নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুভ সরকারের বাংলা ব্লগ ...

শুভ-অশুভ

জানা ভালো, না জানা খারাপ, ভুল জানা অপরাধ

শুভ-অশুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই পর্যালোচনাঃ গ্রামের নাম কাঁকনডুবি

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩৪

বইঃ গ্রামের নাম কাঁকনডুবি
লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল
প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫

"গ্রামের নাম কাঁকনডুবি" একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাস। উপন্যাসের প্রেক্ষাপট "কাঁকনডুবি" নামের একটি গ্রাম। এই গ্রামেরই এক বালক রঞ্জু যে স্থানীয় "নবকুমার হাইস্কুল" এর ছাত্র। লেখাপড়া করতে রঞ্জুর ভালো না লাগলেও দস্যিপনাতে তার জুড়ি মেলা ভার। রঞ্জুর মা-বাবা রঞ্জু ছোট থাকা অবস্থাতেই নৌকাডুবিতে মারা যায়। তখন থেকেই সে নানীর সাথে থাকে। গ্রামের এক অংশে বৃদ্ধা নানীকে নিয়ে সে থাকে।

ঘটনাচক্রে একদিন, রঞ্জুদের স্কুলে শিক্ষক হিসেবে আসেন মাসুদ ভাই। এই মাসুদ ভাইয়ের মাধ্যমেই রঞ্জুরা জানতে পারে পাকিস্তানিদেই বৈষম্যমূলক আচরণের কথা, ভাষার জন্য আত্মত্যাগের কথা, বঙ্গবন্ধুর কথা। মাসুদ ভাইয়ের উদ্যোগেই প্রথমবারের মত স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়, একুশে ফেব্রুয়ারিও পালন করা হয় বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে।

এরকম ছোট-বড় অসংখ্য ঘটনার মধ্যে দিয়ে "কাঁকনডুবি" নামক সুন্দর, শান্ত, নিস্তরঙ্গ গ্রামটি এগিয়ে যাচ্ছিলো। সেই গ্রামেও একদিন মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ের বিক্ষুব্ধ ঢেউ এসে আছড়ে পড়লো। শান্ত গ্রামটি অশান্ত হয়ে গেলো। একটা সময়ে পাকিস্তানি হানাদারেরা এসে "কাঁকনডুবি" গ্রামের রঞ্জুদের স্কুল "নবকুমার হাইস্কুল" এ ঘাঁটি গাড়লো। স্থানীয় কিছু লোক "রাজাকার বাহিনী"তে নাম লিখিয়ে মিলিটারিদের নিয়ে এলাকার পর এলাকা তছনছ, ঘরবাড়ি ভাংচুর, সাধারন মানুষের সবকিছু লুটপাট করতে লাগলো।

মাসুদ ভাই মুক্তিযুদ্ধ করতে চলে গেছেন। রঞ্জু অনেকবার মুক্তিযুদ্ধ যেতে চেয়েছে, মাসুদ ভাইকে বহুবার অনুরোধ করেছে। কিন্তু, বয়সে ছোট বলে মাসুদ ভাই রঞ্জুকে সঙ্গে নিতে রাজি হননি। রঞ্জুর এখন কোনো কাজ নেই। গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরে, পাকিস্তানি মিলিটারিদের অন্যায়-অত্যাচারগুলো স্বচক্ষে দেখে। এভাবেই, একদিন সে পাকি হানাদারদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয় গ্রামের কিছু হিন্দু পরিবারকে।

কাহিনীর মাঝামাঝি এই উপন্যাসে আরেকটি চরিত্র সংযুক্ত হয়। তার নাম ডোরা। ডোরা কাজিবাড়ীর বড় ছেলের ছোট মেয়ে। ডোরারা শহরে থাকে। ডোরার বাবাকে পাকিস্তানি মিলিটারিরা মেরে ফেলার পর তারা এই কাঁকনডুবি গ্রামে আসে। এখানে এসে ডোরার সাথে রঞ্জুর বন্ধুত্ব হয়। দুজনে মিলে পরিকল্পনা করে, তারা মুক্তিযোদ্ধা হবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডোরা তার চুল কেটে ফেলে, মেয়েদের পোষাক ছেড়ে ছেলেদের শার্ট আর হাফপ্যান্ট পড়ে। নিজের নতুন নাম দেয় "খোকন"।
এখানে উল্লেখ্য যে, বইয়ের মলাটে যে দুইজন ছেলেকে অস্ত্র হাতে দেখা যাচ্ছে, বলাই বাহুল্য তাদের একজন মেয়ে, ডোরা। আর আরেকজন রঞ্জু।

একদিন, তাদেরও সুযোগ এসে যায়, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার, মুক্তিযোদ্ধা হবার। তারপর... তারপর কী হলো?

তা জানতে হলে, পড়তে হবে বইটি। জাফর ইকবাল স্যারের বইগুলো বেশ কয়েকবছর ধরেই আশানুরূপ হচ্ছিলো না। তিনি নিজেই তার নামের সুবিচার করছিলেন না। সেখান থেকে অসাধারণভাবে ফিরে এলেন জাফর ইকবাল স্যার। এই বইটা শুরুর দিকের জাফর
ইকবাল স্যারকেই মনে করিয়ে দিয়েছে প্রতিমুহূর্তে। প্রথমদিক, কাহিনী আস্তে আস্তে এগোলেও আস্তে আস্তে গতিশীলতা পেয়েছে এবং দারুনভাবেই এগিয়েছে সামনের দিকে। জাফর ইকবাল স্যারের অধিকাংশ কিশোর উপন্যাসগুলোর মত এই উপন্যাসেরও শেষ দিকে একটি ক্লাইম্যাক্স ছিলো। ক্লাইম্যাক্স এর ফলাফল কী ছিলো, সেটা আমি বলছিনা। সেটা জানার জন্য বইটি পুরোটা পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
স্যারের "আমার বন্ধু রাশেদ" বইটিও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাস ছিলো, যেটা বহুল প্রশংসিত একটি বই ছিলো। সেই বইয়ের শেষটা ছিলো দুঃখের। "হ্যাপি এন্ডিং" বলতে যা বোঝায় তা হয়নি। "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি" তে কী হ্যাপি এন্ডিং হয়েছে? নাকি আগের মতই দুঃখ দিয়ে শেষ হয়েছে কাহিনী? প্রশ্নের উত্তরগুলো আপনারাই বলতে পারবেন বইটি পড়ার পর।

সবশেষে, বলা যায়, এ বইমেলার অন্যতম সেরা বই ছিলো এটি। এ বইখানা কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সবার পড়ারই উপযোগী। আপনিও পড়ে দেখতে পারেন, আশা করি, হতাশ হবেন না।

বি.দ্রঃ বইয়ের দাম রাখা হয়েছে ২৫% ডিসকাউন্টে ৩০০ টাকা। আমার কাছে, প্রথমে দামটা "অস্বাভাবিক" মনে হলেও, বইটা পড়ার পরেই বুঝলাম, টাকাটা একটুও জলে যায়নি।
তাছাড়া, বই তো অমূল্য সম্পদ। তাকে কী টাকার মাপকাঠিতে পরিমাপ করা ঠিক?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.