![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সাদাসিধে, সাধারণ টাইপের মানুষের দলে। তবে রাজনৈতিক অপরিপক্ক্বতা আমার অপছন্দ।
রেহানের স্কুল ছুটি হয় ১২টায়। নতুন আবাসিক এলাকায় নতুন বাড়িতে উঠেছে তারা প্রায় আজ চার বছর। দাদা গত হয়েছেন পাঁচ বছর। এরপর চাচাদের জোরাজুরিতে যৌথ প্রথা ভেঙে ঘরের বড়ো বৌ রেহানের মা, ঘর ছেড়ে চলে আসেন খুলশীতে।
আজ ঘরে ফিরে ডাইনিং এ ফ্রিজের উপর দুইটা নোট দেখতে পেলো।
বাবু, টেবিলে রাশান সালাদ, ইয়োর্গাট বানিয়ে রেখেছি। ফ্রিজ থেকে বিরিয়াণী নিয়ে গরম করে খাস। -মা
পুংটা, গার্ডেনের নতুন চারাগুলোয় পানি দিস পাঁচটায়। আমার আজ ফিরতে সাতটা লেগে যাবে। -আপ্পি
-এহ বিরক্তিকর তো। খাবো না, হোমওয়ার্ক করবো? এতো বড়ো বাড়ি, কেউ নাই। ভাল্লাগে না। কেউ যদি থাকতো সময় কাটতো। গজগজ করে রেহান একটা আপেল তুলে নিয়ে রুমের দিকে চলে গেলো।
হুম হুম হুম। গুনগুনিয়ে গান গাইছে। সবে বারোটা বাজে। সূর্য মাঝ আকাশে। বাগানের বড়ো গাছ গুলোর পাতা জৈষ্ঠ্যের বৃষ্টিঝরা বাতাসে দুলছে। টেবিলে ঠক করে একটা টোকা দিলো।
"ঠক!"
ঘুরিয়ে পেছনে দিকে ফেরালো মাথা।
-এই কে রে? রেহান ঢোঁক গিললো।
ঠক। রেহান টেবিলে টোকা দিলো।
ঠক। ঠক।
এবার একটু হাসলো রেহান। রিপ্লাই দিলো আবার।
ঠক ঠক ঠক।
-কে তুমি? এবার রেহান একটু সিরিয়াস হয়ে গেলো।
দু তিন সেকেন্ড পর আবার জিজ্ঞেস করলো।
-চাইছিলাম না দেখা দিতে। কিন্তু আজ দেখাই দিতে হলো। বাতাসে হঠাৎ করে একজনের অবয়ব দেখা গেলো।
-তুমি কে? ঘাবড়ে গেলো রেহান। হঠাৎ করে অচেনা কেউ তাদের বাড়িতে এসেছে, তাও কিনা হাতে একটা মার্জারিয়ান বিড়াল নিয়ে।
-আমি অমলেশ। অমদাদুও ডাকতে পারো। এতোদিন লুকিয়ে ছিলাম।
-তার মানে তুমি এতোদিন আমাকে জ্বালিয়েছো?
-আমি তোমাকে জ্বালাই নি। বরং যারা তোমাকে জ্বালাতে চেয়েছে তাদের শায়েস্তা করেছি।
-ও তার মানে আমার টিফিন চুরি করতে গিয়ে যে তাশরিক ব্যথা পেয়েছে হাতে, ওটা তোমার কাজ? আমার খাতা চুরি হওয়ার চারদিন পর তুমি ফেরত এনেছো?
-দেখো ছেলে, এতো উত্তর দিতে পারবো না। খুব খিদে লেগেছে। কিছু খাবো। অমলেশ ভ্রুঁ কঁুচকে তাকালো।
বিড়ালটা মিঁউ করে উঠলো।
-আমি লাঞ্চ করতে আরো দেড় ঘন্টা। এই নাও চকোলেট। রেহান এগিয়ে দিলো।
-উম্ম্। ভালো লাগে চকোলেট। তুমি খুব ভালো ছেলে।
-দাদু আমার সাথে খেলার কেউ নেই।
-এখন থেকে আমি তোমার সাথে খেলবো। ঠিক আছে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। রাহেলা ঘরে ফিরে দেখেন রেহান চরম প্রশান্তিতে কাউকে ধরে জড়িয়ে থাকার অঙ্গভঙ্গিতে ঘুমোচ্ছে।
অদ্ভুত তো।
-এই রেহান ওঠ।
-এব এম এম...দাদু ঘুমোবো তো।
-এই দস্যি আমি তোর মা। ওঠ কুম্ভকর্ণ।
ঘুম থেকে উঠে গেলো রেহান। চোখ ডলে ডলে লিভিং রুমে এসে বসলো।
-তোমার মায়ের অফিসের কলিগটা ভালো না।
-কিহ্। উফফ এভাবে ভয় না লাগালে হয়না? রেহান আঁতকে উঠলো।
এই রেহান কার সাথে কথা বলিস? -কিচেন থেকে উঁচু গলায় বললেন রাহেলা।
না মা, কেউ না। -রেহান বললো।
-আজকে তোমার মা বাসার জন্য অফিস থেকে বের হওয়ার পর কলিগটা হঠাৎ তোমার মায়ের কেবিনে ফাইল বক্স ঘেঁটেছে।
-আহ কি যে বলো না দাদু। রেহান বললো।
ডিং ডং।
-অ্যাই কিরে, খুলতে দেরি কেনো পুংটা?
-কই দেরি হলো?
-পানি দিয়েছিস বাগানে?
-দিয়েছি।
ঘুরে তাকিয়ে দেখে অমদাদু সোফায় পা ছড়িয়ে আরাম করছে বিড়ালকে নিয়ে।
-তুমি না... বলো তো বাবা কটায় ফিরবেন?
-তোমার বাবা আজকে সাতটায় ফিরবেন।
-এতো দেরী!
-জ্যাম এ আটকা পড়বেন। ছিনতাই ধরবে। কিন্তু গা বাঁচিয়ে চলে আসবেন ঠিকই।
-দিলে তো মেজাজটা খারাপ করে।
বিরক্তিভরে গজগজ করে রেহান ঘরে চলে গেলো। কেউ তার প্রিয় মানুষদের নিয়ে আগেই কিছু বলে ফেলুক সেটা সে চায় না। কি হয় এসব বলে?
ঠিকই আজকে দেরী হয়ে গেছে অনেক। উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় বাগানেই দাঁড়িয়ে রইলো। রেহানের বাবা নাজিম সাহেব হাঁপাতে হাঁপাতে গেট দিয়ে ঢুকে খিড়কি মেরে দিলেন।
-আরে হাঁপাচ্ছো কেনো?
-বজ্জাত গুলো! ওহ হো হো! বুক ধড় ফড় করছে রে রেহান।
অমদাদুর কথা তাহলে মিথ্যা না! একবার কথা তাহলে বলতেই হয়!
-এসব কি হচ্ছে শুনি?
-আগেই বলেছি। শুন্য দৃষ্টিতে গেটের ওপাশে তাকিয়ে রয়েছে।
-ওরা নাকি এখনও আছে।
-ছিনতাইকারী? থাকুক না সমস্যা কি? ওদের বারোটার তেরোটা বাজিয়ে দেবো হুম।
-মানে?
-এই দেখো।
বলতেই ছির ছির করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। ছিনতাইকারী দুজন আগ বাড়িয়ে পাশের মুদি দোকানে ঠাঁই নিতে যাবে এমন সময় ধপাস!
-আল্লাহরে, ও মতিন্যা! আমিতো শ্যাষ।
-হ রে মশু। মশিউরকে সে সংক্ষেপে মশু ডাকে।
-না আইজকাই শ্যাষ। অহন থিকা ডাকাতি করুম।
-হা হা হা।
-হাসোস ক্যা?
-তুই টেংরায় কই ডাকাতি করবি?
-বুইড়া যে বাড়িত ঢুকলো।
মতিন সিরিয়াস হলো।
আসলেই ভালো বুদ্ধি। এই বাড়িটাই ডাকাতি করতে হবে।
দুদিন ধরে প্ল্যান চলছে। মতিন মশিউর গুছিয়ে নিচ্ছে সবটুকু। এটা জীবনের প্রথম ডাকাতি। তাই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে।
আজ শুক্রবার। এ সন্ধ্যায় আলসেমিতে ধরেছে রেহানের বাবাকে। বড় কেদারায় গা এলিয়ে দিয়েছেন। হঠাৎ খট করে হুড়কো খুলে গেলো তাঁর ছোট্ট বাড়ির গেটের। বইটাকে কোল থেকে নামিয়ে উঠলেন। তাকালেন চারপাশে বাগানের দিকে। কই কেও নেইতো। আজব!
-মশু তারটা দে তো।
-এই ল।
-হুম। আওয়াজ করবি না একদম।
-হুন তর কিন্তু ডিমোশন অইছে। আমারে কইছছ ডাকাতি করবি। এহন দেহি চুরি করতে আইছোস।
-চোপ শালা। মতিন চাঁটি মারল মশিউরের মাথায়।
সন্তর্পণে ঢুকলো ঘরে। রেহানের বোন ঈশিতা ডাইনিং এ প্লেট সাজাচ্ছিলো। আজকে ওর হবুশ্বশুর আসার কথা। ওদের দেখে থমকে গেলো। অ্যাঁই বলে চিৎকার করতে যাবে, অর্ধেকটায় মতিন মুখে কাপড় গুঁজে দিলো।
-ফম্ফফম্ফ
-কি কস তর বাপ কই?
-ফম্ফফম্ফ।
বাড়িতে রেহান আর তার মা নেই। রেহানের বাবা আলসেমি করে শুয়ে আছেন আর ঈশিতা বন্দী মতিনের হাতে।
খটখট।
-গেইট খুলছে কেডা?
-আমি তো...
মশিউরের চোখ হাঁ হয়ে গেছে। সিলিং ফ্যানের উপরে বসে, একটা লোক পা দুলিয়ে দুলিয়ে আপেল খাচ্ছে।
-কক্কি ওইডা? মশিউর চিল্লিয়ে উঠলো।
-কই?
ঈশিতার চোখও স্থির হয়ে গেছে। মানুষ নেই দোলনার মতো দুলছে সিলিং ফ্যান।
টরররররং। আপনাআপনি ঘোরা শুরু করলো ফ্যানটা।
ঠাস! মতিনের গালে জোরসে কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিলো মশিউর।
-এই কি করলি এইডা? মতিন চেঁচিয়ে উঠলো।
-আমি করি নাই এইডা। হতভম্ব হয়ে গেছে মশিউর।
আওয়াজ শুনে রেহানের বাবা দৌড়ে এলেন। চোখে বিস্ময় ফুটে উঠলো। এযে সেদিনের ছিনতাইকারী দুটো।
তেড়ে আসতে যাবে মতিন এমন সময় দড়াম করে আছাড় খেলো।
হাহাহা করে হেসে উঠলো মশিউর।
-আঁআঁআঁ। মশুর জুলফি ধরে কে জানি জোরে টান দিলো। বেমক্কা উষ্ঠা খেয়ে তার গোবদা গাবদা শরীর সহ পড়লো মতিনের উপর।
ওদিকে আছাড় খেয়ে মতিনের কনুই উপর করা ছিলো। মশু পড়লো তার মুখ নিয়ে কনুইয়ের উপর।
-গেছিরে! দ্বিতীয় দফায় চিল্লিয়ে উঠলো মতিন। মশিউরের ও দাঁত পড়ে গেছে দু তিনটা বাড়ি খেয়ে কনুইয়ের সাথে।
বাবা এসে ঈশিতার মুখ-হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিলো।
-বাব্বাহ! এগুলো বুঝি ছ্যাঁচড়া? ঈশিতা মুখ খুলতে পেরে বলতে লাগলো। প্রথমে যেভাবে ধমক লাগালো! ডাকাতের বেশ ধরে ছ্যাচড়া চুরিতে শেষ মেষ?
-আরে ঠিকমতো যদি ছিনতাইও করতে পারতো।
ঘরে ফিরে এসেছে রেহান ও তার মা।
-আরিব্বাপস একি কান্ড?!
-সে কিছু না। পেছন থেকে এসে একজন হাত রাখলো রেহানের কাঁধে। অমদাদু। মিটিমিটি হাসছেন। বলে চলেছেন, ভালো না হলে পাতি ছিনতাইকারীদের কি করে পথে ফেরাতে হয় তা আমার জানা আছে। (সমাপ্ত)
©somewhere in net ltd.