![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
ছাদেক আলী তার বাড়ির উঠানে কাঠের চেয়ারটায় বসে আছেন। মন বিষন্ন। বিকালবেলা প্রতিদিনই তিনি বাড়ির উঠানে চেয়ার নিয়ে বসেন। বাড়ির পাশেই সবুজ ক্ষেত। সেদিকে কিছুক্ষন অপলক তাকিয়ে থাকেন। সারাদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। দিনের এই সময়টাতেই তার কোনো কাজ থাকেনা। কাজ না থাকায় মনে বিভিন্ন ঘটনা এসে ভীড় করে, মনও বিষন্ন হয়ে যায়।
ছাদেক আলীর জীবনটাও ঘটনাবহুল। ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারালেন, পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সংসারের ভার তার কাধে চড়ে বসলো, লেখাপড়ায় যথেষ্ট আগ্রহ থাকার পরেও লেখাপড়াটা আর শেষ করা হলোনা। জীবিকার তাগিদে বিচিত্র সব কাজ করতে লাগলেন। অনেক টাকাও রোজগার করলেন জীবনভর। এখন বৃদ্ধ বয়সে এসে সারাজীবনের বৈচিত্র্যময় কাজকর্মের কথা ভাবতে ভাবতেই দিব্যি সময় কেটে যায়। ছাদেক আলী নিঃসন্তান। তবে এজন্য তার মনে কোনো আক্ষেপও নেই। উপরওয়ালার মর্জি নাই, তাই তিনি বাবা হতে পারেননাই, তার চিন্তাভাবনা এরকমই।
২.
বিষন্ন মনে সবুজ ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে আছেন, এমন সময় মকবুল নিঃশব্দে ছাদেক আলীর পেছনে এসে দাঁড়ালো। ছাদেক আলীর ফাইফরমাশ খাটে মকবুল। অত্যন্ত সহজ-সরল একটা যুবক। তার একটা বৈশিষ্ট্য হলো, সে চলাফেরা করে ভীষন নিঃশব্দে। মাঝে মাঝে ছাদেক আলী তার শব্দহীন চলাফেরায় বিরক্ত হন কিন্তু কিছু বলেননা।
'চাচা মিয়া, খবর হুনছেন?' মকবুল জিজ্ঞেস করে ছাদেক আলীকে।
'কী খবর?' ছাদেক আলী জিজ্ঞেস করেন।
'হাওলাদার বাড়ির আলতাফরে পেত্নীতে আছর করছে' মকবুলের উত্তেজিত উত্তর।
ছাদেক আলী একটা কড়া ধমক দিতে গেলেন মকবুলকে। কিন্তু নিজেকে সামলালেন। আস্তে আস্তে বললেন, 'ভূত- পেত্নী বলতে কিছু নাই, এগুলা কুসংস্কার। আলতাফের হয়তো শরীর খারাপ হইছে। ওর আব্বারে গিয়া ডাক্তার দেখাইতে ক।'
' চাচা মিয়া, আসলেই আলতাফরে পেত্নীতে আছর করছে। পোলাডায় তেঁতুল গাছে উইঠ্যা বইয়া রইছে। নীচে নামে না, খালি হি হি কইরা হাসতাছে।' মকবুলের কন্ঠে একই উত্তেজনা।
ছাদেক আলী কিছু বললেন না। এই গ্রামের প্রতিটা পরিবারই কুসংস্কারে ভরা, গ্রামে লেখাপড়া নাই, শিক্ষা নাই, কারো কিছু হইলেই দৌড়ায় ওঝার বাড়ি আর কবিরাজের বাড়ি। তাই কিছু না বলে ছাদেক আলী সবুজ ক্ষেতের দিকে আবার তাকিয়ে রইলেন। মকবুল কিছুক্ষন তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর আবার ছুটলো হাওলাদার বাড়ির দিকে, আলতাফের খবর নিতে।
৩.
ছাদেক আলীর খুব শখ গ্রামে একটা স্কুল বানাবেন। নিজে খুব বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি, এজন্য তার মনে খুব আক্ষেপ। তিনি চাননা তার গ্রামে কেউ অশিক্ষিত থাকুক। তাছাড়া তার টাকাপয়সাও বিস্তর, ছেলেমেয়ে নেই। তাই একটা স্কুল বানিয়ে তিনি তার টাকাপয়সাকে সৎকাজে খরচ করতে চান। স্কুল করার জন্য জমির অভাব হবেনা। তার নিজেরই অনেক জমি আছে। তিনি পরিকল্পনা করেছেন, আগামী বছরই স্কুল তৈরীর কাজে হাত দেবেন।
বিকালে চেয়ারে বসে সবুজ ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে এইসব ভাবছেন তিনি। প্রতিদিন এই সময়ে তার মন বিষন্ন থাকে, কিন্তু আজ মন বেশ উৎফুল্ল। স্কুলটা বানাতে পারলে ছাদেক আলীর অনেক দিনের একটা স্বপ্ন সত্যি হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সবুজ ধানক্ষেত আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। ছাদেক আলী চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন।
৪.
ছাদেক আলীর স্কুলের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। গ্রামের পূর্বদিকে তার কিছু জমি ছিলো, সেখানেই তিনি স্কুলটা বানিয়েছেন। পাকা দালান, উপরে টিনের চাল। নতুন বিল্ডিং রোদের আলোয় চকচক করছে। স্কুলের সামনে খোলা মাঠ, খেলাধুলার জন্য।
ছাদেক আলী আজ অত্যন্ত খুশি। তার এতদিনের স্বপ্ন আজ বাস্তব হয়ে তার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও তার মনে একটা ক্ষীণ সন্দেহ ছিলো, এ স্কুলে হয়তো খুব বেশি ছেলেমেয়ে পড়তে আসবেনা। কারন, গ্রামের অধিকাংশ মানুষের কাছেই লেখাপড়াটা একটা বিলাসিতা। তাছাড়া, তাদের কাছে লেখাপড়ার কোনো গুরুত্বও নেই। তবে, ছাদেক আলী সবাইকে লেখাপড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। এই বৃদ্ধবয়সেও তিনি গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে গিয়েছেন। সবাইকে লেখাপড়া সম্পর্কে বুঝিয়েছেন, ছেলেমেয়েদের নাম লিখে নিয়ে এসেছেন। ছাত্রছাত্রীদের একটা লিস্টও করে ফেলেছেন। দেখা যাক, কী হয় শেষপর্যন্ত।
সকাল থেকেই ছেলেমেয়েরা এসে স্কুলের মাঠে ভীড় করেছে। কেউ এসেছে স্কুল দেখতে, কেউ এসেছে আনন্দ করতে। লেখাপড়া কী, এই জিনিসটা সম্পর্কে কারোরই কোনো ধারনা ছিলো না।
সকাল ১০টার সময় ছাদেক আলী সবার সামনে একটা ছোটখাটো ভাষন দিলেন। ভাষনে তিনি বললেন, আজকে সবাইকে নতুন বই, স্কুলের পোষাক দেওয়া হবে, দুপুরে টিফিনও দেওয়া হবে। তারপরে ছেলেমেয়েদেরকে তিনি ক্লাসরুমে যেতে বললেন।
সবাই হৈ হৈ করে ক্লাশরুমে গেলো। নতুন জামা, বই, খাবার পেয়ে সবাই ভীষন খুশি। বাচ্চাদের আনন্দ দেখে ছাদেক আলীও ভীষন খুশি হলেন।
৫.
ছাদেক আলীর স্কুলে ছেলেমেয়েরা নিয়মিত আসতে লাগলো। সেটা লেখাপড়ার জন্য না দুপুরবেলার টিফিনের লোভে সেটা ঠিক বোঝা গেলোনা।
এক বিকালে গঞ্জে গিয়ে ছাদেক আলী স্কুলের জন্য নতুন সাইনবোর্ড বানিয়ে আনলেন। স্কুলের এখন পর্যন্ত কোনো নাম ঠিক করা হয়নি। তাই ছাদেক আলী যখন স্কুলের গেটে সাইনবোর্ড টাঙ্গানোর ব্যবস্থা করছিলেন, তখন তার চারপাশে অজস্র মানুষের ভীড় জমে গেলো। সবারই আগ্রহ স্কুলের নাম নিয়ে। সাইনবোর্ড টাঙ্গানোর পর সবাই দেখলো স্কুলের নাম "করিম মুন্সি প্রাথমিক বিদ্যালয়"
অনেকেই অবাক হলেন, এই করিম মুন্সি আবার কে? তার নামেই বা স্কুলের নাম হলো কেন?
ছাদেক আলী সবার প্রশ্নের জবাব দিলেন। তিনি বললেন, 'করিম মুন্সি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি আর করিম ভাই একত্রে যুদ্ধ করছি ১৯৭১ সালে। তিনি যুদ্ধে শহীদ হইছেন। আমারে বাঁচাইতে গিয়া নিজে গুলি খাইয়া মারা গেছিলেন। আমি ওনার কাছে সারাজীবনই কৃতজ্ঞ থাকবো। তাই ওনার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই স্কুলের নামকরন তাঁর নামেই করলাম।' বলতে বলতে চোখ মুছলেন ছাদেক আলী। সবাই হাততালি দিয়ে স্কুলের নামের প্রতি সমর্থন জানালো।
তবে এই ভীড়ের মাঝে একজন ছিলেন যিনি হাততালি দেননি। তিনি এলাকার মন্টু শেখের ছেলে কালু শেখ। কালু শেখ এই গ্রামের চেয়ারম্যান। তবে লোক হিসেবে খুবই খারাপ। কালু শেখ ছাদেক আলীর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়লেন। ছাদেক আলীর ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজতে লাগলো চেয়ারম্যান কালু।
৬.
স্কুল স্বাভাবিক গতিতে চলছে। গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবকেরাই এই স্কুলের শিক্ষক। তারাই ছেলেমেয়েদের পড়ায়। আর ছাদেক আলী প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত স্কুলে এসে বসে থাকেন, স্কুলের বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করেন। দুপুরে মকবুল এসে তার ভাত দিয়ে যায়। ভাত খেয়ে তিনি আবার কাজে মন দেন। মকবুল দুপুরের পর থেকে তার সঙ্গেই থাকে। স্কুল ছুটি হলে ছাদেক আলী স্কুলের গেটে তালা দিয়ে মকবুলকে নিয়ে হাটে যান। বাড়ির জন্য বাজার করে, চা খেয়ে বাড়ি চলে আসেন। বাড়ি এসে কিছুক্ষন চেয়ার নিয়ে উঠানে বসে থাকেন। বসে বসে রেডিওতে খবর শোনেন। এরপর রাতের খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েন। এটাই তার প্রতিদিনের কর্মকান্ড।
৭.
কালু শেখ নিজের বাড়ির বারান্দায় বেঞ্চে বসে আছে। মনমেজাজ খুব গরম হয়ে আছে। যত দিন যাচ্ছে, ছাদেক আলী আর তার স্কুলের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাচ্ছে। আর গ্রামের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে সচেতন হয়ে যাচ্ছে। তাই, স্কুলের বদনাম করতে হবে। কীভাবে কী করা যায় সেটা নিয়ে ভাবছে কালু শেখ। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার মাথায় একটা ভয়ঙ্কর বুদ্ধি চলে এলো। এই বুদ্ধি অনুযায়ী কাজ করলে সাপও মরবে অথচ লাঠিও ভাঙবে না। তার দুষ্টবুদ্ধি বাস্তবায়ন করার জন্য সে কাজ শুরু করে দিলো।
৮.
"করিম মুন্সি প্রাথমিক বিদ্যালয়" এ প্রতিদিন বেলা ১টায় শিক্ষার্থীদের টিফিন দেয়া হয়। স্থানীয় বেকারির দোকান " রতন বেকারি" তে অর্ডার দেয়া থাকে। প্রতিদিন মকবুল আর স্কুলের দুইজন পিয়ন গিয়ে বাচ্চাদের জন্য খাবার নিয়ে আসে। তারপর প্রতিটা ক্লাসে তা বিতরন করা হয়।
একেকদিন একেক রকম খাবার। কোনোদিন পাউরুটি, কোনোদিন কেক, কোনোদিন বিস্কুট এইরকম হাল্কা নাস্তা দেয়া হয়।
আজও মকবুল আর পিয়ন দুইজন গিয়েছে নাস্তা আনতে। নাস্তা এনে বেলা ১টার সময়ে বাচ্চাদের মধ্যে নাস্তা বিতরনও করা হয়েছে।
ঘটনাটা ঘটলো বেলা ১.৩০ এর দিকে। ছাদেক আলী বারান্দায় বসে দুপুরের ভাত খাচ্ছেন, মকবুল তার পিছনে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ ক্লাস থ্রি'র শ্রেনীশিক্ষক রফিক দৌড়াতে দৌড়াতে ছাদেক আলীর কাছে এসে দাঁড়ালো। হাফাতে হাফাতে বললো, ' চাচা মিয়া, সর্বনাশ হইয়া গ্যাছে। আজকের টিফিন খাইয়া পোলাপান সব অসুস্থ হইয়া পড়ছে। পোলাপাইনের মুখ নীল হইয়া যাইতাছে। তাড়াতাড়ি আসেন চাচা। আমার ভাবগতিক সুবিধার লাগতাছে না। '
ছাদেক আলী অর্ধসমাপ্ত খাবার রেখে হাত না ধুয়ে দৌড় দিলেন ক্লাসের দিকে। ক্লাসরুমে গিয়ে দেখলেন, অধিকাংশ বাচ্চাই নেতিয়ে পড়েছে। কারো কারো মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে, কেউ কেউ চিৎকার করে কাঁদছে। ভীষন ভয়াবহ অবস্থা।
ছাদেক আলী ক্লাসরুমের বাইরে বের হয়ে মকবুল আর রফিককে বললেন তাড়াতাড়ি সদর হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার আর এম্বুলেন্স নিয়ে আসতে।
মকবুল আর রফিক ছুটে বেরিয়ে গেলো।
আধাঘণ্টার ভিতরে ডাক্তার আর এম্বুলেন্স নিয়ে তারা ফিরে আসলো। ডাক্তার বাচ্চাদের পরীক্ষা করে বললেন, তাড়াতাড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
বাচ্চাদের এম্বুলেন্সে তোলা হলো। সবাইকে এম্বুলেন্সে তোলা সম্ভব হলোনা। বাকিদেরকে রিক্সা, ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।
৯.
বাচ্চাদের অভিভাবকেরা খবর পেয়ে হাসপাতালের সামনে এসে ভীড় জমালো। সবারই মনে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা।
তবে দ্রুত বাচ্চাদের হাসপাতালে নিয়ে আসায় বাচ্চাদের খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষ
া করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিলেন, ২ দিনের ভিতরেই বাচ্চারা সুস্থ হয়ে উঠলো।
কিন্তু, ছাদেক আলীর আর মুখ দেখানোর উপায় রইলোনা। তার স্কুলের টিফিনের খাবার খেয়েই তো বাচ্চাদের এই অবস্থা। অভিভাবকেরাও আর বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে রাজি না। তারা ছাদেক আলীকে গালাগালি করতে করতে বাচ্চাদের নিয়ে যার যার বাড়ির দিকে চলে গেলো।
১০.
"করিম মুন্সি প্রাথমিক বিদ্যালয়" এর মাঠে চেয়ার নিয়ে বসে আছেন ছাদেক আলী। আজ আকাশে মেঘ করেছে, যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে। আজ স্কুলে কোনো বাচ্চা আসেনি। শিক্ষকেরা এসেছিলো। তারাও কিছুক্ষন থেকে ছাত্রছাত্রী না আসায় চলে গেছে।
মাঠের মাঝখানে ছাদেক আলী বসে আছেন আর তার পেছনে মকবুল দাড়িয়ে আছে। ছাদেক আলী হিসাব মেলাতে পারছেন না। টিফিনের খাবার খেয়ে বাচ্চারা কেন অসুস্থ হলো? এর পিছনে কে দায়ী? কে চায়না এই গ্রামের বাচ্চারা শিক্ষিত হোক?
এই জটিল সমীকরনের উত্তর কিছুতেই মিলছে না। হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। কিন্তু ছাদেক আলী চেয়ার ছেড়ে উঠলেন না। বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলেন আর সমীকরনের উত্তর খুঁজতে লাগলেন।
১১.
মকবুল চুপচাপ রইলোনা। সে সরাসরি "রতন বেকারি"তে গিয়ে বেকারির মালিক রতন মোল্লাকে ধরলো। বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলো, 'ঐদিনের খাওনে কী মিশাইছিলেন সত্য কইরা কন। নাইলে কিন্তু আপনার কপালে দুঃখ আছে।'
মকবুলের এই শাসানিতে কাজ হলোনা। রতন মোল্লা চুপ। কোনো কথাই সে বলবেনা।
শেষে মকবুল বললো, 'উত্তর দিবেননা? দিয়েননা। আমি এহন আপনারে দড়ি দিয়া এই খুঁটির লগে বাইন্ধা দিমু। হেরপর আপনার বেকারিতে আগুন লাগামু। বেকারি শুদ্ধা আপনে আগুনে পুইড়া কয়লা হইয়া যাইবেন। "
মকবুল বেশ হৃষ্টপুষ্ট জোয়ান। আর রতন মোল্লা রোগে ভোগা দূর্বল মানুষ। সে ভালো করেই জানে মকবুল ইচ্ছা করলে তাকে সহ এই বেকারিতে আগুন দিয়ে দিতে পারবে। এটা খুব একটা কঠিন হবেনা মকবুলের পক্ষে।
রতন তাই সব সত্যি কথা মকবুলকে জানিয়ে দিলো। চেয়ারম্যান কালু শেখ, রতন মোল্লাকে বলেছিলো টিফিনে কীটনাশক মেশাতে, এজন্য সে রতনকে মোটা অঙ্কের টাকাও দিয়েছে।
১২.
এরপর সবকিছু অতিদ্রুত শেষ হয়ে গেলো। রতন মোল্লা জনসম্মুখে সব কথা বলে দিলো, গ্রামের সবাই গিয়ে কালু শেখের বাড়িতে আগুন দিলো আর কালু শেখকে পুলিশে ধরিয়ে দিলো। সবাই ছাদেক আলীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তারা মিছামিছি ছাদেক আলীর মত মানুষকে অবিশ্বাস করেছে, গালাগালি করেছে।
সবাই গিয়ে ছাদেক আলীর পা ধরে মাফ চাইলো। ছাদেজ আলীও সবাইকে ক্ষমা করলেন, তবে একটা শর্তে। সব বাচ্চাকে আবার স্কুলে আসতে হবে।
পরিশিষ্টঃ কালু শেখের ৩মাস জেল হয়েছিলো। জেল থেকে ফিরে সে ছাদেক আলীর সঙ্গে দেখা করেছে এবং তার পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে। ছাদেক আলী তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কালু শেখ এখন "করিম মুন্সি প্রাথমিক বিদ্যালয়" এর বাচ্চাদের জন্য দুপুরবেলা টিফিন বানায়। এজন্য মাসশেষে সে ভালো বেতনও পায়। কালু শেখ এখন পুরোপুরি ভিন্ন মানুষ।
প্রতিদিন সকালবেলা "করিম মুন্সি প্রাথমিক বিদ্যালয়" এ জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়, সেইসঙ্গে পতাকা উত্তোলনও করা হয়। ছোট ছোট বাচ্চারা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যখন জাতীয় সঙ্গীত গায়, ছাদেক আলী তখন আনন্দে কেঁদে ফেলেন। তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য এটাই। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় তার প্রায়ই মনে হয়, করিম ভাই আশেপাশেই কোথাও আছেন আর মিটিমিটি হাসছেন, বড় তৃপ্তির সে হাসি।
২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:২৯
শুভ-অশুভ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার কমেন্টে অনুপ্রাণিত হলাম। আপনিও ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:২৪
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: অসাধারণ সুন্দর ছিমছাম গল্প +
ভালো থাকবেন