নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনতরী চলছে

জীবনতরী চলছে

I love my country much more....................

জীবনতরী চলছে › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্যের বিজয় অবিশম্ভাবী -ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:০১

সত্যের বিজয় অবিশম্ভাবী -ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম



পৃথিবীর বয়স কত? এই নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু এই কথা সত্য যে,পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সত্য এবং মিথ্যার লড়াই চলে আসছে বিভিন্ন আঈিকে এতে কোন সন্দেহ নেই





পৃথিবীর বয়স কত? এই নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু এই কথা সত্য যে,পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সত্য এবং মিথ্যার লড়াই চলে আসছে বিভিন্ন আঈিকে এতে কোন সন্দেহ নেই। এই লড়াই আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন ইসলামের সাথে মানব রচিত মতাদর্শের। আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের দায়িত্ব পালনের জন্য যুগে যুগে নবী রাসুলদের প্রেরণ করেছেন। তাঁরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ উপায়ে ও যুক্তিসংগত পন্থায় আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবন করেছেন। বিরোধীরা তা নিয়ে বিচার বিবেচনা না করে, যুক্তির জবাব যুক্তির মাধ্যমে দেয়ার পরিবর্তে অন্ধ আবেগ ও উন্মত্ত হিংস্রতা পথ বেছে নেয়। সৃষ্টি করে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আজো কিন্তু তার ব্যাতিক্রম হচ্ছেনা। আমাদের মনে রাখতে হবে, সত্যপন্থীদের পথ কখনো ফুল বিছানো ছিলোনা, এখনো নেই। ব্যাঙ্গবিদ্রুপ, ঠাট্রা উপহাস, গালিগালাজ ও অশালিন উপাধি সব যেন একই কারখানায় তৈরী। যারা একটা চাক্ষুস সত্যকে মানতে চায়নি, তারা নিজেদের ও দাওয়াত দাতার মাঝে নানা রকমের কুটতর্ক বাধিয়ে অন্তরায় সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাতো। একটা অপচেষ্টা ব্যর্থ হলে নব উদ্যমে আরেকটা শুরু করা হতো। মক্কার প্রত্যেক অলিতে গলিতে এবং প্রত্যেক সভা সমিতিতে এই বলে চিৎকার করতো যে তারা ধর্মচ্যুত হয়ে গেছে, তারা আমাদেও বাপদাদার ঐতিয্যে আঘাত হানছে। তাদের মিথ্যা প্রচারণায় পরিবেশ ভারী ও শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে উঠতো। জ্বলে উঠতো হিংস্রতার দাবানল। কিন্তু মিথ্যা আবেগের ওপর ভর করে, দু'চারদিন টিকে থাকলেও অচিরেই তা নিস্প্রভ ও ম্লান হয়ে যেত। কিন্তু মানুষের মন এসবের প্রতি বিরক্ত ও বিতৃষ্ণ হয়ে উঠলো। তখন কাফেরেরা মূলনীতি ঠিক করলো নিত্যনতুন গালি আবিষ্কারের। রাসুল (স)-এর বিরুদ্ধে নতুন গালি উদ্ভাবন করার দায়িত্ব পড়লো ইবনে আবি কাবশার উপর। আবি কাবশা আরবের একজন কুখ্যাত ব্যক্তি। সে সারা আরবের ধর্মীয় ভাবধারার বিরুদ্ধে শারা নামক নক্ষত্রের পূজা করতো। এই কুখ্যাত ব্যাক্তিরা মনের আক্রোশ মেটাতে কত কিইনা আবিষ্কার করেছে!। তা ভাবতে শিহওে উঠে শরীর ঘৃনায় ভওে উঠে মন। আজকের শাহবাগে তরুন প্রজন্ম! তরুন প্রজন্ম! বলে যেভাবে মিথ্যা আবেগ, উস্কানী আর উম্মাদনা তৈরী করছে সত্যপন্থীদের বিরুদ্ধে,ঠিক সে সময়ের পরিবেশটা যেন আজকের থেকে কোনভাবেই ব্যাতিক্রম ছিলনা। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ ইতিহাসের সাথে মিলিয়ে দেখুন পরিস্থিতির কি অপূর্বমিল!! ।

রাসুল (স)-এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দাসূচক কবিতা রচনা ও প্রচার করার জন্য কবিদের দিয়ে একটা ফ্রন্ট খোলা হলো। দায়িত্বে নিযুক্ত হয় আবু সুফিয়ান বিন হারেস, আমর বিন আস, এবং আব্দুল¬াহ্ বিন যাবারী। কারণ আরবের জাহেলি সমাজে কবিদের প্রচন্ড প্রভাব ছিল। তারা বলতে গেলে মানুষের মনস্তাতিœক প্রশিক্ষক ও দিকনির্দেশকের ভূমিকা পালন করতো। তাদের মুখনিসৃত প্রতিটি শব্দ মানুষের অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করতো এবং তা মুখস্ত করে করে প্রচার করা হতো। সে কালের কবিরা অনেকাংশে এ যুগের হলুদ সাংবাদিক, তথাকথিত সুশীল সমাজ,আর বুদ্ধিজীবিদের ন্যায় অবস্থানে ছিল। আজ যেমন একজন দক্ষ সাংবাদিক নিজের লেখনি ও পত্রিকার শক্তি নিয়ে কারো পেছনে লাগলে তার অনেক ক্ষতি সাধন করতে পারে, নিজের কুটিল ও তীর্যক মন্তব্য, অশালীন ব্যংগবিদ্রুপ, অশোভন সংবাদ, কিংবা বিকৃতভাবে ছাপানো, এবং বিভ্রান্তিকর শিরোনাম দিয়ে যেমন কোন দাওয়াত, আন্দোলন বা সংগঠনের জন্য সমস্যার পাহাড় সৃষ্টি করতে পারে, ঠিক তেমনি ভূমিকা পালন করতো আরবের কবিরা। সেখানে প্রতিটি অলিগলিতে মোহাম্মদ (স) ও তার আন্দোলনের দুর্নাম ও কুৎসা রটিয়ে বেড়ানো এবং ছন্দবদ্ধ গালি ও নিন্দাসূচক শ্লোগান দিয়ে পরিবেশকে বিশাক্ত করার কাজে একাধিক কবি নিয়োজিত ছিল। একজন ভদ্র পথচারির পেছেনে কুকুর লেলিয়ে দিলে যে দৃশ্যের অবতারণা হয়, মুহাম্মদ (স)-কে ঘিরে ঠিক সেই ধরনের দৃশ্যের সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্রই যখন কাজে আসছেনা তখন আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও প্রধান ব্যক্তিত্বকে হীন আক্রোমনের লক্ষ্যবস্ততে পরিণত করা হয়। ক্ষমতার মোহ এবং স্বার্থপরতার জঘন্য অপবাদ আরোপ করা হয় রসূল সা. এর বিরুদ্ধে। অপপ্রচারণার এই ধারা আরো সামনে অগ্রসর হতে থাকল। তাঁর পরিবারকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। শেষ পর্যন্ত নাশকতাবাদী শক্তি তার পরিবারের উপর শেষ আঘাতটা হানতেও দ্বিধা করলোনা। যা “ইফকের ঘটনা” তথা “হযরত আয়েশার বিরুদ্ধে অপবাদের কাহিনী” নামে বর্নিত আছে। কিন্তু মানবতার বন্ধু নবী মোহাম্মদ (স)-এর চরিত্র কবিদের অপপ্রচারের প্রভাবকে একেবারেই নিস্প্রভ ও পন্ডকরে দিচ্ছিল। এতে তারা আরো হতাশ হয়ে পড়লো। আটতে থাকলো নতুন নতুন ষড়যন্ত্র আর ফন্দি।

যে পদ্ধতিটি ভিন্নরুপে আজ সত্যপন্থীদেও উপর প্রয়োগ করছে পশ্চিমারা। তারা ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রা রুখতে চারটি কৌশল নিয়েছে। তা হলো : ১.ঝঃধমব ড়হব রং ঃযব পৎরংরং-সঙ্কট সৃষ্টি করা। ২.ঝঃধমব ঃড়ি রং ঃযব ফবসড়হরুধঃরড়হ ড়ভ ঃযব বহবসু ষবধফবৎ-নেতাকে দানব হিসেবে তুলে ধরা, ৩.ঝঃধমব ঃযৎবব রং ঃযব ফবযঁসধহরুরহম ড়ভ ঃযব বহবসু ধং রহফরারফঁধষ- ব্যক্তিগতভাবেও শত্র“ মনুষ্যত্বহীন বলে প্রচার করা, ৪.ঝঃধমব ভড়ঁৎ রং ঃযব ধঃৎড়পরঃু ংঃধমব- শত্র“র অত্যাচার ও নৃশংসতা ও নাশকতার গল্প তৈরি করা। যে গল্পের ডিজাইন পৃথিবীর সকল মুসলমানের জন্য অভিন্ন। স্থান-কালভেদে এর মুখোশ আলাদা আলাদা। অবশ্য বর্তমানে পশ্চিমাদের পরিকল্পনা অর্থবিত্তে পরিচালিত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কতিপয় বেতনভুক্ত তথাকথিত সুশীল নামধারী ব্যক্তি, সংস্থা ও মিডিয়া বাংলাদেশেও ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের বিরোধিতায় যথেষ্ট পারঙ্গম। ইসলামী দল ও নেতৃত্বের চরিত্র হননে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর উদ্দেশ্য শুধু ব্যক্তিকে কষ্ট দেয়াই না, বরং ঐ আন্দোলনকে হেয় করা ও তার ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করা। ঐ আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান প্রসারে সবাই কে আতংকিত করা এবং ঐ দলের জনপ্রিয়তা নষ্ট করা। কিন্তু প্রচন্ড বেগবান একটা স্রোতধারাকে বালির বাধ দিয়ে ঠেকানো যেমনি অ-সম্ভব। মক্কার বিদ্রূপকারীরা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিল যে, তারা নোংরা আবর্জনা দিয়ে যত বাধই দিচ্ছিল, এই দাওয়াতের তোড়ে খড়কুটোর মত তাদের সব ষড়যন্ত্র ভেসে যাচ্ছে এবং প্রতিদিন ক্রমশ কিছু না কিছু সামনেই অগ্রসর হচ্ছে আন্দোলনটি।

এই গোটা অভিযানই একটা সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত চক্রান্তের আওতায়ই পরিচালিত হচ্ছিল। যেমনি আজকে হচ্ছে শাহবাগে। আজকে ব্লগে,ইন্টরনেটে নামে বেনামে যেমনি রাসুল স: এর বিরুদ্ধে জঘন্য কটুক্তি করছে, ঠিক তেমনি সে সময়ে যখনি রাসুল (স) কোন রাস্তা দিয়ে যেতেন, অমনি লোকজন বলে উঠতো, ইনি নাকি সেই ব্যক্তি, যাকে আল¬াহ রাসুল (স) করে পাঠিয়েছেন? আংগুল নাচিয়ে নাচিয়ে ইংগিত করে করে মক্কার গুন্ডাপান্ডা ও সন্ত্রাসী লোকেরা বলতো, দেখ, আল্ল¬াহ নবী ও রাসূল বানানোর জন্য এই চালচুলোহীন লোক ছাড়া আর কাউকে পেলেন না। কি চমৎকার নির্বাচন! অনুরূপভাবে ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও কর্মীদের দেখিয়ে বলা হতো, এই নাকি সেই সব বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, যাদেরকে আল¬াহ আমাদের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে বাছাই করেছেন। তাদের অপপ্রচার ও হিংস্রতার বিভিন্ন আয়োজন ব্যর্থ ও নিস্ফল হয়ে গেলো, তখন বিরোধীরা অনুভব করতে আরম্ভ করলো যে, ইসলামী আন্দোলন একটা অজেয় শক্তি এবং তা অচিরেই দেশে একটা বিরাট পরিবর্তন ঘটিয়ে ছাড়বে। (মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ স:)

কিন্তু রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দীন প্রচার ও প্রসার করার কাজে অবিচল থাকলেন। যে আচরণটা একেবারেই নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল, সেটা হলো, তাঁর মহল্লার অধিবাসী বড় বড় মোড়ল ও গোত্রপতি তাঁর পথে নিয়মিতভাবে কাঁটা বিছাতো, তাঁর নামাজ পড়ার সময় ঠাট্টা ও হইচই করতো, সিজদার সময় তাঁর পিঠের ওপর জবাই করা পশুর নাড়িভুঁড়ি নিক্ষেপ করতো, চাদর পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিত, মহল্লার বালক-বালিকাদেরকে হাতে তালি দেয়া ও হৈ-হল্লা করে বেড়ানোর জন্য লেলিয়ে দিত এবং কুরআন পড়ার সময় তাঁকে, কুরআনকে এবং আল্লাহকে গালি দিত। এতসব য়ড়যন্ত্র আর বাধাঁ দমাতে পারেনি তার মিশনকে।

শেষ পর্যন্ত তারা যখন মূল দাওয়াতের বিরুদ্ধে যুক্তিতেও হেরে যায়, এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও সহিংসতার অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়, তখন তাদের আজন্ম লালিত ঘৃণা বিদ্ধেষ, গোয়ার্তুমি ও ইতরামি তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবল খুনী ও ডাকাতসূলভ মানসিকতা সৃষ্টি করে দেয়। এই পর্যায়ে এসে তারা ইসলামী আন্দোলনের নেতাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। হিজরী চতুর্থ সালের কথা। আমর বিন উমাইয়া যামরী আমের গোত্রের দুই ব্যক্তিকে হত্যা করলো। রসূল সা. এই হত্যাকান্ডের দিয়ত আদায় করা ও শান্তি চুক্তির দায়দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য বনু নাযীর গোত্রের লোকদের কাছে গেলেন। সেখানকার লোকেরা রসূল সা. কে একটা দেয়ালের ছায়ার নীচে বসালো। তারপর গোপনে সলাপরামর্শ করতে লাগলো যে, একজন উপরে গিয়ে তাঁর মাথার ওপর বিরাটকায় পাথর ফেলে দিয়ে হত্যা করবে। আমর বিন জাহ্হাশ বিন কা’ব এই দায়িত্বটা নিজের কাঁধে নিয়ে নিল। রসূল সা. তাদের দুরভিসন্ধি টের পেয়ে আগে ভাগেই উঠে চলে এলেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম, ২য় খন্ড)

কিন্তুকখন কখনো আমাদের মত দূর্বল ঈমানদারদেরও এই কথা মনে আসাটা অস্বাভাবিক নয়.এত পরীক্ষা কেন? মনে রাখতে হবে ঈমানের পরীক্ষা হয় দুঃখ-কষ্ট ও মুসিবতের সময়। তখন সে নিজে যেমন নিজের অবস্থাটা উপলব্ধি করতে পারে, তেমনি আন্দাজ করতে পারে যে, এই পথে সে কতোখানি অবিচল থাকতে সক্ষম। উদ্দেশ্যের প্রতি স্বাভাবিক ভালবাসা এ জীবন পণ করার সংকল্পে তারা বাস্তবিকই কতোটা প্রস্তুত। এর মধ্যে দিয়ে আসল ও মেকীর পার্থক্যটা অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। জীবনে জান ও মালের ক্ষতির আশঙ্কা হচ্ছে মানুষের সবচাইতে বড়ো দুর্বলতার মূল উৎস। আবার এমনি প্রত্যয় এবং ঈমানই হচ্ছে শক্তির মূল ভিত্তি। তাই এই দুর্বলতাকে দূর করার জন্যে সুস্পষ্টভবে জানিয়ে দেয়া হলোঃ-‘হে নবী! তাদেরকে বলে দিন যে, তোমরা যদি মৃত্যু বা হত্যার ভয়ে পালাতে চাও তো পালিয়ে দেখ; এরূপ পলায়নে তোমাদের কোনোই ফায়দা হবে না। তাদেরকে আরো বলে দিন যে, (তারা চিন্তা করে দেখুব) আল্লাহ যদি তাদের কোনো ক্ষতি করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তাদেরকে আর কে বাঁচাতে পারে? আর যদি আল্লাহ সিদ্ধান্ত নেন তাদের কোনো উপকার করার, তাহলে তাঁকে আর কে প্রতিরোধ করতে পারে? (তাদের স্মরণ রাখা উচিত যে,) আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে না পাবে পৃষ্ঠপোষক আর না পাবে মদদ্গার।’ (আহযাব : আয়াত ১৭)

এজন্য দরকার সাহসী লোকের । দরকার দৃঢ়সঙ্কল্প, সাহস, অপরিসীম সহনশীলতা এবং চরম আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। যে তার প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচার শক্তির অনুগত করে নিয়েছে এবং যার মধ্যে নেকি ও সততা এমন গভীরভাবে গেড়ে বসেছে যে বিরোধীদের কোনো অপকর্ম ও নোংরামি তাকে তার উচ্চাসন থেকে নিচে নামিয়ে আনতে সফল হতে পারে না। আল্লাহ বলেন-”আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে জেহাদ করেছে; আল্লাহর পথে-তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহ্র রাহে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ্ তাদেরকে ভালবাসেন”। বিরোধীদেও গালিগালাজ, মিথ্যা দোষারোপ, বেহুদা কথাবার্তা ও অপপ্রচারের মোকাবেলায় অধৈর্য হয়ে তোমরা এমন কোনো কথা বলতে শুরু করো না যা সত্য, সততা, ন্যায়, ইনসাফ, শিষ্টাচার, শালীনতা ও নৈতিকতাবিরোধী। আল্লাহ তায়ালা বাতিলদের এই আনন্দ উল্লাস সম্পর্কে বলেন-”তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবল¤¦ন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহ্র আয়ত্তে রয়েছে। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন-”তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ্ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জেহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্যশীল”।

মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী বইয়ে সে চিত্রটি তুলে ধরেছেন এভাবেÑধৈর্যের অর্থ হচ্ছে বাধা বিপত্তির বিরোচিত মোকাবেলা করা এবং শান্তচিত্তে লক্ষ্য অর্জনের পথে যাবতীয় দুঃখ কষ্ট বরদাশত করা। ধৈর্যশীল ব্যক্তি যে কোন ঝড়-ঝঞ্ঝার পর্বত প্রমাণ তরঙ্গাঘাতে হিম্মতহারা হয়ে পড়ে না। দৃঢ়তা ও সাহসিকতা ঈমানের অনিবার্য দাবি। আল্লাহ বলেন-”আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে। আল্লাহ বলেন-”হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবল¤¦ন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার।

কাফেররা তাদের কুফরির ব্যাপারে যে দৃঢ়তা-অবিচলতা দেখাচ্ছে এবং কুফরির ঝাণ্ডা সমুন্নত রাখার জন্য যে ধরনের কষ্ট স্বীকার করছে তোমরা তাদের মোকাবেলায় তাদের চাইতেও বেশি দৃঢ়তা, অবিচলতা ও মজবুতি দেখাও। আর তাদের মোকাবেলায় তোমরা দৃঢ়তা, অবিচলতা ও মজবুতি দেখাবার ব্যাপারে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করো”। মুমিনের সকল কর্মই মালিকের সন্তুষ্টির নিমিত্তে হবে। আল্লাহ বলেন-“যারা তাদের মালিকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য (বিপদ মসিবতে) ধৈর্য ধারণ করে, যথারীতি নামায কায়েম করে, আমি তাদের যে রেযেক দিয়েছি তা থেকে তারা (আমারই পথে) খরচ করে- গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে, যারা (নিজেদের) ভালো (কাজ) দ্বারা মন্দ (কাজ) দূরীভূত করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখেরাতের শুভ পরিণাম।” যারা আন্দোলনে শরিক হয়েছে, তাঁরা কোনো প্রকার ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা জাতীয় স্বার্থে নয়, বরঞ্চ কেবলমাত্র সত্যপ্রিয়তা এবং আল−াহ ও তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই এই ভয়াবহ বিপদ মুসিবত ও দুঃখ লাঞ্ছনার মোকাবেলা করেছেন। প্রাণান্তকর সংগ্রাম, চরম দ্বন্দ¡-সংঘাত, অবর্ণনীয় বিপদ মুসিবত, দুঃখ-কষ্ট, সীমাহীন হয়রানি, যাতনাকর আঘাত, অমানবিক কারা নির্যাতন, বিরামহীন ক্ষুধা আর দুঃসহনীয় নির্বাসনের মধ্যে দিয়ে মানুষ যখন দেখতে থাকলো, কিছু লোক দিনের পর দিন মার খাচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে। তখন স্বাভাবিকভাবেই এর আসল কারণ জানার প্রবল আগ্রহ পয়দা হতে থাকে তাদের মনে। এই লোকগুলোকে নিয়ে কেন এতো হৈ হট্টগোল?Ñএই প্রশ্নের জবাব পেতে উৎসুক হয়ে উঠে তাদের মন। অতঃপর তাদের অনুসন্ধানী দৃষ্টি যখন জানতে পারতো, আল−াহর এই বান্দাগুলো কোনো নারী, সম্পদ, প্রতিপত্তি বা কোনো প্রকার ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, বরং এক মহাসত্য তাদের কাছে উন্মুক্ত হয়েছে এবং তারা তা একনিষ্ঠভাবে আঁকড়ে ধরে আছে বিধায় এভাবে তাদের অত্যাচার করা হচ্ছে, তখন স্বভাবতই সেই মহাসত্যকে জানার জন্য তাদের মন হয়ে উঠতো ব্যাকুল। অতঃপর যখন লোকেরা জানতে পারতো, সেই মহাসত্য হচ্ছে “লা ইলাহা ইল−াল−াহ” আর এ জিনিসই মানবজীবনে এমন ধরনের বিপ−ব সৃষ্টি করে, এরই দাওয়াত নিয়ে এমন সব লোক উত্থিত হয়েছে, যারা কেবল এই সত্যেরই জন্য দুনিয়ার সমস্ত ফায়দা ও স্বার্থকে ভূলুণ্ঠিত করছে। নিজেদের জমি, মাল, সন্তান সন্ততিসহ প্রতিটি জিনিস অকাতরে কোরবানি করছে, তখন তারা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যেতো। খুলে যেতো তাদের চোখ। ফেটে যেতো তাদের মন মগজকে আচ্ছন্ন করে রাখার পর্দা। আর এই মহাসত্য তাদের হৃদয়ের মধ্যে বিদ্ধ হতো তীরের তীব্র ফলকের মতো। এরই ফলে সব মানুষ এসে শামিল হয়েছে এই আন্দোলনে। এই জন্য আমাদেও মনে রাখতে আন্দোলনের কর্মীবাহিনীর কোন ত্যাগই বৃথা যাবেনা।

হক ও মিথ্যার সংঘাতের যে বিধান আল্লাহ তৈরি করে দিয়েছেন তা অনিবার্য। তা পরিবর্তনের ক্ষমতা কারো নেই। সত্যপন্থীদের অবশ্য দীর্ঘকাল পরীক্ষার আগুনে ঝালাই হতে হবে। তাদের পরীক্ষা দিতে হবে নিজেদের সবর। সহিষ্ণুতা, সততা, সত্যবাদিতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আত্মোৎসর্গিতা, ঈমানী দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা, বিপদ-মসিবত, সমস্যা ও সঙ্কটের সুকঠিন পথ অতিক্রম করে তাদের মধ্যে এমন গুণাবলী সৃষ্টি করতে হবে যা কেবল মাত্র ঐ কঠিন বিপদসঙ্কুল গিরিপথেই লালিত হতে পারে। তাদেরকে শুরুতেই নির্ভেজাল উন্নত নৈতিক গুণাবলী ও সচ্চরিত্রের অস্ত্র ব্যবহার করে জাহেলিয়াতের ওপর বিজয় লাভ করতে হবে। এভাবে নিজেদেরকে উন্নত সবরকারী বলে প্রমাণ করতে পারলেই আল্লাহর সাহায্য যথাসময়ে তাদেরকে সহায়তা দান করার জন্য এগিয়ে আসবে। তাই শহীদের মিছিল যতো দীর্ঘ হবে, নির্যাতিতের আহাজারি আল্লাহর আরশকে যত প্রকম্প্রিত করবে এই আন্দোলনের বিজয় ততো সুনিশ্চিত হবে ইনশাল্লাহ। কবি ভাষায়-”পুন তখ্তে বসিয়া যে করে তখ্তের অপমান,/রাজার রাজা যে, তাঁর হুকুমেই যায় তার গর্দ্দান!/ভিস্তিওয়ালার রাজত্ব, ভাই, হয়ে এল ঐ শেষ;/বিশ্বের যিনি সম্রাট তাঁরি হইবে সর্বদেশ!/রক্তচক্ষু রক্ষ যক্ষ, সাবধান! সাবধান!/ভুল বুঝাইয়া, বুঝেছ ভুলাবে আল্লার ফরমান্?/এক আল্লারে ভয় করি মোরা, কারেও করি না ভয়,/মোদের পথের দিশারী এক সে সর্বশক্তিময়/সাক্ষী থাকিবে আকাশ পৃথিবী, রবি শশী গ্রহ তারা,/কাহারা সত্যপথের পথিক, পথভ্রষ্ট কারা!/ভয় নাহি, নাহি ভয়!/মিথ্যা হইবে ক্ষয়!/সত্য লভিবে জয়!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.