নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন

জলকুমার

জলকুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন

১০ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৮:১৪

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কেমন এ সম্পরকে আমাদের সকলেরই ধারনা আছে। আমাদের মতের পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু কেউ মনে হয়না সুস্থ মস্তিস্কে এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলে বিবেচনা করবেন। এমতাবস্থায় একে অপরকে দোষারোপ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়না। এখন দরকার দৃঢ় কিছু পদক্ষেপ যা পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে সহায়ক হতে পারে।

বর্তমান অবস্থার বিবেচনায় আগামি নির্বাচন কি তত্তাবধায়ক সরকারের অধিনে হবে নাকি নির্বাচিত সরকারের অধিনে হবে এই তর্কে জড়ানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ণয় ব্যবস্থা দৃঢ়করন নিয়ে। কারন আমাদের হাতে ভোট দেয়ার ক্ষমতাই শুধু আছে এবং এই ক্ষমতারই সৎব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হলে ভবিষ্যতে যোগ্য ( বর্তমানে অযোগ্য বলা আমার উদ্দেশ্য না) নেতা/নেত্রির হাতে সরকার ব্যবস্থা আসতে পারে। এ ব্যাপারে বেশ কিছু দিক নির্দেশনা অনুকরন করা গেলে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে হয়। নির্দেশনাগুলো নিম্নরুপঃ



১। প্রার্থীর বয়স ৩০ বছর-৫৮ বছর এর মধ্যে হতে হবে ( ৩০ বছরের নিচে একজন যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হয়না সাধারনত ( বর্তমান সংবিধানে ২৫ বছরের উপরে যে কেও নির্বাচনের যোগ্য কিন্তু কোন ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারিত নেই) এবং ৫৮ এর উপরে গেলে ৫ বছরের সরকার শেষে বয়স ৬৩ এর উপরে চলে যাবে যা সরকারি চাকরি করার পরিপন্থি এবং কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।)



২। প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে গ্রাজুয়েট হতে হবে ( শিক্ষাগত যোগ্যতা জরুরি কারন একজন শিক্ষিত যতটা দিক বিবেচনা করতে পারেন, একজন অশিক্ষিতের পক্ষে তা সম্ভব নাও হতে পারে। আমি এখানে অশিক্ষিতদের ছোট করার চেষ্টা করছি না। কিন্তু যে লোক দেশকে দুনিয়ার সামনে উপস্থাপন করবে, সে একটু শিক্ষিত হলে দেশের ভাবমূর্তির উন্নয়ন হবে বলেই আমার মনে হয়।)



৩। কোন প্রার্থী দুই বারের বেশি নির্বাচিত সরকারে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে না। ( দুই বারের বেশি বার যদি সংসদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ না থাকে সে ক্ষেত্রে নতুন মুখ নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে এবং একচ্ছত্র আধিপাত্তের প্রবনতা কমবে।)



৪। প্রার্থীর নামে কোন ধরনের কোন পুলিশ কেস থাকা যাবে না। ( সে ক্ষেত্রে মাস্তান ও সন্ত্রাসী কারযালাপে জড়িত লোকের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। যদিও বর্তমানে এই নিয়ম আছে (অনৈতিক কারযালাপে জড়িত এবং অনৈতিক কারযালাপের কারনে দুই বছরের অধিক সাজাপ্রাপ্তরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, কিন্তু ৫ বছর অতিক্রম হলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ বৈধ হবে) কিন্তু নির্বাচনের আগেই অনেক নাম থানার রেকর্ড থেকে মুছে যায়। সেজন্য যে কোন ধরনের অনৈতিক কারযালাপে নাম থাকলেই নিরবাচনের যোগ্যতা হারানোর ব্যাপারটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।)



৫। কোন বেক্তি একের অধিক আসনে নির্বাচন করতে পারবেন না। (এই আইন করলে সর্বাধিক সংখ্যক ব্যক্তি (৩০০জন) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ হবে এবং নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকার দিকে মনোযোগ দেয়ার সুযোগ বাড়বে কারন অতীত ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে সাধারণত নির্বাচন শেষে খুব কম সংসদ সদস্যই নিজস্ব এলাকার খবর নেয়ার সুযোগ পান। প্রত্যেকের এলাকা ভাগ থাকলে জবাবদিহিতায় ফাঁকির সুযোগ কম থাকবে এবং এলাকার উন্নয়ন ও তরান্বিত হওয়ার সুযোগ থাকবে।)



৬। নির্বাচনে নাম দেয়ার পূর্বে যে পার্টির পক্ষে নাম দেয়া হবে তারা প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ণয় পূর্বক নাম জমা দিবে এবং পরবর্তীতে কোন তথ্য মিথ্যা প্রমানিত হলে সে আসনে ওই পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহনের যোগ্যতা হারাবে এবং কোন ধরনের পুনঃবিবেচনা গ্রহনযোগ্যতায় আনা হবে না। ( সে ক্ষেত্রে পার্টি নিজে থেকেই যোগ্য প্রার্থীর নাম যাচাই বাছাই করে নির্বাচন কাউন্সিল এ জমা দিবে।)



৭। নির্বাচন কাউন্সিল প্রার্থীর নাম জমা শেষে যথাযথ পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে যোগ্য প্রার্থীর নামীয় তালিকা প্রকাশ করবে ও শুধু মাত্র যোগ্য প্রার্থীরাই নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবে। (সরকারি চাকুরীর ক্ষেত্রে স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানায় পুলিশ পাঠিয়ে যে কারো চারিত্রিক সনদ ভেরিফিকেশণ যে প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হয়, একি প্রক্রিয়া নির্বাচন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ও প্রযোজ্য হতে পারে।)



৮। যোগ্য প্রার্থীর যে তালিকা দেয়া হওয়া হবে, তার মধ্যে কারও নামে যদি উপরে উল্লেখিত নিয়ম লঙ্ঘনের কোন উপযুক্ত প্রমান পাওয়া যায় তবে তালিকায় সাক্ষরক্রিত নির্বাচন কাউন্সিল এর প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনা হবে এবং চাকুরি চ্যুত করা হবে। (এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কাউন্সিল এর সদস্যবৃন্দ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন।)



৯। যে সকল প্রার্থী নির্বাচনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন, তাদের সম্পূর্ণ যোগ্যতা এবং তাদের ও তাদের নিকট আত্মীয়দের স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। ( এতে করে প্রার্থীর নির্বাচনকালীণ সম্পদের একটি স্বচ্ছ ধারণা জনগণের নিকট থাকবে ও পরবর্তীতে যে কোন ধরনের অন্যায় উপায়ে অর্জনক্রীত অর্থের অপবাদ উঠলে হিসাব মিলানোতে সুবিধা হবে।)



১০। সকল প্রার্থী নির্বাচনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হওয়ার পরে নিজেদের নির্বাচনী এস্তেহার প্রকাশ করবে ( সম্পূর্ণ পরিকল্পনা, বাজেট, সময় ফ্রেম ইত্যাদি) যাতে সাধারণ জনগণ কোন প্রার্থী তাদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ও প্রয়োজন পূরণ করবে তা চিহ্নিত করতে পারেন। ওই সকল এস্তেহার সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, সরকারি ওয়েব সাইট ইত্যাদি এর মাধ্যমে সরাসরি জনগণের কাছে পৌছাতে হবে। এবং সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর যদি কোন এস্তেহার পূরণ করতে কোন প্রার্থী ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের ব্যাখ্যা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহন নিশ্চিত করা হবে এবং তারা ব্যাখ্যা প্রদানে বাধ্য থাকবেন।



১১। নির্বাচন প্রচারনায় যে টাকা খরচ করা হবে তার আয় সুত্র জন সম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। ( এতে নির্বাচনে যে মাত্রাতিরিক্ত টাকা অপব্যয় হয় তা রোধ করা সম্ভব হবে, কালো টাকা সাদা করার একটি সম্ভাবনা থাকবে এবং টাকা দিয়ে ভোট কেনার যে প্রবনতা আমাদের দেশে বিদ্যমান, তা কিছুটা কমবে, যদি পুরাপুরি বন্ধ নাও হয়।)



এ সকল নির্দেশাবলির অনেকগুলোই আমাদের বর্তমান সংবিধানে রয়েছে। (Click This Link) কিন্তু কিছু পরিবর্তন আনা হলে আমাদের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের আমূল পরিবর্তন সম্ভব বলেই আমার মনে হয়। সংসদে নির্বাচিত সদস্যগণ ও অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর ন্যায় জনগণের টাকায় ভুক্তভোগী কর্মচারী এবং জনগণের সেবাই উনাদের নির্বাচিত করার মূল উদ্দেশ্য, এই ধারণা সকল নির্বাচন প্রার্থীর ই থাকা অতীব জরুরি। আমাদের নিজেদের ও কিছু দোষ আছে। আমরা প্রার্থীর যোগ্যতা না দেখে শুধু মার্কা দেখে ভোট দেই। আমাদের সকলকেই এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শুধু মার্কা দেখে যতদিন আমরা আমাদের ভাগ্য অন্য কারো হাতে ছেড়ে দিব, ততদিন আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। আর শুধু নিয়ম প্রনয়ন করলেই হবে না। নিয়মের কোন অভাব বাংলাদেশে আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু প্রনদিত নিয়ম বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব ও আমাদের। আমাদের হয়ে এ কাজ অন্য কেও করে দিবে না। যতদিন আমরা “অন্য কেও করবে” এই মানসিকতাই ভুগবো, আমাদের কে এই যন্ত্রণাই স্বীকার করতে হবে। বাকিটা সম্পূর্ণ আমাদের নিজেদের হাতে। যদি সচেতন ব্যক্তি বেশি থাকে, তাহলেই সচেতন সরকার আসবে। তা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বর্তমান অচলাবস্থার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকবে।

এই ব্লগ টি সম্পূর্ণ ধারনার উপর ভিত্তি করে তৈরি। শত শত ভুল যে কেও ধরতে পারে এবং যে কোন ধরনের পরিবর্তন, উপদেশ এবং সংশোধন আন্তরিক ভাবে আমন্ত্রিত। এটি শুধু মাত্র একটি প্রচেষ্টা পরিবর্তনের সুচনার, যার শেষ শুধু মাত্র আপামর জনগণের একত্রিত অবদানের দ্বারাই সম্ভব।

এটিকে একটি অসম্ভব বাসনা ও মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত, সবকিছুই অসম্ভব ই ভাবা হয়, যতক্ষন না কাজ টি সম্পন্ন হয়।

“It always seems impossible until it’s done.”- Nelson Mandela

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.