নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্প ছাড়া আর কিছু না

বলতে চাই না। লিখতে চাই।

রাগিব নিযাম

আমি সাদাসিধে, সাধারণ টাইপের মানুষের দলে। তবে রাজনৈতিক অপরিপক্ক্বতা আমার অপছন্দ।

রাগিব নিযাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিভীষিকা [সম্পূর্ণ ভৌতিক উপন্যাস]

১৫ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

এক



-আপনি সত্যি বলছেন?

-মিথ্যা বলবো কেনো?

-কি দেখলেন গত রাতে?

-আপনার ভাতিঝি ওয়ার্ডরোবের মাঝরাতে বসে খিক খিক করে হাসতেছে।

-ভাবী আপনি চাইতেছেন না আপনার বাসায় যাই...

-আপনাকে বাসায় আসার জন্যেই তো বলতেছি জিসান ভাই!!!



একটু থমকে গেলাম। শায়না বারবার সকাল থেকে প্যারা দিয়ে যাচ্ছে আমাকে ভাবীর ঘরের সমস্যার ব্যাপারে। আমাদের যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করে দিয়েছে। লাইজু ভাবী হলো শায়নার জেঠাতো ভাইয়ের বৌ। তাঁদের চার বছরের বাচ্চার কি জানি হয়েছে।

বাড়িময় নাকি ভুতুড়ে কারবার।



যখন পৌছালাম তখন প্রায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। শহরের শেষ প্রান্তে বাড়ীটা। ডুপ্লেক্স স্টাইলে বানিয়েছেন আমার সম্বন্ধী। তীব্র গরমে গায়ে ফোসকা পড়ে যাচ্ছে। আর এদিকে ছেলেখেলা হচ্ছে। ভাবী দাওয়াতের ছুতোয় নিয়ে এসেছেন।



-ডিংডং

-হাহাহা জিসান চলে আসছো? শায়নার ভাই আমাকে সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন।



ঘরে ঢুকতেই কেমন যেনো শীতল একটা স্রোত অনুভব হলো। শায়না আমার বাহু চেপে ধরলো।



-কি?

-আমার কেমন জানি লাগছে।

-উফফ তুমিও?!!

-একটা পোড়া গন্ধ পাচ্ছো?

-কই?

-আমি পাচ্ছি তো। ভাবী পাচ্ছো?



ভাবী একটু বোকা ভাব নিয়ে তাকালেন।

-কোথায়?

আমি একটু বিব্রত বোধ করলাম। এভাবে না বললেও বোধহয় ভালো ছিলো। দুদিনের ছুটিতে এসেছি এখানে। ঢোকার আগেই যদি এগুলো শুরু হয় তাহলে...



-ফুফাআআআআ



ছেদ পড়লো ভাবনায়। আমাদের ভাতিঝি তৃষা চলে আসলো।

-এই তোমার হাতে ওটা কি? শায়নার শাউটিং এ ছোট্ট হাত দুটির দিকে তাকালাম।

-এইটা? আমার খেলার বন্ধু দিয়েছে।



হতভম্ব হয়ে গেলাম।

-অ্যা-অ্যা-অ্যাই! এইটা কোথায় পেয়েছো?

-আমার #খেলার_বন্ধু আমাকে দিয়েছে।

-কোথায় তোমার বন্ধু?

-এইতো। বাম হাত দিয়ে সিঁড়িঘরের দিকে নির্দেশ দিলো। সেদিকে তাকালাম। পুরোই অন্ধকার।



ঘরে একটা গুঞ্জন উঠলো!!!



-ভাবী তাড়াতাড়ি একটা হুজুর ডাকেন।



ঠাস!!! একটা ফুলদানী আছড়ে পড়লো আমার ডানদিকের দেয়ালে।



-কেউ কোথাও যাবে না!!! তৃষা চীৎকার করে উঠলো।



ঠাস!!! আরেকটা আছড়ে পড়লো।



রক্তবর্ণ ধারণ করেছে তার ছোট্ট দুটি চোখ...



দুই



মনে পড়ে গেলো দু বছর আগের কথা। আমার পাশের বিল্ডিং এর তৃষার বয়সী একটা বাচ্চা ঠিক এমনই পরিস্থিতিতে পড়েছিলো। অবশ্য এলাকার হুজুর নিজেই হাজির হয়ে যাওয়াতে রক্ষা পেয়েছিলাম।



ভাইয়ার দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে তাকালেন। ঝাপ দিয়ে তৃষার ডানহাতের কানি আঙ্গুল ধরে আয়াতুল কুরসি পড়া শুরু করলেন।



অজ্ঞান হয়ে গেলো তৃষা। তাকাতে কষ্ট হচ্ছিলো। ছোট্ট একটা মেয়েকে অন্য জগতের অদৃশ্য কিছু গ্রাস করবে এটা ভাবতেই পারিনি।



হুজুরকে আনতে যতটুকু সময় লাগলো ততক্ষণে ঘরে খাবার দাবারের ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

রীতিমতো একটা মিলাদের আয়োজন হয়ে গেছে। হুজুর আসলেন।



-আমি ঘরে ঢুকতে পারবো না।

-কেনো?!!!

-এ ঘরে যেটা আছে তাঁর সাথে পারা আমার সম্ভব না, অনেক শক্তি এটার!!!

-কি বলেন?!!!



এরকম আশা তো করিনি।



-এখন কি করবো?!

-বড়ো হুজুর তো লাগবে!!!



মাথা তো খারাপ হয়ে গেলো!!! এই রাত্রে যদি উলটা পালটা কিছু ঘটে তখন কি করবো? তার মানে খারাপ কিছু জেঁকে বসেছে ঘরে। যদি কিছু করতে না পারা যায় তাহলে অনেক বড়ো কিছু হয়ে যেতে পারে। মানে... মৃত্যুর মতো বিভীষিকা...



আহহহহহহহহহহ!!!!!!!!!!! চীৎকার ভেসে এলো বাড়ির ভেতর থেকে। ভাবীর গলা মনে হলো।

-ভাবী! ভাবী! শায়না ভাবীকে অজ্ঞান অবস্থায় পেলো।

-কি হলো?! ভাইয়া বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।

-পানির ছিটা দাও তো।

-তৃষা... তৃষা... পানির ছিটায় ভাবী জেগে উঠে তৃষাকে খুঁজতে লাগলেন।

-ভাবী তৃষার কি হলো আবার?!!!

-তৃষা শুন্যের উপর ভাসছিলো...



হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম ভাবীর দিকে। শায়না ধাক্কা দিলো আমাকে।

-তাড়াতাড়ি যাও তোমরা দুজন!!! দাঁড়িয়ে কি দেখছো?!!!



এক পলকে ছুটে গেলাম আমি আর ভাইয়া। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম।



কোথায় তৃষা?!! কোথায়?!!!





"তৃষা মামণিইইই"...!!!



খুঁজে বেড়াচ্ছি মেয়েটাকে। এই রাত্রিরে এতো বড়ো বাড়িতে কোথায় খুঁজে পাই? এত্তটুকুন মেয়েটাকে আছর করেছে খারাপ কিছু।



খিল খিল খিল!



তৃষা?!



পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে এসে আমার চোখ হাঁ হয়ে গেলো! শিমুল গাছের মগডালে বসে পা দোলাচ্ছে। ভাবী আর শায়না দৌড়ে এলো।



"আম্মুউউ..." একটা শয়তানী হাসি ফুটে উঠলো মেয়েটার মুখে।



-হায় খোদা! বলেই ভাবী অজ্ঞান হয়ে গেলেন।

-ভাবী ভাবী!

-পানি আনো। তাড়াতাড়ি।



তিন



ভাবীর মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই ভাবী দৌড়ে ছুটে গেলেন গাছের দিকে।

-মা নিচে নেমে আয়!

-না! আমার কোনো ভয় নাই।

-কি বলিস এসব মা? ঘরে আয়।

-এখন না। একটু পর ডাকাত আসবে। তখন ঘরে যাবো।

-কি? ডাকাত?! সবিস্ময়ে তাকালাম একে অপরের দিকে।



দৌড়ে গেলাম ঘরে। সদর দরজা হাট করে খোলা। হঠাৎ পাঁচ-ছয় জন লোকে মুখে কাপড় বেঁধে ঢুকে পড়লো।



"কে আপনারা?" চেঁচিয়ে উঠলাম।



কিন্তু ছোরা দেখে চুপ হয়ে গেলাম।



-জিসান... শায়না, ভাইয়া আর ভাবী এদিকে এসে থমকে দাঁড়ালো।

-কারা আপনারা... বলেই ভাইয়া চুপ মেরে গেলেন।



"হুম" নেতাগোছের একজন মুখ খুললেন।

"উপরের তলায় তোরা দুজন যাবি।"



অস্ত্রের মুখে জিম্মি হয়ে আছি আমরা চারজন। একদিকে তৃষার টেনশন আরেকদিকে ডাকাতি।



হঠাৎ উপর তলা থেকে "আহহহ" "ইয়াল্লাহ" বলে চিৎকার...





-কি হলো? চমকে ভাবী আমার দিকে তাকালেন।

-কিছুই বুজলাম না। শায়না অবাক চোখে তাকালো আমার দিকে

-অই তোগো বাড়ির উপর তলায় কি অইসে রে? ডাকাতের নেতা সন্দিহান চোখে তাকালো আমার দিকে।



“অই রহিম্যা, আইনুল তোরা কই? নীচে আয়” ডাকাত বললো।



ঠক ঠক। ঠক ঠক।



“ঘুম পাড়ানী মাসী পিসি মোদের বাড়ি এসো, শরবত নাই, জুস নাই রক্ত খেয়ে যেও, হি হি হা হা” উপর থেকে খিল খিল একটা শব্দ ভেসে আসলো।



“অই কেডারে উপ্রে? নাইমা আয়”



ক্যাঁচ করে দরোজাটা খুলে গেলো।



“ঐ দেখা যায় তালগাছ, ঐ আমাদের গাঁ, ঐখানেতে বাস করে মামদো ভূতের ছা। হাহাহা” তৃষার অদ্ভুত ভয়ংকর গলা।



আসতে আসতে নেমে আসছে সে। চোখের চারপাশ কালো হয়ে গেছে তার। বীভৎস একটা গোঙানি দিয়ে যাচ্ছে সে। এটা পজেশন বা আছরের চূড়ান্ত মাত্রা।



শেষ সিঁড়িটায় থামলো।



একটা আঙ্গুল তাক করলো।



“তুই’ মনে হলো চার অ্যাম্পিয়ারের সাউণ্ড সেটআপ এ সমবেত সঙ্গীত কেউ গাওয়া শুরু করলো।

চিইইইইইইইই। কানের পর্দা ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে।



মনে হচ্ছে তার সাথে আরো চল্লিশ জন গলা মেলাচ্ছে।



চার



“তোর এতো বড়ো সাহস!!! আমার বাড়িতে ডাকাতি করতে আসছিস!!!!!!!”



-অই তুই কেডা? ডাকাত নেতা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জীবনে কখনো একটা ছোট্ট বাচ্চার মুখে এরকম ভয়ংকর ভাবে এতোগুলা গলা মেলাতে দেখে নি...



“আজকে তোর জীবনের শেষ দিন...”



আঙ্গুল দিয়ে ঈশারা করলো। ঘরে অনেক ডাকাত দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের বাইরে ও।



ধাম!!! বিশাল অয়েল পেইন্টিংটা তুবড়ে গেলো। পড়ে গেলো মাটিতে।



অবাক হয়ে গেলাম সবাই।

এর পর একটা ডাকাত চিৎকার দিয়ে উঠলো। “বাঁচান আমারে বাঁচান”।



মনে হলো কেউ তাকে ছেচড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।



এর পর আরেকটা ডাকাত শূন্যে উড়ে গেলো। ভয়াবহ এই চিত্র দেখার জন্য আমরা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।



ভাবী চেঁচিয়ে উঠলেন।

“তৃষা!!!!!!! মামণি আমার!!!! এবার থামো... তৃষা!!!!!!!!”



তৃষা ভাবীর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।



একটা ডাকাতের দিকে আঙ্গুল মুঠো করে হাত বাড়ালো।

“খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো, গরম এলো দেশে, ঘরে আমার কিচ্ছু নাই, বর্গি গেলো ফেঁসে”



আঙ্গুলের ঈশারায় ডাকাতটার ঘাড়টা মট করে ভেঙ্গে ফেললো...!!!!!!!!!!!!!!!!





গোটা বাড়িতে ঢি ঢি পড়ে গেছে। আমি পাঁচ বছরের একটা বাচ্চার বিধ্বংসী কাজ কারবার অবলোকন করছি। শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকা। ভাবী হায় খোদা হায় খোদা বলে একটানা চিল্লিয়ে যাচ্ছেন।



-এবার তুই!!

-অ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যা

-মর তুই!!!



ডাকাতের নেতাটা আর্তনাদ করে আপনাআপনি শূন্যে ভেসে উঠলো। তৃষা আঙুলের ইশারায় এপাশ থেকে ওপাশে আছাড় দিলো। মুখ ফেটে গেছে লোকটার। রক্ত বেরুচ্ছে তার বিভিন্ন ক্ষত থেকে।



গড়িয়ে পড়লো সিঁড়ি থেকে। শেষ সিঁড়িটায় এসে “এই বুড়া মহিলাটার গায়ে এতো গায়েবী শক্তি আইলো কই থিকা” বলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো।



হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো বাকী ডাকাতরা আমাদের দিকে। ওরা একটা কচি শিশু দেখতে পাচ্ছে।



-ভাবী! ভাবী!

-এই কথা বলো। ভাইয়া ভাবীর মুখ ধরে ঝাঁকি দিলেন।

-ভাবীর কি হলো?

-বুঝতেসি না তো। হঠাৎ চুপ হয়ে গেছে।



এরপর ভাবী একটা ভয়ংকর চীৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন।



-ভাবী! ভাবী!

-তৃষা কই!

-ভাবী ওতো রুমে চলে গেছে।

-আর ডাকাতরা কোথায়?

-সব পালিয়েছে তাদের নিজেদের লোকদের লাশ নিয়ে।

-আমার সংসারটা শেষ হয়ে গেলো।

-কিচ্ছু হয়নি। সব ঠিক আছে। ভয় পাবেন না। সাহস দিলাম।



পাঁচ



কোনোমতে মুখে কিছু দিয়ে শায়নাকে নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।



মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। এতো গরমে রুমের রুমের পরিবেশটা অনেক ঠান্ডা !!!



নেমে গেলাম সিঁড়ি বেয়ে নিচে। মনে হলো কি যেনো আমাকে টানছে।



দরজাটা খুলে বেরুলাম। বাইরেটা গরম হয়ে আছে। অনেক গরম। কিন্তু ভেতরে মর্গের মতো ঠান্ডা। একটা কটর মটর বিশ্রী শব্দ কানে এলো। এগিয়ে গেলাম ঝোপটার কাছে। যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।



দেখলাম তৃষা একটা সদ্য হত্যা করা মুরগীর ঘাড় মটকিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে কাঁচা রক্ত সহ!!!!!!!!!!!!!!





কতোক্ষণ জ্ঞান হারিয়ে পড়েছিলাম ঠিক খেয়াল নেই। তবে জ্ঞান ফিরবার পর দেখি সবাই আমাকে ঘিরে বসে আছে।



-এখন কেমন লাগছে? ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করলেন।

-মাথাটা ব্যথায় দপদপ করছে।

-শুয়ে থাকো। আমি বাজার করতে গেলাম। বলেই ভাইয়া বাজার করতে গেলেন।



ড্রইংরুমে গিয়ে দেখলাম তৃষা তার পুতুলগুলো নিয়ে খেলছে। বললাম,

-কি করো?

-দেখছেন না আমার বন্ধুর সাথে খেলি? বিরক্তিকর বড় বড়ো চোখে তাকিয়ে রইলো।



আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম।



-কার সাথে বললা? কোথায় ও?

-এইতো। বলেই সিঁড়ির নীচে ফাঁকা জায়গাটার দিকে নির্দেশ দিয়ে দেখালো।



হাঁ করে চেয়ে দেখার মতো আর কিছু ছিলোনা আমার। কেউ নেই বলতে একদম কেউ নেই। পুরো জায়গাটা শূন্য।



ঐ শূন্য জায়গায় যে থাকে তাকে "প্লে-মেট" বলা হয়। এরা বাচ্চাদের সাথেই থাকে।





আমি আতংকগ্রস্ত হতে একটুও সময় নেই না। পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে আমাকে বলছে তার প্লেমেট খেলছে কিন্তু রুমে আমি আর তৃষা এই দুজন ছাড়া আর কেউ নাই।



-তোমার খেলার সাথীকে তো দেখতে পাচ্ছি না।

-এই তো আছে আমার সাথে।

-এই ঘরে আমরা দু জন।

-না তিন জন!! এই দেখো...



ধাম!!!!!



খুব জোরে বাড়ি খেলো আমার সামনের দরজাটা!!!



একটা শীতল স্রোত বয়ে গেলো গেলো আমার গা বেয়ে।

-হয়েছে?

-তুমি আর খেলো না। রুমে গিয়ে শুয়ে থাকো।

-না এখন খেলবো।



ছয়



আমি আর কিছু বলতে চাইনি। পরে কি না কি হয়ে যায়। কিচেন হয়ে পেছনে উঠানে যাবো এমন সময় কি একটা যেনো আমার পেছন পেছন আসছে মনে হলো। এখনো দুপুর হয়নি এই যদি অবস্থা হয় তাহলে আর কি হয়ে থাকবে দুপুরে?।



উঠোনে অনেকটুকু জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বসার জায়গা। ভাবী ঘরের মেয়েকে দিয়ে কিছু খাওয়ার জন্য পাঠালেন। সাতটি ফুলুড়ি বেছে বেছে দিয়েছেন।



একটা মুখে দিলাম। ওটা খাওয়া শেষে দেখলাম বাটিতে পাঁচটা।



হতভম্ব হয়ে গেলাম।



আরেকটা মুখে দিতে না দিতেই তিনটায় নেমে এলো।



একটা নিলাম মুখে, আরেকটায় হাত দিতেই মনে হলো কেউ আমাকে শূন্যে তুলে আছাড় দিয়েছে।



ভাবী, শায়না দৌড়ে এলো।



ঘাড়, ডান হাতের কব্জি, বাম পা মচকে গেছে। গুরুতর ভাবে। কপালে এটাই ছিলো।



অ্যাম্বুলেন্স এলো। গাড়িতে উঠে কাছের হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম বাড়ির ভেতর কেউ একজন ঢুকছে বাড়ির ভেতর। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। বেশভুষা জরাজীর্ণ। আমার দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর রকম হাসি দিলো...





হসপিটালে পৌঁছেই ডাক্তাররা আমার পায়ের হাতের জখম সারতে ওষুধ পথ্য লাগাতে শুরু করলেন। প্লাস্টার করা হলো। কেবিনে নেয়া হলো।



হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি। শায়না গেছে ফার্মেসীতে। গোটা কেবিন জুড়ে নিশ্চুপ নীরবতা। সবাই কেমন যেনো এখানে। অ্যাটেন্ডেন্স,নার্স, ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে বড়ো ডাক্তার সবাই...



হঠাৎ রুম জুড়ে কেমন যেনো একটা শীতলতা লক্ষ্য করলাম। একটা অদ্ভুত শব্দ শুরু হলো। চিঁইইইইই করে আওয়াজ দিলো। বাড়ছে। ক্রমশঃ বাড়ছে। আওয়াজে কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়। চিৎকার করে উঠলাম।



সিস্টার দৌড়ে এলো।

-কি হলো?

-কি একটা যেনো রুমে ঢুকেছে।

-কোথায় কি?

-এখন নাই।



রাগান্বিত চোখে ফিরে গেলো। শায়না আসার পর আমি খুলে বললাম সব।

-সে কি? আমাদের পেছন পেছন এখানেও হাজির?

-আরে না মনে হচ্ছে অন্য কাহিনী।

-কি যে বলো না।

-এখন থেকে সাবধানে থাকতে হবে।

- তা যা ঠিক বলেছো।



বিকালে ভাইয়া ভাবী এলেন। সাথে তৃষা। সে রুমে ঢোকার আগেই দাঁড়িয়ে গেলো।

-আমি ঢুকবো না। এবার ডুয়াল ভয়েসে।

-মানে কি।

-এইখানে আমার চেয়ে শক্তিশালী কিছু একটা আছে।

-কে এটা? জিজ্ঞেস করলাম।

-ইনি একজন হাজার বছর বয়েসী জ্বিন।

-তো?

-এনার রাগ খুব বেশি। আপনাকে রুম ছাড়তে হবে।

-ছাড়বো না। কি করবে?



ধাম!!!!!!!!



দরজাটা বাড়ি খেয়ে ভেঙ্গে পড়ে গেলো।



সাত





আমি অনেকটা বিধ্বস্ত। আকস্মিক এই অদৃশ্য শক্তির আঘাতে চুরমার হয়ে যাওয়া দরজার দিকে তাকিয়ে আছি। কতটুকু ভয়ংকর শক্তি এর কাছে তা তো তৃষার উপর ভর করে থাকা কেউ একজন বলেছে।



শায়নার দিকে তাকালাম। মুহুর্মুহু আক্রমণে সে একেবারেই নরম হয়ে গেছে। বিচলিত, যেনো ঠাঁই পাবে না কোথাও। তার ছোট্ট পরিবার আমি, ভাইয়া, ভাবী এবং ভাতিজি তৃষার উপর অলৌকিক অদৃশ্য শক্তির প্রভাব যেনো সহ্য করতে পারছে না।



-সিস্টার!! বেল টিপলো।

-জ্বি বলুন? নার্স দৌড়ে এলো। দরজার এ হাল দেখে পুরো হতভম্ব। এখানে যে একটা ছোটোখাটো প্রলয় হয়ে গেছে তা কেউ খেয়াল করে নি কর্তৃপক্ষের।

-আমি কেবিন চেঞ্জ করতে চাই।

-বাট কেবিন তো খালি নাই।

-ক্যান ইউ গড ড্যাম ফাকিং হিয়ার মি?! আমি এই অসুস্থ রুমে আমার স্বামীসহ থাকতে পারবো। গেট আস ফাকিং আউট অব হিয়ার রাইট নাও!



ভাবীকে ঈশারায় চুপ থাকতে বললাম।

-সুইটহার্ট কাম ডাউন। তুমি অফিসের সাথে কথা বলো।

-ওকে।



ভাবী বসে আছেন। ফল কেটে খাওয়াচ্ছেন আমাকে। শায়না অফিস থেকে ভাইয়াসহ ফিরলো।

-সিস্টারের কথাই ঠিক। কেবিন খালি নেই।

-তো?

-একটু আগে কি হয়ে গেলো খবর আছে?



তাইতো! শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের একটা প্রচন্ড ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো।



এখন যে সন্ধ্যা নেমে আসছে...





আঁউউউ... দূরে কোথাও নিশাচর জন্তুটি ডেকে উঠলো। সন্ধ্যা নেমে এসেছে।



ভাবী বিকালেই রাতে খাবার রান্না করে এসেছেন। আমরা একসাথে খাবো বলে অনেক প্লেট, বাটি নিয়ে এসেছেন।



হাসপাতালে তাড়াতাড়ি খাওয়ার নিয়ম। যদিও আমি ৮.৩০ এর আগে খাইনা। শায়নার জোরাজুরিতে আমি আজকে তাড়াতাড়ি খেলাম। সদর দরজা দরজা ভাঙা তাই শায়না পর্দা টানিয়ে দিয়েছে। শায়না,ভাইয়া এবং ভাবীও আমার সাথে খেয়েছেন।

-আজকে রান্নাটা ভালোই হয়েছে যাই বলো। ভাইয়া বললেন।

-হুম মুরগীর ভূনাটা সেই রকম।



আআআআআ! ঝন ঝন শব্দে বাসন পড়ার সাথে ভাবীর চিৎকারের আওয়াজ পেলাম। ভাবী এলোমেলো জবুথবু হয়ে দৌড়ে এসে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন।



-ভাবী! ভাবী! শায়না পানি ছিটালো ভাবীর মুখে।

-আহ! কাতরাচ্ছে ভাবী।

-কি হয়েছিলো?

-থালা বাসন ধুতে গিয়ে দেখি একটা নার্স টয়লেটের ভেতর মাথা গাঁড়ানো অবস্থায়...



ভাইয়া দ্রুত ছুটে গেলেন...



"কোথায়? কিছুই তো নেই?!"



কি ছিলো ওখানে?



আট



টয়লেটে মাথা গাঁড়া নার্সের বিভীষিকা এখনও ছেয়ে আছে গোট পথ জুড়ে। কি যেনো আচ্ছন্ন করে ফেলছে কেবিনের পরিবেশ।





একটা অদ্ভুত ভয়াবহ বিষন্নতা চেপে আছে আমাদের। রাত হচ্ছে অশুভের প্রধান দ্বার। গোমড়া মুখে ভাবী উঠে দাঁড়ালেন। বিদায় নিবেন তাই আমাদের জানালেন কাল দেখা হবে।



রাত ৯টা এখন। একটা ডিমবাতি জ্বলছে। শায়না আমার পাশে বসে আছে। মাথার চূলে বিলি কেটে দিচ্ছে। চাঁদের আলো উকি দিচ্ছে জানালা ভরে। আমি প্রাণ ভরে তাকিয়ে আছি।



হঠাৎ কিছু একটা দেখলাম জানালার বাইরে। শায়নার হাত চেপে ধরলাম।

-কি?

-দেখো

-কি দেখবো?

-এই দেখো।

পর্দা হালকা ফাঁক করে দিলাম। দেখতে পেলো সে।

-ইয়াল্লা এইটা কি জিনিস?

-জীবনে কখনো দেখেছে বলে মনে হয়না। আমি বললাম।

-আমিও না। কেউ তিনতলার উপর ভেসে বেড়ায়?



আসলেই কি তাই? কারো সাধ্যি আছে এভাবে ভেসে বেড়ানোর? তাও তেতলার উপর?







চিঁইইইই। শব্দটা আবার শুরু হয়েছে।



আমরা দুজনেই কানে হাত দিয়ে রয়েছি। ঘটনার ঘনঘটায় হতবিহ্বল। কি হলো এটা? বিশ্রী একটা শব্দে ঘর ভরে গিয়েছে। ইঁদুর পঁচা গন্ধ। শায়না বেল টিপছে, কর্তব্যরত ডাক্তারের কোনো খবর নেই।

-আমি ডেকে আনছি।

-ভয় পাবে না তো?

-কিছু তো করার নাই।

-ওকে যাও।



নয়



শায়না চলে যাওয়ার পর অদ্ভুত একটা বিষন্নতা ঘিরে ধরলো কেবিনটাতে। চারপাশে চোখ বুলালাম। কেমন যেনো ভয়াবহতায় পরিপূর্ণ।



উঁউঁউঁ। হঠাৎ খেয়াল করলাম কাউচটার নীচে মাথা গুঁজে কে যেনো কাঁদছে।

-কে তুমি?

-উঁউঁউঁ।

-কে তুমি? এই কাঁদছো কেনো?



মেয়েটা মাথা ঘোরালো। এবার স্পষ্ট তার মুখ দেখতে পেলাম।



চোখ নেই কোটরে।



ঠোঁট নেই।



আমার চোখ দুটো নিস্তেজ হওয়ার আগেই দেখলাম দেহটা আমার দিকে ছুটে আসছে !!!



ভাঁআআআআআআ...



"স্যার। স্যার!!!'



আচমকা ঘুম ভেঙ্গে উঠে দেখি আমি মেঝেতে পড়ে যাবো।

নার্স মেয়েটা আমাকে ধরে রেখেছে।

আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

-শায়না কোথায়?

-উনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল আপনার রুমে নাকি উল্টাপাল্টা কি হচ্ছিলো সেটার অভিযোগ জানাতে গিয়ে করিডোরে উনাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

-মানে ও কি এখন ওয়ার্ড এ?

-না স্যার। কেবিনে। আপনাদের অন্য আরেকটা কেবিনে শিফট করা হচ্ছে।



অন্য কেবিনটাতে আমরা তিন দিন ছিলাম। তাই এরকম উল্টাপাল্টা কিছু হলো না।





দশ



বাড়ি ফিরেছি। ভাবীদের ওখানে কি হলো জানা যায় নি। বাসায় ফেরার দিন সন্ধ্যায় ফোন দিলাম।

-তৃষা'র কি খবর?

-বড়ো হুজুর এসেছিলেন।

-তারপর?!

-তারপর আর কি? বললেন যে জিনিসটা আছর করেছে সেটা অনেক শক্তিশালী এবং বয়স্ক কিন্তু ক্ষতি করে না।

-তো আপনি কিছু করবেন না আর?

-নাহ ও তো এখন সুস্থ। আছর করলেও টাইমলি খাওয়া দাওয়া করছে, ঘুরছে ফিরছে।

-তাই? আচ্ছা। আগামী বৃহস্পতিবার আসবো।

-ওকে ভাইয়া বাই।

-বাই।



রাতের ডিনার সেরে বিছানায় যাবো। এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠলো।

-কে আসলো এতো রাতে?

-সেটাই বুঝলাম না।

-খুলে দেখি... আরে কেউই তো নাই!!!

-ধ্যত্তেরি। ফাজলামো করছে কেউ।



বিছানায় শুতেই জানালার পাশে কটর মটর আওয়াজ!!!!!!!!!





-জি-জি-জিসান

-চুপ থাকো। ফিসফিসিয়ে বললাম।

-কি ওটা? শায়না ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠলো।



আমি নিজেই জানিনা। তবে যা হচ্ছে তা মোটেই ভালো হচ্ছে না। বিশ্রী একটা ইঁদুর পঁচা গন্ধ। পর্দা ফাক করে তাকালাম বাইরে। লম্বা একহারা চুল ঝুলছে।





-চোখ বন্ধ রাখো। ফিসফিসিয়ে বললাম।

-উঁ। চিকন স্বরে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো শায়না। অনেক ভয় পেয়েছে।



ক্যাঁঅ্যাঅ্যাঅ্যাচ। কাবার্ডের দরজাটা খুলে গেলো।



ডং ডং ডং।



ঘড়িতে এখন বারোটা!



-কা-কা-কাবার্ডের দরজা...

-চুপ! চাপা স্বরে বললাম।



ধাম!



ড্রয়িং রুম দিয়ে ঘরে ঢোকার দরজাটা খুলে গেলো!



যেনো মৃত্যু উপত্যকা আমার গোটা ঘর...!





শায়না ভয়ে বেহুঁশ হয়ে গেছে। সদর দরজায় কে এতো জোরে আঘাত করলো এই গভীর রাতে আমি ঠিক বুঝে উঠছে পারছি না।



বিছানা থেকে উঠে গেলাম। ঘামে গোটা ঘাড় ভিজে একাকার। আমি উঠেই সুইচটা জ্বালিয়ে দিলাম।



ঠুস!



বাল্বটা ফিউজ হয়ে গেছে!



বমি ঠেকাতে মুখে হাত চেপে ধরলাম। ইঁদুর পঁচা বিশ্রী গন্ধটা নাকে এসে ধাক্কা মারলো! তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে গন্ধটা।



লম্বা করিডোর ধরে ডাইনিং হলের দিকে এগোতেই ফ্রিজের দিকে চোখ আটকে গেলো।



একটা হাত ডিপ ফ্রিজের দিকে হাত বাড়াচ্ছে আর একটা একটা করে মাছ নিয়ে যাচ্ছে।



কৌতুহল নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। বাইরের বারান্দার লন থেকে অনেকটুকু চাঁদের আলোতে প্রতিফলিত হচ্ছে গোটা ঘর।



নিচে তাকাতেই দেখলাম বিশ্রী বানরমুখো একটা ছোট্ট শরীর তার হাত বাড়াচ্ছে আর মুহুর্তেই হাতটা লম্বা হয়ে ফ্রিজ থেকে টেনে মাছ কাঁচা চিবিয়ে খাচ্ছে!



বমির ওয়াক শব্দটা তার কানে গেলো। জ্ঞান হারাবার আগেই দেখতে পেলাম দেহটা এগিয়ে আসছে আমার দিকে।



এগারো





-এই জিসান উঠো তো। বেলা হয়ে গেছে সেই কবে। সোফায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো।

-কাল রাতে কি হয়েছিলো পরে?

-কি? কাল রাতে কি হয়েছিলো? :/



বলতে যাবো পরক্ষণে মনে পড়লো বললে ও ভয় পেয়ে যাবে।



-ইমাম সাহেব কি করবো এখন?

-কিছু বলতে পারছি না এখন। আপনাদের ঘরে এ প্রবলেম শুরু হয়েছে কবে?

-কিভাবে যে বলি? আমরা দিন দশেক সম্বন্ধির বাড়িতে ছিলাম। ওখানে বিস্তর উল্টাপাল্টা ঘটনা ঘটেছিলো।

-খুলে বলেন।



কিছুই বাদ রাখলাম না। খুলে বললাম সব।



-দেখেন যে জিনিসটা আছে ওটা খুব বিশ্রী টাইপের জিনিস। আপনাদের ভাগ্য ভালো যে আপনাদের দ্বারা ওদের ক্ষতি হয় নাই।

-ওদের মানে?!

-ওরা মানে। ঢোঁক গিললেন ইমাম। হাজিরা দিয়ে জানলাম মেডিকেলের মোড়ের গাছটাতে ওরা সাতজন বাস করতো। আপনারা আসার সময় গাছতলা দিয়ে এসেছিলেন। ঘর বন্ধ না থাকায় অনুপ্রবেশ করে ফেলেছে...



হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম ইমাম সাহেবের দিকে!!!





সন্ধ্যা ঘনাবার পর আমার ফ্ল্যাটটা নিদারুন ভয়ংকর বিষন্নতায় ভরে উঠে। চোখে অনাকাংখিত কিছু না দেখার ভয়ে গোটা ফ্ল্যাটময় আলোরা ভেসে বেড়ায় সারাক্ষণ। শায়নাকে কিছু বলিনি কারণ ও ভয় পেয়ে না জানি কি করে।



হাত দুটো ধরে ভবিষ্যতের কথা বলছিলাম আমরা। সাত সপ্তাহের প্রথম সন্তানটা তার পেটে এখন। বাবুর নাম কি হবে, বাবু আমার মতো কবি হবে না মায়ের লক্ষী ছেলে হয়ে চাকরি ধরে বিয়ে থা করবে সেটা নিয়ে খুনসুঁটি করছিলাম।



-এক সেকেন্ড। জিসান কিচেনে আওয়াজ হচ্ছে।

-হ্যাঁ? বাদ দাও। ওটা তোমার মনের ভূল।

-কিসের মনের ভূল। আজ দুপুরে তুমি আমাকে ডাইনিং হলে জড়িয়ে ধরার সময় ও আওয়াজ শুনেছি।

-কি যাতা বলছো? দুপুরে তো আমি বাসায় ছিলাম না।

-হআআআ! তাহলে যে গোসল করলো, ভাত খেলো, আমার গালে টিপ্পনি কেটে গেলো, ওটা কে?



হকচকিয়ে গেলাম। তার মানে ইমাম সাহেব ভূল বলেন নি। একটা বিপদের ভেতর হাজার বিপদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যে বিপদের অন্ত নেই!!!





বস্তুতঃ শায়নার কথা এড়িয়ে গেলেও ভয়কে এড়ানো সম্ভব নয় কখনো। ভয় মানুষের ইন্দ্রিয় ক্ষমতায় যথেষ্ট প্রভাব রাখে। হঠাৎ করেই আমার নিজের ঘরটা সম্পূর্ণ অচেনা লাগছে। অসহ্য যন্ত্রণায় যেনো হাজারটা মানুষ আর্তনাদ করে গোটা ঘরময়।



এতোটুকু ব্যবধানও নেই যেনো আমাদের দুজনের সাথে ওই কটা অশরীরীর। গ্রাস করে ফেলেছে যেনো বলয়ে।



হঠাৎ বাল্বটা অফ হয়ে গেলো।



ঝড় শুরু হয়ে গেছে যেনো বাইরে। প্রচন্ড শোঁ শোঁ শব্দে বাতাস বওয়া শুরু হলো।

-একি শুরু হলো?

-বুঝতে পারছি না। এ অসময়ে ঝড়?

-সেটাই তো বলি!



বারো



আচমকা অ্যালুমিনিয়াম গ্লাসটা হ্যাঁচকা টানে কে যেনো খুলে ফেললো।



ভেতরে হঠাৎ ঠান্ডা বাতাস ঢোকা শুরু করলো।

এতো বৈরি সে বাতাস, যা আগে কখনো টের পাইনি। সে বাতাসে সম্মোহনের সুর।

যেনো প্রতিশোধ নিচ্ছে। চামড়া ছিঁড়ে ঢুকে যাচ্ছে বরফের মতো!!!



ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে শায়না। চোখের ইশারা তার বারান্দার লনের দিকে।

একটা ছায়া, বিশাল তার পরিমাপ উড়ন্ত কাপড়ের মতো ঢুকছে সন্তর্পণে। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেলাম।



এরপরই যেনো অদ্ভুত কান্ড ঘটতে শুরু করলো।



ঠাস!!!



আমাদের বিয়ের বড়ো করে বাঁধানো ছবিটা নিচে পড়ে গ্লাসটা চুরমার হয়ে গেলো।







নিমিষেই লন্ডভন্ড হয়ে গেছে রাত। গত ৩০বছরের জীবনে ভয় শব্দটার সাথে অন্যরকম ভাবে অবগত ছিলাম। মা-বাবার শাসনকে, শিক্ষকের বেত্রাঘাতকে যদিও ভয় পেতাম এখন এই ভয় আক্ষরিক অর্থে পাল্টে গেছে।



হঠাৎ গোঁ-গোঁ শব্দে আমার কান ভারী হতে শুরু করলো। শায়নার এ অদ্ভুত আচরণ আমাকে স্তম্ভিত করে দিলো। আমি এতোটুকু বৈপরীত্যের মাঝে নতুন বিপদ দেখে একটু ভয় পেয়ে উঠলাম।

-শায়না, শায়না!

-গোঁ-গোঁ



ছুটে গেলাম ডাইনিং এ, বড়ো গেলাসে পানি নিয়ে ফিরে দেখি বিছানায় নেই। কোথায় গেলো ও? ভাবলেশহীন চেতনা কপর্দকশূন্য চোখে ভীতসন্ত্রস্তভাবে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম। কোথাও নেই সে। হঠাৎ চোখ গেলো বাড়ির সামনের রাস্তার ওপারে।



প্রকান্ড কড়ই গাছটার মগডালে আগুনের এক গোলক ছোটাছুটি করছে। আর পাশেই... আরেকটা ডালে শায়না জ্ঞানশূন্য অবস্থায় বসে আছে!



কিন্তু দরজা,জানালা তো বন্ধ! বারান্দায় রেলিং এ গ্রীল দেয়া...



কিভাবে সম্ভব...?!



পরিস্থিতি অনেক সময় বাধ্য করে নিষ্পলক চোখে চেয়ে থাকতে যখন একটা ঝড় বয়ে যায় জীবনের উপর। গতকাল রাতে যখন শায়নাকে আবিষ্কার করলাম বাসার বাইরে তালগাছে, মনে প্রাণে চাইছিলাম যেনো সে স্বাভাবিকভাবেই ফিরে আসে। হয়তো উপরওয়ালা ছিলেন বলেই আর আমার প্রার্থনা কবুল হয়েছে বলেই শায়নাকে ফিরে পেয়েছিলাম।



কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি এখনো, যদিনা উদভ্রান্ত অবস্থায় অশুভ শক্তির প্রভাবে আচ্ছন্ন আমার স্ত্রী আবার ঘরের বাইরে চলে না যেতো। শায়নাকে এই আছর থেকে মুক্ত করে আনতে চলে গিয়েছিলাম সেই ইমাম সাহেবের কাছে। উনাকে নিয়ে বাসায় ফিরতে দেখি বাসার সদর দরজা হাট করে খোলা!



-শায়না?! শায়না?!

-আপনার বিবিকে এইভাবে ছেড়ে বাইরে যাওয়া মোটেই উচিত হয়নি।

-এখন কি করবো?

-দাঁড়ান ব্যাপারটা দেখতেছি।



সেই অব্দি থেকে আধা ঘন্টা ঠায় তিনি তসবীহ হাতে নিয়ে জায়নামাজে বসেছেন। এভাবে অনেকক্ষণ নিশ্চুপ নিরবতায় কাটানোর পর জানালায় ঠক করে একটা জোরে বাড়ি খাওয়ার আওয়াজ হলো।

-আসসালামুআলাইকুম।



গমগমে ভারী গলায় কে যেনো সালাম দিলো।



-ওয়ালাইকুমআসসালাম। একটি বিশেষ প্রয়োজনে আপনাকে তলব করেছি।

-বিষয়টি টের পেয়েছি আমি। এই মহলের কর্তার বিবি নিখোঁজ রয়েছেন। কিছু দুষ্টু বান্দা উনার স্ত্রীকে বন্দী করে নিয়ে গেছেন।

-কোথায়?

-পটুয়াখালী।

-কিহ্? মাত্র দুই ঘন্টায়?

-হুম। অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে উনাকে ছাড়িয়ে আনতে।



তেরো





জীবন যখন বিভীষিকায় মগ্ন, পরাবাস্তবতার কুঠার যখন আপনাকে আষ্টেপৃষ্ঠে আঘাতে জর্জরিত করে ফেলেছে তখন আপনার সহায় বলতে কিছু থাকে না, থাকে আশায় মোড়ানো কিছু হতাশা। আজকে আক্ষরিক অর্থে আমার সাজানো সুখের সংসারটাকে তছনছ করে দিলো অশরীরীরা। নিয়তি এতোই নিষ্ঠুর হলো, শায়না, যে কিনা আমার সকল আনন্দের উৎস, সে অশুভ শক্তির সম্মোহনে মোহিত হয়ে চলে গেছে পটুইয়াখালীতে।





-ইমাম সাহেব, এখন?

-একটা কাজই করা যায়।

-কি?

-আমি পটুয়াখালীর একজন বড়ো হুজুরকে জানিয়ে দিচ্ছি।



আবার ধ্যানে বসে গেলেন। ঘন্টাখানেক চুপচাপ।



চোখ খুললেন। তাকালেন আমার দিকে।

-অবস্থা খুবই খারাপ।

-খুলে বলুন।

-বিয়ের আগে আপনার স্ত্রীর দিকে ওদের একজনের নজর ছিলো।

-তো?!

-সে অনুসারে এতোদিন খুঁজে পাচ্ছিলো না আপনার স্ত্রীকে।

-কেনো?

-ওরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলো আপনার স্ত্রীকে তখন নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আপনার আম্মা বিয়ের কিছুদিন আগেই ওকে এক বড়ো পীরের কাছ থেকে তাবিজ এনে দিয়ে পরিয়ে দেন। ভাগ্যের দোষে আপনার স্ত্রী সেটা গত সপ্তাহে হাসপাতালে রেখে এসেছিলো।

-এখন?

-এরা আবার সুযোগ পেয়ে উনাকে নিয়ে গেছে। তার উপর আপনার স্ত্রী গর্ভবতী।

-আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু করেন!!!

-আপনাকে আজ রাতের বেলা তিন রাস্তার মোড়ে কিছু ভালো খাবারের রান্না করে থালা বাটি সমেত রেখে আসতে হবে। তাহলেই ওরা ছেড়ে দেবে।



রাত ১২টা।



মোড়ের কাছে বসে আছি কি হয় দেখতে। শায়নার জন্য আকুল হয়ে উঠেছে প্রাণ।

হঠাৎ দেখলাম কালো মতন কিছু ছায়ার মতো কয়েকটা দেহ এগিয়ে আসছে মোড়ের দিকে। বাটির চারপাশ ঘিরে ঘূর্ণন শুরু করলো তারা। প্রবল ঝড়ের গতিতে চারপাশের গাছপালা গুলো শোঁ শোঁ করে দুলছে। একটা বীভৎস চেহারার কিছু একটাকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। ভয়ে পেছাতে শুরু করলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম দেয়ালে আমার পিঠ ঠেকে গেছে।





এরপর আর কিছু মনে নেই।



দুদিন পর জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম বিছানায় শোয়া আমি। নড়াচড়া করতে পারছি না। গায়ে প্রচন্ড জ্বর। শায়না আমার দিকে তাকিয়ে আছে।



-ঘুম ভাঙলো তবে?

-শনি কেটে গেছে। বিভীষিকা আর নেই।

-হ্যাঁ, বিভীষিকা আর নেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:০১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: খাইছে...

কি লিখলেন ভাই ;)

পুরাই ভৌতিক......মনে হইল হরর মুভী দেইখঅ উঠলাম ;)


১৬ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:২৮

রাগিব নিযাম বলেছেন: হাহাহা.. দোয়া করেন যেনো লিখে যেতে পারি আরো অনেক কিছু

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.