![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ ক’দিন ধরে বাংলাদেশে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে তা হলো নাসির নগরের মন্দির পোড়ানোর ঘটনা। গত সাতদিন ধরে এ ঘটনার জেরে আরো অনেক অঘটন ঘটেছে। সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী আজ এ ঘটনায় ৩৩ জন সহ মোট ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারী দলের কয়েকজন স্থানীয় উচ্চ পর্যায়ের নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আমি নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে অগ্নি সংযোগ বা লুটপাটের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। ইসলামের পুন্যস্থান কাবা শরীফের প্রতি দরদ দেখাতে গিয়ে যারা এ কাজ করেছেন তারা অত্যন্ত গর্হিত কাজটি করেছেন কারন ইসলাম এ ধরণের উগ্রবাদী মনোভাবকে সমর্থন করেনা। আমরা ইসলামের ইতিহাসে প্রারম্ভিক একটি ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই, বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের পর অমুসলিম যুদ্ধবন্দীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নবীজি সহচরদের মতামত চাইলে হযরত আবু বকর (রাঃ) মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দিতে মত দিলেন। তিনি বললেন, হয়তঃ আল্লাহ পাক তাদের তাওবার সুযোগ দান করবেন এবং তারা ইসলাম গ্রহণ করবেন। এবং হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, এদের হত্যা করা উচিৎ। কারন এরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারন করেছে। নবীজি আবু বকরের মত গ্রহণ করে বললেন, হে আবু বকর! তোমার অবস্থা নবী ইব্রাহিমের (আঃ) মতো। তিনি বলেছিলেন, “ফামান তাবিআনী ফাইন্নাহু মিন্নী,ওয়ামান আছানী ফাইন্নাকা গাফুরুর রাহীম” যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত, আর যে আমার অবাধ্য হবে (হে আল্লাহ) তুমি তো (তার জন্য) দয়াময় ও ক্ষমাশীল। হযরত ওমরকে (রাঃ) উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার অবস্থা নুহ (আঃ) নবীর মতো। তিনি বলেছিলেন, “লা তাজার আলাল আরদি মিনাল কাফিরীনা দাইয়ারা” হে আল্লাহ! কোন কাফিরকে এ ভূখণ্ডে অবশিষ্ট রেখোনা।
নবীজির সে উদারনীতি পরবর্তীকালে ইতিহাসবেত্তাদের কাছে সমাদৃত হয়েছে।
আমরা নাসিরনগরের রসরাজ দাসের ঔদ্ধত্য দেখে হতবাক হইনা কারন তাদের পক্ষে কথা বলার জন্য বাংলাদেশে মানবতাবাদীর অভাব নেই। সাংবাদিক মহল তো তিলকে তাল বানিয়ে মুখরোচক সংবাদ পরিবেশনে রাতদিন একাকার করার জন্য সদাপ্রস্তুত। মুসলমানের ঘরে জন্ম কিছু নামধারী মুসলমানকে যখন রসরাজের জন্য কাঁদতে দেখি তখন কিছুটা হতবাক না হয়ে পারিনা। ক’দিন ধরে একটি টিভি চ্যানেল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভাকে মন্দির পোড়ানোর ঘটনার সাথে জড়ানোর অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। ওই সভায় সরকার দলীয় নেতাদের কয়েকজন এবং সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন, তারা অবগত আছেন ওই সভা কোন প্রকার মন্দির পোড়ানোর সাথে জড়িত নয়। এটা ছিল একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ সভা। আমরা দেখলাম সত্যের পক্ষ নেয়ায় সে সব নেতাকে এবং সরকারী কর্মকর্তাদের শাস্তি পেতে হলো। যারা মন্দির পোড়ানোর সাথে জড়িত তারা উগ্রবাদী, তারা ইসলামের সঠিক মূল্যবোধ থেকে অনেক দূরে।
আমার ভাবতে অবাক লাগে, সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম প্রধান দেশে রসরাজের বুকের পাটাতন এতই সম্প্রসারিত হলো যে, সে মুসলিমদের পবিত্র কাবা ঘরের ছবির উপর তার দেবীর মূর্তি স্থাপন করে সে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করতে সাহস পায়। পাবেই না কেন! তার পক্ষে তথাকথিত মানবতাবাদীরা যে রয়েছেন! সে সব মানবতাবাদীদের আমি বলতে চাই, আপনাদের মুখে পবিত্র কাবা ঘরের ছবি বিকৃতির নিন্দা কি একবার ও শোনা গেছে? যারা মন্দির পোড়ানোর প্রতিবাদে মিটিং মিছিল করছেন তাদের কি রসরাজের কর্মকাণ্ডের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করা উচিৎ নয়? একটি বাগানে যখন আগুন দেয়া হয়, তখন জ্বলে পুড়ে সব ছাই হবেই। এ জন্য কি অগ্নিদাতা দায়ী নয়? মুসলমানদের সাজানো বাগানে আগুন কে দিলো সে তো রসরাজ! মন্দির পোড়ানোর যেমন নিন্দা হওয়া উচিৎ তার চাইতে বেশী নিন্দা রসরাজের কর্মকাণ্ডের হওয়া উচিৎ কেননা এ ঘটনার সুত্রপাত রসরাজই ঘটিয়েছে। সরকার দলীয় একজন মন্ত্রীর মুখে আমি যখন শুনলাম, “কাবা ঘরের ছবি বিকৃতি করে পার পাওয়া যাবেনা, মন্দির পোড়ানোর বিচার যেমন হবে, তেমনি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানার শাস্তি ও পেতে হবে” আমার বুকটা তখন আশার আলোয় ভরে উঠে এবং নিজের অজান্তেই বলে উঠে সাবাশ মন্ত্রী মহোদয়!
নাসির নগরের ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা বলে মনে হয়, ১২ই নভেম্বরের সুন্নি জাগরণ ঠেকানোর অপকৌশল নয় কি? যারা মন্দির পোড়ানোর সাথে জড়িত তারা কারা এ মুহূর্তে খুঁজে বের করা অত্যন্ত প্রয়োজন। পুলিশ যাতে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার বানিজ্য না চালাতে পারে এবং নিরীহ জনগণ যেন হ্য়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে অনুরোধ করছি। আমরা মন্দির পোড়ানোর সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তি চাই এবং রসরাজের ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
©somewhere in net ltd.