নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধের লাঠি

অন্ধকার মানুষ

অন্ধকার মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতীয় সিরিয়াল

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২৯

ভারতীয় সিরিয়াল আমাদের দেশে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং তার প্রধান দর্শক নারীরাই। আর এর প্রভাব পড়ছে সমাজে। ইতিবাচক প্রভাবের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাবই বেশি। তাই এ বিষয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারীরা কী ভাবছেন তা-ই নিয়ে লেখাটি তৈরি করেছেন ফাতেমা মাহফুজ





গ্রামের একটি ছোট্ট মেয়ে। অনেকটা চাপে পড়ে পরিবার সেই মেয়েটিকে গ্রামের মোড়লের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। তবে সেই বাড়ির মেয়ে হিসেবে নয়, দাসী হিসেবে। শুধু তা-ই নয়; বরং যারা এমন দাসী হয়ে অন্যের বাসায় কাজ করতে যায়, তারা ও তাদের পরিবার যাতে সমাজে হেয় হয় কিংবা নিচু হয়ে জীবন যাপন করে তাই তাদের হাতে একপ্রকার উল্কি এঁকে দেয়া হয়। আর এসব সেই গ্রামের মোড়লের ইশারায়ই চলে। ভারতীয় সমাজের এমনই এক বিরূপ চিত্র ফুটে উঠেছে তাদের এক নাটকে। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে ভারতীয় সিরিয়ালের সব কিছু কি খারাপ?



সব কিছু কি খারাপ?



এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিার্থী সায়মা আহমেদ বলেন, ‘ভারতীয় সিরিয়ালে তাদের ধর্মটাকে অনেক প্রকাশিত করা হয় এবং মূল অভিনেত্রী হয়ে থাকে খুব ধার্মিক, যে বিষয়টা ভালো। শুধু তা-ই নয়, নাটকের বউরা তাদের স্বামীর সামনে সেজেগুজে থাকে যেমনটা আমাদের সমাজ ও নাটকগুলোতে দেখা যায় না।’ এ দিকে একই প্রশ্নের উত্তরে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী ফাতেমা রহমান বলেন, ‘নাটকের মাধ্যমে তারা সমাজের বিশৃঙ্খলা, মহিলাদের প্রতি অন্যায় আচরণগুলো প্রকাশ করে। আর সেই সাথে মেয়েটি যাতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে সেই দিকে উদ্বুদ্ধ করা হয়।’



এ দিকে অনেকের মত যাচাইয়ে তারা ভারতীয় নাটকের গুণাগুণ বিচারে কিছু ভালো দিক তুলে ধরলেও আমাদের (যেখানে বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারী এসব সিরিয়ালের দর্শক) সমাজে, আমাদের ধর্ম ও মূল্যবোধের সাথে মিল রেখে সেই ভালোর প্রভাব পড়ছে কি? বাস্তবিক অবস্থা?



আপত্তিকর বিষয়



সার্বিক পর্যালোচনায় ভারতীয় সিরিয়ালগুলোকে ভালো-মন্দের মানদণ্ডে বিচার করলে দেখা যায়, ভালোর চেয়ে মন্দের প্রদর্শনী শুধু বেশি বললেই হবে না, বরং সীমার বাইরে। এ ব্যাপারে বাংলা বিভাগের শিার্থী শারমিন সুলতানা বলেন, ‘বেশির ভাগ হিন্দি সিরিয়ালের কাহিনী হলো বিয়ের আগে সম্পর্ক, অবাধ মেলামেশা, পরবর্তী সময়ে আরেকজনের হাত ধরা, বিয়ে হওয়া ( যেই দৃশ্যটা মূলত দর্শককে আকৃষ্ট করে ‘এমন হলো কেনো?’ ‘এরপর?’ ), পুনরায় ভাঙন, সংসারে নারীদের মধ্যে ঝগড়া, কুটনামী, পরকিয়া, এরই মাঝে ছেলেমেয়েদের কয়েক দফা বিয়ে এভাবে কাহিনী এগোতে থাকে। তা ছাড়া অশ্লীল দৃশ্য, অশ্লীল ড্রেস, আচরণ, পার্টি ড্যান্স এ বিষয়গুলো খুবই আপত্তিকর; যা দিন দিন আমাদের মূল্যবোধকে নষ্ট করছে। তা ছাড়া আমি বুঝি না মানুষ কি তার বিবেককে কাজে লাগায় না? তাহলেই তো এসব খারাপ দিক থেকে দূরে থাকা যায়!’



খণ্ডচিত্র



এ দিকে প্রশ্ন হলো নাটকের এই নষ্ট চরিত্রের প্রবণতা সমাজে কিভাবে পড়ছে? সাাৎকারে বিভিন্ন নারী তাদের জীবনের আশপাশে কিংবা চাুষ ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা বর্ণনা করেছেন। সংেেপ তুলে ধরা হলো সেসব খণ্ডচিত্র



১. ছয় বছরের ছোট মেয়ে। খালার সাথে খেলা করছে। এমন সময় একটা ছেলে ও মেয়ের মধ্যকার ভালোবাসার চিহ্ন (হার্ট) লাগানো একটা শোপিস দেখিয়ে খালা বলল ‘এটা ভালো না।’ তখন সেই ছোট মেয়েটি বলে, ‘খালামণি! এটা ভালো না, তবে টিভিতে ছেলেমেয়ের মধ্যে এমন যেটা দেখায় সেটা ভালো।’ খালা পিচ্চিটার কথা শুনে অবাক হয়ে বলে,‘এইটুকু বয়সে ভারতীয় চ্যানেল থেকে এ কী শিখছে সে!’



২. মধ্যবয়সী মহিলা। বিয়ের আয়োজনে মহিলাটি যেভাবে শাড়ি পড়েছে, তা দেখে সবাই যেন একটু অস্বস্তি বোধ করছে। বড়গলা, হাতাকাটা, তার ওপর পাতলা শাড়ি! ঠিক যেমনটা সিরিয়ালে দেখা যায়।



৩. সাত বছরের এক মেয়ে। বড় বোনের সাথে হিন্দি সিরিয়াল দেখছে। নাটকের মাঝে এমন একটা আপত্তিকর দৃশ্য এলো যে শিশুটি নিজেই লজ্জিত। এই বয়সে তার মাথায় যা না ঢোকার তাই ঢুকে গেল। আর তার এমন অবস্থা দেখে বড় বোনও নিরুত্তর! বলার কিছু নেই। কারণ, এমন আপত্তিকর দৃশ্যের কোনো বর্ণনাই হয় না; বরং বিরক্তির সৃষ্টি হয়।



৪. এক ইফতার মাহফিলে পাঁচ বছরের এক মুসলমান মেয়ে কথায় কথায় আফসোসের সুরে ‘হায় রাম, হায় রাম’ বলে উঠছে। এই অবস্থা দেখে তার মাকে জিজ্ঞেস করায় মা নিঃসঙ্কোচে বলে উঠল সুপার হিট এক ভারতীয় অভিনেত্রীর মুখে এই কথা বারবার শুনে সেও শিখে ফেলেছে।



এ ছাড়া, হিন্দি সিরিয়াল দেখতে না পেরে আত্মহত্যা, কিংবা তাদের অন্ধ অনুকরণ করতে গিয়ে জীবনকে অন্ধকার জগতের দিকে ঠেলে দেয়া ইত্যাদি খণ্ডচিত্র ছাড়াও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আরো করুণ চিত্র ঘটে যাচ্ছে যেখারেূ প্রতিনিয়ত হিন্দি সিরিয়ালে ছেলেমেয়েদের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত, লিভটুগেদার, অবাধ মেলামেশা ইত্যাদি আমরা গলধঃকরণ করছি।



গৃহিণীরা যেখানে মূল দর্শক



এ দিকে বলা হয়ে থাকে গৃহিণীরাই হিন্দি সিরিয়ালের প্রধান দর্শক। সকাল-দুপুর-রাত বিভিন্ন সিরিয়াল দেখতে তারা অভ্যস্ত। সুতরাং এমন অভিযোগে উত্তরার বাসিন্দা একজন সফল মা ও গৃহিণী বলেন, ‘এই অভিযোগটা সত্য। আর মহিলারা এটা দেখার প্রতি অভ্যস্ত হয়, কারণ এসব সিরিয়ালগুলো একটা রোমান্টিক কল্পকাহিনী তৈরি করে, যার মধ্যে আমরা বাস্তবতা ভুলে যাই। তবে আমরা যদি একটু চিন্তা করি, তাহলে দেখবো নাটকের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। যেখানে কোনো আদর্শ নেই, যেখানে আমি আমার জীবনকে মূল্য দিতে শিখছি না। হ্যাঁ, এখন প্রশ্ন দাঁড়াতে পারে, গৃহিণীরা তো সব সময় আর ঘরের কাজ করে না তাহলে তারা বিনোদনের সময় কী করবে? তো সে ক্ষেত্রে বলব, নিজেকে ভালো কিছুতে ব্যস্ত রাখাও অনেক লাভজনক। অবশ্যই যেটা উপভোগ্য সেটা। তা হতে পারে সুস্থ বিনোদনের কোনো বই, সামাজিক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশের শিণীয় ভিডিও দেখা, নারীদের নিয়ে একটা গ্রুপ গঠন করে এলাকাভিত্তিক সৃজনশীল কাজ করা, প্রতিবেশীদের খোঁজখবর রাখা। তাদের ভালোমন্দে যাওয়া, নিজের আত্মীয়স্বজনের জন্য রান্না করা, বা তাদেরকে দাওয়াত দেয়া, শিশুদের সময় দেয়া, তাদেরকে নিয়ে খেলা করা, সুন্দর গল্প বলা, আবার বিনোদনের জন্য স্বামীর সাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া (অবশ্য এক্ষেত্রে স্বামীকেও আন্তরিক হতে হবে) ইত্যাদি আরো অনেক উপায়ে আমরা নিজেদের সময়টাকে ভালো পথে লাগাতে পারি।’ আবার অনেক সময় দেখা যায়, সিরিয়াল দেখার তালে সন্তানেরা হোমওয়ার্ক করল কি না, সেটা দেখার প্রতিও মায়েদের খেয়াল থাকে না। তো সে ক্ষেত্রে তিনি মায়েদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।



উত্তরণের উপায়



দেখা যাচ্ছে আমাদের সচেতনতাই পারে অসুস্থ বিনোদন থেকে নিজেকে, নিজের পরিবারকে বাঁচাতে; তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। তা হলো, মিষ্টির রস খোলা থাকলে পিঁপড়া আসবেই, আর অনেক সময় যা হয় রসের লোভে পিঁপড়া নিজের জীবনের অস্তিত্ব ও সীমা ভুলে বুঁদ হয়ে মরে পড়ে থাকে সেই রসের থালায়। সুতরাং আমরা যাতে এসব সিরিয়ালের মধ্যে বুঁদ হয়ে পড়ে না থাকি, সেই উপায় কী? তা ছাড়া অনেকেই বলে থাকেন, হিন্দি চ্যানেল বন্ধ না হলে দেশীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ ফুটে উঠবে না। অসম প্রতিযোগিতা চলবে। তাই সম্প্রতি স্টার প্লাস, স্টার জলসা, জি-বাংলাÑ এই তিনটি চ্যানেলের সম্প্রচার কেন বন্ধ হবে না, সেটা জানতে রুলনিশি জারি করেছে হাইকোর্ট। তা ছাড়া আমরা জানি, আমাদের দেশে ভারতীয় চ্যানেলগুলোর অবাধ অনুপ্রবেশ থাকলেও তারা আমাদের চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার চায় না। ফলে এক অসম বাণিজ্য চলছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা যাচ্ছে ভারতে।



এ প্রসঙ্গে মানবাধিকারকর্মী সুমাইয়া বিনতে আমিন বলেন, ‘হ্যাঁ, চ্যানেলগুলোর বন্ধ জরুরি, তবে এটাও দুঃখজনক বাস্তবতা যে, চ্যানেলগুলো বন্ধ করলে খোদ নারী সমাজই এর বিপে যাবে, কেননা এসব সিরিয়াল দেখতে তারা অভ্যস্ত। তাই তাদেরকে ভিন্ন কোনো খোরাক দিতে হবে। নাটকের মাধ্যমে সুস্থ বিনোদনের দিকে আনতে হবে।’ সুতরাং কী হতে পারে নাটকের বিষয়বস্তু? এটা জানিয়ে তরুণ শিার্থী সাদিয়া রুমা বলেন, ‘সমাজের সমস্যাবলি, উৎসাহজনক কোনো ভালো কাজের উদ্যোগ, ধর্মীয় শিা, ভালোলাগার কথা, জীবনসঙ্গীর দায়িত্ব, শিশুদের চরিত্রগঠনমূলক গল্প, বিভিন্ন অপরাধবিরোধী পদপে প্রভৃতি নিয়ে আগামীর নাটকগুলো সাজানো যায়।’ এ দিকে কারো কারো মতে ভারতের সব চ্যানেল খোলা রেখে কখনোই সুস্থ বিনোদনের চর্চা সম্ভব নয়। কারণ আমরা এটাও দেখছি যে, আজকাল আমাদের নাটক, আমাদের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ড্রেসে সেই ভারতীয় অশ্লীলতার ছাপ, কাহিনীও তেমনি যাতে অবাধ মেলামেশা ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। আর নারী অধিকার বলতে শুধু আগ্রাসী মনোভাবকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। সুতরাং আমরা দেশীয় নাটক থেকেই বা কী শিখছি? তাই অবশ্যই ধীরে ধীরে হলেও ভারতীয় চ্যানেল হওয়া বন্ধ জরুরি। সেই সাথে বিকল্পের প্রচারণা।



এটা সত্য, মানুষ খারাপ জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয় বেশি; তবে তাকে যদি বিকল্প ভালো জিনিস দেয়া যায়, প্রচারণা চালানো হয় তাহলে সেই খারাপটা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর এমনটা হলেই আমরা একটা ভালো সমাজের আশা করতে পারি। তাই সবার আশা, সরকার থেকে শুরু করে নাটক, ভিডিও, ফিল্ম বা শর্ট ফিল্মের সাথে জড়িত সবাই নিজ থেকে সতর্ক হয়ে সমাজকে একটা ভালো পথে নিয়ে যাবে।





- লিখাটি লিখেছেন ফাতেমা মাহফুজ

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৮

আহলান বলেছেন: আমাদের চ্যানেল গুলো কেন আমাদের কাছে জনপ্রিয় হতে পারছে না? দর্শকরা কি চায় সেটা কি আমাদের নাটক সিরিয়াল নির্মাতারা টের পান না....?

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪১

দ্যা আহমেদ মামুন বলেছেন: @ আহলান কিছু দর্শক ৩এক্স দেখতে চায়।
তাই বলে কি তাদেরকে তাই দেখাতে হবে।
নষ্ট মানুষ নষ্ট কিছু দেখবে এবং তাই শিখবে।
এতে হাউকাউ করার কিছু নাই।

নামাজ রোজা করুন। ধর্ম মেনে চলুন।
সিরিয়ালের বাপের সাধ্য নাই আপনার পরিবারকে বিপথে নেওয়ার।
ওসব নষ্ট মানুষ দেখবে।

৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪০

ভূতের কেচ্ছা বলেছেন: এক কাজ করুন , ঐ ফাকির , যাদুর বাক্স টি হাতে নিন.....সোজা ছাদে চলে যান.. উপর থেকে দেখুন কেউ নীচে আছে কি না. তারপর সোজা ছাদ থেকে ঐ যাদুর বাক্সটি ফেলে দিন... তারপর প্রতিদিন যে ময়লা নিয়ে যায় , তাকে ডেকে ঐ আবর্জনা দিয়ে দিন...................... তারপর সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধুয়ে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করুন.....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.