নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধের লাঠি

অন্ধকার মানুষ

অন্ধকার মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওস্তাদের ওস্তাদ জনাব আবদুল হামিদ খান ভাসানী!

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২৭

[তিনি ছিলেন, বাংলার রাজনীতিবিদদের শিক্ষক, ওস্তাদের ওস্তাদ।

১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ। পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভার বাজেটে ক্রোধে ফেটে পড়লেন তিনি। বললেন,

''Assembly'র member দের সঙ্গে পরামর্শ না করে তারা নিজেরা মোড়লী করলেন কোন অধিকারে? আমরা কি Central Government এর গোলাম?''

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোনো জননায়কের সেই প্রথম চ্যালেঞ্জ। স্ব-অধিকারের বিরুদ্ধে সেই প্রথম সচেতনতা, যদিও তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন ১৯৪০ সালে।

১৯৪৯৮ সালের ২৩ শে জুন উনাকে সভাপতি করে গঠিত হলো স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' যে দল গঠনের মধ্যে দিয়ে ঘনীভূত হতে থাকল আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন।

১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারী ''সর্ব দলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ''গঠিত হলে তিনি হন সভাপতি।

৬ ফেব্রুয়ারির যে সভায় ২১ শে ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত হয়, তাতে তিনি বলেন,

''যে সরকার আমাদের নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ন গণআন্দোলন ইচ্ছাকৃতভাবে বানচাল করিবার জন্য আন্যায়ভাবে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করে, সে স্রকার কর্তৃক জারিকৃত নিষেধাজ্ঞাকে মাথানত করিয়া গ্রহণ করার অর্থ স্বৈরাচারের নিকট আত্নসমর্পণ''

একমাত্র এই একজন ছাড়া আর কোন জাতীয় রাজনৈতিক ব্যাক্ত্বিত্তকে ভাষা আন্দোলনের আশেপাশে দেখা যায় নি।

২২ শে ফেব্রুয়ারী এই মানুষের ইমামতিতেই ভাষা শহীদদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার ফল স্বরুপ উনাকে জেলে নিক্ষেপ করা হয়।

যুক্তফ্রন্টের মাধ্যেমে ঐতিহাসিক ২১ দফা পেশ করলেন। সারা বাংলা চষে বেড়ালেন, মানুষের দ্বারে দ্বারে স্বাধীনতার বীজ বপে দিলেন।

১৯৫৬ সালের ১৬ মার্চ পল্টনে পূর্ন আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের জন্য দেশব্যাপি জিহাদের ডাক দিলেন।

১৯৫৭ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারী টাঙ্গাইলের কাগমারীতে কাউন্সিল আহবান করলেন।

বললেন, ''যতদিন না পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিচারে দুটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ইউনিট বলে স্বীকার হচ্ছে না- ততোদিন পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল সম্ভব নয়''

তারপরেই উচ্চারণ করলেন তাঁর সেই অবিস্মরণীয় বানী-

''যদি পূর্ব বাংলায় তোমরা তোমাদের শোষণ চালিয়ে যাও, যদি পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার স্বীকৃত না হয়- তাহলে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী, তোমরা আমাদের কাছ থেকে একটি কথাই শুনিয়া রাখ, আসসালামু য়ালাইকুম, তুমি তোমার পথে যাও, আমরা আমাদের পথে যাব''

তিনিই ১৯৭৬-এর ১৬ মে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক লং মার্চে নেতৃত্ব দেন।

অতি সাধারণভাবে জীবন যাপন করা এই মানুষটি রাজনীতির পাশাপাশি সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। আসামে ৩০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কারিগরী শিক্ষা কলেজ, শিশু কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সন্তোষে। এছড়াও তিনি কাগমারিতে মাওলানা মোহাম্মস আলী কলেজ এবং পঞ্চবিবিতে নজরুল ইসলাম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি দুটি বই রচণা করেন। দেশের সমস্যা ও সমাধান (১৯৬২), মাও সে তুং-এর দেশে (১৯৬৩)।

কালের গর্ভে, রাজনীতির রোষানলে অথবা অপর পক্ষের চাপে অনেকেই হারিয়ে গিয়েছেন।

হারিয়ে গিয়েছেন তাজ উদ্দীন আহমেদ, হারিয়ে গিয়েছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, হারিয়ে গিয়েছেন সোহরাওয়ার্দী।

কিন্তু ইতিহাস কখনোই ভুলতে দেবে না ''লাল মওলানাকে'' যিনি লুঙ্গি পরিধান করে চীনের ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক কমিউনিস্টের সম্মেলনে বিশ্বের বাঘা বাঘা নীতি নির্ধারকদের সাথে এক কাতারে বসেছিলেন।

৩৮ বছর আগের এই দিনে, স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা মৃত্যুবরণ করেন অনেকটা নিরবে, নিভৃতে।

সালাম হে লাল মওলানা! ওস্তাদের ওস্তাদ জনাব আবদুল হামিদ খান ভাসানী!

আপনাকে এই নির্মম, শোষণের কালে স্মরণ করছি সর্বোচ্চ সম্মানে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.