নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয়দেব করের লেখাজোকা

জয়দেব কর

অন্ধ আমি অন্ধকারে আলো কুড়াই,গন্ধরাজের গন্ধে মাতাল জীবন পোড়াই!

জয়দেব কর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তির পথে বুদ্ধ : অভাজনের ভাবনা

২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:২৭

অন্যান্য প্রাণীদের সাথে তুলনা করলে মানুষের বিশিষ্টতা তার চিন্তাশক্তির সক্ষমতা। এই বৈশিষ্ট্যই মানুষকে অন্য প্রাণিদের থেকে ভিন্ন করে তুলেছে। আবার মানুষে মানুষে ভিন্নতার মূল মানদণ্ডও এই চিন্তার ভিন্নতা। জগতের সকল উন্নতি-অবনতির মূলেও চিন্তাই সর্বেশ্বর। ইতিবাচক চিন্তার স্বাধীনতা ব্যক্তি-মানুষকে করে তোলে মুক্ত ও আলোকিত, আবার নেতিবাচক স্বাধীনতা কিছু মানুষকে করে তোলে স্বেচ্ছাচারী ও বদ্ধ। যুগে যুগে আমরা যে সকল আলোকপ্রাপ্ত মানুষের সন্ধান পাই, তাঁদের মধ্যে যে জিনিসটা দেখা যায় তা হলো_ তাঁরা পরিবার-সমাজ-ধর্ম-রাষ্ট্রের নির্ধারিত করে দেওয়া চিন্তাপোশাক ছুঁড়ে ফেলে আপন অন্তরালোকের দ্বারস্থ হন এবং চিন্তার স্বাধীনতাকে আত্মপরের মঙ্গলে কায়-বাক্য-মনে প্রয়োগ করেন। গৌতম বুদ্ধ সেই আলোকপ্রাপ্তদের একজন যিনি কায়-বাক্য-মনে মানুষকে শিল্পিত ও সুস্থ হওয়ার শিক্ষা দিয়ে গেছেন সারাজীবন। তাঁর প্রজ্ঞানির্ভর তর্ক-বিতর্কের শিক্ষাপদ্ধতি ভারতীয় তথা পৃথিবীর চিন্তাশীল মানুষকে দিয়ে গেছে এক মহামূল্যবান সঞ্জীবনী শক্তি। কথা বলার শিল্প, জীবনযাপনের শিল্প, ভাবনার শিল্প নির্মাণে তাঁর আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ মানব জাতির প্রতি এক অনন্য উপহার। ধর্মকীর্তি, নাগার্জুন, বসুবন্ধু, অসঙ্গ প্রভৃতি মনীষী আলোচনা-সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই নির্মিত হয়েছিলেন।

গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে আমার আগ্রহের জায়গাটি হলো তাঁর প্রজ্ঞা ও সারল্যের অভিজাত্য। যে আভিজাত্য সকল প্রাণীকে দেখে সন্তানের মতো। মহাপ্রকৃতিকে বুকে নিয়ে এমন প্রেমের আহবান সহস্রাব্দ পেরিয়েও ম্লান হয়নি। মাটিতে চাপা দিয়েও অপশক্তি রোধ করতে পারেনি এই প্রেমিকসত্তার উদাত্থ আহবান, " নিজেই নিজের নাথ বা ত্রাতা, অন্য কোনও নাথ বা ত্রাতা নেই”। প্রচলিত ধর্মগুলো যেখানে মানুষকে তার নিজের সত্তার প্রতি অশ্রদ্ধাশীল করে তোলতে মরিয়া, সেখানে বুদ্ধ মানুষকে নিজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার এই মৌলিক পাঠটি দিয়েছেন। তথাকথিত ধর্মযাজক-প্রবর্তকদের শঠতার হাসি তাঁর মুখে ছিল না। নিজেকে পুজোর আসনে বসিয়ে পা বাড়িয়ে দেননি তাঁকে পূজা করার জন্য। মাটির পৃথিবীতে নিজেকে সকল মানুষের ও সকল জীবের একজন ভেবেই কাজ করেগেছেন, যেখানে পা নয় বুকই সংযোগের একমাত্র জায়গা। তিনি মানুষকে যে মর্যাদায় দেখতেন, তা হলো_ কেউ তার সমান নয়, কেউ তার চেয়ে ছোটো নয়, আবার কেউ তার চেয়ে বড়োও নয়। ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য স্বীকার করার মতো এই উন্নত বোধ নিয়েই তিনি প্রচার করেছিলেন, " সঙ্ঘং সরনং গচ্ছামী" নামক মানুষের সামাজিক মুক্তিযানের কথা।

ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেও সুকর্ম যেমন করা যায় তেমন পরকাল বিশ্বাস না করেও সুকর্ম করা যায়। যারা অভিজ্ঞতাবাদী তাদের কাছে বিশ্বাসের কোনও মূল্য নেই। মূল্য রয়েছে শ্রদ্ধার। কারণ বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়া হয়। আর শ্রদ্ধা অন্তরে উদিত হয় এবং তা পরীক্ষা-নীরিক্ষার ফলস্বরূপ, মানে 'এহি পাসসিকো' বা ‘এসো, দেখো, ভালো লাগলে গ্রহণ করো’ চ্যলেঞ্জ মোকাবেলা করে জন্ম নেওয়া এক পরম বোধের নাম। পুরোহিতরা মুষ্টিবদ্ধ করে বলত তাদের মুষ্টির মধ্যে সত্য লুকায়িত। সেই সত্য কী? ঈশ্বর আর পরকাল। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে শেখাতো_ পূজা আর পুরোহিতকে দানের মধ্যেই ক্ষত্রিয়-বৈশ্যের মুক্তি। নারী ও শুদ্রের মুক্তি সেবায়। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এমন কপট উচ্চারণ মোকাবেলা করে তথাগত গৌতম মুষ্টি খুলে ঘোষণা করেন তাঁর মুষ্টির ভেতর কোনও কিছু লুকিয়ে রাখা তাঁর ধম্ম নয় এবং মানুষে মানুষে ভেদ তৈরি ধম্ম নয়। খোলা মুষ্টিতেই সকল সত্য নিহিত। সেই সত্যগুলো হলো _চার মহাসত্য, অষ্টাঙ্গিক মহাপথ, প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি, যা যে কেউ অনুশীলন করে আপন মুক্তির পথ নির্মাণ করতে পারেন। শুধু তাই নয়, তিনি আরও চমৎকারভাবে মানুষকে মর্যাদা দিয়েছেন। বলেছেন, "আমার দর্শন ভেলার ন্যায়, পারাপারের বাহন; মাথায় তোলে ঘোরার কিছু নয়"।
কুসংস্কার, অন্ধতা, অলৌকিকতাসহ সকল অপবিশ্বাসের বিরুদ্ধে বুদ্ধের জগৎমুখী শিক্ষার অবস্থান। এতে প্রার্থনার কোনও স্থান নেই। অনুশীলনই মুখ্য। হাত পেতে ভিখিরির মতো চাওয়ার নিরর্থক ব্যক্তিত্বহীন চর্চাকে তিনি খারিজ করে দিয়ে বলেছেন_"আত্মশরণ অনন্য শরণ।"
বুদ্ধ স্মরণকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষক। আত্মবিশুদ্ধির মাধ্যমে মানসিক সুস্থতার যে সহজ রাস্তা তিনি দেখিয়েছেন সে সহজ রাস্তার মূল স্তম্ভ হলো প্রজ্ঞা ও প্রেমাশ্রিত সুচিন্তা, সুকর্ম এবং সুবচন। তিনি তাও বলেগেছেন যে, যে কাজে আত্মপরের কল্যাণ নিহিত থাকে সে কার্যসাধন করা কর্তব্য, আর যে কাজে আত্মপরের কল্যাণ নেই তা পরিত্যাজ্য। সর্বজনীন কল্যাণকামনা যাকে বলি সে মৈত্রীভাবনা হলো একজন মানুষের সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের পথ্য। মহাজাগতিক প্রেমবোধে জাগ্রত আধুনিক মানুষের পৃথিবীর তাবত মনোবিজ্ঞান ও তার সমৃদ্ধি বুদ্ধ ও তাঁর শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য নৈকট্য পাবে চিরটাকাল ।
তিনি বলেন, মন ধর্মসমূহের অগ্রে থাকে। কলুষিত মনে কর্ম করলে দুঃখ ছায়ার ন্যায় সঙ্গী হয়। বিশুদ্ধ মনে কর্ম করলে সুখ ছায়ার ন্যায় সঙ্গী হয়। যে মানসিক অসুস্থতায় সিংহভাগ মানুষ জর্জরিত হয়ে দুঃখে নিপততিত সেই অসুস্থতার মূল উৎস হলো লোভ-দ্বেষ-মোহ। আর এই তিনের আধার হলো তাদের অবিদ্যা বা অজ্ঞানতা। এই অবিদ্যা বা অজ্ঞানতা থেকে সৃষ্ট দুঃখের হাত থেকে রক্ষা পেতে মানুষ কত না চেষ্টা করে। কিন্তু সেই চেষ্টায় মানুষ প্রতারিত হয় তখনই যখন পর্যন্ত সে জানতে পারে না দুঃখের কারণ কী? আর শোষক ও পুরোহিতগোষ্ঠী কার্যকারণমুখী শিক্ষা থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে দিয়ে আলতফালতু বিষয়ে মগ্ন রেখে জীবন ও সংসার দুঃখময় করে তোলে। যে মানুষ বুদ্ধের শিক্ষার আত্মশুদ্ধির স্বাদ একবার পায় সে পুরোহিতের কারাগার থেকে মুক্তির স্বাদ প্রথমে পায়, তারপর পায় নিজের সৃষ্ট কারাগার থেকে মুক্তি।

বুদ্ধশিক্ষার মূলকথা _করুণা ও প্রজ্ঞা জাগ্রত করো। আজকের দিনের কল্যাণমুখী বিজ্ঞানও স্বীকার করে করুণা ও প্রজ্ঞা প্রকৃত মানব-প্রকৃতি বহন করে। প্রকৃত মানবপ্রকৃতিই স্বধর্ম, তা-ই প্রকৃত মানবিক। যা কিছু অমানবিক তা-ই পরধর্ম। তিনি বলেন এই পরধর্মই মনে বিরাজ করে লোভ-দ্বেষ-মোহ নাম ধরে। পরধর্মে জর্জরিত মানুষগুলো অহমের বিষাক্ত থাবায় বন্দি। অহমের বিষে বন্দি মানুষ এই বন্দীত্ব ছড়িয়ে দেয় বা দিতে চায়_ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে, সমাজ থেকে সমাজে। যার ফলে হিংসা-বিদ্বেষে কলুষিত হয়ে ওঠে মহামাতৃকা পৃথিবী।

তাই ব্যক্তিগত ও সামাজিক সুখ-শান্তি নিশ্চিত করতেই আপন গরজ তথা মনুষ্যগরজেই মানুষকে বুদ্ধনির্দেশিত ধম্ম সুকর্ম-সুচিন্তা-সুবচনের আশ্রয় নিতেই হবে। তাঁর ধম্ম হচ্ছে কুশল মনোবৃত্তি তৈরির এক উন্নততর শিক্ষাপদ্ধতির নাম, যা অমার্জিত অসংস্কৃত (মিথ্যাদৃষ্টিপরায়ণ) ব্যক্তির ক্ষেত্রে সহজে মেনে নেওয়ার মতো নয়।

সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার মতো সর্বসত্তার প্রতি তাঁর সর্বজনীন প্রেমের এই নান্দনিক শিক্ষা এড়িয়ে গিয়ে বাকির লোভে নগদ পাওনা ছেড়ে দেওয়ার মতো মূঢ়তাই আমাদেরকে প্রগতির চাকা সচল করতে দিচ্ছে না। এত অর্জনের পরেও আমরা সামগ্রিকভাবে মানবিক হয়ে উঠতে পারছি না।

২।
সত্য ও মিথ্যা নিয়ে সংসার চলমান। কেউ মিথ্যাকে সত্য বলে জানে, আবার কেউ সত্যকে মিথ্যা বলে জানে। এমন ভ্রান্তির শিকার মানুষের সংখ্যাই বেশি। সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলে জানতে পারার পথের অন্তরায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করার কথা বুদ্ধ বলেন। তা নাহলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক হয় না। আমরা মানুষ। পরিপূর্ণ হতে পারি না কোনওভাবে। মিথ্যা দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের স্বসৃষ্ট ও পরসৃষ্ট কারাগারে ঢুকিয়ে দেয়। জীবনের প্রতিটি পদেই সাপকে দড়ি ভেবে ধরতে গিয়ে দংশিত হই। নয়ত রশিকে সাপ ভেবে মিথ্যে ভয়ে আঁতকে উঠি। সাপকে সাপ বলে জানা, দড়িকে দড়িরূপে জানতে হলে চিত্তের স্থিরতার অনুশীলন করার পাশাপাশি বিচার-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে চলার শক্তি আমাদের অর্জন করতে হয়। বিচার-বিশ্লেষণের মানদণ্ড কী? পক্ষপাতশূন্য দৃষ্টিভঙ্গি যদি তৈরি না করে সেই মানদণ্ড অর্থাৎ সর্বজনীন যদি না হয় তবে সত্যকে সত্য জানব কী করে? সত্যানুসন্ধানীর জন্য, সকল মানুষের জন্য বুদ্ধের সার্বজনীন দৃষ্টি তৈরির পথনির্দেশনা রয়েছে, যা কালাম সুত্ত নামে পরিচিত।
বুদ্ধ একবার কোশল রাজ্যের কেসাপুত্তায় গিয়েছিলেন। এই শহরের অধিবাসীরা কালাম নামে পরিচিত। যখন তারা শুনলেন বুদ্ধ তাদের শহরে আছেন কালামরা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁকে বলেন :
"মহোদয়, কেসাপুত্তায় কিছু সন্ন্যাসী এবং ব্রাহ্মণ আসেন, তারা শুধু তাদের নিজস্ব মতবাদ ব্যাখ্যা ও উপস্থাপন করেন, এবং অন্যদের মতবাদ তাচ্ছিল্য করেন, দোষযুক্ত করেন, এবং অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। তারপর অন্যান্য যেসকল শ্রমণ-ব্রাহ্মণরা আসেন এবং তারাও তাদের বেলায় শুধু তাদের নিজস্ব মতবাদ ব্যাখ্যা ও উপস্থাপন করেন, এবং অন্যদের মতবাদ তাচ্ছিল্য করেন, দোষযুক্ত করেন, এবং অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু মহোদয়, তাদের মধ্যে কোন শ্রমণ ব্রাহ্মণরা আমাদের প্রতি সত্যভাষণ এবং মিথ্যাচার করেন সে ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ ও দ্বিধা আছে।’
তারপর বুদ্ধ তাদের উদ্দেশে মানব ইতিহাসের অনন্য এই উপদেশ প্রদান করেন,
'হ্যাঁ, কালামগণ, সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে তোমাদের সন্দেহ থাকাটা যথাযথ, তোমাদের দ্বিধা থাকাটা যথাযথ। এখন কালাগণ মনোযোগ দিয়ে শুনো,
শোনা কথায় বিশ্বাস কোরো না।
বংশ-পরম্পরায় প্রচলিত বলে বিশ্বাস কোরো না।
সর্বসাধারণ এটা বলছে বলে বিশ্বাস কোরো না।
ধর্মগ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে বলে বিশ্বাস কোরো না।
গুরুজন বা বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেছেন বলে বিশ্বাস কোরো না।
কারো ব্যক্তিত্বের প্রভাবে অভিভূত হয়ে বিশ্বাস কোরো না।
তর্কের চাতুর্যে বিশ্বাস কোরো না।
নিজের মতের সাথে মিল আছে বলে বিশ্বাস কোরো না।
দেখতে সত্য বলে মনে হলেই বিশ্বাস কোরো না।
নিজের শিক্ষক বলেছেন বলেই বিশ্বাস কোরো না।
নিজের বিচার-বুদ্ধি, বিচক্ষণতা প্রয়োগ করে যদি দেখতে পাও _এগুলো যুক্তির সাথে মিলে এবং নিজের ও সকলের জন্য মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর, _ তাহলে তা গ্রহণ করবে এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করবে'।"

বুদ্ধ, এক কথায় বলা যায়, ছিলেন পরিবর্তনশীল জগতের প্রতিটি মুহূর্তের প্রতি ইতিবাচকভাবে গভীর সচেতন ও মনোযোগী। আর তার ফলেই হৃদয় ও বুদ্ধির সর্বোচ্চ ইতিবাচক ব্যবহার তিনি করেগেছেন। আর এই ইতিবাচকতার মধ্যেই লুকায়িত মুক্তির বীজ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৪৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বৌদ্ধরা গৌতম বুদ্ধকে ভগবান কেন বলে? বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা কি ভগবান বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে? যদি না করে তাহলে কেন গৌতম বুদ্ধকে ভগবান বুদ্ধ তারা বলে। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা যদি ঈশ্বর বা ভগবানে বিশ্বাস না করে তাহলে তাদেরকে কি নাস্তিক বলা যায়?

হিন্দু ধর্ম অনুসারে গৌতম বুদ্ধ হলেন বিষ্ণুর অবতার। হিন্দু ধর্ম আর বৌদ্ধ ধর্মের এই দুই মতের মধ্যে কি সমন্বয় করার কোন সুযোগ আছে?

২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৪

জয়দেব কর বলেছেন: বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা ভগবান বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা creator-এ বিশ্বাস করে না। এই অর্থে তাদের নাস্তিক বলা যায়।
যখন সবাই বুদ্ধকে ভগবান বলেন, তার তাৎপর্য্য এই নয় যে সবাই বুদ্ধকে ঈশ্বর মানেন। তারা সবাই বুদ্ধকে 'ভগবা' অর্থাৎ ভগবান বলে সম্বোধন করেন।
ভগবান বুদ্ধ যে ভাষায় উপদেশ দিতেন তা অর্ধমাগধী ভাষা ছিল যা পরবর্তী কালে পালিভাষা নামে পরিচিত হয়। পালি ভাষাতে ভগবা অর্থাৎ ভগবানের সুপরিকল্পিত অর্থ আছে।
ভগ্গ রাগোতি ভগবা,
ভগ্গ মোহতি ভগবা,
ভগ্গ দোসোতি ভগবা,
ভগ্গ তন্হোতি ভগবা।
পালিভাষাতে 'ভগ্গ' শব্দের অর্থ হয় ভগ্ন করা, সমূলে নষ্ট করা, শিকড় থেকে উপড়ে ফেলা, ধ্বস্ত করা ইত্যাদি এবং 'বান' শব্দের অর্থ হয় তৃষ্ণা। অর্থাৎ যিনি তৃষ্ণাকে সমূলে নষ্ট করেছেন অথবা তৃষ্ণাকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলে দিয়েছেন তিনিই ভগবান। "ভগ্গ রাগোতি ভগবা" - যিনি রাগ ভগ্ন করে দিয়েছেন অর্থাৎ তিনিই ভগবান। "ভগ্গ মোহোতি ভগবা" - যিনি মোহকে ভগ্ন করে দিয়েছেন অর্থাৎ তিনিই ভগবান। "ভগ্গ দোসোতি ভগবা" - যিনি দ্বেষ ভগ্ন করে দিয়েছেন অর্থাৎ তিনিই ভগবান। "ভগ্গ তন্হোতি ভগবা" - যিনি তৃষ্ণা ভগ্ন করে দিয়েছেন অর্থাৎ তিনিই ভগবান। অতএব ভগবান বুদ্ধকে এইসব অর্থে ভগবান বলা হয়ে থাকে।


হিন্দু ধর্ম অনুসারে গৌতম বুদ্ধ হলেন বিষ্ণুর অবতার। এটা হিন্দু শাস্ত্রকারদের ছলনা। বুদ্ধমতবাদকে দাবিয়ে রাকখার অপকোৌশল মাত্র। হিন্দু ধর্ম আর বৌদ্ধ ধর্মের এই দুই মতের মধ্যে সমন্বয় করার কোনও সুযোগ নেই।

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: যিশুর চেয়ে আমি বেশি পছন্দ করি গৌতম বুদ্ধ কে।

২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৩

জয়দেব কর বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.