![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অসম পাহাড়ে সরলভাবে বেড়ে উঠা ছেলে।
বাংলাদেশের নারীরা বর্তমান সময়ে অনেক দূর এগিয়েছে। হয়তোবা কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌছানো এখনও সম্ভব হয়নি। তবে আশার কথা হচ্ছে এই যে, আমাদের দেশ পরিচালনায় নারী নেতৃত্বই এগিয়ে আছে। কিন্তু, দেশের আদিবাসী নারীদের অবস্থান এখনও সে ভাবে পরিবর্তন হয়ে উঠেনি, যে ভাবে পরিবর্তন হলে নারীরা পুরুষের সমবস্থানে আসবে। বংশ পরম্পরায় এদেশে সব আদিবাসী নারীই হাড় ভাংগা পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। অথচ বৃহত্তর সমাজে এমনকি আদিবাসী সমাজেও নানা বৈষম্যের শিকার।
সাধারণত ‘ক্ষমতায়ন’ নিশ্চিত হয় দুটি বিষয়ের ওপর-
১. উৎপাদন এবং উৎপাদিত দ্রব্যের ওপর অধিকার।
২. নিজের জীবন সম্পর্কে নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার।
ক্ষমতায়নের সূত্র যে দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল তার কোনোটাই আদিবাসী নারীদের নেই। পার্বত্য অঞ্চলের নারীরা পুরুষের সাথে সমান সামঞ্জস্যে তারা উৎপাদন কাজে অংশগ্রহণ করছে, ক্ষেত্র বিশেষে অধিকতর অংশগ্রহণও দেখা যায়(যেমন কৃষিকাজে, জুম চাষাবাদে)। ইউএনডিপির এক জরিপমতে শুধু কৃষিক্ষেত্রেই আদিবাসী নারিদের অংশগ্রহণ প্রায় ৯০%। কিন্তু উৎপাদিত দ্রব্যের ওপর তাদের অধিকার নেই বললেই চলে। এখানে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে পুরুষের সর্বময় কর্তৃত্বই বিরাজ করে। বহুকাল ধরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও তাদের অধিকারের জায়গাটা খুবই শংকীর্ণ। আয় করা অর্থ তারা নিজেদের ইচ্ছায় ব্যয় করারও অধিকার রাখে না। সম্পত্তিতে নেই কোন অধিকার, বিয়ে হলেও থাকে না রেজিস্ট্রির করার অধিকার। প্রথাগত আইনে আদিবাসী নারীর অধিকার নেই বললেই চলে। পদে পদে আদিবাসী নারীরা হচ্ছে অধিকার বঞ্চিত। তাই প্রথম আলোর সংবাদকর্মী ইলোরা দেওয়ানের "পাহাড়ি নারী কবে তার অধিকার পাবে" লেখায়ও উঠে এসেছে, উপমহাদেশজুড়ে পিতৃতন্ত্রের সমাজ ব্যবস্থায় পাহাড়ি সমাজ ব্যবস্থার কথা।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সবসময় অধীনতার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে তিন জেলা- রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের শতকরা ৮০ শতাংশের বেশি নারী ঘরের বাইরে কাজ করে। তা সত্ত্বেও সম্পদের উপর পাহাড়ি নারীদের অধিকার না থাকায় এবং অবহেলার জীর্ণতায় পুরুয়ের চাইতে নারীরা অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশে মোট ৪৫ টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তরাধিকার হিসেবে নারীরা গণ্য হয় গারো, খাসি, মারমা ও রাখাইন সম্প্রদায়ে। বাকি ৪১টি সম্প্রদায়ে নারীরা অধিকার হিসেবে সম্পত্তি দাবি হতে বঞ্চিত হয়ে থাকে। ফলে সম্পত্তির উপর নারীর মালিকানার বিষয়টি পরিবারের প্রধান কর্তা তথা পুরুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কেবল দান বা উইলের মাধ্যমে নারীর সম্পত্তির অধিকার লাভ করতে পারে। স্বামীর মৃত্যুর পরেই স্ত্রী অধিকার লাভ করতে পারে, তবে অপুত্রক অবস্থায় অন্য কোথাও বিয়ে হলে সে প্রয়াত স্বামীর সম্পত্তির অধিকার হারায়।
ঐতিহ্যবাহী প্রথার ক্ষেত্রেও দেখা যায় নারীকে অবদমিত করে রাখার ব্যবস্থা। পার্বত্য চট্টগ্রামে তিন সার্কেলের প্রধানেরা পুরুষ এবং উত্তরাধিকার সুত্রে কেবল পুরুষেরাই উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া মৌজা প্রধান(হেডম্যান), গ্রাম প্রধান(কার্বারি) পদও পুরুষকেন্দ্রিক। তবে চাকমা সার্কেলে গত দুই বছরে ১৩৫ জন নারীকে কার্বারি (গ্রামপ্রধান) হিসেবে নিয়োগ নারী অধিকারে কিছুটা আশা যোগায়। এর মধ্যে রাঙামাটির নয়টি এবং খাগড়াছড়ি জেলার দুটি উপজেলা নিয়ে ‘চাকমা সার্কেল’ গঠিত। চাকমা সার্কেলের ১১টি উপজেলায় ১৭৮টি মৌজায় নারী হেডম্যান আছেন ছয়জন। অন্য দুটি সার্কেলে নারী হেডম্যান তিনজন করে। তবে একই পদে (কার্বারি) ১ হাজার ১৯৭ জন পুরুষ নিয়োজিত আছেন।
অতিতেও দেখা যায়, ১৮৩২ সালে চাকমা রাজা ধরম বক্স খার মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী কালিন্দী রানী দক্ষতার সাথে রাজ্য শাসন করেছিলেন ৩ দশক। প্রথম দিকে ব্রিটিশরা রাজ্য শাসনের ভার তাঁর হাতে তুলে দিতে অপারগতা প্রকাস করলেও রানী এর বিরুদ্ধে আপিল করেন। অবশেষে ১৮৪৪ সালে রানী আইনগতভাবে রাজ্য শাসনের কর্তৃত্ব অর্জন করেন। এ সময় তাঁকে ক্যাপ্টেন লুইনের মতো ঝানু কূটকৌশলীসহ অনেক বড় সমস্যাকে কঠোর হাতে মোকাবেলা করতে হয়েছে। (সুত্রঃ চাকমা জাতির ইতিবৃত্ত)
পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমান নারীর সহিংসতাও উদ্বেগজনক। পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীন অবস্থায় থাকেন আদিবাসী নারীরা। ‘বাংলাদেশের আদিবাসী নারীদের সামগ্রিক প্রতিবেদন ২০১৫’এর তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই ৮ বছরে ৪৩৪ জন আদিবাসী নারী ও শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শুধু ২০১৫ সালে ১৪টি ধর্ষণ, ১২টি গণধর্ষণ, ১১টি শারীরিক লাঞ্চনা, ৬টি শারীরিক ও যৌন হয়রানি, ১৬টি ধর্ষণ চেষ্টাসহ ৬৯টি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে ৩৮টি, বাকি ২১টি সমতলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভূমি বিরোধ ও সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের কারণে সংখ্যালঘু আদিবাসী নারীরা সহিংসতার শিকার হয়েছে। নারীকে নির্যাতন করে ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারলেই তাঁদের ভূমি দখলদারদের হয়ে যাবে, সেই ধারণা থেকেই নারীর ওপর নির্যাতন বাড়ছে। আদিবাসী নারীদের নির্যাতন বা যৌন নির্যাতন বৃদ্ধির আরেকটি গুরুতর কারন বিচারহীনতা। প্রশাসন, রাজনীতিক ও বিচার ব্যবস্থার পক্ষপাতিত্বের কারণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি ছাড়াও অংশ নিয়েছিল আদিবাসী নারীরা। দুর্গাপুরের লতিকা এন মারাক, সন্ধ্যা ম্রি, ভিবা সাংমা, খাসিয়া রমণী কাঁকন বিবি, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের তেরেসা মাহাতো, টেকনাফের রাখাইন নারী প্রিনছা খে সহ আরও অনেক নারী মুক্তিযোদ্ধার নাম উল্লেখ করা যায়। মুক্তিযুদ্ধে ৪৪ বছর পরও আদিবাসী নারী মুক্তিযোদ্ধারাও কি পেয়েছেন তাদের উপযুক্ত সম্মানটুকু!
নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে মূলধারার নারী আন্দোলনের সঙ্গে আদিবাসী নারীর অধিকারের বিষয়টিও সম্পৃক্ত করতে হবে। শুধু সংখ্যালঘুদের ভোট পাওয়ার জন্য নয়, বরং সংসদে এমন আদিবাসী নারী প্রতিনিধি থাকা উচিত, যাঁরা আদিবাসী নারীদের স্বার্থ সংসদে তুলে ধরে তাদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নকে নিশ্চিত করতে পারবেন৷ সুতরাং, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করতে হলে স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত ব্যবস্থায় নারীর উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে সামাজিক আইনে যেমন পরিবর্তন আনা জরুরি, তেমনি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা দরকার৷ তাই এখন সময় এসেছে পাহাড়ি আদিবাসী নারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার এবং প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোয় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার৷
নারী দিবসে আদিবাসী নারীর অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হোক সেই কামনাই করি।
২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩
সায়ান তানভি বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬
আব্দুল্লাহ তুহিন বলেছেন: সব নারীরা যেনো সমান সুযোগ পায়, এটা হোক সর্বত্র চাওয়া!
নারী অধিকার নিয়ে আমার পোস্টটা পড়ে দেখবেন...
পোস্ট লিংক.