নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অসম পাহাড়ে সরলভাবে বেড়ে উঠা ছেলে। সরলতায় যেমন আমার ভালবাসা তেমনি আমার পাহাড়ের অধিকারেও আমি ক্ষিপ্র।

জয় মারমা

আমি অসম পাহাড়ে সরলভাবে বেড়ে উঠা ছেলে।

জয় মারমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে জাতি জাতিগত/ভাষাগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে সেই জাতিই আদিবাসীদের ওপর আজ সামরিক আধিপত্য !!

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৩



১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যখন পাকিস্তান নামক ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে তখন থেকে ‘অভ্যন্তরীণ উপনিবেশিককরণ’ নীতি অনুযায়ী আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেয়া, সামরিক-আধাসামরিক বা অসামরিক ব্যক্তিদের দ্বারা নির্যাতন, হত্যা এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য-আবাসন-ব্যবসা-চাকরিতে বঞ্চনা, অবকাঠামো উন্নয়নে বৈষম্য, ধর্মপালন ও সংস্কৃতিচর্চায় বিঘ্ন সৃষ্টি প্রভৃতি প্রাত্যহিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

পাকিস্তান আমলে পশ্চিমারা বাঙালিদের বলতেন পাকিস্তানি জনগণের জাতি হচ্ছে একটিই- "মুসলমান জাতি"। বাঙালিরা তা মানেনি, তারা বলেছে, বাঙালিরা জাতি হিসেবে কখনই মুসলিম না, জাতি হিসেবে তারা অবশ্যই বাঙালি। সরকার ও সাংসদগণ সংবিধান সংশোধনের সময় জাতি ও জাতিয়তা প্রশ্নে বিশ্বের সমসাময়িক জ্ঞান থেকে বিযুক্ত হয়ে কাজ করেছেন যা মুর্খতারই নামান্তর; আর এটাই সবচেয়ে বড় হতাশার জায়গা- যে বাঙালি ২৪ বছর পাকিস্তানের জাতিগত/ভাষাগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজের জাতিগত/ভাষাগত পরিচয় অর্জন করেছে, স্বাধীন বাংলাদেশে সেই বাঙালিরাই আদিবাসীদের ওপর জাতিগত/ভাষাগত নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। যে বাঙালি ২৪ বছর পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে গণতন্ত্র অর্জনের জন্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই বাঙালিরাই আদিবাসীদের ওপর সামরিক আধিপত্য বজায় রেখেছে। একসময়কার নির্যাতিত বাঙালি অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ক্ষমতার প্রশ্নে এখন নির্যাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। এটাই বোধহয় ইতিহাসের বক্রাঘাত।

প্রত্যাশা ছিল শাসকগোষ্ঠী সংবিধানে এই সত্য মেনে নেবে যে, বাংলাদেশ একটি বহু ভাষা, বহু জাতি ও বহু সংস্কৃতির এক বৈচিত্রপূর্ণ দেশ এবং এর মধ্যদিয়ে সকল জাতির পরিচয়, অধিকার ও সংস্কৃতিকে স্থান দেবে; এভাবেই রাষ্ট্র হয়ে উঠবে সবার; কিন্তু দেখা যায় আশার সে রুটিতে লাল পিঁপড়ে। আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার যে বহুত্ববাদী নীতি বা বৈচিত্র্যের ভেতরে যে সংহতি তাকে নির্লজ্জভাবে পরিহার করে সংবিধানে ৯ অনুচ্ছেদে যুক্ত করা হয়েছে, "ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট বাঙালী জাতি'র মতো অসত্য বাক্য। বাংলাদেশ কোনো একক ভাষা বা একক জাতির রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও আরো জাতির মানুষ বাস করে এবং তারা বাংলায় নয়, তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় কথা বলেন। সংশোধিত সংবিধানে এদেশে বসবাসরত অন্য ভাষাভাষীর মানুষের মাতৃভাষাকেও পরিত্যাজ্য ঘোষণা করেছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলেও অন্য ধর্মগুলোর অস্তিত্ব স্বীকার করেছে। কিন্তু দেশের অন্য জাতিসমূহের ভাষার অস্তিত্বের ব্যাপারে আমাদের সংবিধান ভয়ঙ্কর শব্দহীন এবং নিশ্চুপ; অধিকন্তু ৯ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী জাতিসমূহের সংগ্রাম ও ত্যাগকেও অস্বীকার করা হয়েছে।



বাংলাদেশের ’৭২-এর সংবিধানকে গণ্য করা হয় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান হিসেবে। শতকরা ৮৫ ভাগ জনসংখ্যা মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের অন্যতম নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে- যা সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায়ের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও এই সংবিধানে আদিবাসীর স্বতন্ত্র জাতিসত্তার কোনও স্বীকৃতি এবং বিশেষ মর্যাদার কোন বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। আরও দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে- দুই উর্দিপরা জেনারেলের জমানায় ৫ম ও ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে ’৭২-এর সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা মুছে ফেলে উপরে ‘বিসমিল্লাহ ….’ এবং মুখবন্ধে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস’ স্থাপন করে এটিকে একটি সাম্প্রদায়িক সংবিধানে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ৮ম সংশোধনী জারি করে যখন ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে ঢোকানো হয় তখন থেকে সংখ্যালঘু অমুসলিম ধর্মীয় ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যরা কার্যতঃ দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্বের এই নির্যাতন, বঞ্চনা ও আগ্রাসন বাংলাদেশের পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের অস্তিত্ব ক্রমশঃ বিপন্ন করে তুলছে। ১৯৭১-এর আদমশুমারি থেকে আমরা জানতে পারি বাংলাদেশে ৪৫টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অবস্থান রয়েছে পাহাড় ও সমতলে, যাদের ভাষার সংখ্যা ৩২। গত ৪৩ বছরে বাংলাদেশে অন্ততপক্ষে দশটি নৃ-গোষ্ঠী হারিয়ে গেছে, বিলুপ্ত হয়েছে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, জ্ঞান ও ইতিহাস। আদিবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের বৈরি মনোভাব পরিবর্তিত না হলে একশ বছর পর বাংলাদেশে আদিবাসী পরিচয়ের কারও অস্তিত্ব থাকবে না।

ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতামুখী অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোকে তাই বলতে চাই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এগিয়ে চলার জন্য এবং আদিবাসীদের সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্রে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়টিকে আবারো নতুন করে ভাবা উচিত। সংবিধানের ত্রুটিপূর্ণ সংশোধনের প্রতিক্রিয়া আদিবাসীরা দেখাতে শুরু করেছে। ত্রিশ লাখ মানুষের মনে যে ক্ষোভ আর হতাশা সঞ্চারিত হচ্ছে, দ্রুত তা আমলে না নিলে এখন থেকে অতীতের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে, যা আমরা কেউই চাই না। আমরা মনে করি বাংলাদেশ একটি বহু জাতির সম্মানজনক অংশীদারিত্বের রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হওয়ার স্বপ্নকে ধারণ করতে সক্ষম আর তাই আমরা চাই দেশে বসবাসকারী সকল আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সমান মর্যাদার ভিত্তিতে নতুন করে রচিত হোক আগামীর সংবিধান।

সকল ছবিঃ সংগৃহীত (প্রতীকী)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০৩

মুসাফির নামা বলেছেন: বাংলাদেশ একটি বহু জাতির সম্মানজনক অংশীদারিত্বের রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হওয়ার স্বপ্নকে ধারণ করতে সক্ষম আর তাই আমরা চাই দেশে বসবাসকারী সকল আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সমান মর্যাদার ভিত্তিতে নতুন করে রচিত হোক আগামীর সংবিধান।
ইতিহাস মূল্যায়ন কিছু ক্ষেত্রে সঠিক না। শুভকামনা রইল।

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২৭

বিজন রয় বলেছেন: একদিন সবসমস্যা কেটে যাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.