![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক সময় আমরা সবাই মানুষ ছিলাম।হঠাৎ করে তখন এক ভণ্ডু খোদার আবিষ্কার হল।শুরু হয়ে গেলে ধর্মের/খোদার দলের দালালী(মানুষের মধ্যে মারামারি হানাহানি)ভণ্ডু খোদার এক বিশেষ দালাল হল ইসলামধর্মের নবী মুহাম্মদ।ধর্মিয় বই নাকি আসমান থেকে এসেছ,আরে বোকার দল তাহলে তদের মালিককে বল আমাকে একটি আইটির বিশেষ বই দিতে।আমি আইটির ব্যবহার ও উন্নত মান দিয়ে তোদের খোদা হওয়ার দাবী করব।তোমরা বল কোরান,বাইবেল, গীতা আরও কত্তকিছু উপর হতে এসেছে।তোমরা কি দেখনা এখন মানুষ উপর(চন্দ্র,মংগল ইত্যাদিতে ভ্রমণ করছে)চোখ খুল মানুষ, চোখ খুল।
Byজমসর আলি
জাকির নায়েক যেভাবে তাৎক্ষণিক তথ্য, উপাত্ত উপস্থাপন করে, বিভিন্ন বিজ্ঞানের বই ও থিওরি থেকে রেফারেন্স দেয়, তা দেখে আমাদের মনে হয় লোকটার কী মেধা, স্মৃতি শক্তি কী প্রবল যেন ফটোকপি মেমোরি! জাকির নায়েক যেন তথ্যের জাদুকর! কিন্তু আমরা কি কোনদিনও যাচাই করে দেখেছি তার দেয়া তথ্য সূত্র কতটা নির্ভরযোগ্য এবং তার কতটা সত্য আর কতটা নির্জলা মনগড়া মিথ্যে? আসুন দেখে নেয়া যাক, মাত্র ৫ মিনিটের একটা ভিডিওতে ভুয়া তথ্যের জাদুকর জাকির নায়েক কীভাবে কতগুলো মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। জাকির নায়েকের দেয়া মিথ্যে কথাগুলো আমি ক্রমানুসারে নিচে বর্ণনা করছি:
১। বিবর্তনবাদকে ভুল প্রমাণ করতে গিয়ে একটা ভিডিওতে জাকির নায়েক বলছেন, চার্লস ডারউইন একবার কেলাট্রপিস্ট দ্বীপে গেলেন। কিন্তু বাস্তবে কেলাট্রপিস্ট দ্বীপ বলে পৃথিবীতে কোন স্থানের অস্তিত্ব নাই। সত্যিটা হলো চার্লস ডারউইন তার গবেষণার জন্য গালাপোগাস দ্বীপে গিয়েছিলেন।
২। জাকির নায়েক বলছেন, সেখানে নাকি পাখিরা কুলুঙ্গির (পাখির বাসায়) মত একটা কোটরে কিছু একটা ঠোকরাচ্ছিল, বরং পাখিগুলো বিভিন্ন বাস্তুসংস্থানে নিজদের খাপ খাইয়ে বাস করছিল।
৩। জাকির নায়েকের ভাষ্যমতে, পাখিগুলো কোন কোটরে ঠোকর দিচ্ছে তার নির্ভর করে পাখিদের ঠোঁট (চঞ্চু) ছোট বা বড় হয়ে থাকে। কিন্তু ডারউইন শুধু পাখিদের ঠোঁটের আকার পর্যবেক্ষণ করেছিলেন বিষয়টা মোটেও তেমন নয় বরং ডারউইন গালাপোগাস দ্বীপের পাখিদের গায়ের রঙ, দেহের আকার, খাদ্যাভ্যাস, সঙ্গীদের তাদের আচরণ, গান ইত্যাদি বিবিধ বৈশিষ্ট্য নিয়ে পর্যালোচনা করেছিলেন।
৪। জাকির নায়েকের মতে, ডারউইন শুধু একটা প্রজাতির পাখিদের নিয়ে তুলনামূলক পর্যালোচনা করেছেন। কথাটা জলজ্যান্ত মিথ্যে, কারণ ডারউইন ১৪টি প্রজাতির পাখিদের নিয়ে গবেষণা করেন।
৫। জাকির নায়েকের মতে, ডারউইন তার বন্ধু টমাস ট্রমটান এর কাছে চিঠি লিখেছিলেন। এটা জাকির নায়কের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে প্রসূত তাৎক্ষণিক মিথ্যে কথা। ডারউইনের সব রেকর্ড এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। সেখানে কোথাও টমাস ট্রমটানের উল্লেখ নাই। তিনি এরকম কেউকে কোন চিঠি লিখেছিলেন কিনা তারও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। ডারউইনের সমস্ত চিঠি এখন অনলাইনে পাওয়া যায়, যে কেউ চাইলেই পড়তে পারেন।
৬। জাকির নায়েক দাবী করেন, চার্লস ডারউইন নিজেই নাকি বলেছেন তার তত্ত্বের মধ্যে অনেক ফাঁক ফোকর এবং গোঁজামিল রয়েছে। অর্থাৎ তিনি ডারউইন নিজেই তার তত্ত্বের সাথে একমত নন। কিন্তু সত্যিটা হলো এই যে ডারউইন বলেছিলেন যে, তার গবেষণায় কিছু ঘাটতি রয়েছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে ডারউইন বিবর্তনবাদকে অস্বীকার করেছেন। বিজ্ঞানের সৌন্দর্য এখানেই যে, বিজ্ঞান আলোচনা দ্বার রুদ্ধ কয়রে দেয় না। অন্যকোন বিজ্ঞানী অন্যকোন সময়ে গবেষণার ঘাটতি পূরণ করে দেবেন। তিনি ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন, কোন একদিন কোথাও তার গবেষণার সীমাবদ্ধতা দূর হবে।
৭। জাকির নায়েক বলছেন, খ্রিস্ট ধর্মচর্চায় পূর্বে চার্চ নাকি বিজ্ঞান চর্চার বিরোধী ছিল। জাকির নায়ের এই উক্তিটি সর্বৈব মিথ্যা। খ্রিস্টান ধর্ম বা চার্চ বিজ্ঞান চর্চার সর্বদা বিরোধী ছিল না। গ্যালিলিও থেকে শুরু করে প্রায় প্রত্যেক বিখ্যাত ইউরোপিয়ান বিজ্ঞানী ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান ছিলেন। এমনকি নিউটন, কোপার্নিকাস, কেপলার, বয়েল, ক্যারোলাস লিনিয়াস, প্যাসকেল সকলেই বাইবেলে গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন।
৮। জাকির নায়েকের মতে গ্যালিলিও গ্যালিলিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। এটাও নির্লজ্জ মিথ্যাচার। ১৬৩৩ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলেও পরে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। গ্যালিলিও ৭৭ বছর বয়সে বৃদ্ধ হয়ে ১৬৪২ সালে ৮ জানুয়ারি জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় হৃদরোগে স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেন। এমনকি তার মরদেহ ফ্লোরেন্সের প্রধান চার্চের পাশেই সমাহিত করা হয় এবং তার সম্মানে একটা স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে তার একটা আঙুল পর্যন্ত প্রদর্শনীর জন্য রাখা আছে।
৯। জাকির নায়েক তার বক্তব্যে বলছেন, তখনকার সব বিজ্ঞানী ডারউইনের তত্ত্ব সমর্থন করেছে কারণ বাইবেলের বিরুদ্ধে গেছে, বিবর্তনবাদের সত্যতার জন্য নয়। আসলে ডারউইনের সময়কালে অধিকাংশ বিজ্ঞানী তার বিবর্তনবাদ তত্ত্ব গ্রহণ করেন নি এবং এই বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই বাইবেলকে খুব সম্মান করত। জাকির নায়েকের এই পুরো বর্ণনা মনগড়া মাত্র।
১০। জাকির নায়েক বলছেন, আধুনিক মানুষের বিকাশে সবগুলো ধাপে চার প্রকার “হোমোনাইটস” ছিল। আসলে জাকির নায়েকের ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে ধর্ম টেনে এনে অনেক ভুলভাল এবং বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করেছেন। আসলে “হোমোনাইটস” বলে কিছুই নেই, শব্দটি হবে হমিনিড। বিজ্ঞান আমাদের বলে চার প্রকার “হোমোনাইটস” আছে। শুধু চার প্রকার হমিনিড নয় ১৪ প্রকার হমিনিড আছে।
১১। জাকির নায়েকের মতে, চার প্রকারের মধ্যে প্রথমটা হলো লুসি এবং এর পূর্বপুরুষ হলো “ডসনিপিটিচেস্ট”। প্রকৃতপক্ষে “ডসনিপিটিচেস্ট” শব্দই নাই, এটা হলো জাকির নায়েকের অনর্গল মিথ্যা বলার অসাধারণ মস্তিষ্ক প্রসূত নিজস্ব শব্দ যা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে কাজে লাগায়। জাকির নায়েক যে শব্দটা বলতে চেয়েছিলেন সেটা হলো (Australopithecus) অস্ট্রালোপিথেকাস। লুসি যে হমিনিডের অন্তর্ভুক্ত তার নাম অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস।
১২। জাকির নায়েকের বক্তব্য অনুসারে, অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস বিলুপ্ত হয়ে গেল প্রায় ৩৫ লক্ষ বছর আগে। কথাটা মোটেও ঠিক নয়, অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে সর্বোচ্চ ১৬ লক্ষ বছর আগে।
১৩। জাকির নায়েক বলছেন তারপর এলো হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতি যারা প্রায় ৫ লক্ষ বছর আগে বিলুপ্ত হলো। কত বড় নির্বোধ হলে এমন মন্তব্য করা সম্ভব! হোমো স্যাপিয়েন্স তো বর্তমানের মানুষ প্রজাতি। মানে আমরাই হোমো স্যাপিয়েন্স। আমরা আবার মরলাম কবে? জাকির নায়েক তো নিজেও হোমো স্যাপিয়েন্স, সে কি মরে গেছে? তাহলে কথা বলছে কে?
১৪। জাকির নায়েক বলছেন তারপর এসেছে নিয়ান্ডারথাল মানুষ। কী মিথ্যাচার! নাকি কী মূর্খতা! নিয়ান্ডারথাল মানুষের উৎপত্তির কোন ধাপ বা পর্যায় নয়। নিয়ান্ডারথাল মানুষরাও বিকশিত হয়েছিল বরফযুগে।
১৫। নিয়ান্ডারথালরা ৩০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয় নি, তারা বিলুপ্ত হয়েছিল ১০০ হাজার থেকে ৪০ হাজার বছরের মধ্যে।
১৬। তারপর এলো চতুর্থ ধাপ; ক্রো-ম্যাগনন। ক্রো-ম্যাগনন আর হোমো স্যাপিয়েন্স আলাদা কোন প্রজাতি নয়। হোমো স্যাপিয়েন্সেরই অন্য নাম আরকি। কিন্তু জাকির নায়েকের ক্রমাগত ভুলের মধ্যে এটাও একটা। ইতিপূর্বে জাকির নায়েক আলাদা প্রজাতি হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছিল।
১৭। এই সমস্ত ধাপের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু মানুষের বিকাশের ধারায় সবাই সবার সাথে যুক্ত।
১৮। আপনারা হয়ত অনেকেই রুপার্টস আলবার্ট নাম শুনেছেন। তিনি ডারউইনের বিরুদ্ধে নতুন একটা বিবর্তনবাদ থিওরি লিখেছিলেন। রুপার্টস আলবার্ট কে? এই নামে পৃথিবীতে কোন বিজ্ঞানীর সন্ধান পাওয়া যায় না। আমরা যেমন ছোটবেলায় পরীক্ষার খাতায় লেখার মান এবং মার্কস বাড়ানোর ধান্ধায় বিভিন্ন কাল্পনিক মনিষীর নাম এবং তাদের বাণী জুড়ে দিতাম, জাকির নায়েকও তেমনি ধর্ম প্রচার করতে এসে কাল্পনিক বিজ্ঞানীর নাম যুক্ত করে মানুষকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করে।
১৯। যদি আপনারা জীববিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক সালসব্যারির নাম শুনে থাকেন তবে জানতে পারবেন, তিনি একবার বলেছিলেন, ডারউইনের বিবর্তনবাদ থিওরি বিশ্বাস করা খুবই অযৌক্তিক। এবারও সেই একই কায়দায় জাকির নায়েক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা বিজ্ঞানীর নাম বলে তার যুক্তি প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফ্রাঙ্ক সালসব্যারি নামের জীববিজ্ঞানীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২০। ওয়াইটমিট নামে আরও একজন বিজ্ঞানীর রেফারেন্স দিয়েছেন জাকির নায়েক। তিনি বলেন, ওয়াইটমিট ডারউইনের বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে বই লিখেছে। এটাও জাকির নায়েকের মস্তিষ্ক প্রসূত বিজ্ঞানী। একটা বক্তৃতায় তিনি চতুর্থ-বারের মত এরকম ভুয়া বিজ্ঞানীর কথা উল্লেখ করলেন। এখানে একটা বিষয় খেয়াল করুন, জাকির নাইয়েক প্রতিবারই কোন পশ্চিমা স্টাইলের বিজ্ঞানীর নাম ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। এটাও তার একটা ভণ্ডামির কৌশল। তিনি ভেবেছেন পশ্চিমা স্টাইলের নাম ব্যবহার করলেই বুঝি তার মিথ্যে বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।
২১। নিচু স্তরের এককোষী অণুজীব যেমন অ্যামিবা নিজেকে বদলে প্যারামিশিয়াতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো প্যারামিশিয়া আবার কী জিনিস? জাকির নায়েক সম্ভবত প্যারামিসিউম বোঝাতে চেয়েছিলেন। প্যারামিসিউম কোন এককোষী অণুজীব নয়, এটা হলো এককোষী অণুজীবের বিবর্তনের একটা পর্যায়।
২২। জীব বিজ্ঞানী হ্যান্সিস ক্রেইকের মতে, ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্বটা হলো অকল্পনীয়। হ্যান্সিস ক্রেইক বলেও কেউ নেই। জাকির নায়েক সম্ভবত ফ্রান্সিস ক্রিক বোঝাতে চাচ্ছেন, যিনি ডিএনএ আবিষ্কারক এবং মনে করতেন বিবর্তনের মধ্য দিয়েই পৃথিবীতে মানুষের আর্বিভাব হয়েছে।
ইসলামের প্রচার প্রসারের জন্য এবং ইসলামকে মহিমান্বিত করতে মিথ্যে বলার অনুমতি ইসলামে দেয়া আছে। একে বলে আল তাকিয়া।
©somewhere in net ltd.