![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সভাপতি, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
স্বামী বিবেকানন্দের অনেক সুন্দর সুন্দর বাণী আছে। এক : জীবে প্রেম করে যেই জন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। দুই : হে ভারত ভুলিও না মেথর, মুচি, চণ্ডাল তোমার ভাই...। তিন : খালি পেটে ধর্ম হয় না...। চার : ভারত বেরুক চাষার কুটির ভেদ করে...
এমনই আরও অনেক বাণী হাজির করা যায়, যে’গুলো সত্যিই ভাল লাগে শুনতে। বিবেকানন্দকে খণ্ডিতভাবে না জেনে সামগ্রিকভাবে জানতে তাঁর ‘বাণী ও রচনা’, ‘পত্রাবলী’, নিবেদিতার লেখা ‘স্বামীজিকে যেরূপ দেখিয়াছি’, শঙ্করীপ্রসাদ বসুর লেখা ‘বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ’, পড়াটা খুবই জরুরি। এ’সব পড়লে বিবেকানন্দ সম্পর্কে যে ধারণা পরিষ্কার হয়ে ওঠে তা হল- বিদ্যাসাগর বা রামমোহনের মত কালের সীমাবদ্ধতা তাঁর জীবনে আমরা দেখতে পাই না। আমরা যা পাই, তা ভয়ংকর! সোজা-সাপটা স্ব-বিরোধিতা।
বিবেকানন্দ এক দিকে বাণী দিচ্ছেন “জীবে প্রেম করে যেই জন...” পাশাপাশি তিনি বরানগর মঠে পশুবলির প্রবর্তন করেন।
দরিদ্র সেবার ক্ষেত্রেও বিবেকানন্দ ছিলেন পাক্কা হিসেবি। ১৮৯৭ সালে বিবেকানন্দ একটি চিঠি দিয়ে স্বামী ব্রহ্মানন্দকে নির্দেশ দেন, “কলকাতার মিটিং-এর খরচা বাদ দিয়ে যা বাঁচে ঐ famine-এতে (দুর্ভিক্ষে) পাঠাও বা কলকাতা, ডোমপাড়া, হাড়িপাড়া, বা গলিঘুঁজিতে অনেক গরীব আছে তাদের সাহায্য কর ... তারপর লোকের (হিন্দুত্বে) বিশ্বাস হবে, তারপর যা বলবে শুনবে”। (পত্রাবলী, পত্র নম্বর ৩৬৩)
বিবেকানন্দ একদিকে বলছেন, “হে ভারত ভুলিও না...” বলছেন, “নতুন ভারত বেরুক চাষার কুটির ভেদ করে”, তখন তিনি-ই চিঠি লিখে শিষ্যদের নির্দেশ পাঠাচ্ছেন, “ধনী দরিদ্রের বিবাদ যেন বাঁধিয়ে বসো না। ধনীদের আদতে গালমন্দ দেবে না”। (পত্রাবলী, পত্র সংখ্যা ৪৭৬)
‘ব্রহ্ম-বাদিন্’ পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে কী করা উচিত, সে বিষয়ে উপদেশ দিয়ে তাঁর একটি চিঠি- “গত সংখ্যায় ক্ষত্রিয়দের খুব বাড়ান হয়েছে, পরের সংখ্যায় ব্রাহ্মণদের খুব প্রশংসা কর, তারপরের সংখ্যায় বৈশ্যদের”। (পত্রাবলী, পত্র সংখ্যা ২৩৯)
বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বিদ্যাসাগর ও রামমোহনের মতামত জানি। বিবেকানন্দ এই প্রসঙ্গে বলছেন, “বাল্য বিবাহের ওপর আমার প্রবল ঘৃণা”। (ভারতীয় নারী, প্রকাশক উদ্বোধন কার্যালয়, পৃষ্ঠা ৯০)। তারপর-ই আমরা ভয়ংকর রকমের ধাক্কা খাই, যখন দেখি ‘ভারতীয় নারী’ বইটির ১৫ পৃষ্ঠায় বিবেকানন্দের একটি মত মুদ্রিত রয়েছে, যেখানে তিনি বলছেন, “কখনও কখনও শিশু বয়সেই আমাদিগকে বিবাহ দেওয়া হয়, কেন না বর্ণের নির্দেশ। মতামতের অপেক্ষা না রাখিয়া যদি বিবাহের ব্যবস্থা করিতে হয়, তবে প্রণয়বৃত্তি জাগ্রত হওয়ার পূর্বে বাল্যকালে বিবাহ দেওয়া ভাল”।
প্রণয়বৃত্তি বা প্রেম সম্বন্ধে বিবেকানন্দের মতামতে চোখ রাখি আসুন। তিনি বলছেন, “যে কাউকে ইচ্ছামতো পতি বা পত্নীরূপে গ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া যায়, যদি ব্যক্তিগত সুখ এবং পাশবপ্রবৃত্তির পরিতৃপ্তির চেষ্টা সমাজে বিস্তার লাভ করে, তার ফল নিশ্চয় অশুভ হবে- দুষ্টপ্রকৃতি, অসুর ভাবের সন্তান জন্মাবে”। (বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ, ৩য় খণ্ড, শঙ্করীপ্রসাদ বসু, পৃষ্ঠা ২৬৪) ‘প্রেম’ বিষয়ে এমন মতকে আমরা কোন্ যুক্তির নিরিখে প্রগতিশীল বলব?
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে নিবেদিতপ্রাণ অনেক দেশপ্রেমীর কাছে বিবেকানন্দ ছিলেন আদর্শ। ১৮৯৭-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা-অভিনন্দনের উত্তর দিতে গিয়ে বিবেকানন্দ আবেগের সঙ্গে বলেছিলেন, “ইংরেজদের সম্বন্ধে যে ঘৃণার হৃদয় নিয়ে আমি ইংলন্ডের মাটিতে পদার্পণ করেছিলাম, কোনও জাতি সম্বন্ধে তার থেকে অধিক ঘৃণার ভাব নিয়ে সে দেশের মাটিতে আর কেউ কখনও নামেনি”। বিবেকানন্দের এই বক্তব্যকে অনেকেই তুলে ধরে প্রমাণ করতে চান তাঁর ইংরেজ বিদ্বেষ। কিন্তু আসলে এটা বিবেকানন্দের বক্তব্যের অংশ বিশেষ। “কেউ কখনও নামেনি”-র ঠিক পরেই বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “এই সভামঞ্চে যেসব ইংরাজ বন্ধু উপস্থিত আছেন, তাঁরাই সে-বিষয়ে সাক্ষ্য দেবেন। কিন্তু যতই আমি তাদের মধ্যে বাস করতে লাগলাম, তাদের জাতীয় জীবনযন্ত্র কিভাবে কাজ করছে দেখতে পেলাম, তাদের সঙ্গে মিশে জানলাম কোথায় রয়েছে তাঁদের জাতির হৃৎস্পন্দন- ততই আমি তাদের ভালবাসতে লাগলাম। তার ফলে, হে ভাতৃগণ, এখানে এমন কেউ নেই যিনি আমার থেকে ইংরেজদের বেশি ভালবাসেন”। (বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২) বিবেকানন্দের ‘বাণী ও রচনা’ ৯ম খণ্ডের ২৫৩ পৃষ্ঠায় বিবেকানন্দ বলছেন, “সকল কথার ধুয়ো হচ্ছে- ‘ইংরেজ আমাদের দাও।’ বাপু আর কত দেবে? রেল দিয়েছে, তারের খবর দিয়েছে, রাজ্যে শৃঙ্খলা দিয়েছে, ডাকাতদের দল তাড়িয়েছে, বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছে। আবার কী দেবে? নিঃস্বার্থভাবে কে কী দেয়? বলি ওরা তো এতো দিয়েছে, তোরা কী দিয়েছিস?”
বিবেকানন্দের এই সব বক্তব্য তুলে বলতে চাইছি, বিবেকানন্দকে পুরোপুরি ইংরেজ বিদ্বেষী বলে বর্তমানে যেভাবে চিত্রিত করা হয়, সেটা ঠিক নয়। তিনি তাঁর স্বভাব বৈশিষ্ট্য অনুসারে কখনও ইংরেজ-প্রেম, কখনও ইংরেজ-বিদ্বেষ প্রকাশ করেছেন।
এই লেখকের একটি বিনীত অনুরোধ,
বিবেকানন্দের কিছু ভালো বাণী পড়ে খণ্ডিত বিবেকানন্দকে না জেনে সম্পূর্ণ বিবেকানন্দকে জানতে আন্তরিকতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় বই-পত্তর আদ্যন্ত পড়ুন। দেখতে পাবেন, বিবেকানন্দের সতীদাহের প্রতি সমর্থন থেকে বিধবা বিবাহ বিরোধিতার সম্পূর্ণ চিত্র। দেখতে পাবেন বিবেকানন্দের স্ব-বিরোধিতার নানা দিক।
সুতরাং তাঁর প্রগতিশীল বাণীগুলোই শেষ কথা নয়।
বিদ্যাসাগর, রামমোহন শিক্ষা প্রসারে সমাজ সংস্কারে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। শিক্ষা বিষয়ে বিবেকানন্দের মত ছিল একটু ভিন্ন রকম। তাঁর কথায়, “এইসব বই, এইসব বিজ্ঞান আমাদিগকে কিছুই শিখাইতে পারিবে না। বই পড়িয়া আমরা তোতাপাখী হই, বই পড়িয়া কেহ পণ্ডিত হয় না। ... বই যত কম পড়েন ততই ভাল। ... গ্রন্থ দ্বারা জগতের ভাল অপেক্ষা মন্দ অধিক হইয়াছে”। (বাণী ও রচনা, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৫, ৯৯ এবং ১০৯) সমাজ সংস্কার সম্বন্ধে বিবেকানন্দের স্পষ্ট অভিমত, “সমাজ সংস্কার ধর্মের কাজ নয়”। (পত্রাবলী, পত্র সংখ্যা ৮৩)
যে মতামত, আদর্শ ও আন্দোলনের জন্য বিদ্যাসাগর, রামমোহনকে আমরা শ্রদ্ধা করি, সেই মতামতের, আদর্শের বিরোধী চরিত্রকে আমরা শ্রদ্ধা জানাবো কী করে? এতে আমাদের স্ব-বিরোধিতা, ভণ্ডামী, অজ্ঞতা-ই কি প্রকাশিত হয় না?
আমরা কী করবো, আমাদেরই ঠিক করতে হবে। আমজনতার আবেগে গা ভাসাবো, না কি যুক্তি-বুদ্ধিকে শাণিত করতে সচেষ্ট হবো?
২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৫
মহা সমন্বয় বলেছেন: আশা করি আপনি নিয়মিত এই ব্লগে লিখবেন। আর আমি আপনার লিখা সমুদয় বইয়ের লিস্ট চাই।
আমি আপনার অনেকগুলো বই পড়েছি আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ভাল থাকবেন।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৭
যুক্তিবাদী্ প্রবীর ঘোষ বলেছেন: কি কি বই পড়েছেন জানান না ভাই খুশি হব।
আপনি http://www.srai.org ওয়েবসাইটে গিয়ে আমার নতুন বই সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আমার লেখা বইগুলির লিস্ট আমার যে কোনও বইয়েই পেয়ে যাবেন। এছাড়া আমার আগের পোস্ট-এ বাংলাদেশের কোথায় কোথায় বই পাওয়া যায় তার লিস্ট দিয়েছি।
৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২৩
মিহির সাহা বলেছেন: আরণ্যক রাখা, কিরে পুটজ্বলে গেল !
৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৫৫
পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন: ১) বিবেকানন্দ এক দিকে বাণী দিচ্ছেন “জীবে প্রেম করে যেই জন...” পাশাপাশি তিনি বরানগর মঠে পশুবলির প্রবর্তন করেন।
বরানগর মঠে পশুবলি? পাশাপাশি 'জীবে প্রেম' বাণী? হাহাহা
বরানগর মঠে স্বামীজীর বাস 1886-1887। সখার প্রতি কবিতা লেখা 1900 নাগাদ। স্বামীজী এবং তাঁর গুরুভাইরা বৈদান্তিক হলেও শাক্ত। হ্যাঁ, বৈদান্তিক শাক্ত হতেই পারেন। বিবেকানন্দ শাকাহারী ছিলেন না, সকলকে হতেও বলেননি। তিনি জানতেন, নানা কারণে তা সম্ভব নয়। শক্তিপূজায় পশুবলি বিহিত। উপরন্তু স্বামীজীর বক্তব্য ছিল, সামান্য রক্ত দেখে যে ভয় পায়, সে মা-বোনের ইজ্জত বাঁচাবে কী করে? দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়বে কী করে? তবে নিজের মাংস খাওয়াকে স্বামীজী তাঁর সীমাবদ্ধতা বলেছেন। সেকালে বহুমূত্র রোগীদের অবশ্য প্রচুর মাংস খেতে বলাও হতো, কোনো চিকিৎসা ছিল না।
২) দরিদ্র সেবার ক্ষেত্রেও বিবেকানন্দ ছিলেন পাক্কা হিসেবি। ১৮৯৭ সালে বিবেকানন্দ একটি চিঠি দিয়ে স্বামী ব্রহ্মানন্দকে নির্দেশ দেন, “কলকাতার মিটিং-এর খরচা বাদ দিয়ে যা বাঁচে ঐ famine-এতে (দুর্ভিক্ষে) পাঠাও বা কলকাতা, ডোমপাড়া, হাড়িপাড়া, বা গলিঘুঁজিতে অনেক গরীব আছে তাদের সাহায্য কর ... তারপর লোকের (হিন্দুত্বে) বিশ্বাস হবে, তারপর যা বলবে শুনবে”। (পত্রাবলী, পত্র নম্বর ৩৬৩)
হিন্দুত্ব কথাটি ঢুকিয়েছেন কী উদ্দেশ্যে? গরিব অশিক্ষিতদের মধ্যে কাজ করতে গেলে তাদের বিশ্বাস অর্জন করতেই হয়। নইলে কাজ অসম্ভব। হিন্দু অশিক্ষিতেরা স্বামীজীর হিন্দুধর্মের কী বুঝবে? আর তিনি ধর্মান্তরে বিশ্বাস করতেন না যে মুসলমানদের হিন্দুধর্মে দীক্ষা দেবেন।
৩) বিবেকানন্দ একদিকে বলছেন, “হে ভারত ভুলিও না...” বলছেন, “নতুন ভারত বেরুক চাষার কুটির ভেদ করে”, তখন তিনি-ই চিঠি লিখে শিষ্যদের নির্দেশ পাঠাচ্ছেন, “ধনী দরিদ্রের বিবাদ যেন বাঁধিয়ে বসো না। ধনীদের আদতে গালমন্দ দেবে না”। (পত্রাবলী, পত্র সংখ্যা ৪৭৬)
স্বামীজীর কাঙ্ক্ষিত নতুন ভারত কি ধনীদের হত্যা করে বা তাদের সঙ্গে ঝগড়া করে বেরোবে? স্বামীজী কি চারু মজুমদার নাকি? আচ্ছা আহাম্মক তো! স্বামীজী ঝগড়া বাধিয়ে দেওয়াতে বিশ্বাস করতেন না।
৪) ‘ব্রহ্ম-বাদিন্’ পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে কী করা উচিত, সে বিষয়ে উপদেশ দিয়ে তাঁর একটি চিঠি- “গত সংখ্যায় ক্ষত্রিয়দের খুব বাড়ান হয়েছে, পরের সংখ্যায় ব্রাহ্মণদের খুব প্রশংসা কর, তারপরের সংখ্যায় বৈশ্যদের”। (পত্রাবলী, পত্র সংখ্যা ২৩৯)
সমাজে সব জাতির অবদান আছে, এবং সব জাতিতেই ভালো মানুষ আছেন। প্রশংসা তো সব জাতিরই প্রাপ্য!
৫) বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বিদ্যাসাগর ও রামমোহনের মতামত জানি। বিবেকানন্দ এই প্রসঙ্গে বলছেন, “বাল্য বিবাহের ওপর আমার প্রবল ঘৃণা”। (ভারতীয় নারী, প্রকাশক উদ্বোধন কার্যালয়, পৃষ্ঠা ৯০)। তারপর-ই আমরা ভয়ংকর রকমের ধাক্কা খাই, যখন দেখি ‘ভারতীয় নারী’ বইটির ১৫ পৃষ্ঠায় বিবেকানন্দের একটি মত মুদ্রিত রয়েছে, যেখানে তিনি বলছেন, “কখনও কখনও শিশু বয়সেই আমাদিগকে বিবাহ দেওয়া হয়, কেন না বর্ণের নির্দেশ। মতামতের অপেক্ষা না রাখিয়া যদি বিবাহের ব্যবস্থা করিতে হয়, তবে প্রণয়বৃত্তি জাগ্রত হওয়ার পূর্বে বাল্যকালে বিবাহ দেওয়া ভাল”।
'মতামতের অপেক্ষা না রাখিয়া যদি বিবাহের ব্যবস্থা করিতে হয়' বাক্যাংশটি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সময়ে প্রায় সব বিয়ে তো এইভাবেই হতো! তিনি সকলকে সুশিক্ষিত করে তারপরে বিবাহের পক্ষপাতী, কিন্তু তা কি তৎক্ষণাৎ সম্ভব ছিল?
৬) ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে নিবেদিতপ্রাণ অনেক দেশপ্রেমীর কাছে বিবেকানন্দ ছিলেন আদর্শ। ১৮৯৭-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা-অভিনন্দনের উত্তর দিতে গিয়ে বিবেকানন্দ আবেগের সঙ্গে বলেছিলেন, “ইংরেজদের সম্বন্ধে যে ঘৃণার হৃদয় নিয়ে আমি ইংলন্ডের মাটিতে পদার্পণ করেছিলাম, কোনও জাতি সম্বন্ধে তার থেকে অধিক ঘৃণার ভাব নিয়ে সে দেশের মাটিতে আর কেউ কখনও নামেনি”। বিবেকানন্দের এই বক্তব্যকে অনেকেই তুলে ধরে প্রমাণ করতে চান তাঁর ইংরেজ বিদ্বেষ। কিন্তু আসলে এটা বিবেকানন্দের বক্তব্যের অংশ বিশেষ। “কেউ কখনও নামেনি”-র ঠিক পরেই বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “এই সভামঞ্চে যেসব ইংরাজ বন্ধু উপস্থিত আছেন, তাঁরাই সে-বিষয়ে সাক্ষ্য দেবেন। কিন্তু যতই আমি তাদের মধ্যে বাস করতে লাগলাম, তাদের জাতীয় জীবনযন্ত্র কিভাবে কাজ করছে দেখতে পেলাম, তাদের সঙ্গে মিশে জানলাম কোথায় রয়েছে তাঁদের জাতির হৃৎস্পন্দন- ততই আমি তাদের ভালবাসতে লাগলাম। তার ফলে, হে ভাতৃগণ, এখানে এমন কেউ নেই যিনি আমার থেকে ইংরেজদের বেশি ভালবাসেন”। (বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২) বিবেকানন্দের ‘বাণী ও রচনা’ ৯ম খণ্ডের ২৫৩ পৃষ্ঠায় বিবেকানন্দ বলছেন, “সকল কথার ধুয়ো হচ্ছে- ‘ইংরেজ আমাদের দাও।’ বাপু আর কত দেবে? রেল দিয়েছে, তারের খবর দিয়েছে, রাজ্যে শৃঙ্খলা দিয়েছে, ডাকাতদের দল তাড়িয়েছে, বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছে। আবার কী দেবে? নিঃস্বার্থভাবে কে কী দেয়? বলি ওরা তো এতো দিয়েছে, তোরা কী দিয়েছিস?”
স্বামীজীর তো ইংরেজ বা অন্য কোনো জাতির ওপর বিদ্বেষ ছিল না, থাকার কথাও নয়। ভারতের স্বাধীনতা চাইলে ইংরেজশাসনের বিরোধিতা করতে হবে, ইংরেজবিদ্বেষের কী কারণ? ক'জন ইংরেজ ভারতে শাসন করতে এসেছিলেন? আর সত্যিই তো তারা ভারতের প্রচুর উপকার ইংরেজরা করেছে। তা তো রামমোহন-বিদ্যাসাগর প্রমুখ সকলেই স্বীকার করেছেন!
বিবেকানন্দের এই সব বক্তব্য তুলে বলতে চাইছি, বিবেকানন্দকে পুরোপুরি ইংরেজ বিদ্বেষী বলে বর্তমানে যেভাবে চিত্রিত করা হয়, সেটা ঠিক নয়। তিনি তাঁর স্বভাব বৈশিষ্ট্য অনুসারে কখনও ইংরেজ-প্রেম, কখনও ইংরেজ-বিদ্বেষ প্রকাশ করেছেন।
এই লেখকের একটি বিনীত অনুরোধ,
বিবেকানন্দের কিছু ভালো বাণী পড়ে খণ্ডিত বিবেকানন্দকে না জেনে সম্পূর্ণ বিবেকানন্দকে জানতে আন্তরিকতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় বই-পত্তর আদ্যন্ত পড়ুন।
৭) দেখতে পাবেন, বিবেকানন্দের সতীদাহের প্রতি সমর্থন থেকে বিধবা বিবাহ বিরোধিতার সম্পূর্ণ চিত্র। দেখতে পাবেন বিবেকানন্দের স্ব-বিরোধিতার নানা দিক।
সুতরাং তাঁর প্রগতিশীল বাণীগুলোই শেষ কথা নয়।
বিদ্যাসাগর, রামমোহন শিক্ষা প্রসারে সমাজ সংস্কারে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। শিক্ষা বিষয়ে বিবেকানন্দের মত ছিল একটু ভিন্ন রকম। তাঁর কথায়, “এইসব বই, এইসব বিজ্ঞান আমাদিগকে কিছুই শিখাইতে পারিবে না। বই পড়িয়া আমরা তোতাপাখী হই, বই পড়িয়া কেহ পণ্ডিত হয় না। ... বই যত কম পড়েন ততই ভাল। ... গ্রন্থ দ্বারা জগতের ভাল অপেক্ষা মন্দ অধিক হইয়াছে”। (বাণী ও রচনা, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৫, ৯৯ এবং ১০৯)
৮) সমাজ সংস্কার সম্বন্ধে বিবেকানন্দের স্পষ্ট অভিমত, “সমাজ সংস্কার ধর্মের কাজ নয়”। (পত্রাবলী, পত্র সংখ্যা ৮৩)
সমাজসংস্কার তো অবশ্যই ধর্মের কাজ নয়। ধর্ম বিবেকানন্দের মতে মানুষের অন্তর্নিহিত দেবত্বের জাগরণ।
সত্যিই যে অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী হয়, বই পড়ে যে সত্যিই কিছু শেখা যায় না, আগে বুদ্ধির মার্জনা লাগে, তার প্রমাণ তো আপনি নিজে! রবীন্দ্রনাথের 'তোতাকাহিনী' নিশ্চয়ই পড়েননি, বা 'তাসের দেশ'? 'পুথি পড়ে কেউ পণ্ডিত হয় না, 'প্রেম'---এই আড়াই অক্ষর যে পড়তে পেরেছে, সে-ই পণ্ডিত'--- একথা তো কবির কতদিন আগে বলে গেছেন! সতীদাহ প্রথা রবীন্দ্রনাথ সমর্থন করেছেন, তা নিয়ে কবিতাও লিখেছেন। স্বামীজী কেবল বলেছেন : 'কখনও কখনও পত্নীরা স্বেচ্ছায় সহমৃতা হতেন'। তা যে হতেন, রাজপুতানার ইতিহাস তার প্রমাণ। জহরব্রতের নাম শুনেছেন তো?
যে মতামত, আদর্শ ও আন্দোলনের জন্য বিদ্যাসাগর, রামমোহনকে আমরা শ্রদ্ধা করি, সেই মতামতের, আদর্শের বিরোধী চরিত্রকে আমরা শ্রদ্ধা জানাবো কী করে? এতে আমাদের স্ব-বিরোধিতা, ভণ্ডামী, অজ্ঞতা-ই কি প্রকাশিত হয় না? আমরা কী করবো, আমাদেরই ঠিক করতে হবে। আমজনতার আবেগে গা ভাসাবো, না কি যুক্তি-বুদ্ধিকে শাণিত করতে সচেষ্ট হবো?
রামমোহন তো রোজ মাংস খেতেন। তাঁর একদিকে দুই পত্নী এবং এক মুসলমান উপপত্নী আর তিনি লোককে বৈরাগ্য-উপদেশ দিয়ে একাধিক গান লিখেছেন। একটি হলো : 'মনে করো শেষের সেদিন ভয়ংকর!' বিদ্যাসাগর তো মাতাপিতৃশ্রাদ্ধে যেচে ব্রাহ্মণদের পা ধুইয়ে দিয়েছেন, আরও অনেক স্ববিরোধ আছে তাঁর। আর আপনি যে কতবড়ো মিথ্যাবাদী এবং ভণ্ড, তাও তো আমার কাছে স্পষ্ট। আপনার যুক্তিবুদ্ধির উদ্দেশে ভূলুণ্ঠিত প্রণাম রইল।
৫| ২৬ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৫৫
পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন: ১) বিবেকানন্দ এক দিকে বাণী দিচ্ছেন “জীবে প্রেম করে যেই জন...” পাশাপাশি তিনি বরানগর মঠে পশুবলির প্রবর্তন করেন।
বরানগর মঠে পশুবলি? পাশাপাশি 'জীবে প্রেম' বাণী? হাহাহা
বরানগর মঠে স্বামীজীর বাস 1886-1887। সখার প্রতি কবিতা লেখা 1900 নাগাদ। স্বামীজী এবং তাঁর গুরুভাইরা বৈদান্তিক হলেও শাক্ত। হ্যাঁ, বৈদান্তিক শাক্ত হতেই পারেন। বিবেকানন্দ শাকাহারী ছিলেন না, সকলকে হতেও বলেননি। তিনি জানতেন, নানা কারণে তা সম্ভব নয়। শক্তিপূজায় পশুবলি বিহিত। উপরন্তু স্বামীজীর বক্তব্য ছিল, সামান্য রক্ত দেখে যে ভয় পায়, সে মা-বোনের ইজ্জত বাঁচাবে কী করে? দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়বে কী করে? তবে নিজের মাংস খাওয়াকে স্বামীজী তাঁর সীমাবদ্ধতা বলেছেন। সেকালে বহুমূত্র রোগীদের অবশ্য প্রচুর মাংস খেতে বলাও হতো, কোনো চিকিৎসা ছিল না।
২) দরিদ্র সেবার ক্ষেত্রেও বিবেকানন্দ ছিলেন পাক্কা হিসেবি। ১৮৯৭ সালে বিবেকানন্দ একটি চিঠি দিয়ে স্বামী ব্রহ্মানন্দকে নির্দেশ দেন, “কলকাতার মিটিং-এর খরচা বাদ দিয়ে যা বাঁচে ঐ famine-এতে (দুর্ভিক্ষে) পাঠাও বা কলকাতা, ডোমপাড়া, হাড়িপাড়া, বা গলিঘুঁজিতে অনেক গরীব আছে তাদের সাহায্য কর ... তারপর লোকের (হিন্দুত্বে) বিশ্বাস হবে, তারপর যা বলবে শুনবে”। (পত্রাবলী, পত্র নম্বর ৩৬৩)
হিন্দুত্ব কথাটি ঢুকিয়েছেন কী উদ্দেশ্যে? গরিব অশিক্ষিতদের মধ্যে কাজ করতে গেলে তাদের বিশ্বাস অর্জন করতেই হয়। নইলে কাজ অসম্ভব। হিন্দু অশিক্ষিতেরা স্বামীজীর হিন্দুধর্মের কী বুঝবে? আর তিনি ধর্মান্তরে বিশ্বাস করতেন না যে মুসলমানদের হিন্দুধর্মে দীক্ষা দেবেন।
৩) বিবেকানন্দ একদিকে বলছেন, “হে ভারত ভুলিও না...” বলছেন, “নতুন ভারত বেরুক চাষার কুটির ভেদ করে”, তখন তিনি-ই চিঠি লিখে শিষ্যদের নির্দেশ পাঠাচ্ছেন, “ধনী দরিদ্রের বিবাদ যেন বাঁধিয়ে বসো না। ধনীদের আদতে গালমন্দ দেবে না”। (পত্রাবলী, পত্র সংখ্যা ৪৭৬)
স্বামীজীর কাঙ্ক্ষিত নতুন ভারত কি ধনীদের হত্যা করে বা তাদের সঙ্গে ঝগড়া করে বেরোবে? স্বামীজী কি চারু মজুমদার নাকি? আচ্ছা আহাম্মক তো! স্বামীজী ঝগড়া বাধিয়ে দেওয়াতে বিশ্বাস করতেন না।
৪) ‘ব্রহ্ম-বাদিন্’ পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে কী করা উচিত, সে বিষয়ে উপদেশ দিয়ে তাঁর একটি চিঠি- “গত সংখ্যায় ক্ষত্রিয়দের খুব বাড়ান হয়েছে, পরের সংখ্যায় ব্রাহ্মণদের খুব প্রশংসা কর, তারপরের সংখ্যায় বৈশ্যদের”। (পত্রাবলী, পত্র সংখ্যা ২৩৯)
সমাজে সব জাতির অবদান আছে, এবং সব জাতিতেই ভালো মানুষ আছেন। প্রশংসা তো সব জাতিরই প্রাপ্য!
৫) বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বিদ্যাসাগর ও রামমোহনের মতামত জানি। বিবেকানন্দ এই প্রসঙ্গে বলছেন, “বাল্য বিবাহের ওপর আমার প্রবল ঘৃণা”। (ভারতীয় নারী, প্রকাশক উদ্বোধন কার্যালয়, পৃষ্ঠা ৯০)। তারপর-ই আমরা ভয়ংকর রকমের ধাক্কা খাই, যখন দেখি ‘ভারতীয় নারী’ বইটির ১৫ পৃষ্ঠায় বিবেকানন্দের একটি মত মুদ্রিত রয়েছে, যেখানে তিনি বলছেন, “কখনও কখনও শিশু বয়সেই আমাদিগকে বিবাহ দেওয়া হয়, কেন না বর্ণের নির্দেশ। মতামতের অপেক্ষা না রাখিয়া যদি বিবাহের ব্যবস্থা করিতে হয়, তবে প্রণয়বৃত্তি জাগ্রত হওয়ার পূর্বে বাল্যকালে বিবাহ দেওয়া ভাল”।
'মতামতের অপেক্ষা না রাখিয়া যদি বিবাহের ব্যবস্থা করিতে হয়' বাক্যাংশটি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সময়ে প্রায় সব বিয়ে তো এইভাবেই হতো! তিনি সকলকে সুশিক্ষিত করে তারপরে বিবাহের পক্ষপাতী, কিন্তু তা কি তৎক্ষণাৎ সম্ভব ছিল?
৬) ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে নিবেদিতপ্রাণ অনেক দেশপ্রেমীর কাছে বিবেকানন্দ ছিলেন আদর্শ। ১৮৯৭-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা-অভিনন্দনের উত্তর দিতে গিয়ে বিবেকানন্দ আবেগের সঙ্গে বলেছিলেন, “ইংরেজদের সম্বন্ধে যে ঘৃণার হৃদয় নিয়ে আমি ইংলন্ডের মাটিতে পদার্পণ করেছিলাম, কোনও জাতি সম্বন্ধে তার থেকে অধিক ঘৃণার ভাব নিয়ে সে দেশের মাটিতে আর কেউ কখনও নামেনি”। বিবেকানন্দের এই বক্তব্যকে অনেকেই তুলে ধরে প্রমাণ করতে চান তাঁর ইংরেজ বিদ্বেষ। কিন্তু আসলে এটা বিবেকানন্দের বক্তব্যের অংশ বিশেষ। “কেউ কখনও নামেনি”-র ঠিক পরেই বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “এই সভামঞ্চে যেসব ইংরাজ বন্ধু উপস্থিত আছেন, তাঁরাই সে-বিষয়ে সাক্ষ্য দেবেন। কিন্তু যতই আমি তাদের মধ্যে বাস করতে লাগলাম, তাদের জাতীয় জীবনযন্ত্র কিভাবে কাজ করছে দেখতে পেলাম, তাদের সঙ্গে মিশে জানলাম কোথায় রয়েছে তাঁদের জাতির হৃৎস্পন্দন- ততই আমি তাদের ভালবাসতে লাগলাম। তার ফলে, হে ভাতৃগণ, এখানে এমন কেউ নেই যিনি আমার থেকে ইংরেজদের বেশি ভালবাসেন”। (বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২) বিবেকানন্দের ‘বাণী ও রচনা’ ৯ম খণ্ডের ২৫৩ পৃষ্ঠায় বিবেকানন্দ বলছেন, “সকল কথার ধুয়ো হচ্ছে- ‘ইংরেজ আমাদের দাও।’ বাপু আর কত দেবে? রেল দিয়েছে, তারের খবর দিয়েছে, রাজ্যে শৃঙ্খলা দিয়েছে, ডাকাতদের দল তাড়িয়েছে, বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছে। আবার কী দেবে? নিঃস্বার্থভাবে কে কী দেয়? বলি ওরা তো এতো দিয়েছে, তোরা কী দিয়েছিস?”
স্বামীজীর তো ইংরেজ বা অন্য কোনো জাতির ওপর বিদ্বেষ ছিল না, থাকার কথাও নয়। ভারতের স্বাধীনতা চাইলে ইংরেজশাসনের বিরোধিতা করতে হবে, ইংরেজবিদ্বেষের কী কারণ? ক'জন ইংরেজ ভারতে শাসন করতে এসেছিলেন? আর সত্যিই তো তারা ভারতের প্রচুর উপকার ইংরেজরা করেছে। তা তো রামমোহন-বিদ্যাসাগর প্রমুখ সকলেই স্বীকার করেছেন!
বিবেকানন্দের এই সব বক্তব্য তুলে বলতে চাইছি, বিবেকানন্দকে পুরোপুরি ইংরেজ বিদ্বেষী বলে বর্তমানে যেভাবে চিত্রিত করা হয়, সেটা ঠিক নয়। তিনি তাঁর স্বভাব বৈশিষ্ট্য অনুসারে কখনও ইংরেজ-প্রেম, কখনও ইংরেজ-বিদ্বেষ প্রকাশ করেছেন।
এই লেখকের একটি বিনীত অনুরোধ,
বিবেকানন্দের কিছু ভালো বাণী পড়ে খণ্ডিত বিবেকানন্দকে না জেনে সম্পূর্ণ বিবেকানন্দকে জানতে আন্তরিকতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় বই-পত্তর আদ্যন্ত পড়ুন।
৭) দেখতে পাবেন, বিবেকানন্দের সতীদাহের প্রতি সমর্থন থেকে বিধবা বিবাহ বিরোধিতার সম্পূর্ণ চিত্র। দেখতে পাবেন বিবেকানন্দের স্ব-বিরোধিতার নানা দিক।
সুতরাং তাঁর প্রগতিশীল বাণীগুলোই শেষ কথা নয়।
বিদ্যাসাগর, রামমোহন শিক্ষা প্রসারে সমাজ সংস্কারে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। শিক্ষা বিষয়ে বিবেকানন্দের মত ছিল একটু ভিন্ন রকম। তাঁর কথায়, “এইসব বই, এইসব বিজ্ঞান আমাদিগকে কিছুই শিখাইতে পারিবে না। বই পড়িয়া আমরা তোতাপাখী হই, বই পড়িয়া কেহ পণ্ডিত হয় না। ... বই যত কম পড়েন ততই ভাল। ... গ্রন্থ দ্বারা জগতের ভাল অপেক্ষা মন্দ অধিক হইয়াছে”। (বাণী ও রচনা, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৫, ৯৯ এবং ১০৯)
৮) সমাজ সংস্কার সম্বন্ধে বিবেকানন্দের স্পষ্ট অভিমত, “সমাজ সংস্কার ধর্মের কাজ নয়”। (পত্রাবলী, পত্র সংখ্যা ৮৩)
সমাজসংস্কার তো অবশ্যই ধর্মের কাজ নয়। ধর্ম বিবেকানন্দের মতে মানুষের অন্তর্নিহিত দেবত্বের জাগরণ।
সত্যিই যে অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী হয়, বই পড়ে যে সত্যিই কিছু শেখা যায় না, আগে বুদ্ধির মার্জনা লাগে, তার প্রমাণ তো আপনি নিজে! রবীন্দ্রনাথের 'তোতাকাহিনী' নিশ্চয়ই পড়েননি, বা 'তাসের দেশ'? 'পুথি পড়ে কেউ পণ্ডিত হয় না, 'প্রেম'---এই আড়াই অক্ষর যে পড়তে পেরেছে, সে-ই পণ্ডিত'--- একথা তো কবির কতদিন আগে বলে গেছেন! সতীদাহ প্রথা রবীন্দ্রনাথ সমর্থন করেছেন, তা নিয়ে কবিতাও লিখেছেন। স্বামীজী কেবল বলেছেন : 'কখনও কখনও পত্নীরা স্বেচ্ছায় সহমৃতা হতেন'। তা যে হতেন, রাজপুতানার ইতিহাস তার প্রমাণ। জহরব্রতের নাম শুনেছেন তো?
যে মতামত, আদর্শ ও আন্দোলনের জন্য বিদ্যাসাগর, রামমোহনকে আমরা শ্রদ্ধা করি, সেই মতামতের, আদর্শের বিরোধী চরিত্রকে আমরা শ্রদ্ধা জানাবো কী করে? এতে আমাদের স্ব-বিরোধিতা, ভণ্ডামী, অজ্ঞতা-ই কি প্রকাশিত হয় না? আমরা কী করবো, আমাদেরই ঠিক করতে হবে। আমজনতার আবেগে গা ভাসাবো, না কি যুক্তি-বুদ্ধিকে শাণিত করতে সচেষ্ট হবো?
রামমোহন তো রোজ মাংস খেতেন। তাঁর একদিকে দুই পত্নী এবং এক মুসলমান উপপত্নী আর তিনি লোককে বৈরাগ্য-উপদেশ দিয়ে একাধিক গান লিখেছেন। একটি হলো : 'মনে করো শেষের সেদিন ভয়ংকর!' বিদ্যাসাগর তো মাতাপিতৃশ্রাদ্ধে যেচে ব্রাহ্মণদের পা ধুইয়ে দিয়েছেন, আরও অনেক স্ববিরোধ আছে তাঁর। আর আপনি যে কতবড়ো মিথ্যাবাদী এবং ভণ্ড, তাও তো আমার কাছে স্পষ্ট। আপনার যুক্তিবুদ্ধির উদ্দেশে ভূলুণ্ঠিত প্রণাম রইল।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল কিছু আপনার চোখে আটকে না, না? ময়লা ঘাটতে ঘাটতে খুটে খাওয়া অভ্যাস হয়ে গিয়েছে