![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটবেলা থেকেই সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার ভক্ত ছিলাম, এখনো আছি।আমার মনে হয়, এমন কোনো বাঙ্গালী পাঠককে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবেনা যিনি গোয়েন্দা কাহিনীর ভক্ত অথচ ফেলুদার ভক্ত না। ফেলুদার কাহিনীগুলোই এমন ছিলো, যে একবার ঐ কাহিনীগুলো পড়বে সে ফেলুদার ভক্ত হয়ে যাবে নিঃসন্দেহে।
পরবর্তীতে, সত্যজিৎ রায় সিনেমাও বানালেন ফেলুদার কাহিনী অবলম্বনে। দুটি সিনেমা বানিয়েছিলেন, "জয় বাবা ফেলুনাথ" এবং "সোনার কেল্লা।"
দুটি সিনেমাতেই "ফেলুদা" চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সেসময়ের ডাকসাইটে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কেন জানি না, ফেলুদা হিসেবে তাকে ঠিক আমার পছন্দ হলোনা। সেটা কী মেয়েলী গলার কারনে না অন্য কোনো কারনে, সেটা ঠিক বলতে পারবোনা।
ফেলুদাকে পছন্দ না হলেও তোপসে আর জটায়ূকে বেশ ভালোই লেগেছিলো। "জটায়ূ" চরিত্রে সন্তোষ দত্তের অভিনয় ছিলো রীতিমত অনবদ্য।
সত্যজিৎ রায় ফেলুদাকে নিয়ে আরো সিনেমা নির্মাণ করতে পারতেন।কিন্তু, তিনি ফেলুদার কাহিনী থেকে ঐ দুটি সিনেমা তৈরী করেই থেমে যান। এর একটি কারন ছিলো, সন্তোষ দত্তের মৃত্যু। সত্যজিৎ রায় কাজের ব্যাপারে খুবই খুঁতখুঁতে ছিলেন, এ কারনেই সন্তোষ দত্তের বিকল্প হিসেবে "জটায়ূ" চরিত্রে তিনি আর কাউকে খুঁজে পাননি এবং সে কারনেই সময় ও সুযোগ থাকা সত্বেও তিনি ফেলুদাকে নিয়ে আর কোনো সিনেমা বানালেন না।
পরবর্তীতে, সত্যজিৎ রায়ের ছেলে সন্দীপ রায় ফেলুদার বিভিন্ন কাহিনী নিয়ে টিভি সিরিয়াল তৈরী করেন।বিটিভিতেও এককালে "ফেলুদা"র সিরিয়ালগুলো দেখা যেতো। "আলিফ লায়লা", "এডভেঞ্চার অব সিন্দাবাদ" আর "ফরচুন হান্টার" এর মতই ফেলুদার সিরিয়াল দেখার জন্য টিভির সামনে উন্মুখ হয়ে বসে থাকতাম।টিভি সিরিয়ালেই "ফেলুদা" হিসেবে প্রথমবারের মত আত্মপ্রকাশ করেন সব্যসাচী চক্রবর্তী । বলাই বাহুল্য, দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন তিনি সেখানে। "তোপসে" চরিত্রে ছিলেন শ্বাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। অভিনেতা হিসেবে শ্বাশ্বত এককথায় দুর্দান্ত কিন্তু "তোপসে" হিসেবে তাকে কেন জানি আমার ভালো লাগলোনা। তবে, "জটায়ূ" চরিত্রটা নিয়ে একেকসময় একেকজন অভিনেতাকে পর্দার সামনে আসতে দেখলাম। কখনো আসলেন রবি ঘোষ, কখনো আসলেন অনুপকুমার। সবাই সে আমলের ডাকসাইটে অভিনেতা, কিন্তু "জটায়ূ" চরিত্রে কেন জানি নিজেদেরকে খাপ খাওয়াতে পারলেন না। শেষমেষ "জটায়ূ" চরিত্রে অভিনয় করলেন বিভু ভট্টাচার্য। "জটায়ূ" হিসেবে দারুনভাবে মানিয়ে গেলেন তিনি। গল্প অনুযায়ী জটায়ূর মধ্যে একটু সরলতা থাকবে, হাস্যরস থাকবে, রিলিফ এলিমেন্ট থাকবে। বিভু ভট্টাচার্যের মধ্যে পুরোটাই পাওয়া গেলো। সন্দীপ রায়ও পরবর্তীতে আর জটায়ূকে পরিবর্তন করার দু:সাহস দেখালেন না। বিভু হয়ে গেলেন পাকাপাকিভাবে "জটায়ূ।"
পরবর্তীতে, অনেকগুলো ফেলুদার কাহিনীকে সেলুলয়েডের ফিতায় উঠে আসতে দেখলাম। "ফেলুদা" হিসেবে সব্যসাচী অনবদ্য ছিলেন আর "জটায়ূ" হিসেবে বিভু ভট্টাচার্যও ফাটাফাটি অভিনয় করে চললেন। একসময় "তোপসে" চরিত্রে শ্বাশ্বত'র পরিবর্তে এলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। পরমব্রত প্রতিভাবান অভিনেতা, "তোপসে" চরিত্রে খারাপ অভিনয় করলেন না। কিন্তু, অতটা মনকাড়া নয়।আসলে, ফেলুদার কাহিনীগুলোতে তোপসের খুব একটা ভূমিকা থাকেনা, এজন্য "তোপসে" চরিত্রে অভিনয় করা ব্যক্তিরা আলাদা করে অতটা নজর কখনোই কাড়েননি।
যাই হোক, সন্দীপ রায় এভাবেই অনেকগুলো ফেলুদার কাহিনী নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করে ফেললেন।একসময় "তোপসে" চরিত্রে অভিনয় করলেন সাহেব ভট্টাচার্য। তোপসে হিসেবে তিনি দুটি সিনেমায় অভিনয় করলেন।প্রথমটি, "গোরস্থানে সাবধান" এবং দ্বিতীয়টি, "রয়েল বেঙ্গল রহস্য।" মোটামুটি মানের অভিনয় করলেন। "তোপসে" বারবার পরিবর্তিত হলেও "ফেলুদা" হিসেবে সব্যসাচী আর "জটায়ূ" চরিত্রে বিভু ভট্টাচার্য রয়ে গেলেন শেষতক।
"রয়েল বেঙ্গল রহস্য" সিনেমার কাজ চলাকালীন মারা গেলেন বিভু ভট্টাচার্য। আর বয়স প্রাচীর হয়ে দাড়ালো ফেলুদা আর সব্যসাচীর মাঝখানে। তাই, 'রয়েল বেঙ্গল রহস্য"ই হয়ে গেলো সব্যসাচী আর বিভু ভট্টাচার্য জুটির শেষ ছবি।
কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে, ফেলুদা সিরিজের আরেকটি সিনেমা "বাদশাহী আংটি।" কার কেমন লেগেছে জানিনা, তবে আমি চূড়ান্তভাবে হতাশ হয়েছি। সিনেমার প্রতিমুহূর্তে সব্যসাচীর অভাব অনুভব করেছি। "ফেলুদা" চরিত্রে অভিনয় করা আবীর চ্যাটার্জীর প্রতিভা নিয়ে আমার কোনোরকম সন্দেহ নেই, কিন্তু "ফেলুদা" চরিত্রে ওনাকে মানায় কী না সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ফেলুদার ভরাট গম্ভীর কন্ঠ, মাপা হাসি, পরিমিত কথা, ব্যক্তিত্বপূর্ণ চাহনি কোনোটাই যে নতুন ফেলুদার মধ্যে খুঁজে পেলাম না।
কেউ যদি সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজের বইগুলো না পড়েই এই সিনেমাগুলো দ্যাখে, তাহলে তার মনে ফেলুদা সম্পর্কে খুব একটা উঁচু ধারণা জন্মাবে বলে মনে হয়না। এমনিতেই, সন্দীপ রায় তাঁর বাবার "ফেলুদা কাহিনী" গুলোকে এমনভাবে কাঁটছাঁট করে সিনেমায় তুলে ধরেন যে, সেগুলোকে ফেলুদার কাহিনী বলে মানতেই কষ্ট হয়, সেখানে এই ফেলুদা আসল "ফেলুদা"র সুনামকে কমাবে বৈ বাড়াবে না।
ফেলুদার কাহিনীগুলো পড়তে পড়তে, মনের গহীনে যে ফেলুদার ছবি তৈরী হয়েছে, তার সাথে সব্যসাচীর অনেকটাই মিল পেয়েছিলাম। কিন্তু, অত্যন্ত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করেও সে ফেলুদার সাথে আবীর চ্যাটার্জীর একটুও মিল খুঁজে পেলাম না।
এটা আমার ব্যর্থতা না সন্দীপ রায়ের ব্যর্থতা, কে জানে?
একনজরে ফেলুদার কাহিনীগুলোকে নিয়ে নির্মিত সিরিয়াল ও সিনেমাগুলো:
১. সোনার কেল্লা
২. জয় বাবা ফেলুনাথ
৩. জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা
৪. ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা
৫. শেয়াল দেবতা রহস্য
৬. ড. মুন্সীর ডায়েরী
৭. অম্বর সেন অন্তর্ধান রহস্য
৮. এবার কান্ড কেদারনাথে
৯. গোলাপী মুক্তা রহস্য
১০. গোঁসাইপুর সরগরম
১১. একেই বলে শ্যুটিং (ফেলুদা সিরিয়ালের শ্যুটিং চলাকালীন বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তৈরীকৃত বিশেষ পর্ব)
১২.বাক্স রহস্য
১৩. কৈলাসে কেলেঙ্কারি
১৪. টিনটোরেটোর যীশু
১৫. বোম্বাইয়ের বোম্বেটে
১৬. গোরস্থানে সাবধান
১৭. রয়েল বেঙ্গল রহস্য
১৮. বাদশাহী আংটি
ফেলুদাকে নিয়ে নির্মিত সবগুলো সিরিয়াল এবং সিনেমা দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তাই, ফেলুদার সেকাল এবং একাল নিয়ে দুকলম লেখার ধৃষ্টতা দেখালাম। দোষত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, এই কামনা করছি।
০১ লা জুন, ২০১৫ সকাল ৮:১৭
শুভ-অশুভ বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ১২:০৯
পয়গম্বর বলেছেন: আপনার মতো আমিও ফেলুদা'র কঠিন ভক্ত। আপনার লেখার সাথে সহমত পোষণ করছি। ভালো লাগলো সুন্দর বিশ্লেষণ