নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্প ছাড়া আর কিছু না

বলতে চাই না। লিখতে চাই।

রাগিব নিযাম

আমি সাদাসিধে, সাধারণ টাইপের মানুষের দলে। তবে রাজনৈতিক অপরিপক্ক্বতা আমার অপছন্দ।

রাগিব নিযাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

।। শান্ত নদীর তীরে ।।

২৮ শে মার্চ, ২০১৪ ভোর ৬:২৭

শান্তা আমার তালতো বোন। মানে আমার খালাতো বোনের দেবরের শালী। অনেক দূরের আত্নীয় হলেও আমার সাথে হৃদ্যতার সম্পর্ক। যদিও ভাব দেখাই আমরা একজন আরেকজনকে দু চোখে দেখতে পারি না। কিন্তু কোনো না কোনো একটা কারণে টান আছে...



সেই ক্লাস সেভেন থেকে ওকে চিনি। আমি তখন ক্লাস টেনে। স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়াতে হাই জাম্প দিতে গিয়ে কাদায় পড়ে যখন উঠি তখন আমাকে দেখে ও আর ওর বান্ধবীরা "মাইট্যা" ডেকে মেজাজ খারাপ করে। তার কিছুদিন পরেই আমার কলার ছোকলায় ও স্লিপ খায়। তারে নাম দেই "ছিলিপ"। সে বছরেই ওর বোনের সাথেই আমার তালতোর বিয়ে হয়।



তিন বছর পার হয়ে গেলো যখন তখনকার ঘটনা। আমাদের বাড়ীতে কি একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিলো। তালতোকে স্বপরিবারে দাওয়াত করা হয়েছে। আমি মেহমানদের ভেতরে ঢোকাচ্ছি এমন সময় "মাইট্যা" ডাক শুনে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। কিন্তু ঘুরে দেখি একটা রূপবতী দাঁড়িয়ে আছে। চোখ ফেরানো যায় না... আমিও ভেংচি দিলাম "ছিলিপ"।



সে বছর আমি বিবিএ ফার্স্ট সেমিস্টারে। আমার ফাইনাল পরীক্ষা যেদিন শেষ হলো বাসায় এসে দেখি আপা এসেছে সাথে "ছিলিপ" কে নিয়ে। আমাকে দেখেই "মাইট্যা" বলে খিক করে হেসে দিলো। আমি তো রাগে চেঁচিয়ে অস্থির। দুপুর বেলা ঘুমোতে গেছি দেখি মাননীয়া আমাদের আম গাছের উপর উঠে কাঁচা আম পাড়ছেন। ঘুম ঘুম ভাব চলে আসছিলো এমন সময় হই চই।

-অ্যাই শান্তা নেমে আয়!

-ভাবী নামবো কেমনে?! দেখেন না আমি এতো উঁচুতে উঠে গেছি, নামতেই ভয় হয়।

-দাঁড়া জিসানকে ডেকে দেই



গিয়ে দেখি একেবারে মগডালে তিনি বসে আছেন।



-ছিলিপ বান্দরের মতো লাগছে।

-এই জন্যই তো আপনি মাইট্যা। মাটিতে দাঁড়িয়ে দেখেন।

-আপা এই বদ মেয়েকে বল আমি গাছ থেকে নামাবো না। গাছের বান্দর গাছেই থাকুক। গেলাম আমি।

-মাইট্যার ঢং বাড়ছে। আমি নিজেই লাফ দিচ্ছি।



ঘুরেই আমি উপরে তাকালাম। সে যে অ্যাপ্রোচ নিচ্ছে বুঝে গেলাম। পড়বি তো পড় আমার গায়ের উপর।

-আহ! হতচ্ছাড়া পাজি মেয়ে! আমার কোমর গেলো রে...

-হাড্ডি না লোহা দিয়ে শরিরটা বানানো?! আপনি কি কাঁচা কাঠের গুড়ি চিবিয়ে খান?

-তোমার মত বাঁদর গাছেই মানায়।

-যান যান, মাটিতে গড়াগড়ি খান।



বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আপার দেবর ছোটোটার বিয়ে। গায়ে হলুদে গেলাম যখন তখন দেখি শান্তা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

-ছিলিপ কি খবর?

-ভালো আছেন মাইট্যা ভাই?

-নিজেরে খুব কাবিল ভাবো তাই না?

-আপনার মতো তো আর নই। মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া আমার কাজ নয়।

-হ... গাছের উপর বান্দর বেস্ট...

-ইইই...



ফাইনাল সেমিস্টারে উঠবো দেখি তিনি আমার ক্যাম্পাসে...



-মাইট্যা!

-হাহাহা, ওর ক্লাসফ্রেন্ডরা হেসে দিলো।

-তুমি যে ছিলিপ এটা তোমার ফ্রেন্ডরা জানে?

-কিরে শান্তা কি শুনি?

-আই ধুর পাগল ছাগল কি না কি কয়।

-আমি কিছু কইলেই পাগল হয়ে যাই?



বেরিয়ে এলাম ক্যান্টিন থেকে। ভালো লাগতেছে না। ওকে না দেখলে আমার কেমন জানি লাগে। যদিও খুশি আমার ক্যামপাসে তবুও আমার নাম ফাটানো আমার পছন্দ হয় নাই।



কিছু একটা করতে হবে।



-দোস্ত।

-হুম জিসান। রবি বললো।

-তোর না একটা গার্লফ্রেন্ড আছে শান্তাদের ব্যাচে?

-হ্যা ক্যান?!



প্ল্যান খুল বললাম।



-ও! এই কথা। দাঁড়া নিশাকে বলতেছি।



-হাই নিশা।

-আরে জিসান! ক্যাম্পাসে সবাই জানে আমি মেয়েমানুষ এড়িয়ে চলি।

দেখলাম শান্তা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।



-দোস্ত! তুই মাইয়াগো লগে কথা কস?

-ক্যান আমি কি ফিডার খাই।

-না মানে এমনি কোনো দিন দেখি নাই তো।

-আবে জুনিয়র মাইয়াগো লগে কথা কমু না তো কার লগে কমু ক?

-জিসান ওয়াচ আউট...



শান্তা গট গট করে এদিকেই আসছে।

-জিসান ভাই, আপনার সাথে কথা আছে।

- কি কথা?

-এখানে না, অন্যখানে।

-আমার সময় নাই।

-জাহান্নামে যান!



পরের দুদিন শান্তা ক্যাম্পাসে আসে নি।



-এই নিশা শান্তা কোথায়?

-কই জানি না তো। ওতো আমাদের সার্কেলের না। তাই বলতে পারছি না।



আপাকে ফোন দিলাম।

-আপা তুই কই রে?

-আমি তো শ্বশুরবাড়িতে আসছি।

-ওহ শীট!

-ক্যান? কি হইছে বল।

-থাক পরে বলবো।



গোটা সপ্তাহ এলো না।



পরের সপ্তাহে দেখা পেলাম। কেমন যেনো দুঃখী দুঃখী ভাব তার দু চোখে।

-ছিলিপ অ্যাই ছিলিপ

-জিসান ভাই সবসময় ফাজলামী ভাল্লাগে না।

-কি হয়েছে ম্যাডামের?

-সব কথা সবসময় বলা যায় না।

-আমাকে কি বলে দেখা যায় না?

-আপনার মতো বেক্কলকে বলে আমার স্ট্যান্ডার্ড মেইন্টেইন হয়ে যাবে।

-কি বলছো এসব?

-আপনি একটা বিরক্তিকর মানুষ।

-তুমি আমাকে সবার সামনে অপমান করছো। তাকিয়ে দেখলাম ওর, আমার ফ্রেন্ডরা জড়ো হয়ে গেছে।

-যদি বুঝতেন মনের কথা তাহলে হয়তো এসব হতো না। আমার সাথে আর কথা বলবেন না...



রবি এসে কাঁধে হাত রাখলো। শান্তার এরকম ব্যবহার অনেক পীড়াদায়ক হয়ে উঠলো আমার কাছে।

-দোস্ত তোর কাজটা করা উচিত হয় নাই। দীবার সুরে শাসন।

-কি করবো বল।

-আইডিয়া আছে তো।



"i am sorry- jisan", ভাঙ্গা ভাঙ্গা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছে কিছু ছেলে মেয়ে।

-অ্যাই এখানে কি হচ্ছে?

-স্যার আমি বলছি সব খুলে। রবি সব খুলে বললো।

-হাহাহা। ডাকো দুজনকেই ডাকো।



শান্তা এসে দেখে মেজাজ গরম চোখে তাকিয়ে রইলো।

-আপনার সমস্যা কি।

-আমার আবার কি সমস্যা?

-এসব করার কি দরকার ছিলো?

-আমার ইচ্ছে করেছে তাই করলাম।

-সব নিজের মন মরজি মতো করবেন তা তো হয় না।



নিজেকে বড্ড অভিমানী মনে হয়। সব কিছু ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে। আজ চারদিন ক্যাম্পাস যাই না।



ফোনে রিংটোন বেজে উঠলো। অপরিচিত নম্বর থেকে।

-হ্যালো।

-হ্যালো কে?

-আপনি ক্যাম্পাস যাচ্ছেন না কেনো?

-আমার ইচ্ছা।

-সব কিছু কি নিজের মেজাজে চালান নাকি?

-আমার দুনিয়া আমার রুলস।

-তা পরীক্ষা দিচ্ছেন না যে পাশ করবেন না তার খবর কি রাখেন?

-তোমার এতো মাথাব্যাথা কেনো?

-আপনার মা বাবা যে এতো টাকা খরচ করে ভার্সিটি পাঠায় তার কি কোনো মুল্য নাই আপনার কাছে?

-আমি ফোন রাখি। ভাল্লাগতেসে না।



ঠক ঠক। দরজা খুলে রবি, দিবা, নিশা রুমে ঢুকলো।

-অ্যাই হারামজাদা পরীক্ষা দিলি না ক্যান?

-এমনি।

-চল একটু ঘুরে আসি।

-কাল পরীক্ষা আর আজকে তোরা ঘুরতে যাবি?

-চুপচাপ রেডী হ নাইলে তোর নাম ফাটায়ে দিবো ক্যাম্পাসে।



কর্ণফুলীর তীরে এসে দাড়ালাম। হঠাৎ দেখি শান্তা সাথে ওর ফ্রেন্ডদের নিয়ে।

-তোরা আমারে এই মতলবে নিয়ে আসছিলি?

-জিসান ভাই কাম ডাউন।

-তোমার সাথে আমি কথা বলছি না।

-আপনি কি মনে করেন নিজেকে?

-কিছু না।

-তাহলে আমার সাথে কথা বলছেন না কেনো।

-আমার "i am sorry" এর মুল্য নাই তাই।

-কিন্তু পেছনে তো রিপ্লাই দিয়ে রেখেছি।



ঘুরে চোখ হা হয়ে গেলো।



"Jisan i love u"



"আই লাভ ইউ টু"।



"হেএএএএএ"...সমস্বরে সবাই চিল্লিয়ে উঠলো।



নদীর পাড়ে বসে আছি। নদীটা খুব শান্ত। আমার কাঁধে শান্তার মাথা। সামনে অনেক স্বপ্ন...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৩০

গোল্ডেন গ্লাইডার বলেছেন: ++++

২| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:২৫

রাগিব নিযাম বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.