নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অসম পাহাড়ে সরলভাবে বেড়ে উঠা ছেলে। সরলতায় যেমন আমার ভালবাসা তেমনি আমার পাহাড়ের অধিকারেও আমি ক্ষিপ্র।

জয় মারমা

আমি অসম পাহাড়ে সরলভাবে বেড়ে উঠা ছেলে।

জয় মারমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী শিশুর কি অধিকার নেই নিজ মাতৃভাষায় পড়ার ?

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫৭



বাংলাদেশে কমবেশি ৪৫টি আদিবাসী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বাস। এর মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে চাকমা, মারমা ত্রিপুরাসহ ১১টি আদিবাসী পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। রাষ্ট্রীয়ভাবে পার্বত্য অঞ্চলটি (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) ‘উপজাতি’ বা আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তিতেও (খন্ড ক, ধারা-১) এর উল্লেখ রয়েছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পাহাড়ি শিশুদের মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে (পার্বত্য চুক্তি, খন্ড: খ, ধারা: ৩৩-খ-২)

পার্বত্য শান্তিচুক্তির যুগ পূর্তি হয়েছে অনেক আগেই। ১৯৯৭ সালে যে শিশুর জন্ম হয়েছিল, এখন তার বয়স ১৮ বছর। নীতিনির্ধারকদের অবহেলায় ১৮ বছরেও কেন পার্বত্য অঞ্চলের শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা নিশ্চিত করা গেল না, এ প্রশ্নের কী জবাব দেবে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে থাকা শাসক দল ? নিজের মাতৃভাষা রক্ষার জন্য যে বাঙালি লড়াই করেছে, তারাই কেন আবার নিজের দেশের অন্য ভাষাভাষীর মর্যাদা দিতে অনাগ্রহী ? অনাদর আর অবহেলায় বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের মাতৃভাষা হারিয়ে যেতে বসেছে।

শিশুশিক্ষার প্রধান বাহন হচ্ছে মাতৃভাষা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরুতেই মাতৃভাষা ব্যবহারের অন্যতম, শিশুকে নিজের ভাষায় বলতে ও বুঝতে সক্ষম করে তোলে। মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পেলে একজন শিশুকে নতুন ভাষা শেখার চাপ সইতে হয় না। সে সহজেই সবকিছু রপ্ত করতে পারে। মাতৃভাষায় যেটা সম্ভব, নতুন কোনো ভাষায় তা সম্ভব নয়। ‘নানান দেশের নানান ভাষা/বিনে স্বদেশী ভাষা, পুরে কি আশা’? মধ্যযুগের কবি রামনিধি গুপ্তের এই কথার আবেদন ও উপযোগিতা এখনো কি প্রাসঙ্গিক নয়(?)।




এই সুশীল সমাজ, একবারও কি আপনি ভাবতে পারেন, আপনার শিশুটিকে ভিনদেশি অচেনা কোনো ভাষায় (ধরা যাক জাপানি, চীনা, জার্মান বা রুশ ভাষায়) ফুল পাখির নাম কিংবা ছড়া পড়তে হচ্ছে ? নিশ্চয় নয়। নিজের সন্তানের জন্য যা সত্য, অন্যের জন্য তা কেন আপনারা মানতে চাইবেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কথা তো বহুল উচ্চারিত ‘আগে চাই মাতৃভাষার গাঁথুনি, তারপর...’।

জাতিসংঘের মতে, নিজস্ব ভাষা ব্যবহার ও সংরক্ষনের পাশাপাশি আদিবাসীদের ভাষার অধিকারে আরো যা আছে সেগুলো হলো:

১) মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের অধিকার,
২) আদিবাসী ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভের অধিকার,
৩) বৈষম্য মুক্ত ভাবে বাস লাভের অধিকার,
৪) আদিবাসী ভাষায় মিডিয়ায় প্রবেশ লাভের অধিকার।

আদিবাসী ভাষাকে রক্ষা ও সংরক্ষনের জন্য জাতিসংঘ যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন সেগুলো হল:

১) মাতৃভাষায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের নিশ্চয়তা প্রদান করা,
২) আদিবাসী ভাষাকে সংরক্ষন ও উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত ফান্ড বরাদ্দ রাখা,
৩) আইন ও রাজনৈতিক মূলধারাসমূহ আদিবাসী ভাষায় অনুবাদ করা যাতে করে আদিবাসীরা রাজনৈতিক ও আইনগত দিকগুলোতে ভালোভাবে অংশগ্রহন করতে পারে,
৪)আদিবাসী ছাত্র ও বয়স্কদের জন্য ভাষাসংলিষ্ট প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করা,
৫) প্রসাশনিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে আদিবাসী ভাষার ব্যবহার বাড়িয়ে আদিবাসী ভাষার সন্মান বৃদ্ধি করা,
৬) আদিবাসী ভাষা ব্যবহার করা যাতে করে সেগুলো বংশপরম্পরায় টিকে থাকে।

শান্তিচুক্তির স্বাক্ষর আছে, সংবিধানে আইন আছে কিন্তু আইনের প্রণয়ন নেই। আশা নয় বিশ্বাস করি আগামীর মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হবে অসাম্প্রদায়িক ও সার্ব মাতৃভাষা দিবস।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫

সায়েল বলেছেন: অবশ্যই তাদের অধিকার আছে। আরো অধিকার আছে বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানবার অধিকার। দেশপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধা ও বীর সন্তানদের সম্পর্কে জানবার পুরো অধিকার আছে ওদের।
এবং তার নিজের মাতৃভাষায়ই। অবশ্য মাধ্যমিক পর্যায়ে আর হয়তো সম্ভব না। তবে ঐচ্ছিক কোন বিষয় রাখা যেতে পারে।

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৬

নেক্সাস বলেছেন: আদবাসী বলে বাংলাদেশে কেউ নেই। আদিবাসী ইস্যু একপেশে অমিমাংসিত ইস্যু। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশী।

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৪

নেক্সাস বলেছেন: চাকমা, মারমা, বাঙালী কোনটাই রাজনৈতিক জাতিগোষ্টি নয়। সব নৃতাত্ত্বিক জাতি। বাংলাদেশী একমাত্র রাজনৈতিক জাতিস্বত্তা এবং তাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা। তবে যেহেতু নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্টি, তাদের কালচার, ভাষা মিলিয়ে একটি সমৃদ্ধ রাজনৈতিক জাতির জন্ম সেহেতু কারো ভাষা বা কালচার যাতে হারিয়ে না যায় সে ব্যাপারে রাষ্ট্র কে সজাগ ও উদ্যোগী হতে হবে। চাকমা মারমা বা অন্যদের জন্য স্কুল কলেজে চাকমা সাহিত্য বা মারমা সাহিত্যি এই রকম বিষয় চালু রাখতে হবে। প্রাথমিক লেবেলে ওদের বর্ণমালা শিখাতে হবে। বাধ্যতামূলক করতে হবে। উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে চাকমা /মারমা ভাষায় অনার্স সাবজেক্ট রাখতে হবে।

৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৯

নেক্সাস বলেছেন: গত ২৫ জুন ২০১১ তারিখে জাতীয় সংসদে সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) বিল ২০১১ উত্থাপিত হয় এবং ৩০ জুন ২০১১ তারিখে সেটা পাস করা হয়। এ সংশোধনীতে ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালী এবং নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশী বলিয়া বিবেচিত হবেন’।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিসীমায় উপজাতিদের অধিকারের স্বীকৃতি আমাদের সংবিধানে রয়েছে এবং তার সাথে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের সব অভিবাসী ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীগুলোকে ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ কিংবা ‘ক্ষুদ্র সম্প্রদায়’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ গত ২৮ জানুয়ারী জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই।তবে এদেশে বাংলাভাষী জনগণের পাশাপাশি ৪৫ টি উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর লোকজন বসবাস করছে। বাংলাদেশে সরকারীভাবে ৪৫টি উপজাতীয় জনগোষ্ঠী বসবাসের কথা স্বীকৃত আছে। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে আছে মাত্র ১১টি জনগোষ্ঠীর মানুষ।

৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৫

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: নিজের মাতৃভাষা রক্ষার জন্য যে বাঙালি লড়াই করেছে, তারাই কেন আবার নিজের দেশের অন্য ভাষাভাষীর মর্যাদা দিতে অনাগ্রহী ? অনাদর আর অবহেলায় বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের মাতৃভাষা হারিয়ে যেতে বসেছে।

৬| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৫

পুলহ বলেছেন: আমি যতদূর জানি- মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প ২০১৪ সালে ৫ টি জাতিগোষ্ঠী দিয়ে সীমিত পরিসরে শুরু হবার কথা ছিলো, কিন্তু নানা কারণে সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠে নি। আমরা আশা করবো- খুব তাড়াতাড়িই মাঠ পর্যায়ে সেটার কাজ শুরু হয়ে যাবে। যে দেশের মানুষ ভাষার জন্য নিজেদের জীবন দিয়েছে, সে দেশেই যদি আবার অন্য জাতির একটি শিশু- নিজ ভাষায় অন্ততঃ প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগটুকু না পায়- তবে নিশ্চিতভাবেই সেটা লজ্জার!
ভালো থাকবেন।

৭| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০৭

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: উপজাতি বা আদিবাসীরা নিজেদের আদিবাসী বলে পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করেন মনে হয়। জাতি হিসেবে কেউ নিজেকে চাকমা, বাঙ্গালী নাকি আদিবাসী বলবে সেটা তাদের উপর থাকলেই ভাল হত। শিক্ষার সুচনা নিজ মাতৃভাষায় হলে ভাল। আদিবাসীদের সংখ্যা অনেক কম ও গোষ্ঠির সংখ্যা অনেক দেখে সে কাজটিও কঠিন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.