নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Criticism is our fundamental right. The revolution will come only from our pen #save constitution

Titanic

এক সময় আমরা সবাই মানুষ ছিলাম।হঠাৎ করে তখন এক ভণ্ডু খোদার আবিষ্কার হল।শুরু হয়ে গেলে ধর্মের/খোদার দলের দালালী(মানুষের মধ্যে মারামারি হানাহানি)ভণ্ডু খোদার এক বিশেষ দালাল হল ইসলামধর্মের নবী মুহাম্মদ।ধর্মিয় বই নাকি আসমান থেকে এসেছ,আরে বোকার দল তাহলে তদের মালিককে বল আমাকে একটি আইটির বিশেষ বই দিতে।আমি আইটির ব্যবহার ও উন্নত মান দিয়ে তোদের খোদা হওয়ার দাবী করব।তোমরা বল কোরান,বাইবেল, গীতা আরও কত্তকিছু উপর হতে এসেছে।তোমরা কি দেখনা এখন মানুষ উপর(চন্দ্র,মংগল ইত্যাদিতে ভ্রমণ করছে)চোখ খুল মানুষ, চোখ খুল।

Titanic › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক দড়িতে সই

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৪৮





তাহের মওলানা এতবড় শক্ত কথা কোন দিন বলেনি বউকে। বিবিকে সে ভালবাসে। কতজনে কতভাবে তাকে দ্বিতীয় বিয়ের জন্যে ফুসলিয়েছে। কোন দিকে তাকায়নি মওলানা, শোনেনি কারও কথা। আজ তাকে বলতে হলো কঠিন কঠিন সব কথা বউকে, বান্দর ছেলেটার জন্যে। বিবির কি দোষ? তবে তার ঐ একটাই দোষ- ইউরোপ প্রবাসী ভাইয়ের কথায় সে ওঠে আর বসে, বসে আর ওঠে। নিজের দারুল ইসলাম কওমী মাদ্রাসায় আনেক আশা নিয়ে ছেলেকে ভর্তি করিয়েছিল সে। তিন মাসও পার হয়নি, বিদেশ থেকে মামার আদেশ- ভাগ্নেকে হাইস্কুলে দিতে হবে। কি আর করা, বউয়ের নাকি কান্নার ঘুর্ণিতে পড়ে ছেলেকে ভর্তি করাতে হলো প্রফুল্ল চাকি হাইস্কুলে। হোক ভাল স্কুল, তারপরেও হিন্দুর ইস্কুল তো। অর্ধেকের বেশী হিন্দু মাস্টার। বুৎপরস্থ আভাওয়ায় কি না কি শিখে ফেলে। এই তো, যা ভেবেছিল মৌলানা, তাই হলো।

রাগে নিজের মাথা ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে তাহের মওলানার। ছেলে তার মজনু হয়েছে। দেওয়ানা হয়েছে। কার জন্যে? সদা জাউলার মেয়ে নীলিমার জন্যে। বিড় বিড় করে মওলানা- জাউলা থেকে ঘরামী হইছে হারামজাদা সদা। কত্তোবড় সাহস, আমার ছেলের পেছনে মেইয়ে লেলিয়ে দেয়।

সদাকে একহাত দেখে নেবে সে। ছেলেকে বেদম পিটিয়েছে মওলানা। যত পিটিয়েছে ততো কেঁদেছে নিজে। মওলানার দিল নরম। অনেক আশা ছিল তার সেই দিলে- আর দুই তিনমাস পরে মেট্রিকটা হয়ে গেলে ছেলেকে শহরে ভাল কোন কলেজে পাঠাবে। সব গুড়ে বালি মেরে দিল বান্দরটা! আজকে তার মনে বড় পেরেশানী। বউয়ের জন্যে, ছেলের জন্যে তার কষ্টের বুঝি শেষ নেই। অবুঝ নাদান সব।

বাপের একরোখা বাঁদর ছেলে তিন ঘণ্টার বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে মায়ের কান্নার বানে। চোখের বানের তোড় মওলানা সইতে পারে না, তাই মুক্তি মিলেছে খায়েরের। মুক্তি পেয়ে এক দৌড়ে সে এখন গঙ্গাধরের মাঠে। হাতে তার প্রিয় মোবাইল। এস এম এস করেছে সহপাঠী নীলিমাকে, যার জন্যে তাকে আজ মজনু নাম নিতে হলো। তারাতারি আইসা পর মাঠে নীলিমা, খুব বিপদ- মোবাইলে এমন বার্তা পেয়ে গিরিবাজ পায়রার বেগে মাঠে উড়ে এসে পড়ে নীলিমা। হাপাতে হাপাতে বলে- কি হইছে খারু, কি হইছে?
-বিরাট বিপদ নীল। আব্বায় মায় সব জাইনা ফালাইছে। বাজান আমারে আগের সেই মাদ্রাসায় পাঠাই দিবে। সেইখান থেকে মেট্রিক দিতে হইবো। তর বাপেরে আব্বায় মাইরালাইবে। এহন ক আমি কী করুম?
নীলিমার মুখ দিয়ে কোন কথা সরে না। শরীর কাঁপে তার ভয়ে, ত্রাসে। কোন উপায় বের করতে না পেরে আকাশের গহীন শূন্যতায় যেন হারিয়ে নিজেকে খুঁজে ফেরে।

-কি হইলো ক, আমি এহন কী করতাম? তরে না দেইখা আমি কেমনে বাচুম? আব্বায় তোগো গেরাম জ্বালাই দিবো। আমি এহন কি করতাম রে নীল?
খায়েরের কোন কথাই যেন তার কানে যায়নি এমনি ভাবে উদাস চোখ ভরে নীলিমা দেখছে বিকেলের আকাশ। আকাশ দেখা তার বুঝি আর শেষ হবে না।
এক সময় শেষ হয় নীলিমার আকাশ দেখা। আফগান রাজ্যের গান্ধার মুর্তীর মতন স্থির ভাবে খায়েরের চোখের দিকে সর্বহারা দৃষ্টি নিয়ে তাকায় সে। কিছু একটা বলার চেষ্টা করে।

-আমরা যদি মুসলমান হইতাম, খুব ভালা হইতো নারে? আমরা একলগে চলতে পারতাম, ফিরতে পারতাম। ক্যান যে হিন্দু হইতে গেলাম? তরে একদিন না দেখলে আমিও মইরা যামু রে খারু। কোন উপায় নাই, তয় একখান উপায় আছে।
আবার চুপ হয়ে যায় নীলিমা। আবার মহাশূন্যে তাকায় সে। কেন তাকায় সেই জানে।
-কী উপায় ক না। জলদি ক নীল। জলদি ক।
খারুর শরীরে নিরুপায়ের ত্রস্থতা।
-আমার ভেতরে, আমার এই মাথার ভেতরে, বুকের মধ্যে কি জানি করে, কেমন জানি করে, মনে লয় তোর কারণে। তুই চক্ষের আরালে গেলে আমার মরণ, তরও মরণ। তাইলে হাতে থাকলো এক- একটাই পথ। আমাগো একসাথে মরণ লাগবো। এক সাথে। চাইয়া দেখ খারু, গঙ্গাধরের এই মাঠ, আর এই দেবদারু সাক্ষী থাকলো। এরা ছারা আমাগো আর কোন আশ্রয় নাইরে। আমাগো আর কেউ নেই। আইজ রাইত একটায় ঘর পালাইয়া আইবি। এইখানে আমাগো শেষ দেখা হইবো, এমনি ভাবে।

কথাকটি বলে নীলিমা খায়েরকে জড়িয়ে ধরলো যেমন ভাবে স্বর্ণলতা জড়িয়ে ধরে থাকে আমগাছের শক্ত দেহটাকে। তারপরে তারা দুইজনে মিলে আকাশের দিকে তাকালো, শূণ্যে হারালো। আজকে তারা দুজনেই ঘাসফড়িং। সমাজ-সংসারের সব সমস্যার সমাধান যেন হয়ে গেছে। আর কোন চিন্তা নেই ওদের। খুব শক্ত করে হাতে হাত ধরে ওরা ঘাস থেকে ঘাসে, পাতা থেকে পাতায় ঘুরছে। ষোল বছরের ছোট্ট জীবনে আজ তাদের এই গঙ্গাধরের মাঠে প্রথম ঘাস ফড়িংয়ের জীবনের স্বাদ নেয়া। তারা নিলো সেই জীবনের স্বাদ। শেষে ভাল ছেলে মেয়ের মতন বাড়ীতেও ফিরে গেলো।
খায়ের মেনে নিলো নীলিমার সব কথা। এইসব কথা যেন তারই কথা। একবারও প্রতিবাদ করে বললো না- চল আমরা পালাইয়া অন্য কোনখানে চইলা যাই।
কিছুই বললো না সে। কেন বললো না? বললে পরের দিনের পৃথিবীটা অন্যরকম হতো। সকালটা হয়তো আরো বেশী উজ্জল হতে পারতো।

সেই রাতে কি ঘটলো কেউ জানলো না। জানলো শুধু গঙ্গাধরের দেবদারু। কেউ দেখলো না। দেখলো শুধু দেবদারুর কোটরে বসে থাকা নির্ঘুম লক্ষিপেঁচা। তারা কি এই দুই কিশোর কিশোরীর অবিবেচনাকে ধিক্কার দিয়েছিল, প্রতিবাদ করেছিল? হয়তো করেছিল, অথবা করেনি- সেসব কোন কাজের কথা নয়। কাজের কথা হলো, তৃতীয় কোন মানবিক চোখের দৃষ্টিগোচর তারা হয়েছিল কিনা! হয়েছিল, তবে বেশ দেরীতে। সকালের হলদে আলোয় মাঠে গরু নিয়ে আসা প্রথম রাখাল দেবদারুর মগডালে একদড়ির দুইপ্রান্তে দুটি কিশোর কিশোরীকে ঝুলে থাকতে দেখে থমকে গিয়েছিল। থমকে দাড়িয়ে, ঘাস খাওয়া থামিয়ে মাঠের গরুগুলোও একবার উপরে তাকিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল ক্রুদ্ধ তাহের মওলানা আর নীলিমার নেশাখোর বাপ সদা ঘরামীও। বিস্ময়ে ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল দেশের বড় বড় দৈনিকের সম্পাদকদের চোখও। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তারা লক্ষ-কোটি পাঠকের কাছে অবুঝ প্রশ্ন রেখেছিল- কী ছিল ওদের দুঃখ?

(একটা জাতিয় দৈনিকে দিনাজপুরে এক হিন্দু কিশোরী, আর এক মুসলমান কিশোরের যুগল আত্মহত্যা নিয়ে “কী ছিল ওদের দুঃখ?” শিরনামে প্রকাশিত খবরের আলোকে গল্পটা লেখা। ওরা ছিল দ্বিধাবিভক্ত সমাজে অবোধ প্রেমের শিকার।)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.