![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগ এবং জীবনপণ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছে প্রিয় মাতৃভূমি। স্বাধীনতা সংগ্রামে নিহত হয়েছে ৩০ লক্ষ মানুষ। ইজ্জত গিয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ নারীর। যে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধরা সুদীর্ঘ ৯ মাস জীবনপণ লড়াই করেছেন দেশের স্বাধীনতার জন্য তারা যে কতভাবে নির্যাতিত হয়েছেন পাকী বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে তার অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে। এ এলাকার অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাও নির্যাতিত হয়েছেন। এমনি একজন মুক্তিযোদ্ধা পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার পাঁচপীর গ্রামের সফিকুল আলম চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকী বাহিনী তাকে বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপ করে নির্যাতন করেছিল। সফিকুল আলম চৌধুরী সম্প্রতি সে কাহিনী সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন।
সফিকুল আলম চৌধুরী ছাত্র জীবনে ছিলেন তুখোড় ছাত্র নেতা। পরবর্তীতে রাজনীতিতে যোগ দেন। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত আলম চৌধুরী স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুহলে আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি। যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে মার্চ মাসে তিনি বোদা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের রাইফেল ট্রেনিং দেন। তাকে ধরার জন্য ওই এলাকার রাজাকার ও শান্তিকমিটির নেতারা পুরস্কার ঘোষণা করে। অনেকদিন লুকিয়ে থাকার পর অবশেষে একদিন ধরা পড়লেন আলম চৌধুরী। সেদিনটি ছিল ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। পরের দিন তাকে বোদা থানায় নিয়ে গিয়ে বসতে বললে তিনি একটি চেয়ারে বসেন। তা দেখে একজন অবাঙালী পুলিশ এসে তাকে চেয়ার থেকে লাত্থি মেরে ফেলে দেয় এবং বলে যে, “শালে কিঁউ কুরসি মে বইঠা হায়”। বোদা থানা থেকে তাকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঠাকুরগাঁও ইপিআর ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। সেখানে একজন লোক পাঞ্জাবী সেনাদের জিজ্ঞেস করল ”ইয়ে কোন হ্যায়”? সেনাদের একজন জবাবে বলল, “ইয়ে মুক্তিকা কর্নেল হ্যায়”। সঙ্গে সঙ্গে লোকটা তার পেটে ভীষণ জোরে একটা লাথি মারে। সারাদিন সারারাত অভুক্ত থাকার কারণে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
জ্ঞান ফিরলে তাকিয়ে দেখেন, একটি বাঘের খাঁচায় দুটি বড় এবং দুটি বাচ্চা বাঘের মাঝে তিনি শুয়ে আছেন। চোখ খোলার সাহস নেই। মনে মনে ভাবেন বাঘ দিয়েই তাকে হত্যা করা হবে। কিন্তু কি আশ্চর্য বাঘ চারটি সরে গিয়ে খাঁচার পার্টিশন পার হয়ে একপাশে গিয়ে বসে থাকলো। একজন লোক এসে পার্টিশনের দরজা বন্ধ করে দিলো। বাঘের এহেন আচরণ দেখে সেনারাও খুব অবাক হলো। কিছুক্ষণ পর এক পাঞ্জাবী সেনা এসে একটি পোড়া রুটি বাঘের পেশাবের উপর ছুঁড়ে মারে। ক্ষুধার জ্বালায় তিনি সেটিই খান। এরপর তাকে বাঘের পেশাব মেশানো পানি খেতে দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে তাকে খেতে হয়। সন্ধ্যায়ও তাকে পোড়া রুটি খেতে দেয়া হয়। রুটি খেয়ে তিনি মেঝেতে বুক লাগিয়ে শুয়ে পড়েন। এমন সময় একটি বাঘের বাচ্চা এসে তার দু’পায়ের মাঝখানে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। তার গায়ের রক্ত হিম হয়ে আসে। নির্ঘুম সারা রাত তার এভাবেই কেটে যায়। কিন্তু কি আশ্চর্য বাঘ তাকে কিছুই করলো না।
সকালে তাকে বাঘের খাঁচা থেকে বের করে আনা হয় এবং যথারীতি একটি পোড়া রুটি খেতে দেয়া হয়। তার দু’হাত বেঁধে ফেলে এক পাঞ্জাবী সেনা তাকে জিজ্ঞেস করলো, “তুম কোন পার্টি করতা হ্যায়”? তিনি জবাব দেন তিনি ওয়ালী খানের ন্যাপ পার্টি করেন। তখন সে লোকটি রেগে মেগে বলে, বাইন চোত, তুম গাদ্দার হায়। ওয়ালী খান ভি গাদ্দার হায়। এর পর সে আরও জিজ্ঞেস করে, “আন্দার মে কেতনা মুক্তি হায়”? তিনি বলেন, তিনি জানেন না। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি তাকে বেত দিয়ে মারা শুরু করলো। মারের চোটে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে দেখেন তিনি আবার বাঘের খাঁচায় এবং একটি বাঘ তার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবারও বাঘ তাকে কিছু করলো না। এভাবেই প্রতিদিন তার উপর নির্যাতন চালিয়ে আবার বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়ে দিত। আর প্রতি রাতেই একটা বাঘের বাচ্চা তার দু’পায়ের মাঝে মাথা রেখে ঘুমাতো। এর মাঝে একদিন প্রায় ১৫ জন লোককে ধরে এনে বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়ে দিলো। সাথে সাথে বাঘগুলো তাদের আক্রমণ করে দেহ ক্ষতবিক্ষত করে দিলো। তাদের আর্তনাদে আশেপাশের বাতাস ভারি হয়ে উঠলো। সন্ধ্যায় তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেললো।
ইতোমধ্যে একদিন দু’জন মেজর এসে বললো, “শের কো নাড়ো”। বাঘের গায়ে হাত দিতেই বাঘ সরে গেল। তারা আবার বললো, “তোমহারা শির শের কা মু কা পাছ লে যাও”। মাথা বাঘের মুখের কাছে নিয়ে গেলে বাঘ চারটিই সরে গিয়ে খাঁচার এক কোণে বসে থাকলো। এর পর তারা বলাবলি শুরু করলো, “ইয়ে বহুত শরীফ লাড়কা হায়। ইসকো কিঁউ নাহি ছোড় দেতা হায়”।
এর পর তাকে ঠাকুরগাঁও মহকুমা হাকিমের কোর্টে হাজির করা হলে মহকুমা হাকিম বাঙালী হলেও তাকে দু’বছরের কারাদ- দেন। কিন্তু জজ কোর্টে তিনি জামিন পান। জামিন পেয়ে তিনি জেল থেকে বের হয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিবেন এমন সময় একটা মিলিটারির গাড়ি এসে তাকে আবার ধরে ফেলে এবং একজন মেজর বলে, “শালা তুম ভাগনে কা কোশেশ করতা হ্যায়”। তাকে আবার জেলে পুরে দেয়া হয়। কয়েকদিন পর মুক্তি বাহিনী এবং মিত্র বাহিনী ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করলে খান সেনারা পালিয়ে যায়। একজন বাঙালী পুলিশ অফিসার তাকে চাবি দিলে তিনি জেলখানার লকআপ খুলে বাড়ি চলে আসতে সক্ষম হন।
২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৪৫
রিফাত হোসেন বলেছেন: +
৩| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫৭
চিকন আলি বলেছেন: শুনছিলাম ২লাখ মা-বোনের ইজ্ঝতের কথা এখনতো দেখি আপনি আরো ৩লাখ বাড়াইয়া দিলেন... মানে ৫ লাখ মা বোনের ইজ্জত এর বিনিময়ে স্বাধীনতা.....। এভাবে বাড়াতে থাকলেতো শেষে কোনো মা বোনই বাকি থাকবো না.........।
৪| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০৪
মুহাই বলেছেন: জানতে এলাম এবং জানলাম
৫| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৭
প্রকৌশলী রিয়াদ হাসান চৌধুরী বলেছেন: আপনি মাঝে মাঝে খুব ভাল পোস্ট লিখেন আবার মাঝে মাঝে এমন সব পোস্ট দেন কিছুই বুঝিনা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৩৯
কলাবাগান১ বলেছেন: আপনাকে বুঝা মুসকিল