![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তুমি চাইলেই সব কিছু হয়, ভুলতে পারি শোক। দিতেই পারো আমার দিকে একটু মনোযোগ। আমার মতো তুমিও তবে বাসতে পারো ভালো জ্বালতে পারি দুই চোখেতে ভালোবাসার আলো। তুমি চাইলে হতে পারি এক নিমেষেই নদী সাহস করে সেই নদীতে নামতে পারো যদি।
অবশেষে তুই এলি! যেকোন দিন চলে আসবি তার জানান দিচ্ছিলি আরো দু-তিনদিন আগে থেকেই। যেমন তোর নানু আর দাদী বলেছিল, একটু একটু ব্যথা হবে, আস্তে আস্তে বাড়বে...
শেষের দিনগুলোতে আমি অপেক্ষা করতে করতে আমি অধৈর্য হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন ব্যাপারটা শুরু হল তখন কেমন যেন ঘাবড়ে গেলাম। মনে হল 'এখনই না, আরেকটু সময় পেলে ভাল হতো'।
হঠাৎ করেই ওইদিন ভোর সাড়ে ছটায় ঘুম ভেঙে গেল, চোখ মেলে বুঝতে চাইছিলাম কি হল। ওই সময়ে ব্যথার অনুভূতিটা জানান দিল। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফোন করলাম তোর নানুকে। বলল, আরো কিছুক্ষণ দেখতে। ব্যথাটা আরেকটু বাড়ে কি না। বাড়ছিল...একটু একটু করে...বুঝলাম সময় হয়ে আসছে। ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। তারপর তোর বাবাকে জাগালাম। তোর দাদী উঠে এসেই বলল, এখনি হাসপাতালে যাচ্ছি আমরা।
যেতে যেতেও আমি খুব স্বাভাবিক আচরণ করছিলাম, যেন কিছুই হয় নি। সবার মধ্যে আমিই বোধহয় সবচেয়ে নিরুদ্বেগ ছিলাম। হাসপাতালে পৌঁছানোর পরে ডাক্তার সব দেখে-শুনে বলল, দেরি হবে। আমার ডাক্তার আসবে আড়াইটায়। ততক্ষণ অপেক্ষা করতে। জানি না, ঠিক কয়টায় আমার ব্যথাটা ভীষণরকম বেড়ে গেছিল। বেডে শুয়ে একটু পর পর মুচড়ে উঠছিলাম। তোর বাবা শুকনো মুখে হাত ধরে বসেছিল পাশে। এরমধ্যে সিটিজি করা হল। তোর হার্টবিট খুব কম দেখাচ্ছিল, কোন নড়াচড়া নেই। এরমধ্যেই ডাক্তার এসে বলল আর দেরি করা যাবে না। এক্ষুণি সিজার করতে হবে। আমাকে ওটি ড্রেস পরিয়ে যখন হুইল চেয়ারে করে লিফটে তোলা হল, তখন আমি একেবারেই একা। তোর বাবা বা দাদী কেউই ছিল না সাথে। ব্যথায় অস্থির লাগছিল, সেইসাথে কী ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছিল নিজেকে! শূণ্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম লিফটের দেয়ালের দিকে।
ওটিতে পৌঁছানোর পর আমার বোধ প্রায় লুপ্ত হল বলা চলে। পরে ভাবছিলাম 'মানুষের জন্য এটা বিশাল সৌভাগ্য যে তারা ব্যথার অনুভূতি ভুলে যায়। তা না হলে দ্বিতীয়বার সন্তান ধারণের চিন্তা কোন মা কখনো করতো না'। ওটি টেবিলে শোয়ানোর প্রায় দশ মিনিট পরে যখন আমাকে এ্যানেসথেসিয়া দিল, ম্যাজিকের মত আমার সমস্ত ব্যথাতো বটেই কোমরের নিচ থেকে বাকিটা একেবারে অসাড় হয়ে গেল। আমার মুখের সামনে একটা পর্দা টানিয়ে দিল যাতে আমি কিছু না দেখি। কিন্তু উপরের বিশাল লাইটের গ্লাসে আমি সবই দেখতে পাচ্ছিলাম। নিপুণ হাতে ডাক্তার আমাকে কেটে কুটে ফেললেন। এমনকি চামড়ায় যে টানটা পড়ছিল, তাও আমি টের পাচ্ছিলাম। ছোপ ছোপ লাল রক্ত দেখা যাচ্ছিল। তখন আর ভয় পাচ্ছিলাম না মোটেও, একমনে আল্লাহকে ডাকছিলাম শুধু। তারপর কতক্ষণ কতক্ষণ পরে শুনলাম তোর কান্না। তোকে তুলে নিয়ে ডাক্তার অন্য একজনের হাতে দিয়ে দিল। তারা তোকে অন্য রুমে নিয়ে গেল। আমি শুনতে শুনতে কেমন নিস্তেজ হয়ে গেলাম। ঘুমে চোখ নিস্তেজ হয়ে আসতে লাগল। তখনও জানি না আমার মেয়ে হয়েছে নাকি ছেলে। ডাক্তার দুজন গল্প করতে করতে কাটা অংশটুকু সেলাই করছেন, আর আমি ঘুমে ঢলে পড়ছি। এরমধ্যেই আয়া এসে দেখাল, দেখেন আপনার মেয়েকে। তুই জানিস তোকে দেখে কোন কথাটা প্রথমে বলেছিলাম? 'বুচি হইছে একটা!' আমার মত খাড়া নাক পাস নি দেখে বড় দুঃখ পেয়েছিলাম তখন। আরো চারঘন্টা আমি ছিলাম পোস্ট-অপারেটিভে। এরমধ্যে দুবার তোকে নিয়ে এসে খাইয়ে নিয়ে গেল। আমার এমন কাঁপুনি উঠেছে তখন, তোর চেহারাটাও ঠিক করে তখনও দেখি নি। কেবিনে নেয়ার পরেও না। আমিতো শুয়েই ছিলাম ওইদিন, তারপর দিনও দুপুর পর্যন্ত।
যখন প্রথমবারের মত তোকে কোলে নিলাম, মনে হচ্ছিল এই পুটুলিটা কি সত্যি আমার! অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম। প্রায় দুটো রাত আমি নির্ঘুম তোকে কোলে করে বসেছিলাম নিজেকে বিশ্বাস করানোর জন্য যে তুই সত্যিই আমার! সত্যিই আমি এখন এক মেয়ের মা!
২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১১
শ্রাবণ জল বলেছেন: অভিনন্দন, আপু।
সুস্থ থাকুন।
বেবির জন্য অনেক আদর।
৩| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৬
আমি ইহতিব বলেছেন: অনেক অনেক অভিনন্দন, পটুলিটার একটা ছবি দিতেন আমরাও দেখতাম, নাম কি রেখেছেন? আর এখন কেমন আছেন মা মেয়ে?
অনেক অনেক দোয়া রইলো পুটুলিটার জন্য।
আমিও কিন্তু এক মেয়ের মা। মেয়েগুলো যে কি মায়াবতী হয়, তা পরে বুঝবেন আপু। আমারটার এই মার্চ মাসে দুবছর হবে, যা করে সারাদিন, আচ্ছা সেই গল্প আরেকদিন করবো। ভালো থাকুন এই দোয়া করি।
৪| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮
শায়মা বলেছেন: কেমন আছো আপু?
কেমন আছে তোমার পুটুলি বেবিটা?
৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬
রুদ্র জাহেদ বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা...
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪৩
হাসান মাহবুব বলেছেন: এখন বিশ্বাস হয়?