নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোনঠাসা মানুষের সারাদিন

joos

অনুভূতির চূড়ান্ত সীমায় না পৌঁছালে কিছু লিখতে পারিনা

joos › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেসজীবনের এক রাত

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:০৭

বাইরে তুমুল বৃষ্টি। আর বৃষ্টি শুরু হওয়ামাত্র সিলেটের অলিখিত নিয়ম মোতাবেক সেই রাত ৯টার সময় কারেন্ট চলে গেছে। এরপর বৃষ্টি থামলেও কারেন্ট আসার কোন নামই নাই। কতক্ষণ কার্ড খেলা হল, কতক্ষণ গানবাজনা হল, এরপর রাত ১২টার দিকে শুরু হল ভুতের গল্প বলা। কিসের ভুতের গল্প, যে-ই 'আমার মামা/চাচা/নানা/খালুর নিজের চোখে দেখা ঘটনা' বইলা গল্প শুরু করে তারই মামা/চাচা/নানা/খালুর ১৪গুষ্টিরে পচাইয়া ডাবল বিনোদন দেয় লম্বু রাকিব আর মোটু রিফাত, পাশে থেকে ছোট ছোট পিন মারে বজ্জাত ইয়ামিন। এইভাবে আসর জমানো সম্ভব না বুইঝা সুন্দরী বন্ধু কাশেম নতুন এপ্রোচে শুরু করলো "তোরা একটা ব্যাপার খেয়াল করছোস কিনা জানি না, ব্লা ব্লা ব্লা"। ২-৩টা এরকম গল্পের পর কাশেমরে ব্যপক পচানি দিল ছোটভাই রাব্বু। রাব্বু'র গল্প ছিল, "ভাই, একটা জিনিস খেয়াল করছেন কিনা জানি না। আগে আমাদের বাসার সামনে একটা মুরগি একলা হাঁটত, এখন দেখি মুরগিটা কয়েকটা বাচ্চা নিয়ে হাঁটে! ব্যাপারটা ভাইবা দেখার মত।" সাথে সাথে আমাদের নরমাল হাসিতে কাশেম যতটা না পচানি খাইলো, তার থেকে বেশি পেইন খাইলো 'ধলা মিঠু'র গা-জ্বলানো হাসিতে। রাত ২টা পর্যন্ত এই আড্ডা চলার পর মনে হইলো ক্ষুধার জ্বালায় আর বেশিদিন বাঁচব না, তাড়াতাড়ি খাওয়া উচিৎ (কারেন্ট ছিলনা দেখে আমি, অনি,পিয়াল কেউই তখনো ভাত খাইনাই)। ৫ঘন্টা কারেন্ট নাই, তাই কলে পানিও নাই। ভাত খাইতে হইলে হাত না ধুয়েই খাইতে হবে। কিন্তু যেই লেভেলের ক্ষুধা পেটে, হাত ধোয়ার গুল্লি মারি চিন্তা কইরা রান্নাঘরে গিয়া দেখি পোলাপান খাইয়া সাফ কইরা রাখছে সব, আমাদের খাওয়ার কিছু নাই। আমার আর পিটবুলের জন্য এই অভিজ্ঞতা নতুন না, কিন্তু মহামতি ছোটবেলা থেকেই জানে রাতের বেলা ভাত না খেলে শরীর থেকে এক চড়ুই সমান মাংস কমে যায়। তাই তাকে রাতে খেতেই হবে। আমার মাথায় তখন চিন্তা তেলছাড়া পরোটা দিয়ে মুগডাল না খাইতে পারলে এই জীবনে আর বাঁইচা থাইকা কি লাভ? ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে বের হয়ে গেলাম তিনজন, লিচুর টং এ খাবো। গিয়া দেখি লিচুর টং বন্ধ, হাঁইটা গেলাম রাগীব-রাবেয়া। হাসপাতালের আশেপাশে অন্তত হোটেল কিছু খোলা থাকবে। কিসের কি? একটা টং ছাড়া আর সব বন্ধ! পিটবুল আর মহামতি'র ক্ষুধা সহ্য হচ্ছেনা, তারা টঙে বন-চা খাইয়াই ক্ষুধা মিতাবে, কিন্তু আমি রাজি না। আমারে পরোটা-মুগডাল মারতেই হবে যেমনে হোক। ক্ষুধা পেটে রাগীব-রাবেয়া যখন আসছি, আম্বরখানাও যাইতে রাজি আছি। নগদে একটা সিএনজি পাইলাম হাসপাতালের সামনেই, উইঠা গেলাম। উঠার পর দেখি মহাবিপদ! সিএনজি'র হেডলাইট নষ্ট, ড্রাইভার নতুন চালানো শিখছে (মাঝেমধ্যে গিয়ার চেঞ্জ করতে ভুইলা যায়) তার উপর মাত্র বাগান থেকে লোড হইয়া আসছে। কোনটা রাস্তা আর কোনটা নালা বুঝতেছে না। মরার উপর খাঁড়ার ঘা, শুধু মদীনা মার্কেট না, পুরা সিলেটেই কারেন্ট নাই। আম্বরখানা পয়েন্ট পর্যন্ত আসার আগে একটা বাতিও জ্বলতে দেখিনাই। অমাবস্যা রাতে টাল মামা'র চেয়ে আমাদের তিনজনের রাস্তার দিকে মনোযোগ বেশি। একটু পরপরই মামারে ডিরেকশন দেই মামা সামনে আইল্যান্ড, গাড়ি বামে নেন। যা হোক, কোনমতে আম্বরখানা গিয়া কোপায় পরটা-মুগডাল মাইরা আবার মদীনা মার্কেটের দিকে রওনা দিলাম একটা রিকশা নিয়া। আম্বরখানা থেকেই তিনজনের আলোচনার টপিক ছিল "মেয়েরা কত খারাপ!" মহামতি ওনার অভিজ্ঞতার ঝোলা থেকে একের পর এক গল্প বের করা শুরু করলেন। প্রত্যেকটা গল্পের মূল কাহিনী থেকে স্টার্টিং লাইনগুলা জোস। যেমনঃ "আমার এক ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, এংগেজমেন্টের কথাবার্তা চলতেছে..."। এরকম স্টার্টিং শোনার পর হাইসাই কুল পাইনা, মূল কাহিনী আর কি শুনব? আমাদের হাসিতে পেইন খাইয়া মহামতি আবার আরেক গল্প শুরু করে- সেটার ইন্ট্রো হয় আরো মারাত্মক। এইদিকে আমাদের রিকশার মামা আবার অনেক বয়স্ক, উঁচু জায়গায় তিনজন টানতে পারেনা। তাই একটু পরপর পিটবুল আর মহামতি;কে নিচে নাইমা ১৫-২০কদম হাঁটতে হয়। শেষে পল্লবীর সামনে উঁচু জায়গাটায় আইসা মহামতি হাঁটার জন্য নামল, কিন্তু মামা ঢালু জায়গায় আইসা কেন জানি ওরে ভুইলাই গেল এক্কেবারে। ওরে ছাড়াই ধুমায় টানা শুরু করল। আমি আর পিলু ব্যাপারটা বুইঝাও মামা'রে কিছু বলি না, হাসিও না। কারণ জানি মহামতি এক্সট্রিম লেভেলে গিয়া একটা না একটা কিছু করবেই। অনি শুরুতে জোরে হাঁইটা, এরপর হালকা দৌড়, শেষে ঝাইরা দৌড় দিয়াও যখন রিকশা ধরতে পারল না, তখন "আচ্ছা, হাঁটি" বইলা এমন একটা ভাব নিল যেন এইটুকু ওর হাইটাই আসার ইচ্ছা ছিল। আর ঠিক তখনই আমাদের রিকশা পয়েন্তে আইসা দাঁড়ানোয় তার টাইমিংটাও হইছিল যাচ্ছেতাই রকমের হাস্যকর। এরপর পয়েন্ট থেকে মেসে ফিরা পর্যন্ত মহামতি'র কাকুতি-মিনত কাউরে বলিস না, পোলাপাইন পচাবে ব্লা ব্লা ব্লা। তবে বাসায় আসার সাথে সাথেই যা একটা বৃষ্টি নামছিল, জীবনের সেরা ঘুম দিছিলাম ওই রাতেই।



প্রায় ২০দিন ধরে মেসের বাইরে। কেন জানি এতকিছু থাকতে হঠাৎ ওই রাতের কথাই মনে পড়ল ঘুরায়-ফিরায়। এর থেকে উল্টাপাল্টা কিছু যে করিনাই- তা না। কিন্তু কেন জানি ঘুঁটঘূটে অন্ধকারের মধ্যে সিলেট শহরের রাস্তা ঘুরে পরটা-মুগডাল আর আড্ডাগুলা খুব ঘুরতেছে মাথায়। ব্যাপক মাস্তির সময়গুলা মিস করতেছি খুব।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:২০

ইউক্লিড রনি বলেছেন: বলেন কি!

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:২৩

joos বলেছেন: অসম্ভব/বেসম্ভব কিছু বললাম নাকি?!?!? B:-) B:-) B:-)

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:০২

স্বাধীন শোয়েব বলেছেন: প্রতি জোছনায় রাগিব রাবেয়ার পেছনের চা বাগানে ঘুরতে যেতাম। সারারাত হাটতাম। একদিন ভাত শেষ দেইখা পাঁচ ভাই চলে গেছিলাম নয়াবাজার থেকে। অবশ্য সেইদিন কবুতর খাওয়ার পিনিক উঠছিল।

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:১০

joos বলেছেন: রাগীব-রাবেয়ার পিছনে কম গেছি। যদিও একসময় মেস পাঠানটুলা পয়েন্টে ছিল। কেন জানি মনে হইতো রাতে ওই এলাকায় দেখলে পোলাপান মালখোর মনে করবে। মাল খাই না, তাই ওই রেপুটেশন গায়ে লাগাইতে ইচ্ছা করত না। আর ৫ভাইয়ের পিনিক কে কবে এড়াইতে পারছে? :P :P

৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:০৬

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: :) :)

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:২৯

joos বলেছেন: :-P :P !:#P =p~

৪| ০৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:৪৭

স্বাধীন শোয়েব বলেছেন: নয়াবাজার মহসিন মেসের সামনে দিয়ে একটা রাস্তা ভেতরের দিকে গেছে। পূর্ণিমার রাতে ওই দিকে অনেক সুন্দর লাগে। রাস্তাটা ঘুরতে ঘুরতে গোয়াবাড়ি :) হয়ে রাগিব রাবেয়ার সামনে গিয়ে উঠেছে। আরেকটা রাস্তা আছে ভার্সিটির পেছন দিয়ে..................... দারুন জায়গা।
রাগিব রাবেয়ার পেছনে গেলে এই সিল লাগবো কোনদিন ভাবিনাই :(

ভার্সিটি লাইফ মিস করি। সেই উচ্ছলতা, স্বাধীনতা।


জীবন বড়ই কঠিন। মাঝে মাঝে মনে হয় কি দরকার ছিল এত মজা করার। তাহলে এখন খারাপ লাগতনা।



০৫ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:১১

joos বলেছেন: 'গোয়াবাড়ি' শব্দটার পর স্মাইলিটা না দিলেও চলতো। B-))

সিলেটের কোন জায়গাটা সুন্দর না? শহরটা/ শহরটার আশেপাশের জায়গাগুলো যত দেখি ততই অবাক হই।

আমি ভার্সিটি লাইফের এক্সটেনশনে আছি। অন্য যে কারো জন্য ব্যাপারটা কষ্টদায়ক হলেও আমার জন্য অতটা কষ্টদায়ক না আশেপাশের মানুষগুলোর কারণে। সাস্টে পড়া না হলে যত ভাল ভার্সিটিতেই পড়তাম না কেন, জীবনের বড় একটা অংশ হারাতাম এবং ব্যাপারটা কখনো জানতামও না। ভার্সিটি ছেড়ে চলে গেলে এই দিনগুলা বেসম্ভব মিস করব। :((

৫| ০৫ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০৩

মর্তের_বাস্তবতা বলেছেন: রাগীব রাবেয়ার পিছের টিলাগুলি বেশি জুস, যাইহোক ওইখানে বেসি রাইতে ঘুরাঘুরি করা ভালো না।

মাইন্সে খ্রাপ কইবো, বিয়া শাদি দেওন যাইব না :-P :-P

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০৭

joos বলেছেন: যা অবস্থা চলতেছে, এমনেও বিয়া-শাদি হইবো না ছোটভাই। তার থেকে ওইদিকে ঘুরা-ফিরা কইরা একটু মালপানি'র টেস্ট নিয়া নিমু নাকি ভাবতেছি... :P :P :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.