নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অসম পাহাড়ে সরলভাবে বেড়ে উঠা ছেলে। সরলতায় যেমন আমার ভালবাসা তেমনি আমার পাহাড়ের অধিকারেও আমি ক্ষিপ্র।

জয় মারমা

আমি অসম পাহাড়ে সরলভাবে বেড়ে উঠা ছেলে।

জয় মারমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

তনুর জন্য অনুভুতিঃ ভারতী, ছবি, সবিতার পচন ধরা লাশে

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৮



২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার মামলার রায় ঘোষণা হয়। রায় জনগণের প্রত্যাশামতো না হওয়ায় কিছু ব্লগার আর অনলাইন একটিভিস্টের ডাকে শাহবাগে শুরু হয় এক গণ-আন্দোলন। একটানা চলা এ গণজাগরণের স্ফুলিঙ্গ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সরকার পরে আপিল আইন পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। সে সমাবেশ থেকে এ জায়গার নামকরণ করা হয় 'প্রজন্ম চত্বর'। গণজাগরণের ডাকে আমিও গিয়েছিলাম এই প্রজন্ম চত্বরে, গলা মিলিয়েছিলাম "ফাঁসি...ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই। কিন্তু আমি বাকরুদ্ধ হয়েছি জাতপ্রেমি শ্লোগানে "তুমি কে আমি কে, বাঙালী...বাঙালী..."। তারপরও যে থেমে গেছি তা না, বরং বার বার গিয়েছি সেই প্রজন্মের ডাকে প্রজন্ম চত্বরে।

সেই প্রজন্ম চত্বর(শাহবাগ) আবার ডাক দিয়েছে তনু'র জন্য। কিন্তু কে এই তনু ??? আর কেনইবা এই তনু'র জন্য প্রজন্ম চত্বর ডাক দিয়েছে ?

সোশ্যাল মিডিয়ায় জানতে পারলাম, এই তনু হচ্ছে ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনু। গত রবিবার(২০ শে মার্চ) রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের অলিপুর কালো টাংকি নামক স্থানে রাস্তার পাশে ঝোঁপের ভিতরে ছেড়া ওড়নায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় মাথা থেতলানো লাশ পাওয়া যায়। গণমাধ্যমে এর বিস্তারিত জানতে না পারলেও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জানলাম, তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তাও আবার সেনানিবাসের মত নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে। ঢাকার জাহাঙ্গীর গেইট বা কাকলী হয়ে ভাষানটেক যাওয়ার অভিজ্ঞতার সুবাদে যতটুকু জানি, এইসব ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বাঁকা হয়ে চলা তো দূরের কথা সোজা হয়ে চলতেও আপনাকে নিয়ম মেনে চলতে হয়, কারন প্রতিটি পয়েন্টেই থাকে আরপি। ভুল করেও যদি আপনি ফুটফাট দিয়ে হেঁটে গিয়ে রাস্তা পার হতে চান আপনার পায়ের কদম পরার আগেই হুইসেলের বাঁশি বেজে উঠবে, আর যদি অর্ধেকও পার হয়ে যান ফেরত এসে ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পাড় হতে হয়। এই নিয়ম কানুন ও দায়িত্ব পালনে সচেতনতার জন্য আমি সত্যি তাদের শ্রদ্ধা করি। তাহলে এই ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে কিভাবে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড সম্ভব ? কেউ আসলে ভুল দেখে, ভুল শুনে, ভুল ভেবে, ভুল বলছেনা তো(?)। আমার কিন্তু বরাবরেই সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।

আর সমতলে এটাকে যদি ক্যান্টনমেন্ট বলি তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বলতে হবে ক্যান্টনমেন্টের হেডকোয়ার্টার। কেননা পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামেই স্থায়ী-অস্থায়ী ক্যাম্প, ব্যারাক, চেকপয়েন্টে মোড়ানো। তাহলে তনু'র লাশ পাওয়া সেই সেনানিবাসের চাইতেও এই পার্বত্য চট্টগ্রাম তো আরো নিরাপদ হওয়ার কথা তাই না। কিন্তু এই নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মোড়ানো পার্বত্য এলাকায় যৌন হয়রানি, ধর্ষণ হর হামেশায় ঘটে। এখানে ধর্ষণ ইন্দ্রিয় ঘোষিত বৈধতা আছে ভাবলেও আশাকরি ভুল হবেনা। কারন প্রাপ্ত বয়স্ক পাহাড়ি তরুণী তো ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছেই, সেই সাথে ঘরে ঢুঁকে স্বামীর সামনে গর্ভবতী নারী থেকে শুরু করে ২য় শ্রেণীতে পড়া পাহাড়ি শিশুও ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে আইয়ুব আলীর মত(৪০) ধর্ষকের কাছে। কিন্তু আপনাদের অনুভুতিতে তা লাগেনা কারন গণমাধ্যমও যে এখানে বাক প্রতিবন্ধী। প্রকাশের চাইতে অপ্রকাশনায় চাপা পরে যায় একের পর এক ঘটনা। আর পার্বত্য চট্টগ্রামে তো সেনাবাহিনী মোড়ানো এখানেও অনিরাপত্তার কিছু নেই, আপনার চিন্তাতো তাই বলে।

সত্যি বলছি তনু'র জন্যও আমার কোন অনুভূতি নেই। কারন আমার অনুভূতি পচে গেছে ধর্ষণ করে জঙ্গলে ফেলে যাওয়া ৩ দিনের পচন ধরা ভারতী চাকমার লাশের সাথে। আমার অনুভূতি বাকরুদ্ধ অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া উম্রাচিং মারমা(ছবি) গলা কাঁটা লাশে। ফেইসবুকে ইভেন্ট, পেইজে স্ট্যাটাসে তোমাদের বিক্ষোভের ঝর দেখে আমার অনুভূতিগুলো লজ্জা পায় ধর্ষিত মায়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়া সেই ছোট্ট মেয়ে তৃপ্তি চাকমার কাছে, যে মেয়ে মায়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে বুকে প্ল্যাকার্ড তুলে নিয়েছিল "হত্যাকারিরা দুই বছর পরও গ্রেপ্তার হয়নি কেন ? আমি কি গরিব ঘরে জন্মেছি এ জন্য ?"।

আমার জাত্যাভিমানি লেখা আপনাদের খারাপ লাগতেই পারে। কারন আজকে যেমন হিজাবি মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করার জন্য আপনার খারাপ লাগছে তেমনি আমারও লাগে যখন আমার জাতিবোন সেইসব মানুষরূপি নরপশুর লালসার স্বীকার হয়। আমার তখন কষ্ট হয় চাক্ষুস প্রমাণ থাকার পরেও যখন আসামি গ্রেপ্তারের নামে নাটকীয়তা চলে। ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার বিচারহীনটায় ভুগে। আমার ইচ্ছে করে চিৎকার করে বলি ধর্ষকের বিচার চাই, কিন্তু আমাদের সে বলা কথা শোনার কেউ নেই, চিৎকারের আওয়াজ সীমাবদ্ধ থেকে যায় ঐ পাহাড়ের গণ্ডিতেই।

ভালো থেকো তনু, আমায় ক্ষমা করো। তোমার আত্মার শান্তি কামনা করি। পারলে তোমার আগে যাওয়া তোমার সহযাত্রী সবিতা চাকমা বলিও, তার রেখে যাওয়া ছোট্ট মেয়ে তৃপ্তি চাকমা আজও মায়ের বিচার চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে আদালতের সামনে দাঁড়ায়।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২০

ching বলেছেন: চিৎকার করে বলি ধর্ষকের বিচার চাই, কিন্তু আমাদের সে বলা কথা শোনার কেউ নেই, চিৎকারের আওয়াজ সীমাবদ্ধ থেকে যায় ঐ পাহাড়ের গণ্ডিতেই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.