নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুভ সরকারের বাংলা ব্লগ ...

শুভ-অশুভ

জানা ভালো, না জানা খারাপ, ভুল জানা অপরাধ

শুভ-অশুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই পর্যালোচনা: সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ

১৭ ই জুন, ২০১৫ রাত ১২:৪৭

বইঃ সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ
লেখকঃ সুহান রিজওয়ান
প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি-২০১৫
প্রকাশনীঃ শুদ্ধস্বর
দামঃ ৬০০ টাকা

যে বইটা নিয়ে আজকে লিখছি, সেটা সম্পর্কে আমার আগে থেকে কোনো ধারনা ছিলোনা। এই বইটি পছন্দ করেছিলেন আমার বড়ভাই। "সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ" বইটি আমার বড়ভাইয়ের কেনা। প্রতিবছরই বড়ভাই বইমেলা থেকে কিছু বই কিনে আমাকে উপহার দেয়, অর্ধেক তার পছন্দ অনুযায়ী, বাকি অর্ধেক আমার পছন্দ অনুযায়ী। এবারে, তার পছন্দ অনুযায়ী আমার হাতে এলো এই ঢাউস সাইজের বইটি।
ঢাউস বলছি এই কারনে যে বইটিতে পৃষ্ঠাসংখ্যা ৪৪০।
বইয়ের কাগজও উন্নতমানের, যথেষ্ট শক্ত ও ভালোমানের কাগজ থাকার কারনে ৪৪০ পৃষ্ঠার বইটার ওজন যথেষ্ট বেশি ছিলো। দুইহাতে ধরে পড়া ছিলো রীতিমত অসম্ভব ব্যাপার। শেষমেষ, টেবিলে রেখে পড়া শুরু করলাম বইটি। দুইদিন লাগলো শেষ করতে "সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ"।

অনেক আত্মকথন হলো, এবার বই নিয়ে কিছু বলার সময় হয়েছে। এখন ঢুকে পড়া যাক বইয়ের বিশ্লেষণে। দেখা যাক, কতটুকু বিশ্লেষণ করতে পারি। ভুল-ত্রুটি একান্তই অনিচ্ছাকৃত। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে লেখাটি পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো।

"সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ" নামটা শুনেই মনে হয়েছিলো হয়তো কোনো যুদ্ধের বর্ননাই হবে। কারন, শিরস্ত্রাণ বলতে যা বুঝি তাতো যুদ্ধের সময় সৈনিকরাই মাথায় পড়ে শত্রুর আক্রমন থেকে মাথাকে বাঁচাতে।
প্রাচীনকালের যুদ্ধগুলোতে শিরস্ত্রাণ ব্যাপক ব্যবহৃত হতো।
যা অনুমান করেছিলাম, ঠিক তাই দেখলাম বইটিতে। এটা যুদ্ধেরই কাহিনী,তবে এই যুদ্ধটা আমাদের খুব পরিচিত, যুদ্ধটা আমাদের দেশের। ১৯৭১ সালের আমাদের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধে এবং যুদ্ধপরবর্তী সময়ে "মুকুট" নামের এক ব্যক্তির অকৃত্রিম লড়াইয়ের গল্পই "সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ"

সবাই জানি,"বাংলাদেশ" নামক দেশটার জন্ম হয়েছে অনেক রক্ত খরচ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই এ দেশটা দেখেছে আলোর মুখ। এরকম প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তির আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনার ক্ষেত্রে যার অবদানও ছিলো অসামান্য। তিনি তাজউদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। এই মানুষটিরই গল্প "সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ"। শুধু তাঁরই গল্প না, "বাংলাদেশ" নামক শিশুটির ভূমিষ্ট হওয়ার সময়ে ঘটে যাওয়া বহু ঘটনা, দেশপ্রেম, দেশপ্রেমের আড়ালে বিশ্বাসঘাতকতা, বহু চলকের লুকোচুরি সবকিছুর এক পরিপূর্ণ প্যাকেজ বইটি

ছোটবেলা থেকেই তাজউদ্দীন আহমেদ ছিলেন অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ। খুব বেশি কথা বলতেন না, নিজের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতেন। পরবর্তীতে, দেশের ক্রান্তিকালেও তাঁর এই স্বভাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি নিষ্ঠার সাথে তাঁর দায়িত্বপালন করে গেছেন সবসময়ই। এই তাজউদ্দীন আহমেদ প্রতিপক্ষের জন্য সবসময়ই ছিলেন এক আতঙ্কের নাম। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী তাজউদ্দীনের সম্পর্কে জুলফিকার আলী ভুট্টো তার এক সহচরকে বলেছিলেন, "আলোচনার টেবিলে শেখ মুজিবের পেছনে, ফাইল হাতে যে নটরিয়াস লোকটি চুপচাপ বসে থাকে তাকে কাবু করা খুব শক্ত, দিস তাজউদ্দীন... আই টেল ইউ, উইল বি এ বিগ প্রবলেম, হি ইজ ভেরি থরো।"

এই নটরিয়াস লোকটি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে গঠন করলেন অস্থায়ী সরকার। নিজে হলেন প্রধানমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গে থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সামলালেন বহু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি, নিলেন বহু সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
সারাদিন নিজের অফিসে কাজ করতেন। রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে গায়ের শার্ট খুলে সাবান দিয়ে ধুয়ে শুকাতে দিতেন। সকালে আবার সেই শার্ট পড়েই অফিসে বসতেন। কারন, তাঁর ভালো শার্টই ছিলো তখন একটা।

কিন্তু তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বকে ভালো চোখে দেখলেন না কিছু সুযোগসন্ধানী দালালেরা। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খন্দকার মোশতাক, যিনি ছিলেন অস্থায়ী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এই সুযোগসন্ধানীরা তাজউদ্দীনকে পরাজিত করার সুযোগ খুঁজতে লাগলেন।

একসময় দেশ স্বাধীন হলো, বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন। বঙ্গবন্ধু বিমান থেকে নামার পর প্রথমেই তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন তাজউদ্দীন, কাঁদলেন বঙ্গবন্ধুও।
বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীনকে ভালোবাসতেন। কিন্তু, খন্দকার মোশতাকসহ অন্যান্য দালালেরা তাজউদ্দীনের বিরুদ্ধে তাঁর কানে বহু মিথ্যাচার করতে লাগলেন। বঙ্গবন্ধুও একসময় তাজউদ্দীনকে ভুল বুঝলেন। সম্পর্কের সুতোটা কোথায় যেন ছিঁড়ে গেলো।

এভাবেই নবজাতক "বাংলাদেশ" এর ইতিহাসের বিভিন্ন ধাপের বহু হতাশাজনক, বহু আশাব্যঞ্জক, বহু দুঃখজনক ঘটনার আশ্চর্য সাবলীল বর্ণনা আছে বইটিতে। যদিও লেখক এটিকে "ইতিহাসগ্রন্থ" হিসেবে বিবেচনা করতে নিষেধ করেছেন, বরং এটিকে উপন্যাস হিসেবে গ্রহন করতে বলেছেন।

সুহান রিজওয়ানের সম্ভবত এটিই প্রথম প্রকাশিত বই। নতুন লেখক হিসেবে তার কাছ থেকে এতটা ভালো লেখা আশা করিনি। লেখার গাঁথুনি, শব্দবিন্যাস, ভাষার ব্যবহার সত্যিই ছিলো চমৎকার। ইতিহাসের বহু সর্পিল টানেল, জটিল সব সমীকরণকে কলমের খোঁচায় তুলে এনেছেন বইয়ের পাতায়। বইটা বড় হলেও পড়তে একটুও বিরক্ত লাগেনি। রহস্য উপন্যাসের মত পড়ে গেছি একটানা। লেখকের লেখার ধরন আমাকে বইয়ের সাথে সেঁটে রেখেছে শেষপর্যন্ত। টানটান রোমাঞ্চের মধ্যে দিয়েই অতিক্রম করতে হয়েছে একেকটি পৃষ্ঠা।

এই বইটা পড়ার আগে লেখক বহু বই পড়েছেন, দীর্ঘ ৩ বছর লেগেছে তার বইটি শেষ করতে। বইয়ের শেষে কী কী বই থেকে তিনি সাহায্য নিয়েছেন, তারও উল্লেখ আছে। সুহান রিজওয়ানের ৩ বছরের পরিশ্রমের ফসল "সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ।"

হাতে সময় থাকলে বইটি পড়ে দেখতে পারেন। হয়তো আপনারও ভালোই লাগবে বইটি, যেমনটা আমার লেগেছে।

আনন্দময় হোক আপনার বইপড়া।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.