২০১২ এর আগে পর্যন্ত বিজ্ঞান নিশ্চিতভাবেই এগিয়েছিলো রাজনীতির থেকে ২০১২ থেকে ২০১৩ এর মধ্যভাগ পর্যন্ত বিজ্ঞান আর রাজনীতি দুটো নিয়ে পাঠকের আগ্রহ ছিলো কাছাকাছি, কিন্তু তার পরই পাঠকরা বিজ্ঞানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এই চিত্রে মাঝে মধ্যে যে স্পাইকগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো ঐ মাসে প্রকাশিত কোনো বিশেষ টপ পোস্টের কারণে সৃষ্ট বলে আমার ধারণা। যেমন রাজনীতি লাইনের ২০১৩ এর ডিসেম্বরের স্পাইকটি, আরিফ রহমানের একটি প্রায় ৩৩ হাজার বার হিটহওয়া লেখার কারণে সৃষ্ট। সময় পেলে এ ধরনের একক পোস্টভিত্তিক স্পাইক দূর করেও একটা গ্রাফ যোগ করার ইচ্ছা রাখি।

নিচের চিত্রে বিজ্ঞান ও রাজনীতি বিষয়ক পোস্টে মাসিক গড় মন্তব্য সংখ্যা চিত্রিত হয়েছে,

চিত্র-৩

তবে পাঠক মিথোস্ক্রিয়ার সবচেয়ে ভালো নির্দেশক হচ্ছে মন্তব্য সংখ্যা। চিত্র-৩ থেকে দেখতে পাচ্ছি, ২০১১ এর আগপর্যন্ত বিজ্ঞান বিষয়ক পোস্টেই পাঠক বেশি মিথোস্ক্রিয়া করেছে ২০১১ থেকে ২০১২ এর শেষ ভাগ পর্যন্ত বিজ্ঞান, রাজনীতি সমানে সমানে ফাইট দিলেও এর পর থেকে সুস্পষ্ট ভাবে বিজ্ঞানের পোস্টে পোস্টপ্রতি পাঠকের মন্তব্য সংখ্যা রাজনীতি পোস্টে পোস্টপ্রতি পাঠকের মন্তব্য সংখ্যার চেয়ে কমে গেছে। এটা কি পাঠকদের রুচির পরিবর্তন, নাকি আগের বিজ্ঞান প্রেমী পাঠকরা মুক্তমনায় আর আসছেন না?

এছাড়া ধর্ম নিয়ে পোস্টে হিট ও মন্তব্য সংখ্যা প্রায়সব সময়ই বিজ্ঞান ও রাজনীতি থেকে বেশি থাকে। ধর্ম এবং uncategorized বিভাগের পোস্টে মন্তব্য সংখ্যার মাসিক গড় দেখা যায় চিত্র-৪ এ।

চিত্র-৪

দেখা যাচ্ছে, ২০১০ থেকে ২০১২ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্লগের একটা সুবর্ণ সময় ছিলো তখন সব ধরনের পোস্টই বেশি বেশি আসছিলো। এবং হচ্ছিলো তুমুল আলোচনাও। এর পরই একটা ক্রমহ্রাসমান ধারা দেখতে পাই যেন। ব্যাপারটা কি ফেসবুকে বড় বড় স্ট্যাটাস দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবার সাথে কোনো ভাবে সম্পর্ক যুক্ত?

সে যাই হোক, ফিরে আসি আমার মূল আলোচনায়। বিজ্ঞান হেরে যাচ্ছে রাজনীতির মারপ্যাচে। এবং আমি যেহেতু সেই চিন্তা ধারার যারা মনে করে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ব্যাতীত সভ্যতার অগ্রগতি সম্ভব না। সেই প্রথম পাথর ঠুকে আগুন বানানোর থেকে, ৬টি রোগের টিকা হয়ে ৭ বিলিয়ন মানুষের পেটে খাদ্য, জোগানো পর্যন্ত সবই করে চলেছে বিজ্ঞানের নিরলস অগ্রগতি। আর সেতুলনায় মানবইতিহাসের যত সব বড় বড় বিপর্যয় সেগুলো তো রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি, ভুল বোঝাবুঝি, উগ্র জাতীয়তাবাদ ইত্যাদির কুফল। তাই মানুষকে বিজ্ঞানমনস্কতা ও বিজ্ঞানচর্চায় উদ্ভুদ্ধ করার বিকল্প নেই। “রাজনীতি খুব খ্রাপ” সেকথা বলছি না। বলছি সবাই গিয়ে চায়ের দোকানে আর টকশোর টেবিলে রাজনীতির আলাপ পাড়লে মানব সভ্যতা এগোয় না। রাজনীতিবিদকেও যেমন বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে, বিজ্ঞানীকেও রাজনীতির খোঁজ নেওয়া চাই। কিন্তু সেই ব্যালান্স এতটাই একদিকে হেলে পড়েছে যে কোনো আশার আলো দেখতে পারছি না। একটা সহজ পরীক্ষা করুণ, আশেপাশে কয়েকজন মানুষের সাথে কথা বলে দেখুন, স্বতস্ফুর্থ ভাবে তারা রাজনীতি নাকি বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনায় উৎসাহী? রাজনীতিবিদেরা নির্দ্বিধায় মানুষের ধর্মীয় গোড়ামির ফায়দা লোটে, বিজ্ঞানীকে কিন্তু তা করতে দেখি না। আমাদের রাজনীতি সচেতন হয়তে হবে এজন্য যে তা না হলে কোনো রাজনীতিবিদ এসে আমাদের পিছন দিকে সর্বনাশ করে চলে যাবে। অপরদিকে আমাদের বিজ্ঞান সচেতন হতে হবে বিজ্ঞানীদের হাতে সর্বনাশ হবার আশঙ্কায় নয়। বরং বিজ্ঞান যেন আমাদের জীবনকে আরো উদ্ভাসিত করতে পারে সেই জন্যই। এই দুই সচেতনতা তাই এক সম্মান দাবি করে না। একটা দেশে প্রতি কত হাজার মানুষের জন্য এক জন ডাক্তার দরকার, একজন পুলিশ দরকার, সে নিয়ে হাপিত্যেশ সব সময় দেখি। কিন্তু একটা বিপুল জনগোষ্টিতে প্রতি কত হাজারে একজন বিজ্ঞানী দরকার সেই হিসাব মেলে না। কিন্তু আমাদের এই সমস্যাসংকুল অঞ্চলে যে অনেক বিজ্ঞানী দরকার সে কথা কেউ অস্বীকার করবে না। সেই তুলনায় আমাদের দেশে রাজনীতিবিদ ও রাজনীতিবিশারদের বিপুল ফলন।

এসব ছাড়াও স্রেফ মানুষকে প্রকৃত মুক্তমনা হিসাবে গড়ে তুলতেই বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাতেই বেশি শক্তি ব্যয় করা উচিত। কেননা শুধুই রাজনৈতিক আলাপ আর ধর্মীয় গোড়ামিক কুফল শুনে আমি কাউকে মুক্তমনা হয়ে উঠতে দেখিনি। আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়া ব্যাতিত স্রেফ ধর্ম-সমাজ-রাজনৈতিক কারণে বাম ঘরনার হয়ে ওঠা মানুষরা প্রায়শই (ব্যতিক্রম আছে) শেষ বয়সে তুমুল হুজুর হয়ে ওঠে। মুক্তমনাতেই যদি বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনার এমন ভাটা পড়ে তাহলে বাইরের অবস্থাটা কল্পনা করুন। অনতিবিলম্বে আমাদের গতিপথ সংশোধন না করলে, এক সময় হা-হুতাশ করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না। সমাজে ধর্মীয় গোড়ামি বেড়ে গেলে রাজনীতিবিদরা সেটা কমানোর চেষ্টা করার বদলে সে থেকে কীভাবে ফায়দালোটা যায় সেই চেষ্টাই করবে। তাদের কাছে দেনদরবার তাই পন্ডশ্রম। সত্যি সত্যি গোড়ামি কাটাতে সার্বজনীন বিজ্ঞান মনস্কতার বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। আর সেটা করতে হবে বিজ্ঞানলেখকদেরই।

[ওয়ার্ডপ্রেস থেকে মুক্তমনার উপাত্ত দিয়ে এবং পোস্ট ফরম্যাটিংএ সহযোগিতা করেছে শাফায়েত]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.