![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অসম পাহাড়ে সরলভাবে বেড়ে উঠা ছেলে।
সুদীর্ঘকাল ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জনগোষ্ঠী জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। যেমন ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের শাসকতন্ত্র সর্বসাধারণের ঘরে আলো জ্বালানোর প্রক্রিয়াই এই অঞ্চলের হাজারো মানুষের চোখে অন্ধকার দেখিয়েছে, ঠিক তেমনি ১৯৭৯ সালে জিয়ার সরকার সেটালার "বাহিনী" খেপনে চালিয়েছে বিশেষ ভুমি লুন্থন প্রক্রিয়া।
যা আজো চলমান রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনীর কল্যাণে।
অতীতের পুনরাবৃত্তিতে দেখি, প্রশাসন এক সময় এ অঞ্চলের শান্তিবাহিনীকে প্রতিবাদী শক্তি হিসেবে মনে করতো। যার কারণে কাউন্টার ইমারজেন্সি জারি করে বর্বর দমন-পীড়ন চালিয়েছিলো। এমন কোন পাহাড়ি ছিলনা সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়নি। এই কাউন্টার ইমারজেন্সি মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে তৎকালীন সরকার পাহাড়ি জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিলো। লড়াইরত শান্তিবাহিনীকে সন্ত্রাসী, রাষ্ট্রবিরোধী তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সরকারের পক্ষে সেটা দমন করা সম্ভব হয়নি।
সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ১৯৮৯ সালে ৪ মে লংগদু গণহত্যা সংঘটিত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শুরু হয় রাজপথে আন্দোলনের পর্যায়। গঠিত হয় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে ছাত্র আন্দোলন বিস্তার লাভ করে। এর ফলে দেশে-বিদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়নের চিত্র প্রকাশিত হয়ে পড়ে, যা অতীতে সেভাবে প্রকাশ পায়নি।
এই অবস্থায়, ১৯৯৭ সালে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির মাধ্যমে শান্তিবাহিনী নামের প্রতিবাদী শক্তিকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়। যেভাবেই হোক প্রতিবাদী শক্তিকে নিষ্ক্রিয় করতে পারাই ছিল প্রশাসনিক একটি সুক্ষ কৌশল। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিবাদী শক্তি হিসেবে জনসংহতি সমিতি তথা শান্তিবাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করতে পারলেও, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে উঠে আরেক শক্তি। সরকারের কূটচাল বুঝতে পেরে যে চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিরোধ শক্তিকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হলো তারই একটি বৃহৎ অংশ সেই চুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলে। যেটি পরবর্তীতে গঠিত হয় ইউপিডিএফ নামে একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। তৎকালীন সরকার চেয়েছিল চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়ে ভূমি বেদখলের মাধ্যমে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করা, বেআইনীভাবে সমতলের বাঙ্গালীদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে পাহাড়িদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলা। সেই পরিকল্পনা মাফিক প্রশাসনিক কাজ চালিয়ে যায় এবং যা আজও চলমান।
বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলের অধ্যুষিত পাহাড়ি এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে রাস্তাঘাট নির্মাণ, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন সহ (যেমন রাঙ্গামাটির সাজেক, বান্দরবানের নীলগিরি সহ ইত্যাদি) নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাহাড়ে উন্নয়নের আড়ালে পাহাড়িদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা করা চলেছে। সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি জেলায় ইউপিডিএফ এর সক্রিয় প্রতিবাদী অবস্থান, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের কিছু অংশবিশেষে জেএসএস এর সক্রিয় অবস্থান যা সরকারের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবং এর প্রেক্ষিতে প্রশাসনের সাজানো দাবাড় চালে সেনাবাহিনীকে দিয়ে অন্যায়ভাবে নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ, গণতান্ত্রিক মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া ইত্যাদি কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা হয়েছে।
প্রশাসনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রতিবাদী শক্তিকে জোরপূর্বক দমিয়ে রাখা, যাতে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে না পারে। যার কারণে প্রশাসন সেনাবাহিনী ছাড়াও পার্বত্য এলাকায় আঞ্চলিক দলগুলোকে ব্যবহার করছে একে অপরের বিরুদ্ধে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত কে জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটার চেষ্টায়। পাহাড়িদের মধ্যেকার ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত, অনৈক্যকে পুঁজি করে প্রশাসন একের পর এক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে উন্নয়ন ও পর্যটনের নামে ভূমি বেদখল, বিজিবি-সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণ, সেটালার অনুপ্রবেশ, সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদসহ ইত্যাদি। প্রশাসন যে কারণে প্রতিবাদী শক্তিকে দমন করতে চায় তা হলো- পার্বত্য চট্টগ্রামে একনিষ্ঠ আগ্রাসন, পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা, সেটেলার অনুপ্রবেশ নির্বিঘ্ন করা, সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে কোনঠাসা করে রাখা এবং পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতাশালী করে তোলা।
©somewhere in net ltd.