নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জহির_জুয়েল

আমার কিছু জানা নেই।

জহির_জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাতের ঢাকার অনেক রং

২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৩:০৩

দিনময় ব্যস্ততা ফুরোলে ঢাকা হয়ে ওঠে অচেনা নগরী। হই-হুল্লোড়, যান্ত্রিক শব্দ আর অসহায় মানুষের হাহাকার উবে গিয়ে ঝুপ করে নেমে আসে নীরবতা। দিনের আলোয় বর্ণময় কিংবা বর্ণহীন নানা গল্পে ঠাসা থাকে রাজধানী ঢাকা। রাতেরও গল্প আছে; খানিক ভিন্ন, খানিক মুগ্ধতার। নাইট ক্লাবের উন্মাদনা, ঘর পালানো কিশোরের অস্থিরতা, উদ্দেশ্যবিহীন ঘুরে বেড়ানো বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ, ছিন্নমূল মানুষ, হাসপাতাল-থানার বাতাসে উড়ে বেড়ানোর উদ্বেগ অথবা রমনা ও সোহরাওয়ার্দীর দেহপসারিণীরাই মূলত রাতের ঢাকা চিত্রনাট্যের পাত্র-পাত্রী।

রাতের ঢাকার এ বৈচিত্র্য দেখার সুযোগ মেলে না সবার। বোহেমিয়ান জীবনযাপনে অভ্যস্ত মানুষও গভীর রাতে নিরাপত্তাহীনতায় ঘরে ফেরে। তবু রাজপথেই কিছু মানুষের সাজানো সংসার। উদ্বাস্তু সময়ের সুখ-দুঃখ নিয়েই টানাপড়েনের জীবন তাদের। সোডিয়ামের আলোয় যে জীবন হলদেটে, ফ্যাকাশে। আবার অভিজাত পাড়ায় রাত নামলেই মেলে আনন্দের সব রং। রাত সেখানে কাঙ্ক্ষিত সুন্দর। রাতের এমন বহুরূপী ঢাকা দেখার সুযোগ যাদের হয়নি তাদের সত্যিই অজানা থেকে যাবে জীবনের অনেক কিছুই।

রাতের অলিগলি

ঢাকা শহরের রাত মানে কারওয়ানবাজার, সোয়ারীঘাট, সদরঘাট, সায়েদাবাদ, টিকাটুলী মোড়, গুলিস্তান, কমলাপুর, মতিঝিল, দৈনিক বাংলার মোড়, ফকিরেরপুল, শাহবাগ, মালিবাগ, মগবাজার মোড়, ফার্মগেট, মহাখালী, গাবতলী, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চানখাঁরপুল, পলাশীর মোড়, টিএসসি কিংবা বাংলামোটর।

পেশাজীবী মানুষ মানেই শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে নিদেনপক্ষে এক কাপ চা খেয়েছেন। এদিকটা তাই গভীর রাত পর্যন্ত থাকে ব্যস্ততায় মোড়া। রাত সাড়ে ১০টায় এখানেই দেখা মিলল রামপুরার সোহাগের সঙ্গে। অফিস শেষে বন্ধুদের সঙ্গে এখানেই আড্ডা দেন তিনি। বলেন, ‘একদিন না এলে মনে হয় কী যেন করা হয়নি আজ।’ শাহবাগ বা জাতীয় জাদুঘর সোহাগের মতো মানুষের কাছে তাই এক নেশার নাম। সন্ধ্যা নামলেই শত শত মানুষ ভিড় করে এখানে। ঝাল-মুড়ি, চিড়া-দই, চা-সিগারেট কিংবা সেদ্ধ ডিম খেতে খেতে আড্ডা চলে রাত ১টা পর্যন্ত। সময় এখানে জীবন্ত। অন্ধকার এখানে আলোরই অপর নাম।

বাংলামোটরের কাছে সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বিয়ের পার্টির উচ্ছিষ্ট খাবারের হাট বসে। খাবারের এমন হাট বসে জাদুঘরের সামনেও। এখানে জটলা হয় রিকশাওয়ালা আর রাতের ভ্রাম্যমাণ মানুষের। তেমনি একজন রাশেদুল। বয়স ১৫। সারা দিন পত্রিকা বিক্রি শেষে এখানেই ২৫ টাকায় রাতের খাবার সেরে ফেলে সে। তারপর ডিভাইডার অথবা থানার সামনেই গুটিশুটি মেলে শুয়ে পড়ে রাশেদুল।

রাতের এক ভিন্ন চিত্রের দেখা মিলবে মতিঝিল, কারওয়ানবাজার, মগবাজারসহ বেশ কয়েকটি স্পটে। পত্রিকার গাড়ি রওনাকে কেন্দ্র করে এসব জায়গাও পাওয়া যায় ভিন্ন এক ব্যস্ততা। কমলাপুর, গাবতলী, সায়েদাবাদ এলাকায় চোখ-কান খোলা রাখলে প্রতারক মলম পার্টির খপ্পরে পড়া অজ্ঞান-বেসামাল লোকজনেরও দেখা মিলতে পারে।

রাতের ঢাকার আরেকটি জটলা হয় থানাকেন্দ্রিক। পুলিশ কাউকে ধরে এনেছে বা কোনো বিপদে পড়ে কেউ থানায় ছুটে এসেছেন। ব্যস, এবার সেই পরিবারের সদস্য, পুলিশ, থানার দালাল চক্রের হয়রানি-টানাহেঁচড়া, টাকা-পয়সা লেনলেন চলে। সরকারি হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগ, গাইনি ওয়ার্ড অথবা অপারেশন থিয়েটারকে ঘিরে ভিন্ন ব্যস্ততা চলে রাতভর। হঠাত্ দুর্ঘটনা কিংবা অসুস্থতায় কেউ হাসপাতালে ছুটে এলে ব্যস্ততা বেড়ে যায় দালাল শ্রেণীর। এই ইঁদুরদৌড় খেলা চলে রাতজুড়ে।

যে জীবন ফড়িংয়ের...

দিনভর পরিশ্রমে ক্লান্ত ঢাকাবাসী যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন রাজপথের মোড়-বাঁকে জেগে থাকে কিছু মানুষ। তারাই জমিয়ে তোলে অন্যরকম এক সাম্রাজ্য। গড়ে দেয় রাজধানীর রাত-দিনের পার্থক্য। উগ্র সাজগোজ, হাতে মোবাইল ফোন, কড়া মেকআপ ও পারফিউমের গন্ধ ছড়িয়ে মাদকতা ছড়ানো চোখে খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করে নিশিপরীরা। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ছুড়ে দেয় নানা মন্তব্য আর করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি। তাদের আশপাশেই ঘুর ঘুর করতে থাকে রিকশা, ধীরগতিতে চালানো ট্যাক্সিক্যাব ও সিএনজি অটোরিকশা। নিরাপদ সুযোগ-সুবিধার লোভ দেখিয়ে নানা কণ্ঠে আর আকারে-ইঙ্গিতে হাঁক দেয় চলাচলরত লোকজনের উদ্দেশে। কিছু অভিজাত যৌনকর্মীকে দেখা যায় হঠাত্ পাশে এসে দাঁড়ানো দামি গাড়ি বা মোটরসাইকেলের পেছনে চড়ে বসতে।

রাত গভীর হলেই রাজধানীর ফার্মগেট থেকে রমনা-হাইকোর্ট পর্যন্ত অর্ধশতাধিক স্পটে বসে মাদক বিক্রেতা ও যৌনকর্মীর মেলা। সারা রাত ফার্মগেটের চারটি ওভারব্রিজ, খেজুরবাগান, ইন্দিরা রোড, খামারবাড়ী, তেজকুনী পাড়ার মোড়, এফডিসি, কারওয়ানবাজার মোড়, বাংলামোটর মোড়, মন্ত্রীপাড়া, সবজিবাগান, শেরাটন মোড়, রমনা ওভারব্রিজ, হাইকোর্ট চত্বর, শিশুপার্কসহ ওইসব স্পটের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় মাদকসেবী, মাদক বিক্রেতা আর যৌনকর্মীদের দখলে। রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত ফার্মগেট থেকে রমনার এসব স্পটে কিছুদূর পরপর দেখা যায় যৌনকর্মী ও নানা বয়সী খদ্দেরের জটলা। এলাকাভেদে বিভিন্ন শ্রেণী ও দরদামের এসব যৌনকর্মীর কেউ কেউ আবার নিজেকে এনজিওকর্মী বলে পরিচয় দেয়। ওভারব্রিজ, আন্ডারপাসসহ পার্কগুলোতে যৌনকর্মীদের পাশাপাশি সতর্ক দৃষ্টিতে আসর জমিয়ে তোলে মাদকসেবী ও বিক্রেতারা। সক্রিয় হয়ে ওঠে ছিনতাইকারী ও ছিঁচকে মাস্তানরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চারুকলা অনুষদ ও দোয়েল চত্বরের সামনে দুটি চেকপোস্ট বসানো হলেও হাইকোর্ট চত্বরের চিত্র ভিন্ন। হাইকোর্টের দক্ষিণ গেট দিয়ে প্রায়ই ভেতরে ঢুকে পড়ে তরুণ-তরুণী। এমনিভাবে চলে রাতভর।

প্রাণোচ্ছল পলাশী

রাত প্রায় ২টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের সামনের নির্জন, জনবিরল রাস্তা ধরে পলাশী মোড়ের দিকে এগোতেই গানের সুর শোনা গেল। কিছুটা এগোলেই দেখা গেল পাঁচ-ছয়জনের একটি দল গান গাইছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গানের সুর এবং ধরনও বদলে যেতে থাকে। তাদের সবার হাতেই গরম চায়ের কাপ। পলাশীর মোড়ের মিলন, মানিকের দোকান এভাবেই রাতজুড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম, জহুরুল হক হল, মেডিক্যালের ফজলে রাব্বি হল আর বুয়েটের হলগুলোর ছাত্রদের আগমনে মুখরিত থাকে।

এই আড্ডায় রাত আড়াইটায় পাওয়া গেল কবি জসীমউদ্দীন হলের রাজকে। তিনি জানান, ‘পড়াশোনা করতে করতে হঠাত্ একটু বিরতি নিতে মন চাইলে সদলবলে এখানে চলে আসি। আড্ডাও হয়, মনটাও ফুরফুরা হয়ে যায়।’

বুয়েটের নজরুল হলের অপু ও রশিদ হলের মিথেনরা গান গাইতে ভালোবাসেন। তাই এখানে এলে গিটারটাও সঙ্গে নিয়ে আসেন তারা। যতক্ষণ থাকেন চায়ের কাপের সঙ্গে ঝড় তোলেন গিটারেও। এমন অনেকেই আছেন, যারা দিনময় ব্যস্ত পলাশীকে এভাবেই আবিষ্কার করেন। মেতে ওঠেন মধ্যরাতের তুমুল আড্ডায়।

আভিজাত্যের মধ্যরাত

ঢাকার রাত কেবল ছিন্নমূল মানুষের বেদনা আর সংগ্রামের চিত্রই বহন করে তা নয়-গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত পাড়ায় রাত মানে কাঙ্ক্ষিত বিনোদন। আনন্দের তাবত্ আল্পনা। বিশ্বের আধুনিক সব দেশের রাতের আবহ পাওয়া যাবে এখানে। যেন একটুকরো ইউরোপ। ফু-ওয়াং ক্লাব, ওয়েস্টিন কিংবা অ্যাট্রিয়ামে রাতভর চলে ডিজে পার্টি। সঙ্গে বাহারি মদ। উন্মাতাল আড্ডা আর আইটেম গার্লদের সান্নিধ্য শেষে উঁচুতলার মানুষরা শেষরাতে গাড়ি ছুটিয়ে ঘরে ফেরেন। রাতজাগা মানুষের অনেক অনুভূতিই তাদের স্পর্শ করে না।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৩:৪৩

রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন: B-) B:-) B:-/ :|| :D :D :D

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৩:৪৪

ভাবুক আমি বলেছেন: জোশ

৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:০৪

নীল-দর্পণ বলেছেন: জীবনে একবার-ই ফার্মগেট থেকে রিক্সায় বাসায় ফেরার পথে রাতের ঢাকা দেখে ছিলাম। যদিও অল্প পথ, তআর মনে মুগ্ধ ছিলাম!!

৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:৩৯

তূর্য হাসান বলেছেন: জনাব জহির জুয়েল, এই লেখাটি আজ আমি দৈনিক সকালের খবরে হুবহু পড়েছি। লেখকের নাম আবদুল্লাহ আল ইমরান। আপনার লেখাটি অবশ্যই সেখান থেকে কপি করা। কিন্তু সেটা আপনি উল্লেখ করেননি। অতএব এই লেখাটিকে কি আমরা কপি পেস্ট হিসেবে ধরে নেব নাকি এটাকে আপনি নিজের মৌলিক লেখা বলে দাবি করেন?

২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১০:০৯

জহির_জুয়েল বলেছেন: কপি পেষ্ট।কিন্তু এই লেখাটি অনেকেই পড়ে নাই কিন্তু আমার কারনে পড়তে পেরেছে সে জন্য একটা ধন্যবাদ তো দিতে পারেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.