নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্প ছাড়া আর কিছু না

বলতে চাই না। লিখতে চাই।

রাগিব নিযাম

আমি সাদাসিধে, সাধারণ টাইপের মানুষের দলে। তবে রাজনৈতিক অপরিপক্ক্বতা আমার অপছন্দ।

রাগিব নিযাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প-পাহাড়মানব [বাংলাদেশের অতি মানবেরা-১]

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:৪০

বন্দর নগরী চট্টগ্রাম।







অনবরত বৃষ্টি হলো গোটাদিন। এখন শান্ত হয়ে গেছে প্রকৃতি। কুসুমবাগ খুলশী এলাকায় পাহাড়ে অনেক ছিন্নমূলের বসতি। কারো টিনের চালা ঘর। কারো বা সেমি পাকা।







পাহাড়ের এপাশেই বাউন্ডারির ভেতর পাঁচতলা বাড়ি। নিচ তলায় ছোট্ট ছিমছাম একটা পরিবার। মা বাবার আদরের ছোট্ট তিমূর। স্কুল শেষে ঘরে ফিরে খেলছে বাড়ির পেছনে উঠানে। বৃষ্টি থেমে গেছে অনেক আগেই।







হঠাৎ... হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লো। পাহাড়টা জায়গামতো নেই। ভূমিধ্বসে পাহাড়ের উপর ছবির মতো বাড়ি গুলো নিমিষেই তলিয়ে নিচে ভেসে এলো।







"আম্মুউউউ" চিৎকার করে উঠলো তিমূর। মা জাহিনা এসে দেখেন উঠোনটা পুরো পাহাড় ধ্বসে ভরে গিয়েছে।







"তিমূর!!!" চিৎকার করে উঠলেন জাহিনা। যতনে আগলে রাখা ছেলেটা কোথায় গেলো?







বাবা... কোথায় তুই?







ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স এর গাড়ী পৌঁছে গেছে এর এক ঘন্টা পর। মাটি খুঁড়ে বের করলো তিমূর কে। কিন্তু অসহায়ত্বের দিকে তাকালেন অফিসার ভবনবাসীর দিকে। অনেক দেরী হয়ে গেছে।







কবর দিয়ে ফিরে আসার পঞ্চাশ দিন পরের কথা। তিমূরের কবরটা উঁচু হতে লাগলো। একটু একটু একটু করে উচ্চতায় তা সাতদিনে টিলার রূপ নিলো। দশম দিনে মাটি ফুঁড়ে একটা হাত দেখা গেলো। এরপর পা। এরপর মাথা সহ একটা শরীর বেরিয়ে এলো।







বিষয়টা এতো হটকেকের মতো গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়লো যে, টি ২০ ওয়ার্ল্ড কাপের খেলা ছেড়ে মানুষ লাইন দিয়ে সেই ফিগারটাকে দেখতে আসলো। তখনও আটকে ছিলো শরীরটা।







কিন্তু হায়, রাতের আঁধারেই তা কোথায় যেনো চলে গেলো।







ছেলের শোকে জাহিনা ভেঙে পড়েছেন। তিনি শোকে ম্যুহমান।







ডিং ডং।







দরজা খুলে হতভম্ব হয়ে গেলেন। তার সামনে ঠিক তিমূরই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু দুমাস আগেই না তিমূরকে কবর দিয়ে আসলেন?







অনেকক্ষণ হয় জ্ঞান ফেরে না জাহিনার।



"মা। মা।" কেউ একজন বলে উঠলো।



ঝাপসা চোখে তাকালেন জাহিনা। এ যে তার ছেলেই।







"বাবা তুই বেঁচে আছিস?" জাহিনা বললেন।



-মা আমি তো মরিনি। আমি তো বেঁচে আছি।







১১বছর পরের ঘটনা।



হায়ার মিডিয়ামে পড়া তিমূর শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। তার মা-বাবার মূখে প্রশান্তির হাসি। কোনো অলৌকিক কারণে বেঁচে ফিরেছে তাঁদের ছেলে।







"তিমূর। তোমার বেঁচে ফেরাটা মানুষের জন্য। সময় হয়েছে মানুষকে সেবা করার।" স্বপ্নে কেউ বলছে।







ঘুম ভেঙে উঠে গেলো হকচকিয়ে। তাহলে কি তিমূরকে কিছু করতে হবে?







-হ্যাঁ করতে হবে।



মাথা ঘুরিয়ে এক অদ্ভুত দর্শন লোক। দরবেশ মতন।







-আপনি কে?



-আমি কেউ একজন হবো। ধরতে পারো তোমার শিক্ষক। এখন থেকে তুমি শিখবে।



-শিখবো? হাহাহা। আমার তো অনেক শেখা হয়েছে। আপনি কি শেখাবেন?



-মানুষকে ভালোবাসতে শেখাবো।







সেই ১১বছর পর আবার ফিরে এসেছে বর্ষনমূখর দিন। আজ চট্টগ্রাম ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টিতে ধুয়ে। কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের এডমিট কার্ড নিয়ে বাসায় ফিরে তিমূর রুমে ঢুকলো।







কড় কড় কড়াৎ। কোথাও বজ্র পড়লো।







হঠাৎ মাটি থরথর করে কাঁপা শুরু করলো। আগের বাসায় না থাকলেও এর থেকে একটু দুরে ১১টি বছর একটি ভবনে ওরা ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছে।







-এই তিমুর কোথায় যাচ্ছিস?



-এইতো মা চলে আসবো।







টিঁউ টিঁউ টিঁউ।







সাইরেন বাজিয়ে ফায়ার সার্ভিস ঢুকছে। যে কোনো সময় ধ্বস নামতে পারে।







এবং অবশেষে তা হতে চলেছে।







"সবাই সরে দাঁড়াও।" গম গমে গলায় কে যেনো বলে উঠলো।







শরীরে কেমন যেনো একটা তাগিদ অনুভব করছে তিমূর। তার শরীরটা অদ্ভুত রকমের বড়ো হতে শুরু করেছে। ঘাস, লতায় পেঁচিয়ে ধরেছে।







থর থর। কাঁপছে পাহাড়।



হঠাৎ বিশ ফিট হয়ে গেলো তিমূর।







গুম গুম শব্দে ভারী পায়ে এসে পাহাড়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়ালো।







"সবাই সরে আসুন পাহাড় থেকে" দানবের মুখে হাসি। ১১বছর আগে যে তার পাহাড়ের মাটিতে মিশে গিয়েছিলো।







পরিচিত কেউ একজনকে এদিকে আসতে দেখা গেলো। এ আর কেউ নয়। আমাদের এজেন্ট রিশাদ।







তিমূরকে দেখেই রিশাদ বলে উঠলো, "হু আর ইউ জেন্টেলম্যান?"







"আমি...? পাহাড়মানব..." এক চিলতে হাসি ফোটালো তিমূর।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.