নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Criticism is our fundamental right. The revolution will come only from our pen #save constitution

Titanic

এক সময় আমরা সবাই মানুষ ছিলাম।হঠাৎ করে তখন এক ভণ্ডু খোদার আবিষ্কার হল।শুরু হয়ে গেলে ধর্মের/খোদার দলের দালালী(মানুষের মধ্যে মারামারি হানাহানি)ভণ্ডু খোদার এক বিশেষ দালাল হল ইসলামধর্মের নবী মুহাম্মদ।ধর্মিয় বই নাকি আসমান থেকে এসেছ,আরে বোকার দল তাহলে তদের মালিককে বল আমাকে একটি আইটির বিশেষ বই দিতে।আমি আইটির ব্যবহার ও উন্নত মান দিয়ে তোদের খোদা হওয়ার দাবী করব।তোমরা বল কোরান,বাইবেল, গীতা আরও কত্তকিছু উপর হতে এসেছে।তোমরা কি দেখনা এখন মানুষ উপর(চন্দ্র,মংগল ইত্যাদিতে ভ্রমণ করছে)চোখ খুল মানুষ, চোখ খুল।

Titanic › বিস্তারিত পোস্টঃ

অধর্মের ধর্মানুভূতি

০৯ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩৮

আমাদের সমাজের প্রায় সবাই বেড়ে ওঠে নিবিড় ধর্মাবিষ্ট এবং ধর্মভীরু এক ধরনের পারিবারিক পরিবেশে। পরিবারে বাবা-মার হাতেই সবার ধর্মে হাতেখড়ি। ঈশ্বরের অস্তিত্ব, ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানসহ ধর্মের প্রাথমিক বিষয়গুলো পরিবারেরই শিখে সবাই। বাবা-মা ধর্ম নিয়ে যা কিছু জানে তার সবই প্রবাহিত করে দেয় পরবর্তী প্রজন্মে। যে আচার-অনুষ্ঠান পালন করে সেগুলোও শিখিয়ে দেয়, পালন করতে বাধ্য করে। যে বাবা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে সে তার ছেলেমেয়েকেও তাড়া দেয় নিয়মিত নামাজ পড়তে। যে বাবা শুধু জুম্মার নামাজ পড়ে ছেলেকেও সাথে করে নিয়ে যায় শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়তে। ধর্ম প্রবাহিত হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। একটা বাচ্চা যখন জানে এই পৃথিবীসহ সমগ্র মহাবিশ্বের সৃষ্টি করেছে একজন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তখন সে স্বভাবতই প্রশ্ন করে কে এই ঈশ্বরকে সৃষ্টি করেছে? তখন বাবা-মা উত্তর দেয়, এই প্রশ্ন করতে হয় না, স্বয়ং ঈশ্বর এই প্রশ্ন করতে নিষেধ করেছে, এই প্রশ্ন করা এবং এর উত্তর খোঁজা পাপ। ধর্মের প্রাথমিক জ্ঞানদানের এই পর্যায়ে আরও বলা হয়, আমাদের ধর্মই একমাত্র সত্য ধর্ম, শ্রেষ্ঠ ধর্ম, আমাদের ধর্মের কোন ভুলত্রুটি নেই, কেউ আমাদের ধর্মের কোন সমালোচনা করতে পারবে না, কেউ ঈশ্বরের অস্তিত্বে প্রশ্ন তুলতে পারবে না, তার সমালোচনা তো অনেক পরের কথা।

এই জ্ঞানদানের সাথেসাথেই হত্যা করা হয় একটি অনুসন্ধিৎসু মনকে। একই সাথে মনে তৈরি করা হয় বিশেষ একটি অনুভূতি, ধর্মানুভূতি। ধর্মানুভুতির প্রভাবে সমাজে ট্যাবু হয়ে যায় ভিন্নমতের সকল প্রশ্ন, যৌক্তিক চিন্তা, জীবন ও জগৎ নিয়ে ভিন্ন কোন উত্তরের সম্ভাবনা। ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালন না করলেও ধর্মবিশ্বাস এবং অনুভূতিতে কখনো ভাটা পরে না কারো। বাবা-মার বাইরেও নানী-দাদীসহ বয়েসী আত্মীয়-আত্মীয়ারাও ধর্মের আবেশটি প্রবাহিত করে দেন। ভূত-প্রেত, দেও-দানবের গল্পের পাশাপাশি মুসা নবীর লাঠির আঘাতে দরিয়া দ্বিখন্ডিত হওয়া, ঈসা নবীর হাতের স্পর্শে মৃতদের জীবন ফিরে পাওয়া, নিষিদ্ধ ফল খেয়ে আদমের স্বর্গপতন এধরনের অনেক আলৌকিক গল্প শুনতে শুনতে বড় হয়। এবং নির্দ্বিধায় এবং বিনা প্রশ্নে সেসব গল্পে বিশ্বাস করে, এগুলো কতখানি যৌক্তিক সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র মাথা না ঘামিয়ে। এভাবে ছোটবেলা থেকেই যুক্তিহীনতা দখল করে নেয় মানুষের মনন এবং চিন্তাশক্তি। আর এসব অলৌকিকতা শক্তি যোগায় ধর্মানুভূতির। প্রশ্নের অপ্রবেশযোগ্যতা, সমালোচনা করার অনাধিকার এবং অলৌকিকতার উপর দ্বিধাহীন বিশ্বাসের ফলে এই সমাজের মানুষের ধর্মানুভূতি গড়ে ওঠে অযৌক্তিক অন্ধত্বের হাত ধরে। হয়ে ওঠে প্রবল শক্তিশালী এবং লজ্জাবতী পাতার মতই সংবেদনশীল। কোন ধরনের বিকল্প চিন্তা, ধর্মকে চ্যালেঞ্জ করা বৈজ্ঞানিক যুক্তি-প্রমাণ, ধর্মীয় কোন নীতির যৌক্তিক সমালোচনা এধরনের কোন কিছু চোখে পড়া মাত্রই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে পনের বছরের কিশোর থেকে শুরু করে আশি বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত। ধর্মের ওপর যৌক্তিক কিংবা রসিক, কোন ধরনের আঘাতই তারা সহ্য করতে পারে না।

আমাদের সমাজ ধর্মের অনুভূতি রক্ষায় যেমন সোচ্চার, ধর্মের কর্ম পালনে তেমনই নিরব, ধর্মজ্ঞানে ততই দুর্বল। এ সমাজের ধর্মানুসারী মানুষেরা কতটা ধার্মিক সেটি জানতে সুনির্দিষ্ট জরিপের প্রয়োজন হয়না। চারপাশের মানুষদের একটু দেখলেই বোঝা যায়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দিকেই তাকানো যাক। এ সমাজে তারাই সর্বেসর্বা। স্বয়ং রাষ্ট্রই সাংবিধানিকভাবে অন্যান্য ধর্মালম্বীদের “সংখ্যালঘু” উপাধিতে ভূষিত করেছে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্টিত করে।

ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে পাঁচটি স্তম্ভের উপরে। পুর্নাঙ্গ মুসলমান হতে হলে অবশ্যই এগুলো পালন করতে হবে। প্রথম ভিত্তি আল্লাহ এবং তার রসুলের উপর বিশ্বাস স্থাপন। এটি না হলে কেউ মুসলমান হতে পারে না। এর পরে নামাজ। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা বাধ্যতামূলক। প্রধান পাঁচ স্তম্ভের দ্বিতীয়টিই সবচেয়ে বেশি নড়বড়ে। শুক্রবার জুম্মার সময় নামাজীদের ভিড়ে মসজিদসংলগ্ন রাস্তায় মানুষের জ্যাম লেগে গেলেও বাকী দিনগুলোয় শুধু মসজিদই খা খা করে না, বাসার জায়নামাজটিও অস্পর্শ অবস্থায় ভাজ হয়ে পরে থাকে। তৃতীয় স্তম্ভটি আবার দ্বিতীয়টি থেকে বেশি শক্ত। যতসংখ্যক মানুষ নিয়মিত নামাজ পড়ে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি মানুষ রোজা রাখে। এবং এর বড় একটি অংশ রোজা রেখে নিয়মিত নামাজ পড়ে না। যারা পড়ে তাদের একটা অংশ আবার রমজান মাস শেষ হয়ে গেলে শুক্রবার বাদে অন্যকোনদিন ওজু করে না। শবে বরাতের রাতে রুটি-হালুয়া-গোশত খেয়ে রাতজেগে নফল ইবাদত করে কিন্তু রাত জাগার কারনে সকালের ফজরের নামাজটা পড়ে না। ঈদের ওয়াজিব নামা পড়ার জন্য এত হইহুল্লোড়, এত উন্মাদনা, কিন্তু ফরয নামাজের বেলায় শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করে।

বাকি দুই স্তম্ভ গড়তে বিত্তের প্রয়োজন। বিত্তশালীরা জীবনে একবার মক্কা-মদীনা ঘুরে আসলেও নিয়মিত সঠিক পরিমান যাকাত দেয়ার সময় কি করে যেন অর্থনৈতিক দৈন্যের মাঝে পড়ে যায়।

এই না হয় তাদের ধর্ম কর্মের ফিরিস্তি। এবার ধর্মজ্ঞানের পান্ডিত্য কতটুকু দেখা যাক। অধিকাংশ মুসলমান পরিবারের সন্তানরা ছোটবেলা থেকেই বাসায় হুজুর রেখে কিংবা দলবেধে মসজিদে কোরআন পড়া শেখে। এমন অনেককেই পাওয়া যায় যারা যৌবনে পা রাখার আগেই কোরআন খতম দেয়। ইসলামের সব বিধান, আইন-কানুন, দর্শনের প্রধান দলিল এই কোরআন। কোরআন পড়ার পাশাপাশি নামাজে ব্যবহারের জন্য কোরআনের বেশ কিছু সুরাও মুখস্ত করে সবাই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’- , এই আয়াতের বাইরে খুব কম আয়াতেরই অর্থ জানে। আর পাঠ্যবই ইসলাম শিক্ষা’ বইয়ে যে কয়টি হাদিস আছে এর বাইরে হাদিস পড়েছে এমন মানুষ হাতে গোনা যায়। ইসলামী জ্ঞান ও দর্শনের প্রধানতম দলিল কোরআন এবং এর সহায়ক হাদিস সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান রাখে এমন মুসলমান এই সমাজে খুঁজে পাওয়া কষ্টের। ধর্ম সম্পর্কে অধিকাংশ মুসলমানের জ্ঞান নামাজ-রোজার নিয়ম-কানুন, কয়েকটি মুখস্ত সুরা এবং নানী-দাদীর মুখে শোনা কিছু অলৌকিক কাহিনীর মাঝেই সীমাবদ্ধ।

ধর্ম কি জন্যে দরকার? সাধারনভাবে চিন্তা করলে সব ধর্মের উদ্ভব একটি কমন ইন্টারেস্টে। পৃথিবীর বুকে যেন অন্যায়-অবিচারকে অবদমিত করে সুস্থ-সুন্দর, ন্যায়-নীতির জীবনধারা প্রবাহিত হতে পারে এই উদ্দেশ্যেই ধর্মের আগমন। এবং এই অন্যায়, অবিচারসসব পাপাচার থেকে মানুষকে দূরে রাখতে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে আশ্রয় করেছে ধর্মগুলো যেন ঈশ্বরের ভয়ে মানুষ নিজেকে বিরত রাখতে পারে পাপ থেকে। প্রধান ধর্মগুলোর মাঝে একমাত্র একমাত্র বৌদ্ধ ধর্মই মানুষের উপর বিশ্বাস রেখেছে, পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য মানুষ নিজেই যথেষ্ট। ইসলামসহ অন্য প্রধান ধর্মে মানুষ নিজেকে পাপ থেকে দূরে রাখে ঈশ্বরের ভয়ে বা ঈশ্বরপ্রদত্ত শাস্তির ভয়ে। ঈশ্বরে ভয়কে ইসলাম ধর্মেও খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। তাকওয়া বা আল্লাহকে ভয় করা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। মুসলমানের চরিত্র গঠনের মূলে রয়েছে তাকওয়া। একজন মুসলমান ভাল কাজ করবে না খারাপ কাজ করবে সেটি নির্ভর করে তা তাকওয়ার উপর।

আমাদের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজ বা দেশটির কি অবস্থা? দেশটির প্রতিটি স্তর নুয়ে আছে পাহাড়সম দূর্নীতির চাপে, সরকারি-বেসরকারি, প্রশাসনিক কিংবা ব্যসায়িক যেকোন পর্যায়েই সততা যেন শুধুই ফিকশনাল একটি শব্দ। আইনের শাসন বলতে কিছু নেই, মানুষের প্রতি নেই মানুষের সহমর্মিতা, খুন,ধর্ষন,চুরি-ডাকাতি এগুলো নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা, সজ্ঞানে অন্যের ক্ষতি করতে বিবেক কাঁপে না একটুখানি। ইসলামি দৃষ্টিকোণ কিংবা র‍্যাশনালি, যেভাবেই চিন্তা করা হোক না কেন এই সমাজ অন্যায়-অবিচারে ডুবে আছে। দেশের প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষ মুসলমান, অধিকাংশ খারাপ কাজ মুসলমানের হাতেই হয় এই উপসসংহারে আসা নিশ্চয়ই ভুল কিছু হবে না। তাদের ভিতর যদি তাকওয়া বা আল্লাহভীতি থাকত তবে কি এই কাজগুলো তারা করতে পারত?
যারা নিজ ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না বিন্দুসম, নিজ ধর্মের বাধ্যতামূলক কাজ পালন করতে অপারগ, তাদের স্বীকৃত সর্বশক্তিমান আল্লাহর ভীতি তাদের পাপাচার থেকে দূরে রাখতে পারে না, তাদের কি আদৌ কোন ধর্ম আছে? ধর্মের মূলনীতি মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখা, ঈশ্বরে বিশ্বাস সেই নীতির সম্পূরক মাত্র। যখন সেই নীতির বাইরে মানুষ চলে যায় তখন আর তার ধর্মের কি বাকি থাকে? নিজের সার্থের প্রয়োজনে এরা ধর্মের বিধিনিষেধ অমান্য করতে পিছপা হয় না, যে ঈশ্বরকে সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা বলে স্বীকার করে নিয়েছে তাকে অমান্য করতে ভয় পায় না। এরা আসলে ধর্মের দেখানো পথে চলে না বরং ধর্মকে নিজের সুবিধামত পথে চালায়। যারা ধর্মপালন করেনা, ধর্ম ম্পর্কে জানে না, তাদের আবার কিসের ধর্মানুভূতি? নাস্তিকরা যখন বলে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই, তখন এরা বলে তাদের ধর্মানুভূতি আহত বা আঘারপ্রাপ্ত হয়েছে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অবমাননা করা হয়েছে। কিন্তু তারা যখন ঈশ্বরকে সর্বশক্তিমান বলে স্বীকার করে তারই আদেশ অমান্য করে, তার ভয়ে ভীত না হয়ে নির্দ্বিধায় সব পাপাচারে লিপ্ত হয়, একজন সাধারন পুলিশকে সর্বশক্তিমানের চেয়ে বেশি ভয় পায় তখন কি তারা ঈশ্বররের অবমাননা করছে না? তারা নিজেরাই যখন নিজ ধর্মের অনুশাসন অমান্য করে, অমান্য করার যুক্তি হিসেবে বলে, এ যুগে ইসলামের সব কিছু মানা সম্ভব না, তখন কি তাদের ধর্মের কোন অবমাননা হয় না? তারা মুখে বলবে আমার ধর্ম বেস্ট, কিন্তু পালনের সময় টিকিটিও নেই, এর চেয়ে বড় হিপোক্রেসি আর কি হতে পারে?

ধর্মের কর্ম আর জ্ঞানে দুর্বল হলেও তাদের শক্তির জায়গাটা হল অনুভূতি। এদেশী মুসলমানদের ধর্মের জ্ঞান সীমিত, কর্মের যজ্ঞ অসম্পূর্ন হলেও অনুভূতির জায়গাটি শক্তি আর সংবেদনশীলতায় পূর্ন। অনুভূতির জায়গাটি পুরোই আবেগ দিয়ে চালিত। এখানে বুদ্ধি বা যুক্তির কোন স্থান নেই। “জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব”। শুধু যে নিজ ধর্মের জ্ঞানে এরা দুর্বল তা নয়, পাঠ্যবইয়ের বাইরে মুক্ত জ্ঞানের যে বিশাল ভান্ডার সেখানেও তাদের পদচারনা খুব সীমিত। জ্ঞানের ভান্ডার ফাঁকা বলে র‍্যাশনাল থিঙ্কিং এর জন্য যে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ দরকার সেটি হয়ে ওঠে নি এদেশি মুসলমানদের। ফলে বিকল্প কোন মতবাদ এরা সহ্য করতে পারে না। ধর্মের বিপক্ষে যৌক্তিক কোন ভিন্নমত দেখলেই এরা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। এর দায় শুধুমাত্র ধর্মের অনুসারীদের নয়, অবশ্য ধর্মকেও নিতে হবে। কারন ধর্মই নিরুৎসাহিত করে মুক্তবুদ্ধির চর্চা, জানার চেষ্টাকে নিবৃত্ত করার কথা বলে একটি পর্যায়ের পরে। কিন্তু যখন ধর্মের বিপক্ষে কোন যুক্তি আসে তখন কি ধর্মীয় জ্ঞানলব্ধ যুক্তি দিয়ে একটি যুক্তির যুদ্ধ চালানো যায় না? কেন আগ্রাসী মনোভাব? এ সমাজের একটি প্রচলিত ধারনা- নাস্তিক মানেই খারাপ। কেন খারাপ? তারা উত্তর দেয়, নাস্তকরা ধর্ম মানে না। প্রচলিত ধর্ম না মানার কারনেই তারা খারাপ! ফেসবুকের এক ফ্রেন্ডের স্ট্যাটাস ছিল এরকম- “যাদের প্রোফাইলে দেখি Religious view: atheist দেয়া, ইচ্ছা করে জুতা খুলে কয়েকটা বাড়ি দিয়ে আসি” সেই স্ট্যাটাসে বহু সংখ্যক লাইক এবং সহমতের কমেন্টস ছিল। এই হল নাস্তিকদের প্রতি আমাদের সমাজের মনোভাব। শুধুমাত্র বিজ্ঞানলব্ধ জ্ঞান কিংবা দার্শনিক যুক্তির উপর ভিত্তি করে তারা প্রচলিত ধর্ম অবিশ্বাস করে বলে তাদের প্রতি মুসলমান সমাজের এই আগ্রাসী মনোভাব। যুক্তির বিপক্ষে এরা যুক্তি দেয় না। না কোরআন এর রেফারেন্সে কোন যুক্তি, না কোরআন কে সাপোর্ট করে এমন কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যুক্তি পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলো যতটা না বৈজ্ঞানিক তার চেয়ে বেশি অলৌকিক। তার পরেও যদি তারা বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিতে না পেরে কোরআনের রেফারেন্সে যুক্তি দিতে পারত, তাহলেও বলা যেত একটি ফেয়ার ফাইট হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশই যুক্তি ধার ধারেনা কারন যুক্তি দেয়ার মত জ্ঞান তাদের নেই। তাদের আছে কেবল অনুভূতিসর্বস্ব একটি বিশ্বাস।

সমাজের সুশিক্ষাবঞ্চিত গোষ্ঠির কাছে এমন আচরন অপ্রত্যাশিত নয় কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা নেয়া গোষ্ঠির কাছেও যখন একই আচরন পাওয়া যায়, ব্যাপারটি তীব্র হতাশাজনক অবশ্যই।

ধর্মানুভুতির এমন গর্জনবিলাসীতার আরেকটি কারন ভিন্নমতকে সহ্য করতে না পারা। ভিন্নমত মাত্রই তারা বলে ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে এবং ধর্মানুভুতি আহত হয়েছে। ভিন্নমত যতক্ষণ যৌক্তিক ততক্ষণ কোনভাবেই ধর্মের অবমাননা হতে পারে না। যদি বলা হয় কোরআন কখনোই সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের আধার হতে পারে না, কারন বিজ্ঞানের প্রধান বিষয়গুলো যেমন মধ্যাকর্ষন, আপেক্ষিকতা কোনটি আবিষ্কার করতেই সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে কোরআনের দরকার হয় নি। বিবর্তনের মত প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান তো কোরআন স্বীকারই করে না। তাহলে কোরআন কিভাবে সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের আধার হয়, যা মুসলমানরা দাবি করে? এই বক্তব্যতে নিশ্চিতভাবে মুসলমানের ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগবে, তারা কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলবে। কিন্তু এই ভিন্নমত কিন্তু যৌক্তিক। তাদের যা করা উচিৎ যুক্তি দিয়েই এই বক্তব্যের অসারতা প্রমানের চেষ্টা করা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা তারা না করে অন্ধের মত আস্ফালন করে যাবে- নাস্তিকরা আমাদের ধর্মের অবমাননা করেছে, আমাদের পবিত্র গ্রন্থের অবমাননা করেছে, আমার অনুভূতিকে আঘাত করেছে, ওদের শাস্তি চাই। যুক্তির বিপক্ষে তো যুক্তিই কাম্য, অন্ধ আস্ফালন নয়।

যখন কোন ভিন্নমত যুক্তি অনুসরন না করে কুৎসিত গালিগালাজ বা অযৌক্তিক বক্তব্যে ধর্মকে ছোট করবে সেক্ষেত্রে কষ্ট লাগতেই পারে, অযৌক্তিক কোন মতামতই কাম্য নয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে কলমের জবাব অস্ত্র দিয়ে দেয়া কতটা যৌক্তিক? তার ফাঁসির দাবি কতটা যৌক্তিক বা মানবিক? তারা যুক্তি দেয় ইসলাম ‘মুরতাদ’দের মৃত্যুদন্ড সাপোর্ট করে। তাহলে তো বলতেই হয় শুধু কলম চালানোর দায়ে, লেখনি দিয়ে শুধুমাত্র মন খারাপ করিয়ে দেয়ার কারনে যদি কোন ধর্ম মৃত্যুদন্ড দেয় সেই ধর্মের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে।

ধর্মের কাজ মানুষের কর্মকে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় বেঁধে দেয়া। মানুষ যখন সেই নীতি থেকেই পথভ্রষ্ট হয় তখন সেই মানুষের আর ধর্ম থাকল কই? যেখানে ধর্মই নেই সেখানে আবার কিসের ধর্মানুভূতি? আর যে ধর্মানুভুতি শুধুমাত্র মন খারাপ করিয়ে দেয়ার জন্য মানুষের ফাঁসিসহ শাস্তির দাবি করতে পারে সেটি ধর্মের উচ্ছিষ্টাংশ ছাড়া আর কিছুই নয়। যার জ্ঞান নেই, যুক্তি নেই, মুক্তবুদ্ধি নেই, ধর্মের কিছুই নেই তার শেষ অবলম্বন এই ধর্মানুভূতি। এই ধর্মানুভূতির আস্ফালনেই সে নিজেকে ধর্মের অনুসারী বলে দাবি করতে পারে, ঢেকে দিতে চেষ্টা করে নিজের জাগতিক সব অন্যায়, সান্ত্বনা দেয় নিজেকে- পরকালের প্রাপ্তির আশায়।

জ্ঞানের অভাব, বুদ্ধির আড়ষ্টতা, যুক্তিহীনতা এগুলো ঢাকার বেশ ভাল অস্ত্র এই ধর্মানুভূতি। শিক্ষা, মুক্তজ্ঞানচর্চা আর পরমত সহিষ্ণুতার অভাবে ধর্মানুভূতি সমাজে যুক্তির চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। ষোড়শ শতাব্দীর সেই গ্যালিলির সময়ের আর এই সময়ের গুনগত পার্থক্য খুব বেশি নেই। তখনকার মতই অযৌক্তিক ধর্মানুভূতি আজও যুক্তির গলা টিপে ধরতে চায়, ভিন্নমতকে মাটিচাপা দিতে চায়। পার্থক্য শুধু গ্যালিলিওর সমাজ ছিল ইউরোপের খৃষ্টান সমাজ আর এখন সেই ব্যাটনটি মুসলিমবিশ্বের হাতে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.