নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্প ছাড়া আর কিছু না

বলতে চাই না। লিখতে চাই।

রাগিব নিযাম

আমি সাদাসিধে, সাধারণ টাইপের মানুষের দলে। তবে রাজনৈতিক অপরিপক্ক্বতা আমার অপছন্দ।

রাগিব নিযাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

এজেন্ট শামীম- সুতোর গিঁট

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩১

প্রতি বৃহস্পতিবার বরাবর সাড়ে চারটায় একটা কার্গো ক্যারিয়ার চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়। কোথায় যায়, কি নিয়ে যায় সেটা কেউ জানেনা। ভীড়ের ভেতর অন্যান্য সাধারণ কার্গোর সাথে মিশে সোজা একটা পথ ধরতে থাকে। যদিও বড়ো না আয়তনের তুলনায় তারপরও চট্টগ্রামে অনেক মানুষের বাস। সেইসব মানুষের ভেতর অনেক রকমের মন, প্রকৃতির মানুষ বাস করে।

বলছিলাম কার্গোর কথা। ক্যারিয়ারে যে বিষয়টা সবচেয়ে লক্ষণীয় তা হলো দশ ফিট সমান উচ্চতা এর এবং এর ভেতরটা মারাত্নক রকমের শক্ত স্টিল বডি দিয়ে তৈরি। চট্টগ্রামের যে এলাকা থেকে এটি বের হয় সেটি হলো আকবর শাহ এলাকা। এই জায়গায় হেন মানুষ নেই যে বাস করে। তবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষ বাস করে বেশি। আর সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হলো এখান থেকেই অনেক সময় নারী পাচার হয়।

মুখ থেকে সিগ্রেটের শেষ ধোঁয়া টেনে ফেলে দিলো শামীম। পরিচিত এক বড় ভাইয়ের কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খুঁজে ফিরিয়ে আনতে হবে।

শামীম খুব সন্দেহমূলক কিছু না দেখলেও এলাকায় ক্লু খোঁজার চেষ্টায় মগ্ন। অনেক ধরণের সন্দেহভাজন লোকের আনাগোনা এই জায়গায়। বিধ্বস্ত পোড়া একটা প্রগতির সামনে দাঁড়িয়ে একটা বেনসন লাইট ধরলেন শামীম। মোটা ফ্রেমের চশমার ফাঁক দিয়ে শরতের সকাল দশটার পরিবেশকে দেখতে লাগলেন। যেহেতু রেলওয়ে সংলগ্ন এলাকা, মানুষজন স্বাভাবিকই নয়টার আগেই চলে যায়। আর যারা বেসরকারী তারা হেলেদুলে চলে যায় দশটার আগে।

বৃষ্টি শেষ হয়েছে রাতে। চৌদ্দ ঘন্টা আগের পুরনো বৃষ্টিতে ভিজে গেছে মাটি, পথ,ঘাট। হঠাৎ একপাশে ঘেঁসো জমি দেখে থমকে দাঁড়ালেন শামীম। ঘাস মাড়িয়ে সামনে এগোতে শুরু করলেন। তারপর আবার পেছনে। আবার সামনে। আশেপাশের লোকজন অবাক দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করলো। থপ করে বুট দিয়ে মাটিতে চাপড় দিলেন। মাটি আর রাস্তা যেখানে সমান্তরাল মিশেছে সেখানে দাঁড়িয়ে গেলেন। দুটো জুতো আর একটা হিলের ধস্তাধস্তির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে...

জুতোর ছাপ দেখে যা বোঝা গেলো তা হলো জুতো গুলো অ্যাডেক্স ধাঁচের। তারচে বড়ো কথা কথা জুতোর ছাপগুলো অনেকটুকু দেবে গেছে বলে সামনের দিকে জোরালো ও ও বাঁকাটে গড়ন স্পষ্ট হয়ে গেছে। পার্থক্য বলতে এটুকু দুই জোড়ার সাইজ আলাদা। একটা ছোট আরেকটা বড়ো।

এদিকে হিলের দেবে যাওয়া অংশে তেমন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না কিছু। তবে বিশেষত্বে আপাদমস্তক অপহৃত নারীটির ভয়জনিত আচরণ ফুটে উঠেছে প্রকটভাবে।

ডায়রি টুকে নিয়ে মোটা ফ্রেমের উপর দিয়ে ইতি উতি চাউনিভরে তাকালেন শামীম। তারপর একটা কাঠি নিয়ে আলগা কিছু মাটি নিলেন স্যাম্পল হিসেবে তিন জোড়া জুতোর। যাই হোক শামীমের হাত থেকে যে তাদের নিস্তার নাই তা মনে মনে ঘুরতে লাগলো শামীমের। ধরা পড়তেই হবে। এবার মাথা ঘুরিয়ে সামনের জমিন দেখতে লাগলেন তিনি। খুব সন্তর্পনে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে খুঁজতে লাগলেন সূত্র।

একটা সিগারেটের টুকরো!

আরও একটু সামনে গেলেন।

লম্বা চুল!

পকেট থেকে একটা রোলওভার ট্রেসিং ডিভাইস বের করে রাস্তার মাঝখানে রাখলেন। হাতে থাকা একটি বাটনে প্রেস করে দিলেন। হঠাৎ রোলওভার দৌড়াতে শুরু করলো। দৌড়ের উপরে চলতেই থাকলো। পেছনে দু তিনটা পিচ্চি দৌড়ে চললো। রোলওভারটি তা দেখে খ্র্যাং করে তার গা থেকে শলাকা বের করে দাঁড়িয়ে পড়লো। "আল্লাহগো" বলে বাচ্চাগুলো পালানো শুরু করলো।


বাইক যতটুকু না সামনে যাচ্ছিলো পথে পথে কোরবানির গরুর হাটের কারণে গতি মন্থর করে ফেলেছেন শামীম। ওদিকে রোলওভার পাগলা কুকুরের মতো দৌড়ে চলেছে। একবার কার্গোর চাকার নিচে আরেকবার ট্রাকের নিচে বাসের নিচে পড়তে পড়তেও কিছু হলো না। কারণে বিশেষ ধাতুতে গড়া এই ডিভাইসটি খুব শক্ত। হঠাৎ চাঁইই করে একটা ফুলঝুড়ির সৃষ্টি হলো আকাশে। এতো ব্যাপক পরিধির আতশবাজির মতো বিষয় নয়, ছোট্ট পাঁচটা বিন্দু সৃষ্টি হয়েছে। শামীম যা বুঝার বুঝে গেলেন। পাঁচটার ভেতর একটা লাল বিন্দু একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে লাগলো। এর মানে অপরাধী জায়গা বরাবর আছে। স্পীড বাড়িয়ে একটা হেলান দেয়া ঠেলা গাড়ির উপর উঠে গেলেন। শূন্যে উঠেই বাইকের স্প্রিং বাটনে ক্লিক করলেন। পর মুহুর্তেই ব্লিং করে চাকার নিচে টায়ার গায়েব হয়ে একটা অদ্ভুত যন্ত্রে পরিণত হলো বাইকটা। চারকোণা বাক্সের ভেতর বসে খুটখুট করতে লাগলেন শামীম। মাটি ফাঁক করে বাক্সটা নিচের দিকে নামতে লাগলো।

জায়ান্ট ক্র্যাকার!!!

বিক্ষিপ্ত অবস্থায় যতটুকু না পাঁচটা বিন্দু ছড়িয়ে পড়ছিলো তার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো লাল বিন্দুটার প্রতিফলন অত্যুজ্জ্বলভাবে ছড়িয়ে পড়ছিলো চারপাশে। এই একটা জিনিসই বেশিরকম মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে যা শামীমের চোখ এড়ায় নি। যার কারণেই খুব তাড়াতাড়ি বাইককে কনভার্সনের দিকে নিয়ে গেছেন। জায়ান্ট ক্র্যাকারের মূল বৈশিষ্ট্যই হলো মাটি খুঁড়ে নিচের দিকে চলে যাওয়া যা নিচের মাটি উপরের দিকে টেনে তুলে। ফলে মাটির গভীরে যাওয়া আরও সহজতর হয়। অবশ্য গন্তব্যস্থলেও সঠিক সময়ে যাওয়া সম্ভব হয়। কারণ লক টাইমিং প্রোটোকল সিস্টেম সেট করা থাকে। এই পেটেন্টটা বাংলাদেশ আর্মির হাতে তুলে দেওয়ার কথাবার্তা চলছে যার কারণে এসপিওনাজ মহলের বাসিন্দাদের অনেক কম সময়ে পৌঁছে যাওয়ার মতো সুবিধা হবে।

কুর কুর ঘ্যাঁ ঘ্যাঁ আওয়াজ তুলে ক্র্যাকারটি প্রায় পৌঁছে গেছে জায়গামতো। মাটির উপর তুলতেই তা আবার বাইকে পরিণত হলো।

এবার...

গলা থেকে দলা পাকানো কফ খুফ করে টেনে মাটিতে ফেলে দিলেন শামীম। তারপর টার্গেট করা বাসা বরাবর রওনা হলেন। হাতে একটা ইলেক্ট্রিক শকওয়েভ গান। এই গানের বৈশিষ্ট্য হলো ১০মিটার দুর থেকে লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করে বৈদ্যুতিক শক দিতে পারে। ছোট্ট একটা ডোর লক চার্জ ডিটোনেটর লাগিয়ে তিন কদম পেছনে চলে আসলেন। তারপর কনসোলে চিপ দিতেই দরজার হাতল ও লকার দুমড়ে গেলো বোমার আঘাতে। সামনে দাঁড়িয়েই একজন কিডন্যাপারকে দেখতে পেলেন। শকওয়েভ গানে ট্রিগার টিপে দিলেন। সাথে সাথে ভিকটিম মৃগী রোগির মতো খিঁচতে শুরু করলো। তারও একটু পরে একজন ইয়া লম্বা কিরিচ নিয়ে দৌড়ে আসলো। পকেট থেকে একটা বোতল বের করে ছ্যাঁৎ করে স্প্রে করে দিলেন শামীম। বাবারে বলে আহত কুকুরের মতো চিৎকার করে উঠলো লোকটা। সামনে বাড়িয়ে একটা রুমের দিকে যেতেই দেখা গেলো সেই অপহৃত মেয়েটা...

শামীম মেয়েটার বাঁধন খুলে দিয়ে সাথে সাথে সেন্টার পয়েন্ট হসপিটালে তাকে পাঠিয়ে দিলেন অ্যাম্বুলেন্স এ। অবশ্য সব রকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিলোই। তার চে বড়ো বিষয় যতোটা আশা করেছিলেন তার আগে আগেই শামীম জায়গা মতো পৌঁছে গেছেন। তাই বলেই এতোটা ক্ষতি হয়নি।

টিট টিট টিট টিট!!!
ভয়ানক সতর্ক বার্তা!!!

স্মার্টফোনটা অন করেই নিউজ চ্যানেল স্ট্রিমিং করে দেখলেন ভয়াবহ বিস্ফোরণ! দ্রুত বাইক চালু করে ছুট লাগালেন বাইকের দিকে। দৌড়ের উপর রেখে ধ্বংসের ঘনত্ব নির্ণয় এর ডিভাইসটা নেয়ার জন্য মাঝপথে হেডকোয়ার্টার থামলেন। তারপর তার প্রাইভেট এয়ারফিল্ড যেটা বন্দর এলাকায় সেখানে গিয়ে প্লেনে উঠে ঢাকার দিকে রওনা দিলেন। ঢাকায় একটা এয়ার ফিল্ডে নেমে পড়লেন।


একটা ফাষ্টফুড খাবারের দোকানের সামনে বসে আছেন কমান্ডার শরীফ, এজেন্ট রিশাদ ও এজেন্ট জাহেদ। নানা খাবারে ভর্তি বিশাল ফ্লোরজুড়ে দোকানটা। কিছু খালি টেবিল আছে। আর দু তিনটায় মানুষ ভর্তি।

-স্যান্ডউইচ নিচ্ছি সাথে কফি। জাহেদ আগেই বলে ফেললো।
-ওকে। আমি চিকেন উইংস বার্গার আর রিশাদ কি নেবে? উৎসুক নয়নে শরীফ তাকিয়ে আছেন রিশাদের দিকে।
-একটা ভেজিটেবল রোল আর কফি।
-ওকে স্যার। ওয়েটার অর্ডার নিলো।

নতুন ফাস্টফুড মল তাই ভালোই তাদের প্রোডাকশান হওয়ার কথা। যে কোন খাবার এরা পৌঁছে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই খুব তাড়াতাড়িই এসে গেলো খাবার।

-এক্সকিউজ মি। পাশের টেবিল থেকে কেউ একজন তাদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।

প্রায় দৌড়ে এসে ফিরিস্তি দিতে শুরু করলোঃ
-মাফ চাইছি আপনাদের খাওয়ার সময়ে বিরক্ত করছি।
-আরে না না। নো প্রবলেম। টেল আস। শরীফ ভড়কে গিয়ে উত্তর দিলো।
-এই যে উনি...ভদ্রলোকের ভেজিটেবল রোলে তেলাপোকা...
-ক...ক্কি?! বলেই চেয়ার শুদ্ধ ছিটকে পড়লো রিশাদ।
-এইতো। বলেই দুটো শলা দিয়ে খুঁচিয়ে বের করে নিলো লোকটি।
-হোয়াট দ্য। রাগে গজ গজ করতে করতে কাউন্টারে গিয়ে ম্যানেজারকে ঝাড়তে লাগলেন শরীফ।

কালক্রমে তখনও কেউ জানতো না যে শনাক্তকারী লোকটি দেশের একজন তুখোড় গোয়েন্দা হয়ে উঠবেন।

-আপনারা পেয়েছেন কি অ্যাঁ? কাঁচা টাকায় বিষ...মেজর তালহার ফোন পেয়ে, "দেখে নিবো" ভাব দেখিয়ে ডাকলো বাকি দুইজনকে। বাইরে বেরিয়ে এসে ভ্যানের স্টার্ট দিলো রিশাদ।

-কি বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার। ঘিন ঘিন করছে শরীরটা। রিশাদ মুখ বাঁকিয়ে আছে।
-আরে লোকটার সাথে পরিচয় হয় নি তো আমাদের! ধন্যবাদ দিতে ভূলে গেছি।
-গাড়ি ঘোরাও রিশাদ।

দোকানে এসে কোথাও লোকটাকে পেলো না। হেডকোয়ার্টারে ফিরে এলো। মনটা বিষিয়ে আছে সবার। এমন বিপর্যয় আশা করে নি। এতো বড়ো চেইন ফুড শপে এইসব কারবার!
-থাক বাদ দাও। এখন কারওয়ান বাজার চলো। ওখানে ইনভেস্টিগেশন করবো চলো।

শামীম এদিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন সব। আর্টিলারি গান পাউডার!!! ছোটোখাটো ব্যাপার নয়!!!
-আরে...! তে তে তেলাপোকার আবিষ্কারক! রিশাদ তোতলিয়ে উঠলো।

শরীফ এগিয়ে এসে কথা বললো। পরিচয় হলো শামীমের সাথে। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। বিদেশ থেকে বায়োকেমিস্ট্রি থেকে পাস করেছে। শখের গোয়েন্দা।

-আপনি... খুলনা থেকে কিছুদিন আগে এসেছেন। তাই না?
-কিভাবে বুজলেন?
-সামুদ্রিক লোনা আর্দ্রতায় মানুষের মুখের রং অন্যরকম হয়।
-আরে বাব্বা!
-আর ইনি বিএমএ থেকে। খাগড়াছড়িতে ছিলো। শরীরের পেশির কাঠিন্য দেখে আঁচ করা যায়।
-অ্যাঁ?

শরীফ রিশাদের চোখাচোখি হলো।

-যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কিছু কথা ছিলো।
-ডিজিএফআইয়ের নাম শুনেছেন?
-দেশের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী?
-জ্বি হ্যাঁ। ওখানে একটি সেকশান আছে। নাম এজেন্টস অব ডি। আমরা এখানে কাজ করি।
-ভালোই তো।
-আমাদের একজন গোয়েন্দা দরকার। আপনি জয়েন করবেন।
-অবশ্যই।


সেদিন বিকেলে কিছু মানুষের জটলায় সেদলে নাম লেখান শামীম। এরপর থেকে যখনই সুক্ষ, জটিল সব কেস হাতে এসেছে এই প্রখর জ্ঞান সম্পন্ন গোয়েন্দার শরণাপন্ন হয়েছে শরীফরা। সেই যোগদানের পর থেকে এজেন্টস অব ডি এর ষোলকলা পূর্ণ হলো। পরে যা ঘটেছিলো তা না হয় আরেকদিন বলবো।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৫

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: চালিয়ে যান ভাই। আপনাদের মাধ্যমেই সামু আবার প্রান ফিরে পাক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.