নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কলির বালক

সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।

jotejoy

"বিশ্বাসের তাঁতে আজ আবার বুনতে চাই জীবনের দগ্ধ মুসলিন "

jotejoy › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলার গৌরব ও ঐতিহ্য (৪র্থকিস্তিঃমহাস্থান গড়,ভাসু বিহার,বেহুলার বাসর)

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪২

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর।এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল।







এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।

এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কি.মি উত্তরে মহাস্থান গড় অবস্থিত।

ইতিহাস

সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন (১০৮২-১১২৫) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল । মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীল এর সাথে। এসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে অসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে। কারণ তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনিই এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং রাজা হন। এই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। ইতিহাসে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত। কথিত আছে পরশুরামের সাথে ফকির বেশী আধ্যাত্মিক শক্তিধারী দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর যুদ্ধ হয়। (১২০৫-১২২০) যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।

দর্শনীয় স্থান



মহাস্থান গড় বাংলাদেশের একটি প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র। এখানে মাজার জিয়ারত করতে এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বহু লোক সমাগম ঘটে। এখানকার দানবাক্সে সংরক্ষিত অর্থের পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৭০ হাজার টাকা যা মাজার মসজিদের কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হয়।

মাজার শরীফ



মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছু পশ্চিমে হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর মাজার শরীফ অবস্থিত। কথিত আছে মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। কথিত আছে হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাহী সওয়ারেরর আগমন ঘটে।

কালীদহ সাগর

গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন।

শীলাদেবীর ঘাট



গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে ‘শীলাদেবীর ঘাট’। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে।

জিউৎকুন্ড



এই ঘাটের পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ আছে। কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত।

মিউজিয়াম



মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৬৭ সালে করতোয়া নদীর কিনারা ও মহাস্থানগড়ের টিলা সংলগ্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রত্নতাত্ত্বিক এই জাদুঘর। পরে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সেটি দেখাশোনা করে। উত্তরাঞ্চলের ঐতিহাসিক স্থানগুলো মহাস্থানগড়, দিনাজপুর, পাহাড়পুর, শেরপুর, রানী ভবানীপুর এলাকা থেকে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার করা প্রাচীন সামগ্রী ধীরে ধীরে জাদুঘরে শোভা পেতে থাকে। হাজার হাজার বছর আগের সোনা, রুপা, লোহা, ব্রোঞ্জ, পাথর, কাঁসাসহ বিভিন্ন মূল্যবান ধাতব পদার্থ ও পোড়ামাটির তৈরি মূর্তি, আত্মরক্ষার জন্য ধারালো অস্ত্র, নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র ইত্যাদি সামগ্রী শোভাবর্ধন করে মহাস্থানগড় জাদুঘরের। প্রায় সাড়ে তিন হাজার মিটার দৈর্ঘ্য, আড়াই হাজার মিটার প্রশস্ত ও উঁচু টিলাবেষ্টিত বগুড়ার মহাস্থানগড়ের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভিড় জমায় এখানে। আড়াই হাজার বছর আগের মানুষের তৈরি ইমারতগুলো এখানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। বছরের সব সময় দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখানে আসেন। মহাস্থানগড়ের সুউচ্চ টিলার ওপর হজরত শাহ সুলতান বলখীর (রহ.) মাজারে কেউ আসেন জিয়ারত করতে, কেউ আসেন মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নানা তথ্য ও ইতিহাস জানতে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, গবেষক, বিশেষজ্ঞরা শিক্ষা সফরের সুন্দর স্থান হিসেবে বেছে নিয়ে এখানে এসে থাকেন। মহাস্থানগড় জাদুঘর ফিল্ডে সৃষ্টি করা হয়েছে রঙ-বেরঙের ফুলবাগান। জাদুঘরের চারপাশে নানা জাতের গাছ লাগিয়ে এর আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আগতদের জন্য মহাস্থানগড়ের টিলাসংলগ্ন আমবাগানে গড়ে তোলা হয়েছে পিকনিক স্পট।

দেশ-বিদেশের ভিআইপিদের জন্য করতোয়া নদীর ওপর অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক ইমারত। জাদুঘর কাস্টোডিয়ানের (জিম্মাদর) অনুমতি নিয়ে সেখানে অতিথিরা থাকতে পারেন। মহাস্থানগড় ও এর আশপাশের যেসব ঐতিহাসিক নিদর্শন আজও তার ঐতিহ্য নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে, সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিদর্শনের নাম এখানে উল্লেখ করা হলো : ১. খোদার পাথর ভিটা, ২. মানখালীর কুণ্ড, ৩. জীবিত কূপ বা জিয়ত কুণ্ড বা জিয়ন কূপ, ৪. বৈরাগীর ভিটা, ৫. বন্দুকধরা, ৬. হাতিবান্ধা, ৭. হাতিডোবা পুকুর, ৮. ধোপাপুকুর বা ধোপা পক্রা, ৯. মনিরঘোন, ১০. শিলাদেবীর ঘাট, ১১. গোবিন্দভিটা, ১২. কালিদহ সাগর, বিষপত্তন ও পদ্মার বাড়ী, ১৩. গোকুলের বেহুলা লক্ষীন্দরের মেধ বা মেড়, ১৪. মথুরা, ১৫. চিঙ্গাশপুর, ১৬. ভীমের জাঙ্গাল, ১৭. কাঞ্জিরহাঁড়ি এবং ছেলীরধাপ, ১৮. ভাসু বিহার, ১৯. সম্রাট ফারুক শিয়ারের আমলের মসজিদ, ২০. গোদার ধাপ, ২১. কানাইয়ের ধাপসহ আরও শতাধিক উল্লেখযোগ্য প্রাচীন ঐতিহ্য।



বেহুলার বাসর ঘর/গোকুল মেধ




বগুড়া শহর থেকে ১০কিলোমিটার উত্তরে এবং মহাস্থানগড় থেকে ২কিলোমিটার দক্ষিণে গোকুল গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে গোকুল মেধ অবস্থিত। স্মৃতিস্তুপটি যুগযুগ ধরে অতীতের অসংখ্য ঘটনাবলীর নিদর্শন । এটি বেহুলার বাসর ঘর নামে ব্যাপক পরিচিত। এ বাসর ঘর মেড় থেকে মেদ এবং বর্তমানে পুরার্কীতি নামে পরিচিত। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মতে আনুমানিক খৃস্টাব্দ সপ্তম শতাব্দি থেকে ১২০০ শতাব্দির মধ্যে এটা নির্মিত। এ স্তুপটি পূর্ব-পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং ত্রিকোন বিশিষ্ট ১৭২টি কক্ষ, অকল্পনীয় এ কক্ষগুলোর অসমতা এবং এলোমেলো বুনিয়াদ এর বোধগম্যতাকে আরো দুর্বোধ করে তুলেছে। বেহুলার কাহিনী সেনযুগের অনেক পূর্বেকার ঘটনা। বেহুলার বাসরঘর একটি অকল্পনীয় মনুমেন্ট। বর্তমান গবেষকদের মতে এ মনুমেন্ট ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খৃস্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৈদ্যমঠ। এই স্তুপটিই বাসরঘর নয়। এই স্তুপটির পশ্চিমার্ধে আছে বাসর ঘরের প্রবাদ স্মৃতিচিহ্ন। পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি বাথরুম। উক্ত বাথরুমের মধ্যে ছিল ৮ ফুট গভীর একটি কুপ



ভাসু বিহার বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। এটি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়, মহাস্থানগড় থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে বিহার ইউনিয়নের ভাসু বিহার নামক গ্রামে অবস্থিত। স্থানীয়রা একে নরপতির ধাপ হিসেবে চেনে।ধারণা করা হয়, এটি একটি সংঘারামের ধ্বংসাবশেষ। খননকার্যের ফলে সেখানে ব্রোঞ্জের বৌদ্ধমুর্তি, পোড়ামাটির ফলকসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু আবিষ্কৃত হয়েছে।মহাস্থান থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমের বিহার গ্রামটিতে বিপুলসংখ্যক বৌদ্ধযুগীয় ইমারতের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে আছে। গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নাগর নদের তীরে ৭০০৬০০ ফুট আয়তনবিশিষ্ট প্রাচীন ইমারতের ধ্বংসাবশেষকেই ১৮৭৯ সালে স্যার আলেকাজান্ডার কানিংহাম, হিউয়েন সাং বর্ণিত এবং ইতিহাসখ্যাত ভাসু বিহার বলে শনাক্ত করেছিলেন। দশম শতাব্দীতে নির্মিত বৌদ্ধ বিহার দুটোর মধ্যে একটি বড় অন্যটি ছোট। বড়টি উত্তর দিকে এবং ছোটটি দক্ষিণে অবস্থিত।

উত্তর দিকের বড় বিহার : দুর্গের মতো করে বানানো ১৮৪ ফুট ী সাড়ে ১৬১ ফুট আয়তনের পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা দক্ষিণমুখী বিহারের সাড়ে ৮ ফুট পুরু প্রাচীরকে পেছনের দেয়াল হিসেবে ব্যবহার করে ৩১টি কক্ষ নির্মিত হয়েছিল। ১১ ী ১০ ফুট আয়তনের ঘরগুলোর সামনের দেয়াল ছিল সাড়ে ৬ ফুট পুরু। বারান্দা ও ভেতরের পবেশ কক্ষ এবং ২টি প্রহরী কক্ষসহ বিহারটির সামগ্রিক নির্মাণকৌশল পশ্চিম দিকের ছোট বিহারটির কাছাকাছি।

পশ্চিম দিকের ছোট বিহার : অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের পশ্চিম বিহারটি বড় বিহারের ৭৫ ফুট দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। কাদার গাঁথুনি দিয়ে ইটের সাহায্যে নির্মিত উত্তরে ১৬২ ফুট লম্বা ও দক্ষিণে ১৫২ ফুট চওড়া প্রায় বর্গাকারে নির্মিত এই বিহারের কক্ষ সংখ্যা ছিল ২৬টি। পূর্বদিকে ৫টি এবং বাকি তিন দিকে ৭টি করে কক্ষ ছিল। পূর্বমুখী এই বিহারে একটি প্রবেশ হল ছিল। স্তম্ভযুক্ত এই হলের আয়তন ছিল ২৪ ী ১৯ ফুট।

সাড়ে ৮ ফুট পুরু বিহার প্রাচীরকে পেছনের দেয়াল হিসেবে ব্যবহার করে নির্মিত এসব কক্ষের সামনের দেয়াল ছিল সাড়ে ৬ ফুট পুরু। সাড়ে ৩ ফুট পুরু দেয়ালঘেরা সাড়ে আট ফুট চওড়া বারান্দার সঙ্গে কক্ষগুলো যুক্ত ছিল। বিহারের কেন্দ্রে ছিল ৮২ ী ৮০ ফুট আয়তনের প্রায় বর্গাকার প্রাঙ্গণ। বিহারটির ছাদে ওঠার সিঁড়িরও আভাস পাওয়া গেছে। পশ্চিম দিকের বারান্দা থেকে সামান্য প্রসারিত একটি অংশ থেকে ৫টি ধাপবিশিষ্ট একটি সিঁড়ি নেমে গেছে কেন্দ্রীয় প্রাঙ্গণে।

এই বিহারের বাইরের দিকের দেয়ালের কারুকাজ ছিল চমৎকার। বাঁকানো ইটের কার্নিশযুক্ত এই দেয়াল দেখলেই এর নির্মাতাদের উন্নত শিল্পবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। এই বিহারেও কোনো কেন্দ্রীয় মন্দির ছিল না।



সিংহ দ্বারে দাঁড়ালে মনে হয় এই বুঝি টগবগিয়ে ঘোড়ার বহর ছুটে আসছে। প্রহরী হুঙ্কার দিয়ে বলবে হুঁশিয়ার, সাবধান! আবার মনে হয়, রাজদরবারে শাসনব্যবস্থার দায়িত্ব বণ্টন চলছে। স্নান শেষে রাজকন্যার দিঘলকালো কেশ শুকাতে সহকারীরা ব্যতিব্যস্ত। এমন সব কথা মনের গভীরে জেগে ওঠে যখন মহাস্থানগড়ে পা রাখা হয়। কয়েকশ বছর ধরে মহাস্থানগড় বা পুণ্ড্রনগর ছিল মৌর্য, গুপ্ত ও পাল রাজবংশের রাজাদের প্রাদেশিক রাজধানী। মৌর্য আমলে এটি ছিল একটি প্রসিদ্ধ শাসনকেন্দ্র। এখানে একজন মহাপাত্র বা প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিযুক্ত ছিলেন।



প্রত্নতাত্তি্বক অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রচলিত প্রত্নতাত্তি্বক আইন অনুযায়ী মহাস্থানগড়ের কোনো অংশ ধ্বংস বা বিকৃত করা অথবা ইট খুলে নেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এই আইন থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। একটি আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সব উপাদান থাকলেও নেই সঠিক পরিচর্চা। বঙ্গবন্ধু (যমুনা) সেতু চালুর পর সড়কপথে ঢাকা থেকে বগুড়ার যোগাযোগ অনেকটা সহজ হয়ে আসায় এখন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে কয়েকশ পর্যটক বা দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। তারা ঘুরে ঘুরে মহাস্থানগড় দেখেন আর অতীতের পুণ্ড্রনগরের শোনা গল্পের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে থাকেন। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মীর শাহে আলম জানান, মহাস্থানগড়ে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে শত শত পর্যটক আসেন। সবচেয়ে বেশি আসে ছুটির দিনগুলোতে। সেখানে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ রয়েছে। প্রতি শুক্রবার বিশেষ দিবস হিসেবে নানা ধর্মের মানুষ মহাস্থানগড়ে এসে মাজার জিয়ারত করে থাকেন। আমাদের চেষ্টা আছে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিকভাবে মহাস্থানগড়ের পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রদানে।

ভবানী মন্দির :





উপমহাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৫১টি পীঠস্থানের মধ্যে অন্যতম ঐতিহাসিক বগুড়ার শেরপুরের মা ভবানীর মন্দির। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলংকা থেকে হাজার হাজার পুণ্যার্থী এখানে আসেন। বগুড়া জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিন পশ্চিমে উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের সবুজ শ্যামলে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এক লীলাভুমি মা ভবানী মন্দির। নাটোরের রানী ভবানী এস্টেট কর্তৃক দেবোত্তর ১২ বিঘা জমির ওপর ওই মন্দির অবকাঠামো স্থাপিত। প্রাচীর বেষ্টিত মন্দির চত্বরের মধ্যে রয়েছে দক্ষিন মুখী মুল মন্দির, বামেশ ভৈরব শিবমন্দির, অপর তিনটি শিবমন্দির, ভোগ পাকশালা ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩২ ফুট প্রস্থ নাটমন্দির ( আটচালা) দুটি অতিথিশালা, বাসুদেব মন্দির, গোপাল মন্দির নরনারায়ন সেবাঙ্গন (শ্যামাপ্রসাদ সেবা অঙ্গন) শাঁখারী পুকুর, দুটি স্নান ঘাট, বেষ্টনী প্রাচীরের বাইরে তিনটি শিবমন্দির এবং একটি পঞ্চমুন্ড আসন রয়েছে। বিরতিহীন বাসে বগুড়া শহর থেকে পনের ও অন্যান্য বাসে বারো টাকায় শেরপুর শহরে আসতে হবে। সময় লাগবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। এরপর শেরপুর উপজেলা সদর থেকে অটোটেম্পু, রিকসা, ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন যোগে মা ভবানী মন্দিরে যাওয়া যায়। তবে মাত্র ১০ টাকা ভাড়ায় টেম্পুযোগে সরাসরি মন্দিরে যাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা বটতলা নেমে সেখান থেকেও রিক্সাভ্যানে মন্দিরে যাওয়া যায়।

কথিত আছে যে এখানে একদা একজন শাঁখাওয়ালা (শাঁখা নির্মাতা) ভবানীপুর মন্দিরের ধারের গভীর জঙ্গলের পাশের একটি পুকুরের ধার অতিক্রম করছিলেন। এমন সময় সিঁথিতে সিঁদুর দেয়া একটি ছোট মেয়ে তার কাছে গিয়ে বলেছিল যে সে নাটোর রাজবাড়ির রাজকন্যা। সে শাঁখাওয়ালার কাছ থেকে এক জোড়া শাঁখা কিনল এবং বলল যে শাঁখাওয়ালা যেন নাটোরের মহারাণীকে বলেন যে প্রাসাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা ঝুড়ি থেকে তার শাঁখার দাম দিয়ে দেন। শাঁখাওয়ালা মেয়েটির বিনীত কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকে শাঁখা দিয়ে দিলেন। শাঁখাওয়ালার মুখ থেকে ছোট মেয়েটির কথা শুনে মহারাণী লোকজন ও সেই শাঁখাওয়ালাকে নিয়ে মেয়েটির বলা জায়গায় গেলেন। শাঁখাওয়ালার প্রার্থনা শুনে মা ভবানী সেই শাঁখা-পুকুর থেকে তার দুই হাতের শাঁখা তুলে দেখালেন। মহারানী ও সেখানে উপস্থিত লোকজন এতে বিস্মিত হলেন এবং মা ভবানীর (মা তারার) মহিমা এই উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ল। এই কিংবদন্তির শাঁখা-পুকুরে তীর্থযাত্রীরা স্নান করেন।

পানিহাটিতে অবস্থিত শ্রীচৈতন্যদেবের অন্তরঙ্গ পার্ষদ রাঘব পন্ডিতের শ্রীপাটের মাধবীলতা কুঞ্জে আছে রাঘব পন্ডিতের সমাধি। তাঁর পুজিত মদনমোহন বিগ্রহের নিত্য পূজা হয়ে থাকে। তাছাড়া শ্রীচৈতন্যদেবেরও নিত্য পূজা হয়। শ্রীচৈতন্যদেবের চরণ চিহ্ন আছে এখানে। সুপ্রাচীন বটবৃক্ষ নিচে চৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দ বিশ্রাম করেছিলেন এ রকম জনশ্রুতি। বটবৃক্ষের মূল বেষ্টন করে বেদী তৈরি হয়েছে। একটি ফলকে উৎকীর্ণ আছে তাদের আগমণের তথ্য। বটগাছের কাছেই পূরানো ঘাটের ভগ্নাবশেষে একটি প্রস্তর ফলকে উল্লাখ আছে যে, এটি নির্মিত হয় হিন্দু আমলে। তাছাড়া পুরী থেকে প্রত্যাবর্তন সময় নৌকা থেকে এখানে নেমেছিলেন শ্রী চৈতন্য কার্তিকী কৃষ্ণা দ্বাদশী তিথিতে। সেদিন ছিল রবিবার। তাঁর আগমন স্মারক উৎসব ও মেলা হয় প্রতিবছর কার্তিক মাসের কৃষ্ণা দ্বাদশী তিথির পরের রবিবারে।



সপ্তগ্রামের রাজকুমার রঘুনাথ দাস গোস্বামী পানিহাটির বটগাছের নিচে নিত্যানন্দের সাথে দেখা করেন। তাঁদের চিঁড়ে দই খাওয়ান। দন্ড মহোৎসব নামে পরিচিত এই ভোজন মহোৎসব। জৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে আয়োজিত মহোৎসবে বহু ভক্ত বৈষ্ণব মিলিত হয়ে থাকেন।

বটগাছের কাছের কাছেই একটি ছোট ঘরের মধ্যে শ্রীচৈতন্যদেবের চরণচিহ্ন আছে। রাঘব পন্ডিতের গৃহে অবস্থান সময়ে নিত্যানন্দ গঙ্গাতীরের বিভিন্ন গ্রামে প্রেমধর্ম প্রচার করেছিলেন।

পানিহাটির আরও একটি বটগাছের নিচে বৃন্দাবনের চৌষট্টি মহান্তের একটি স্মৃতি সমাধি মন্দির আছে। এখানে বহু মহাপুরুষ ও ভক্তের স্মৃতি মঞ্চ এবং প্রস্তর ফলক রয়েছে। তাছাড়া শ্রীগৌরাঙ্গ গ্রন্থমন্দিরে আছে বহু বৈষ্ণব ভক্তের স্মৃতি চিহ্ন।মহানির্বাণ মঠের প্রতিষ্ঠাতা অবধূত ঞ্জানানন্দ স্বামীর জন্মভিটায় নির্মিত হয়েছে ‘কৈবল্যমঠ’। মঠের কাছে আনন্দময়ী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন আগড়পাড়ার দ্বিজেন্দ্রকুমার নাগ। মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয় দেবী আনন্দময়ী। তাছাড়াও এখানে অন্যান্য দেবদেবীর বিগ্রহ আছে।

খ্রীষ্টীয় তৃতীয় শতকের শেষে সপ্তগ্রামের মহারাজা চন্দকেতু পানিহাটিতে গড় নির্মাণ করেছিলেন। ঐ গড়ের ভিতরে ছিল ভবানী কালী মূর্তি। সেজন্য গড়টি পরিচিত ছিল ভবানীগড় নামে। সমগ্র অঞ্চলটি লোক মুখে হয় ভবানীপুর। এই মহারাজা চন্দকেতুর নাম উল্লেখ করা হয়েছে কুতব মিনারের পাশের লৌহস্তম্ভে। পানিহাটি ও সোদপুর থেকে ছয় কি.মি. পূর্বে নাটাগড়ে আছে একটি প্রাচীন গড়। এখানে শিবমন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। বেড়াচাঁপা-দেগঙ্গা থেকে পানিহাটিতে রাজার তৈরি পয়ঃপ্রণালীর নিদর্শন আছে।

গুরুত্ব

সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলে মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণু দেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখন্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় এবং এ সকল স্থানসমূহ শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পায়। বিভিন্ন সূত্র মতে, করতোয়াতটের এ ভবানীপুরে সতী মাতা তারার বাম পায়ের অলঙ্কার বা বাম পাঁজর বা ডান চোখ বা বিছানা পড়েছিল বলে জানা যায়। ভবানীপুর বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশেরবিখ্যাত শক্তিপীঠসমূহের মধ্যে অন্যতম। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের ভক্তরা সারা বছর এখানে তীর্থে আসেন।



তথ্য সূএঃইন্টারনেট

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


আবারো একটি সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০৬

jotejoy বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১২

নীল আকাশে স্বপ্নডানা বলেছেন: ভাল পোস্ট, প্রিয়তে রাখলাম!! +++

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৭

jotejoy বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ।

৩| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:২০

শান্তা273 বলেছেন: চমৎকার পোস্ট!
+++++++

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৭

jotejoy বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ।

৪| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৩

অতল গহবর বলেছেন: ভাল পোষ্ট। ধন্যবাদ।

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৯

jotejoy বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.