নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জলপুরুষ

একজন সাধারন মানুষ।

জলপুরুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিডিয়ার ধর্ষণ ম্যানিয়া, লেজুরভাঙ্গা পাক ক্রিকেটারের কটূক্তি এবং একটি টুইস্ট!

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৫৩

খেলা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমার এক বন্ধু অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোন করে বলল- কিরে মামা! হ্যাপি এ কি খেলা দেখাইল!! এই না হইলে হাপি??
আমি কিছুক্ষন- (কয়েক সেকেন্ড) চুপ করে থেকে ভাবলাম ক্রিকেট দলে হ্যাপিটা আবার কে? দুই সেকেন্ডের মধ্যেই বুঝতে পারলাম রুবেলের কথা বলছে সে।
এবার মূল কাহিনিতে যাওয়া যাক।
রুবেল কে নিয়া পাকিস্তানী ক্রিকেটার এর কটূক্তি সমূহ বেশ ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে সারা দেশের মিডিয়া গুলোতে। পাকিস্তানী ক্রিকেটারকে জারজ, কুকুর ইত্যাদি বলে গালিও দেওয়া হচ্ছে! স্বাভাবিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুকনা মরিচ পাটায় দিয়া যেমনে পিশে তেমনি পাক ক্রিকেটারকে পিশতেছে। আমাদের ক্রিকেটারকে নিয়ে জয়ের মুহূর্তে লেজুরভাঙ্গা পাক ক্রিকেটারের এমন মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না।
কিন্তু টুইস্টটা অন্য জায়গায়-
যে মিডিয়া আজকে রুবেলকে নায়ক বানাচ্ছে সেই মিডিয়া রুবেল কে ধর্ষক বানিয়ে সকাল সন্ধ্যা ব্রেকিং নিউজ আর কাগজেরে শিরোনাম করে টিআরপি আর সার্কুলেশন বাড়াইছে। রাস্তার হকারটা বাসে বাসে চীৎকার করে খবর বিক্রি করছে- খবর লন দুই টাকা, পাচ টাকা, ক্রিকেটার রুবেল বাংলা ছবির নায়িকারে রেপ করছে। গরম খবর পড়েন। হকার ছেলেটির মুখের এমন কথায় দিনমজুর লোকটিও কোমরের লুঙ্গির ভাজ থেকে তিনটাকা বের করে পেপার কিনেছে তা সে পড়তে পারুক আর নাই পারুক। টেলিভিশনে রুবেল আর হ্যাপির রোমাঞ্চিত, অনুভুতিত, উত্তেজক কথাগুলো ব্রেকিং নিউজ হয়ে সারা দেশের মানুষ শুনেছে। পাড়ার ছোট ছেলেটির হাজার টাকা দামের চাইনিজ মোবাইলেও সেই অডিও খুজলে পাওয়া যাবে। সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারের পর শেয়ার। রুবেল হ্যাপির কথোপকথন ফাঁস। রুবেল হ্যাপির জীবনে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু উত্তেজনাকর কথাগুলোই ফাঁস হয়েছে অন্য কথা হয় নাই। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ হয়ে দাঁড়ালো হ্যাপি। রাষ্ট্রের প্রগতিশীল। শিল্পী। চলচ্চিত্রকার। লেখক। নারীবাদী। বুদ্ধিজীবী। সাংবাদিক। সুশীল। সবাই সারা বিশ্বে চীৎকার করে বলল- আমাদের দেশের ক্রিকেটার দের মধ্যে একজন ধর্ষক আছেন। যিনি চলচ্চিত্রের এক নায়িকাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছেন। রুবেল একজন ধর্ষক এই কথা সারা বিশ্বে প্রমান করার জন্য আমাদের কত না আপ্রান প্রচেষ্টা ছিল!!!!!
শ্রদ্ধেয় তসলিমা নাসরিনরা বিচার চেয়েছেন, শ্রদ্ধেয় চলচ্চিত্র পরিচালকরা হ্যাপির পাশে থেকে মামলা লরে যাবার জন্য মানবিকতার পরিচয় দিয়ে খবরের কাগজের কোনায় ছবি সহ এসেছেন। আজ পাক ক্রিকেটার সেই কথা তুলল-ব্যাস করো তাকে তুলধনা। রুবেলকে যখন আমরা ধর্ষক বলেছি তখনো আইনগত প্রমান হয়নি রুবেল এর সাথে হ্যাপির সম্পর্ক এর কথা। টুইস্টটা- আরও এক জায়গায় আছে- এখন পর্যন্ত কি আইনগত ভাবে প্রমান হয়েছে রুবেল এর নারী নির্যাতনের কথা???? কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে তাকে ধর্ষক বানাইয়া মুখে ফেনা তুলিয়া সেই ফেনায় জাহাজ ভাসিয়ে দিয়েছি। বোলে......। বোলে.........।
রুবেল আজ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ইতিহাস জয়ের অন্যতম নায়ক। আজকের দিনে কেউ হয়তবা হ্যাপির কথা তুলবে না। কিন্তু যাদের কানে হ্যাপির কথা আমরা পৌঁছে দিয়েছি, যারা আমাদের জন্ম থেকেই শত্রু, যারা আমাদের কোথাও ছুতা পেলেই গুতা দেওয়ার জন্য বসে থাকে তারা তো বলবেই। কারন তাদেরকে বলার সুযোগ করে দিয়েছি আমরা। তাদের কানে আমরা পৌঁছে দিয়েছি যে রুবেল ধর্ষক।
কোন তারকাই স্বাভাবিক জীবনের বাইরে নয়। তার জিবনেও অনেক কিছু ঘটে। সে ক্রিকেট তারকা হোক আর বিনোদন তারকা হোক। তবে অন্য দেশের তারকাদের এমন কিছু করলে হয়তবা দেশের স্বার্থে তা গোপন রাখা হয়। অথবা বিভিন্ন আইনি বিবেচনায় একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয় তারা। রুবেলকে যারা ধর্ষক বলে আঙ্গুল তুলেছে, সামাজিক মাধ্যম, পেপার পত্রিকায় কলামের পরে কলাম লিখেছে কেউ একজন বুকে হাত দিয়া বলুক- তাহার জীবনে এমন ঘটনা ঘটে নাই!!! হয়তবা এমন সৎ সাহস কারো নাই। তাহাদের রসময় জীবনের অডিওগুলি সত্তর- পচাত্তর চ্যানেলে আসলেই সব বুঝা যাইত। আসে নাই মাইরি।
সামনে বিশ্বকাপ, এমন একটি সময়ে রুবেল কে আমরা ধর্ষক বানিয়েছিলাম, কেন দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বার্থে আমরা পারতাম না বিষয়টা একটু গোপন করতে, পারতাম না বিষয়টা এতটা ফলাও ভাবে প্রচার না করে অভ্যন্তরীণ ভাবে মিমাংসা করতে। পারতাম না আইনি সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে!!! দেশের প্রতি এই ভালবাসাটুকু কি সেদিন আমাদের ছিল না!!!! আজ শুধু কুলাঙ্গার পাকিস্তান নয়, সারা বিশ্ব যদি রুবেলকে ধর্ষক বলে গালি দেয়, সারা বিশ্ব যদি বলে- রুবেল পার্ট টাইম ক্রিমিনাল আর পার্ট টাইম ক্রিকেটার- তাহলেও কিছু বলার নেই, এর জন্য দায়ী আমরা। যেই রুবেল বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে ইতিহাসের সাক্ষি বানিয়েছে, বিদেশীদের কাছে সেই রুবেলকে আমরা ধর্ষক বানিয়েছি, ক্রিমিনাল বানিয়েছি। দেশের বৃহত্তম স্বার্থে রুবেলের বিষয়টি অল্প একটু গোপন করতে কি পারতাম না আমরা, পারতাম না দু এক কলম কম লিখতে?
হা হা হা হা মজা নিলাম নাকি!!!
এমন একটা ঘটনা কি গোপন রাখা যায়!!! চার পাঁচটা মানুষ মরেছে! না খেয়ে মরেছে! বিনা দোষে, বিনা অপরাধে মরেছে! আগুনে পুড়ে গরিবের ঘর ভস্মীভূত হইছে!! এ খবর মিডিয়ায় আসুক আর নাই আসুক কার কোন গোপন কথা ফাঁস হইছে তা মিডিয়ায় আসবে। কে কেকে কেমন ভাবে ধর্ষণ করছে? ভিডিও সহ না দিলে কি আর মিডিয়া চলে? কে কাকে চুমা দিছে? কখন দিছে? কেমনে দিছে? রাইতে না দিনে? ফুল ভিডিও এবং অডিও না দিলে কি মিডিয়া চলে!!! নারী পুরুষের অন্তরঙ্গ আলাপের অডিও রেকর্ডিং টেলিভিশনে সম্প্রচার না করলে কি আর টি আর পি বাড়ে!!! আর সেইটা যদি হয় ক্রিকেটার রুবেলের!!! ওএমকে!! ও মোর খোদা!! সেইটা কি আর গোপন রাখা যায়!!!!! একটানা দশ দিন না খেয়ে দশ দিন পরে চোখের সামনে বিরিয়ানির লোভ সামলানো যায়, কিন্তু এমন একখান খবরের লোভ কি সামলানো যায়??? উক্ত খবরের সাথে মসলা পাতি ভালো ভাবে মিশিয়ে সারা বিশ্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে না দিয়ে ক্ষান্ত হওয়া যায় না। কে কার আগে রুবেল-হ্যাপি কে নিয়ে বসবে??
বাংলাদেশের যতদিন খেলা হয়েছে ততদিন খেলার নিউজ থাক বা না থাক হ্যাপির একটা নিউজ থেকেছে। মিডিয়ায়। হ্যাপির বানী, হ্যাপীর ফেচবুক স্ট্যাটাস! হ্যাপির টুইটার!!!! হ্যাপি রুবেলকে বলেছে- এগিয়ে যাও বাবু- সেটার স্ক্রিন শট!! সামাজিক মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। রুবেল কে যারা চিনে না তারা হ্যাপিকে এখন চিনে। আলোচিত শব্দ হ্যাপি।
আজ আমাদের ইতিহাস জয়ের নায়ক রুবেল। কেবল আজ নয় অনেক ইতিহাস জয়ের নায়ক রুবেল। আমাদের একটি সম্পদ। তার দিকে আঙ্গুল তুলে ধর্ষক ধর্ষক বলে চীৎকার করার আগে আমাদের একটু কি ভাবা উচিত নয়। এই সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। রুবেল আমাদের সন্তান! সন্তান ভুল করলে তাকে শাস্তি দেওয়া যায়, তবে সারা বিশ্বের সামনে তাকে নেংটা করে দিয়ে আমাদের সন্তান, আমাদের নায়ক বলে দাবী করা যায় না। আজ পঙ্গু পাকিস্তান রুবেল কে নিয়ে উপহাস করার মতো সুযোগ পেত না যদি না আমরা সেই সুযোগ না দিতাম।
আমরা শুধরাবো, অবশ্যই শুধরাবো, তবে সেটা যেন সবকিছু না হারিয়েই শুধরে নেই।
সাতকাহন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.