![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাশিয়াকে সাথে নিয়ে বাশার আল-আসাদ গৌতাকে হাবিয়া দোযখ বানিয়ে ফেলেছেন। বিরামহীন হামলার ফলে অগুনতি নিরপরাধ মানুষ নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করছে, যার বড় অংশ শিশু। কিন্তু এতো বড় মানবিক বিপর্যয়েও বিশ্ব মোড়লরা প্রায় নীরব। কারণ আসাদ পৃথিবীকে বুঝিয়েছেন যে, গৌতায় আল-নুসরা জঙ্গিগোষ্ঠী অবস্থান করছে এবং হাতেগোণা কয়েক ডজন জঙ্গির টোপ ফেলে তিনি পুরো বিশ্ব-বিবেককে কাবু করে ফেলেছেন। তিনি ভাল করেই জানেন যে, জঙ্গি তকমা দিয়ে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় আপনি নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারবেন। কেউ টু শব্দটি করবেনা। আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিনের উদাহরণ তো আমাদের চোখের সামনেই আছে।
২০০৩ সালে ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি যখন ইরাক আক্রমণ করেছিল, তখন ইরাকের শিয়ারা ছিল আমেরিকার প্রিয় মিত্র। সাদ্দাম হোসেন ও সুন্নীদের বিরোধিতা করতে গিয়ে শিয়ারা যে নিজ দেশের বিরোধিতা করে বসেছিল, তা বোধহয় সদ্য সাবেক শিয়া প্রধানমন্ত্রী (বর্তমান উপ-রাষ্ট্রপতি) নুরী আল-মালিকি এখন টের পাচ্ছেন। কিন্তু এখন টের পেয়ে কী হবে? ইরাকের নিপিড়িত-বঞ্চিত সুন্নীরা ইতোমধ্যে আইএস গঠন করে ফেলেছে। শিয়াদের ষড়যন্ত্র এখন অজগর সাপ হয়ে ইরাককে দংশন করছে। আজ কিন্তু আমেরিকা শিয়াদের পাশে নেই।
আনা ফ্রাঙ্ককে তো আমরা সবাই চিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সময় নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে বসে ১৫ বছরের কিশোরী মেয়েটি তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলির কথা লিখে গিয়েছিল, যা আজ সারা পৃথিবীতে অবশ্যপাঠ্য। মালালা ইউসুফজাইকেও আমরা চিনি। কিন্তু আহেদ আল-তামিমিকে আমরা ক'জন চিনি? তালেবানের বিরুদ্ধে সোচ্চার ১৭ বছর বয়সী মালালা ইউসুফজাই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু যায়নিস্ট বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ১৭ বছরের ফিলিস্তিনি কিশোরী আহেদ আজ সপরিবারে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী। মালালাকে নিয়ে বিশ্ব মিডিয়া যতটা লাফালাফি করেছে, তার সিকিভাগ মনযোগও আজকের "আনা ফ্রাঙ্ক" আহেদ আল-তামিমির ভাগ্যে জুটেনি।
মালিক মুহাম্মদ জয়সী রচিত "পদ্মাবত" নামক কাল্পনিক কাব্যগ্রন্থের লেজ ধরে ভারতে তৈরি করা হয়েছে পদ্মাবত চলচিত্র। চলচিত্রটি আমি দেখিনি। সময় বা রুচি কোনোটিই ছিলনা। তবে পত্রিকায় পড়েছি, পুরো চলচিত্রে সুলতান আলাউদ্দীন খিলজিকে উপস্থাপন করা হয়েছে এক অবিবেচক, নিষ্ঠুর, নারী-লোলুপ দানব রূপে। অপরদিকে রাজপুতদেরকে দেখানো হয়েছে পরম সাহসী, মহানুভব, রক্ষাকারী রূপে। চলচিত্রটির নির্মাতা সত্য-মিথ্যার বিন্দুমাত্র ধার ধারেননি। তিনি কেবল বিজেপির গেরুয়া পালে হাওয়া লাগিয়েছেন।
অবশ্যই আলাউদ্দীন খিলজি আবু বকর-উমর পর্যায়ের মুসলিম নন। আলিম-উলামা, পীর-আউলিয়া কিছুই নন। কিন্তু মুসলমানদেরকে ছোট করার জন্য ইতিহাসের সাথে এতো বড় বেঈমানি করতে হবে?
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাতে আহত করা হয়েছে। হামলাকারীর ব্যাপারে অনেকের আহা-উহু থাকতে পারে; আমার বিন্দুমাত্র নেই। যে ঘৃণিত অপরাধ সে করেছে, তাতে তার সর্বোচ্চ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া আবশ্যক।
কিন্তু হাস্যকর বিষয় হল, হামলাকারীর পরিচয় উন্মোচিত হওয়ার পর থেকেই দেশের মিডিয়াগুলো খুব ফলাও করে প্রচার করছে- হামলাকারী মাদরাসার ছাত্র। কোন মাদরাসা, কতটুকু পড়াশোনা করেছে, এখনো পড়ছে কি না- কিছুই না। সে বলেছে সে মাদরাসার ছাত্র। ব্যস এটুকুই। প্রশ্ন হল, এ পরিচয়টি এতো ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে কেন? সে মাদরাসার ছাত্র হোক, কারখানার শ্রমিক হোক কিংবা সিনেমার নায়ক হোক- সে একজন অপরাধী। পরিচয়ের সূত্র ধরে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম আসতে পারে। কিন্তু এখানে তো "মাদরাসার ছাত্র" পরিচয়টিই তার প্রধান পরিচয় হয়ে উঠেছে! কই, বাংলাদেশে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া অগনিত সংখ্যক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের আসামীদের বেলায় তো এমনটি হয়না?
এ ধরণের একচোখা নীতি একটি জাতির বিশ্বাস নাড়িয়ে দেয়। এ ধরণের একচোখা নীতি বড় হয়ে আইএস গঠন করে। এ ধরণের একচোখা নীতি ভিন্ন পথ ও ভিন্ন মতের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
চলুন, এবার দু'চোখ মেলে পৃথিবীকে দেখতে শিখি।
©somewhere in net ltd.