নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আলোর দিশারী
হিজড়া শব্দটির সাথে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত। আরবী শব্দ يهاجر বা হিজরী থেকেই এ শব্দটা এসেছে, যার ইংরেজি শব্দ Migrate বা Transfer, বাংলায় যাকে পরিবর্তন, বদল বা বদলানো বলা যায়। এখান থেকেই হিজড়া বা Transgender শব্দের উৎপত্তি।
হরমোনাল জটিলতার কারণে কোন কোন সময় একটি সন্তান না পুরুষ, না নারী এমনই একটা জটিল অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করে। সঠিক কোন লিঙ্গ পরিচয় থাকে না, যাকে লিঙ্গ প্রতিবন্ধীও বলা হয়ে থাকে। এর জন্য বাবা-মা অথবা সন্তান কেউই দায়ী নয়। সরকার এদের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ হিসেবে মর্যাদা, সঠিক শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করেননি। আমাদের সমাজে এখনো কিছু ভুল মানসিকতা ও ভুল সংস্কারের ফলে তাদেরকে সমাজ থেকে দূরে চলে যেতে হয়। মা-বাবা বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়ে প্রিয় সন্তানকে হিজড়া কমিউনিটির কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এ ক্ষেত্রে পরিবার পরিজন তথা আপনজন ছেড়ে হিজড়া সন্তানটির অভিশপ্ত একটা জীবনে প্রবেশ ঘটে। যা কখনোই সুখকর নয়। বিষয়টা অত্যন্ত বেদানাদায়ক ও হৃদয়বিদারক।
আমাদের সমাজে বর্তমানে শারীরিক, মানসিক প্রতিবন্ধীরা কিছুটা সুবিধা ভোগের অধিকার পেলেও লিঙ্গ প্রতিবন্ধীরা অর্থাৎ হিজড়ারা এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারই এদের পিছিয়ে রেখেছে। হিজড়ারা সমাজে বঞ্চিত ও নিগৃহীত জনগোষ্ঠী। অশিক্ষা ও কুশিক্ষার কারণে ওরা পিছিয়ে আছে। কিন্তু বাঁচার তাগিদে কিছু পেশা ওরা বেছে নিয়েছে, যা কখনো সম্মানজনক নয়, বরং বিড়ম্বনার। তাঁরা আজ রাস্তায়, গাড়িতে, দোকানপাট, অফিসে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অসম্মানজনক ও অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে। সমাজ ও সরকার তা গৌণভাবে দেখছে। অপরাধমূলক হলেও তা আইনের আওতায় আনছেন না। (এ সুযোগটা আবার কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির কুচক্রী কিছু লোক, নকল হিজড়া সেজে রাস্তায় নেমে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হচ্ছে এরাও।) সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সময় বিব্রত ও বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছে অহরহ। কেউই এসব কাজ ভাল চোখে দেখছি না। সময়ের পরিবর্তনে তাঁদেরকেও ওসব পেশা থেকে ফিরিয়ে এনে সম্মানজনক ভাল পেশায় যুক্ত করা প্রয়োজন।
অন্যান্য প্রতিবন্ধীর মতো হিজড়াদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা উচিৎ। এ জন্য প্রথম চাহিদা শিক্ষা। সঠিক শিক্ষা শুধু হিজড়াদের জন্যই নয়, সমাজের সকলের জন্যই প্রয়োজন। মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেবার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আমরা ধর্ম, জাতি, বর্ণ দিয়ে অনেক সময় মানুষকে বিভাজন করে থাকি। আবার নারী ও পুরুষ হিসেবে মর্যাদার ক্ষেত্রেও চলে বৈষম্য। হিজড়াদের ক্ষেত্রে তো পুরোই বঞ্চনার। নারী, পুরুষ, হিজড়া, ধর্ম, জাতি, বর্ণ, পেশা, ভাষা এসব বিবেচনায় না গিয়ে সকলকে মানুষ হিসেবে বিবেচনায় আনতে হবে সর্বাগ্রে। প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম থেকেই এ শিক্ষাটা অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ।
ইচ্ছে করে কেউ হিজড়া হয় না, বিকৃত ও ব্যাতিক্রম বাদে। লিঙ্গ প্রতিবন্ধকতা ছাড়া তাঁদের আর কিছুতে ঘাটতি নেই। বরং শারীরিক প্রতিবন্ধীর চেয়ে অনেক বেশি কর্মক্ষম তাঁরা। মেধায়ও কোন ঘাটতি নেই, তার অনেক উদাহরণ রয়েছে দেশে-বিদেশে। সুযোগ পেলে প্রতিভার বিকাশ ও প্রকাশ ঘটাতে পারে ওরাও। আমাদের উচিৎ তাঁদের দূরে ঠেলে না দিয়ে নিজের পরিবারে আপন করে ধরে রাখা, সঠিক শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া। তাঁর প্রাপ্য অধিকার ও সম্মান দেওয়া। অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মতো সবটুকু সহানুভূতি দিয়ে সহযোগিতা করা। সকল পেশায় যথাযোগ্য সুযোগ দিয়ে কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করে দেওয়া। যদিও পরিবারের জন্য প্রথম দিকে এটা কিছুটা দুরূহ হবে। পরে একটা সময় সমাজ মেনে নেবে। উদ্যোগটা শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই।
ওদের প্রতি কোন রকম গালাগাল, টিটকারী-টিপ্পনী, বাজে মন্তব্য করে আমাদের মনের দৈন্যতা প্রকাশ না করাই শ্রেয়। কেউ কখনো বলতে পারবে না কার পরিবারে কখন এমন সন্তান জন্ম নেবে। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আসুন, মানুষ হিসেবে সকল মানুষকে মর্যাদা দেই। ওদেরকে দূরে ঠেলে বা বাদ দিয়ে নয়, বরং ওদের সাথে নিয়েই সুন্দর একটা পরিবেশ গড়ে তুলতে এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে পারি আমরা, হতে পারি সত্যিকারের সুন্দর মনের মানুষ।
(নেট থেকে ছবিগুলো সংগৃহীত ও সম্পাদিত)
০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২০
জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: আপনার সুন্দর উপলব্ধির জন্য অভিনন্দন জানাই। আপনার সাথে আমিও চাই, সমাজের মানুষ গুলোর বোধোদয় হোক এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূর হোক।
২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: আমি হিজড়াদের কখনও অসম্মান করিনি।
টাকা চাইলে দিয়ে দেই। প্রত্যেক মানুষের তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো উচিত।
০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫০
জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: একজন সুন্দর মনের মানুষ হিসেবে প্রত্যেক মানুষের তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সম্মান দেখানো অবশ্যই উচিত, প্রিয় রাজীব নুর ভাই।
আমি হিজড়াদের চাঁদাবাজিটাকে সমর্থন করতে পারি না, যদিও জানি চলমান ধারায় এটাই ওদের জীবিকার পথ। তবে এটা অবশ্যই শুদ্ধ পথ না, সম্মানজনক না। সুন্দর কোন বিকল্প পথ বেছে নিতে হবে তাঁদেরকেই, আমাদের উচিত সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা।
শাম্মীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প দেখুন
৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:২২
চাঁদগাজী বলেছেন:
সরকারের উচিত, আইন করে, ৩য় লিংগের শিক্ষা, চাকুরীর নিশ্চয়তা দেয়া
০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৪
জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় চাঁদ গাজীভাই ভাই। সরকার এদিকে নজর দিলে আর সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুললে তাঁদের জীবন যাপন অনেক স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
৪| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১০
নতুন বলেছেন: এদের সাভাবিক ভাবে নিলে সমাজে এরা বোঝা হয়ে থাকবেনা।
এরা আমাদেরই সন্তান.... এদের সমাজে সবার মতন সমান অধিকার দিতে হবে... আলাদা করলেই সমস্যা সৃস্টি হবে।
এদের জন্য শুধু নতুন একটা টিক বক্স দরকার ফরমে... ৩য় লিংঙ্গ... সবাই যদি সমান চোখে দেখে তবে কোন সমস্যাই থাকবেনা।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই এরা সমাজের সবার সাথেই ভালো আছে...
আমাদের দেশের মানুষই এদের আলাদা করে সমস্যা সৃস্টি করেছে।
একজনকে কাজ না দিলে সে কি করবে? সমাজ কাজ দিচ্ছেনা তাই এই জীবনে যেতে বাধ্য হচ্ছে এরা।
০৯ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৭
জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: "এরা আমাদেরই সন্তান.... এদের সমাজে সবার মতন সমান অধিকার দিতে হবে... আলাদা করলেই সমস্যা সৃস্টি হবে।" ঠিক বলেছেন নতুন।
আমাদের সমাজের অশিক্ষা ও কিছু কুসংস্কারই ওদের আলাদা করে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে, প্রচলিত এ কুপ্রথা ভাংতে হবে। বুঝাতে হবে অভিভাবকদের। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
৫| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:০৩
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সরকারের উচিত ছিল তাদের জন্য কিছু করা। কিন্তু তখন দেখা যাবে অনেক স্বাভাবিক মানুষও হিজড়া সেজে ভাতা নিচ্ছে। এই দেশটাতে এত বিশৃঙ্খলা যে, সেগুলো স্বাভাবিক করতেই চলে যাবে অনেকগুলো বছর। হিজড়া তো অনেক পরের সমস্যা!...
১০ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:১৭
জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: আসলে এতোটা জটিল নয়, বিচার মানি তালগাছ আমার ভাই। মানুষ হিসেবে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো ওদের অধিকারটুকু যদি সরকার নিশ্চিত করে, আইনগত সাপোর্ট দেয় আর সচেতনতা গড়ে তোলে তাহলে আর বাড়তি কোন সুবিধা দেওয়া লাগে না। এখানে তো ভাতার প্রশ্ন আসেনা না।
আপনার আমার সন্তান ছেলে, মেয়ে কিংবা হিজাড়া (৩য় লিঙ্গ) হলেও তাদের দেখাশোনা, লেখাপড়ার দায়িত্ব আমাদেরই তো থাকা উচিৎ। আমার কথা হলো তাদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নয়, সমাজে রেখে শিক্ষিত করে তুললে অন্যদের মতো ওরাও পারবে স্বাবলম্বী হয়ে চলতে। সম্মানজনক একটা অবস্থান তৈরি করতে।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
৬| ১০ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫
ক্স বলেছেন: হিজরাদের সম্পর্কে আমার কিছু জানার আছে।
১। এরা কি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম? ওদেরকে দিয়ে সব্জির ক্ষেতে কাজ করানো যাবে? বা ডেইরি পোল্ট্রি ফার্মে নিয়োগ দেয়া যাবে?
২। এরা কি সন্তান জন্মদানে সক্ষম? একটা ইউটিউব ভিডিওতে দেখেছিলাম একটা মেয়ে দাবী করছে, তার গর্ভস্থ সন্তানের পিতা একজন হিজড়া যে কিনা দেখতে একেবারেই মেয়েলি।
৩। এরা কি স্বাভাবিক মানুষের মতই ৬৫/৭০ বছর আয়ু পায়?
৪। এরা কি পরিশ্রমের কাজে অভ্যস্ত?
১০ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৫৮
জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: আপনার ধারাবাহিক প্রশ্নগুলো খুব সুন্দর, অনেক ধন্যবাদ ক্স। আপনার প্রশ্নের উত্তরে যাবার আগে ক্ষমা চেয়ে একটু কিছু বলে নিচ্ছি। এইযে ধরুন, আপনার নাম "ক্স", আপনাকে আমি ভাইয়া/আপু কোনটা বলবো দ্বিধায় আছি। আপনি যাই হোন না কেন আপনি একজন কর্মক্ষম ব্যাক্তি। হিজাড়াদের বেলায় ঠিক তা ই, শুধু লিঙ্গ প্রতিবন্ধী। তাই ওদের লিঙ্গ পরিচয় "৩য় লিঙ্গ" হিসেবে। তবু ওদের পোশাক দেখে আমরা ভাইয়া বা আপু ডাকতে পারি।
এবার প্রশ্ন প্রসঙ্গে আসি -
১। এরা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম। একজন নারী বা পুরুষ যেমন কাজ করতে পারে ওরাও চাইলে সবজির ক্ষেত, পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্মের কাজসহ সব কাজকর্ম করতে পারে।
২। পায়খানা, প্রশ্রাব স্বাভাবিকভাবে করতে পারলেও ওদের জননাঙ্গে সমস্যার কারণে যৌনাচারে অক্ষম। সন্তান জন্মদানও সম্ভব না ওদের পক্ষে। তবে শৈশবে সঠিক চিকিৎসায় অনেকেই ঐ প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বাভাবিক একজন নারী বা পুরুষ রূপান্তর লাভ করতে পারে। দেখতে একেবারেই মেয়েলি হলেও সে হিজড়া হবে এমন কিন্তু নয়। পুরুষের শারীরিক সক্ষমতা থাকলেই সে পিতা হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে গে পুরুষ আছেন, যাদের আচরণ অনেকটা মেয়েলী, তাই বলে সে কিন্তু হিজড়া না, স্বাভাবিক শুক্র উৎপাদন ক্ষমতা থাকলে বাবা হবার ক্ষেত্রে তার কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।
৩। আমার জানা মতে, এরা কি স্বাভাবিক মানুষের মতই ৬৫/৭০ বছর আয়ু পায়।
৪। মানুষ অভ্যাসের দাস বলে একটা কথা আছে। অভ্যস্ততা তার নিজের কাছে, পরিশ্রমের কাজ করলেই ওরা পরিশ্রমে অভ্যস্ত হবে অন্য সব নারী-পুরুষের মতো।
হিজড়ারা সমাজের কারো না কারো পরিবারের সন্তান। পরিবারের অন্যান্য ছেলে বা মেয়ে সন্তানের মতোই আদর, স্নেহ, ভালবাসা, সহানুভুতি চায় ওরাও। মানুষের সবটুকু অধিকার তাঁদের প্রাপ্য। পৃথিবীর অনেক দেশে ওরা সকল অধিকার পেলেও আমাদের দেশের মতো পিছিয়ে পড়া কিছু দেশেই ওরা অধিকার বঞ্চিত। করুণা নয়, আসুন সহানুভূতি নিয়ে ওদের পাশে দাঁড়াই। ওরাও দেশকে অনেক কিছু দিতে পারবে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:০৫
বিষাদ সময় বলেছেন: আমাদের দেশের হিজড়াদের কথা ভাবলে নিজেদের সমাজকে এখনও অসভ্য মনে হয়। শুধুমাত্র লিঙ্গের ভিন্নতার কারনে কোন মানুষ যে এতটা বৈষম্যের শিকার হতে পারে তা কল্পনাও করা যায় না। সমাজের মানুষ গুলোর বোধদয় হোক এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূর হোক সেই কামনা।
একটি মানবিক এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখায় আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।