নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছাইয়ের নেই আগুনের ভয়

জুলিয়ান সিদ্দিকী

জগতের সব কাজই আমি পারি না। অনেক কাজে অলস হলেও লিখতে কখনও ক্লান্তি বোধ করি না। এতে করে আমার সময়গুলো ভালো কাটে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিতা-পুত্র

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:০৭



-পুত্র তোমার বয়সটা কিন্তু খুব জটিল একটা পর্যায়ে আছে। তা কি বুঝতে পার?



বাবার কথা শুনে মাথা নাড়ায় ইশতিয়াক।



আহমদ ছেলের দিকে তাকিয়ে ছিল এক ঠায়। খুব ছোট বেলায় সে হামাগুড়ি দেয়নি। বসতে শেখার পর সে বসে বসেই ছেঁচড়ে চলতে শিখেছিল। তারপর যেদিন হঠাৎ করে হাঁটতে আরম্ভ করলো, সে সময়টা ছিলো আরো অবাক করবার মতো। ছেলেটা হাঁটতে শিখেই বাড়ির বাইরে চলে গিয়েছিল। চলে গিয়েছিল মহল্লার রাস্তা ধরে অনেক দূর পর্যন্ত। বাড়ির পাশের দোকানের ছেলেটা দেখতে পেয়ে তাকে নিয়ে এসেছিল। যদি সেদিন তাকে চেনে এমন কারো চোখে না পড়তো, তাহলে হয়তো আজ সে বড় হতো টোকাই হয়ে। নয়তো সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের হাতে পড়ে ভয়ঙ্কর অপরাধী হয়ে উঠতো অথবা হাত-পা ভাঙা পেশাদার ভিক্ষুক হয়ে যেতো।



-আচ্ছা তুমি যে বললে তোমার বয়সটাকে বুঝতে পার। এ বয়সেই কিন্তু ছেলে-মেয়েরা যে নষ্ট হবার নষ্ট হয়ে যায়। যে নিজেকে ভালো বাসে সেই কিন্তু টিকে যায় জীবনে। সাফল্য বা ব্যর্থতা যাই আসুক সে কিন্তু জীবনের দৌড়ে হেরে গেলেও তেমন একটা হতাশ হয় না। কিন্তু মাঝে মাঝে তোমার কিছু বোকামি আমাকে হতাশ করে দেয়। তখন তোমার আরো ছোটবেলার একটি কথা মনে পড়ে। ঘটনাটা কি জানতে চাও? যে ঘটনাটা আসলে তেমন বড় কিছু নয়, তবে তোমার এখনকার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বেশ মিল পাই।



-কোন ঘটনাটা?



-বলেছিলাম না খুব পিচ্চি থাকতে তোমাকে নিচু একটা গাছের ডালে বসিয়েছিলাম। তখন তুমি হাগু করে দিয়েছিলে, যা আমার প্যান্টের পকেট নষ্ট করে দিয়েছিল। তুমি কি বুঝতে পার আমার প্যান্টের পকেট যে আরো নষ্ট করবে ঈশ্বর আমাকে সেদিনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন? মূর্খ বলে সেদিন ধরতে পারিনি সেই ইঙ্গিতটা।



হাসি মুখে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকলেও ভেতরে ভেতরে সে যে বিব্রত হচ্ছিল তা ঠিকই বুঝতে পারছিল আহমদ। আর তার বিব্রত অবস্থাকে আরো বাড়িয়ে দিতেই যেন ফের বলে উঠলো, যেমন তুমি বললে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করবে, আমি কিন্তু বাধা দেইনি। যদিও বলেছিলাম গ্রামে চলে যাও। দাদির কাছাকাছি, ফুফুর কাছাকাছি ভালো থাকবে। কিন্তু তোমার তখন মনে হয়েছিল, বাবা আসলে তোমার জীবনটাকে ধ্বংস করে দিতে চায়। একটা কথা মনে রেখো যে, বাবার কারণে খুব কম ছেলে-মেয়েই নষ্ট হয় যতটা না নষ্ট হয় মায়ের নির্বোধ প্রশ্রয়ে।



-আমি তো ইচ্ছে করলেই নষ্ট হয়ে যেতে পারতাম। ফেন্সি বল, ইয়াবা বল এমন কি গাঁজা-চরস খেতে আমার পকেটের পয়সা খরচ করতে হতো না। কিন্তু আমি সেদিকে যাইনি। মাঝে মাঝে পরীক্ষার চাপ থাকলে একটা দুটো সিগারেট টানতাম, তাও বাদ দিয়ে দিয়েছি।



-গুড। কিন্তু আমার তো মনে হয় না যে, তুমি নিজ থেকেই বাদ দিতে পেরেছ।



তারপরই আহমদ বলল, কে সে?



-আমার একটা বন্ধু। মেয়ে। সে বলেছিল সিগারেট টানলে তার সঙ্গে যেন কথা না বলি।



-ভেরি গুড। মেয়েটা অবশ্যই কোনো ভালো বাবা-মায়ের সন্তান। তুমি কখনোই তোমার ভাল বন্ধুটাকে চিনতে পারলে না। সব সময় ভুল বন্ধু বেছে নিলে। মেয়েটার সঙ্গে কি এখনো বন্ধুত্ব আছে?



-আছে। তোমার গল্প পড়ে বলেছিল তোমার সঙ্গে কথা বলবে।



-ফোন নাম্বার দিতে পারতে।



-তুমি কী মনে কর তাই দিতে সাহস পাইনি।



-আচ্ছা আবার চাইলে দিয়ে দিও।



-বাবা।



কিছু একটা বলতে গিয়েও ফের থেমে যায় ইশতিয়াক। কিছু নিয়ে ভাবে যেন। তখনই আহমদ বলে উঠল, কী বলছিলে বল। যা বলতে চাও বলে ফেল। বাবা কী মনে করবে সেটা পরের ব্যাপার। আগে নিজের কাছে ক্লিয়ার হও।



-আমি হোস্টেলের বাইরে গিয়ে কোচিং করতে চাই।



-হোস্টেলে কী অসুবিধা?



-স্কুলে যাওয়ার আগে তিনটা সাবজেক্টে কোচিং করি। যখন স্কুল থেকে ফিরে আসি তার আধঘণ্টা পরই আজান হয়ে যায়। কেমিস্ট্রির ম্যাডাম চলে আসে। বিশ্রামের চান্স পাই না। মাথা জ্যাম হয়ে থাকে। বুঝতে পারি না কিছু।



-এই যে দেখেছ আবার কতগুলো টাকা নষ্টের রাস্তা বের করে ফেললে। সেই যে ছোটবেলা থেকে আমার পকেটের বারোটা বাজিয়ে চলেছ আজ পর্যন্ত তা বন্ধ করতে পারলে না।



-বাবা, আমার জীবনটা কি জীবন না? আমার অসুবিধাটা কি বুঝতে চাইবে না?



-কেন চাইবো না? বুঝি বলেই তো বলছি বাইরে গিয়ে তোমার পড়ার দরকার নেই। আচ্ছা তোমার মায়ের সঙ্গে কয়বার কথা হয় দিনে? সে দেখা করে কখন তোমার সঙ্গে?



-কথাও হয় না, দেখাও হয় না।



কিন্তু কথাগুলো বলবার সময় সে তার বাবার চোখের দিকে তাকাতে পারে না। কোনো একটা অস্বস্তির ভার যেন তার মাথাটাকে নিচু করে রাখে।

আহমদ আবার বলল, দেখ, জীবনটা তোমার। এই যে ষোলোটা বছর প্রায় পার করে দিলে, এতটা পথ আসতে তোমার এতটা বছর লেগেছে। এখন যদি তুমি ট্রেনের নিচে ঝাপ দাও বা কোনো উঁচু বিল্ডিঙের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড় তাহলে এক মিনিটে ফুরিয়ে যাবে তোমার জীবনটা। ষোলো-সতের বছর বয়সটা কিন্তু এমনই। যা পেতে চায় তা না পেলেই মনে হয় বৃথা এ জীবন। তোমাকে কি আমি দেইনি তোমার চাওয়া মতো? কিন্তু কোনো অন্যায় আবদার যদি কর তাহলে তো তা আমি মানতে পারি না। তুমি তোমার আশপাশে তাকাও। তোমার বন্ধু ক্লাসমেটদের বাবাদের দেখ, তাদের ব্যাপারে জানতে চেষ্টা করে দেখ যে, তোমার বাবাটা তাদের বাবাদের চেয়ে খারাপ না ভাল! আমার তো মনে হয় তুমি যতটা খোলাখুলি আমার সঙ্গে বলতে পারছ তোমার সেই বন্ধু বা ক্লাসমেটরা কল্পনাও করতে পারে না। বলা তো দূরের কথা, মুখ খোলার আগেই দু গালে দুটো বসে যাবে হয়তো।



-আমি তো বলি বাবা। আমার বন্ধুদের অনেকেই বিশ্বাস করে না। বলে এমন বাবা হয় নাকি আজকাল?



-কাজেই ভেবে দেখ, জীবনের কোনো একটা পর্যায়ে গিয়ে সত্যিই টের পাবে তোমার বাবা আর দশটা বাবার মতো ছিলো না।



ইশতিয়াক ফের মাথা দোলায়। চেহারা দেখে মনে হয় আরো কিছু কথা তার মনের ভেতরে পাক খাচ্ছে। বলবে কি বলবে না তা নিয়েই যেন দ্বিধাগ্রস্ত কিছুটা। আর তা বুঝতে পেরেই আহমদ বলল, তোমার কি মনে আছে ছোটবেলা একবার চুল কাটাতে চাইছিলে না। কান্না আরম্ভ করেছিলে। শাস্তি হিসেবে তোমার মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছিলাম। একটা কথা মনে রেখো, বাবা তার সন্তানদের ব্যাপারে কখনোই ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। অন্যদের চোখে যদিও তা ভুল বলে মনে হয় তবু তা ভুল নয়। কাজেই আমার কথার অবাধ্য হবে তো এমন ন্যাড়া করে দেবো যে, বাকি জীবন আর আয়নার দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করবে না। কাজেই যা বলি তা শোনো।



-আমি তোমার কোন কথাটা শুনি না?



-কোনটা শুনলে? আমি বললাম গ্রামে চলে যাও। গিয়েছিলে? একটা বছর লস হলে এমন কিছু হতো না। আরো ভাল করে সামনে আগাতে পারতে। অথচ আমার কথা না শুনে শুনলে তোমার মায়ের কথা। যার কাছে নিজের বুদ্ধি-বিবেচনার চাইতে বোন আর বোনের জামাইদের কথাই শতভাগ সত্য। তোমার খালু বলেছিল, না যাবে না। বাপের চেয়ে ওই ব্যাটা বেশি বুঝে ফেলল। অথচ কজন মানুষের জানা আছে যে, সন্তান সম্পর্কে নেয়া কোনো বাবার সিদ্ধান্তে ভুল বের করে মূর্খরা? আচ্ছা মেনে নিলাম সে ভালো আর সঠিক বলেছিল। কিন্তু সে কি তোমার সব খরচ চালাবে বলেছিল? বলে নি। রেজাল্ট কী? সেই আমাকেই সব কিছু করতে হচ্ছে। কিন্তু যা করছি তা খুশি হয়ে নয়, তা তুমিও বুঝতে পার।



কিছুক্ষণ থেমে যেন দম নেয় আহমদ। তারপর আবার বলতে আরম্ভ করে, আমাদের দেশে একজন শিল্পী ছিলেন শেখ ইশতিয়াক। আরেকজন আছেন ব্যারিস্টার ইশতিয়াক। কখনো ভেবেছি তোমাকে গান শেখাই। কখনো বা ভেবেছি বড় হলে আইন পড়াব। কিন্তু আমার সেই ইচ্ছের কোনোটাই পূরণ হবার রাস্তা রাখবে না মনে হচ্ছে। আমি কী নিয়ে তোমার ওপর ভরসা করবো বলতে পার? তোমার কাছে যদি মনে হয় হোস্টেলের বাইরে যেতে না পারলে, মায়ের সঙ্গে কথা বলতে না পারলে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে, নাও। আমি তো আর জানতে আসবো না যে, কোনটা মিথ্যে আর কোনটা সত্য বললে। তা যাচাইও করবো না। এত সুযোগ আর আমার এত আন্তরিকতার পরও যদি পড়ালেখা তোমার না হয়, তাহলে ধরে নেবো সেটা তোমার নিজেরই দুর্ভাগ্য। গ্রাম-দেশে একটি বাঁশঝাড়ের সব বাঁশ কিন্তু ঘরেই লাগে না। কোনোটা কবরে বা কাঁচা পায়খানা বানানোর কাজেও ব্যবহার হয়। ধরে নেবো না হয় যে, তোমার অদৃষ্ট পায়খানার বাঁশের মতোই। এ নিয়ে একটুও দুঃখ পাবো না।



কথা শুনে ইশতিয়াকের ইচ্ছে হয় পালিয়ে যেতে। বাবার সামনে থেকে উঠে এক ছুটে বের হয়ে যেতে। কিন্তু সে উঠে চলে যেতে পারে না। যেন কোনো একটি অদৃশ্য দেয়ালের ভেতর আটকা পড়ে গেছে।



ছেলের নীরবতা দেখে বাবা আহমদ আবার বলে, প্রতিটা মা কিন্তু আদর্শ মা হতে পারে না। কারণ মায়ের বড় পুঁজি আবেগ। কখনো বা স্বার্থ। কিন্তু বাবা? সব বাবাই চান তার ছেলেরা তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করুক। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, ডাকাত বাপও চাইবে তার ছেলে ডাকাত হোক। কোনো বাবাই এমনটা ভাবে না। সুতরাং তোমার ব্যাপারে আমার নেওয়া সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না সঠিক ছিল, তা বাকি জীবন অনুভব করবে তুমি। মাশুল দিলেও দেবে তুমি। তোমার মা, মামা বা খালা-খালুদের পাশে পাবে না। বাস্তবতার প্রতিটা ধাক্কাতেই মনে পড়বে বাবা সঠিক ছিল না ভুল!



হঠাৎ করেই যেন ফুরিয়ে যায় তাদের আলোচনা। ঘরের ভেতর নেমে আসে এক ধরনের শূন্যতা অথবা অস্বস্তি। কারো মুখেই কোনো কথা নেই। হয়তো নেই মনের ভেতরও কোনো বিবক্ষার বুদবুদ। যেন অনন্তকাল ধরে তারা মুখোমুখি বসে আছে কোনো এক দূরাগত ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে।



বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ইশতিয়াক বলে উঠল, বাবা, আমার পরীক্ষা নিয়ে ভেবো না। রেজাল্ট খারাপ হবে না। আমার ওপর বিশ্বাস রেখো।



কিন্তু ছেলের কথাগুলো আহমদের কানে গেল কি গেল না তা চেহারা দেখে বোঝা যায় না। ছেলের কথা শুনে এমন কি ছেলে উঠে গেলেও তার মাঝে কোনো পরিবর্তন ফুটে উঠতে দেখা যায় না।

মন্তব্য ৪৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:২৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: বাবা ছেলে কাহন ভাল লাগলো ।দারুণ লিখেছেন। আর হাদীসেই আছে বাবার শাসন সন্তানের জন্য আশীর্বাদতুল্য।তবে সেটা স্নেহ করে করতে হয়। এখানে সেইরকম বাবার সন্ধান পাওয়া গেল আর ছেলের পাওয়া গেল প্রত্যয়। ভাল কিছু করার প্রত্যয়।সুন্দর +

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৫৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আজকালকার বাচ্চারা স্নেহ ভালোবাসা কতটা অনুভব করে তাতে ঢের সন্দেহ আছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে কতটা ফ্রি সেটাও দেখার বিষয়। সময়টাই এমন যে, সন্তানরা বাবা-মায়ের কাছে কিছু লুকালে বিপদ যে কোনদিক দিয়ে আসবে তা হয়তো ধারণারও সুযোগ থাকবে না।

ভাল থাকুন।

২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৫৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: পুত্র তোমার বয়সটা কিন্তু খুব জটিল একটা পর্যায়ে আছে। তা কি বুঝতে পার?
দারুন কৌতুহল জাগানিয়া একটা লাইন দিয়ে সূচনা এবং সফলভাবেই সমাপ্তি।
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
একগুচ্ছ প্লাস।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ খেয়াঘাট। এই বয়সটা তো আমরাও পার হয়ে এসেছি।
ভালো থাকবেন।

৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:০২

বটের ফল বলেছেন: চমৎকার সুচনা, অসাধারন মধ্যভাগ, সুন্দর সমাপ্তি।

মুগ্ধতা নিয়ে পড়ে গেলাম।
+++++++++++++++++

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৫

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ বটের ফল। আপনাকে স্বাগতম।

৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:১২

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: একটানে পড়ে গেলাম ।
এটা ঠিক বাস্তবতার ধাক্কায় বাবার কথাই আগে মনে পড়ে , আর চরম
সময়ে মামু , খালু , চাচু তেমন পাওয়া যায় না ।
কিছু সত্য , কিছু পর্যবেক্ষণ চলে এসেছে ।
মার পুজি আবেগ - সেটাও ঠিক ।
অধিকাংশ পোলা বদ হয় মায়ের লাই পেয়ে ।

অনেক ভাল লাগল এই গল্পটা ।

ভাল থাকুন জুলিয়ান দা ।
শুভকামনা রইল ।




১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: মার পুজি আবেগ - সেটাও ঠিক ।
অধিকাংশ পোলা বদ হয় মায়ের লাই পেয়ে ।


ধন্যবাদ মাহমুদ। আসলে এ গল্পের বেশিরভাগ কথাই সত্যি। ছেলের সঙ্গে ফোনে যেটুকু কথা হয়েছে মাঝে মধ্যে, তা থেকেই কিছুটা দিয়ে তৈরি করেছি এ গল্প। ইশতিয়াক চরিত্রটাও কিন্তু বাস্তব, ঘটনাও। আমার বড় ছেলে সে। ক্লাস টেন-এ পড়ছে।

তবে ইশতিয়াক লাই পেয়েছে সত্য কিন্তু বখে যায় নি বলা যায়। আর এ বয়সের আরো ছেলে-মেয়ের কথা ভেবেই লিখেছি, যারা ইশতিয়াকের মতো এখনো বখে যায় নি বা পিতা-মাতা আর একটু বে-খেয়াল হলেই বখে যেতে পারে।

মায়েরা তো বোঝেন না যে, তার ভালোবাসা-স্নেহ সারাজীবন আগলে রাখবে না সন্তানকে। সন্তানকে কাছে ধরে রেখে তাকে অমানুষ বানানোর কোনো যুক্তি নেই। কাজেই সন্তানটা যাতে মানুষ হয়, বড় হয়ে যাতে বাবার নাক কান না কাটে (যেহেতু সন্তান খারাপ হলে মায়ের কথা বলবে না কেউ) সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিত।

ভালো থাকুন আপনিও।

৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৭

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বয়ে চলাটা বেশ লাগল।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৫

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কান্ডারি ভাই। ভালো থাকুন আপনি।

৬| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৮

টুম্পা মনি বলেছেন: অনেক ভালো লাগল। প্রাঞ্জল লেখা।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ টুম্পা মনিটা। ভালো থাকুন সব সময়।

৭| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৮

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন!!!

ভালো লাগলো পিতা-পুত্রের কথোপকথন

+++++++

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:০৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ বর্ষণ। ভালো থাকুন আপনি।

৮| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২০

মাগুর বলেছেন: একটানে পড়ে ফেললাম।
চমৎকার সুচনা, অসাধারন মধ্যভাগ, সুন্দর সমাপ্তি।
+++++

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:০৭

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ মাগুর। মন্তব্য আপনারও চমৎকার।
শুভকামনা থাকলো।

৯| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪০

শামীম সুজায়েত বলেছেন: বাবা'র সাথে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ না হলেও অনেক ঘনিষ্ট আমরা। ভয়-ডরহীন এক সম্পর্ক, যেখানে ব্যবধান বেশি নেই বল্লেই চলে। অথচ বাবার সাথে আমার দাদার সম্পর্ক ছিল গাম্ভির্য্যপূর্ণ।
আমি জানি আমার সন্তানের সাথে আমার সম্পর্ক আরও বেশি নিবিঢ়, আরও বন্ধুত্বপূর্ণ হবে। আধুনিক অভিভাবক ও তাদের সন্তানদের মধ্যে এখন সম্পর্কের ফারাকটা বেশি নয়।

কিন্তু মজার ব্যপার হচ্ছে এখনকার বাবা-মা'রা সন্তানদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরও ঘটছে নানা অঘটন। সন্তানরা সেই ভালবাসা ও বিশ্বাসের মুল্য না দিয়ে জড়িয়ে পড়ছে নতুন নতুন নেশায়। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে দুলছে "পিতা-পুত্র" সম্পর্ক।

জুলিয়ান দা, এধরণের গল্প আরও বেশি বেশি আসা উচিৎ ব্লগে। পিতা-পুত্রের গল্পটা সময়পোযোগী। ভাল থাকবেন।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৪০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ঠিক বলেছে সুজায়েত। আমরা বাবা মায়ের সঙ্গে অনেক খোলাখুলি ছিলাম সেই আশির দশকেও। তারপর সেটা আরো রিফ্রেশ হয়েছে। তাই চেষ্টা করে চলেছি সন্তান যেন মন খুলে কথা বলতে পারে আমার সঙ্গে। এমন কি আমার সমালোচনাতেও যেন পিছ পা না হয়। কিন্তু তবু ছেলে-পেলেরা বাবা-মায়ের কাছে সব কিছু খোলাসা করে বলতে পারে না। আরে বাবা-মা তো আর খুন করে ফেলবে না। না হয় বকাঝকা করলোই খানিকটা। কিছুক্ষণ পর তো ঠিকই খোঁজ করবেন সন্তানের মানসিক অবস্থাটা কী। সন্তানদের বুঝতে চেষ্টা করেও আজকাল বাবা-মা হিমশিম খাচ্ছেন। তারা যেন আরো দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে দিন দিন।

ভাল থাকবেন সব সময়। শুভ কামনা থাকলো সন্তানরা যেন আপনার কাছে কিছু লুকানোর প্রয়োজন বোধ না করে।

১০| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৭

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: মাথায় ঝিম ধরে এসেছিল ! এমন সময় মাঝে মাঝে এসেছিল আমার !
গল্পের ছেলের জায়গায় নিজেকে বসাতে খুব একটা কষ্ট হয়নি !

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৪৭

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: হুম, সময়টা বড্ড খারাপ! তবে খুব কম সংখ্যক ছেলে-মেয়েই আটকা পড়ে যায় সেই বয়সটার চোরাবালিতে। যার পরিণতি হয় সংবাদ শিরোনাম অথবা নিখোঁজ সংবাদের বিষয়।

ধন্যবাদ সেই চোরাবালি থেকে ফিরে আসবার জন্য। না হলে আমরা এমন একজন সৃজনশীল বন্ধু (জুনিয়র)কে পেতাম না। ভালো থাকুন সব সময়। জীবনের বাকি পথ মসৃন থাকুক।

১১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৮

শ্যামল জাহির বলেছেন:



অনেক সময়- মা কিংবা মাসি'র অতি দরদে টিনেজ বগি লাইনে রাখা মুশকিল হয়ে পরে চালকদের।

বাস্তবতার প্রতিটা ধাক্কাতেই মনে পড়বে বাবা সঠিক ছিল না ভুল!

যে নিজেকে ভালো বাসে সেই কিন্তু টিকে যায় জীবনে।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:১৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ শ্যামল জাহির। বগিগুলো বেশির ভাগই ছটফট করে লাইনের ওপর এলেই। সামলানো দুরূহ হয়ে পড়ে।

ভালো থাকবেন।

১২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৯

মামুন রশিদ বলেছেন: বাবা আর সন্তানের মাঝে সময়ের ব্যবধান কখনো আমরা ভেবে দেখি না । এই সময়ই আসলে ব্যবধান গড়ে দেয় । বাবারা আজীবন সামন্ততান্ত্রিক, একই সাথে পুত্রস্নেহে কাঙাল । বাবারা আজীবনই সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে শন্কিত, পুত্ররা উদাসীন ।

বাবা-ছেলের এই মনস্তাত্তিক ফারাক সভ্যতার মতই পুরনো ।

এইরকম একটা অভাবনীয় সুন্দর প্লট নিয়ে গল্প লেখার ধারণাটা অভিনব ।

গল্পে ভাললাগা জানবেন জুলিয়ান ভাই :)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ ভ্রাতা। বাবারা সরবকালেই শঙ্কিত কিন্তু সব সন্তানরাই উদাসীন নয়। যারা উদাসীন তারা সংখ্যায় অল্প, হাইওয়েতে দূর্ঘটনার মতোই।

ভাল থাকুন সব সময় এবং সন্তানদের কাছে একজন নিরাপদ বাবা হয়ে উঠুন এই শুভকামনা থাকলো।

১৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৩

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
বাস্তবতার প্রতিটা ধাক্কাতেই মনে পড়বে বাবা সঠিক ছিল না ভুল! কথাটা আমার ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ প্রযোজ্য।

আমার বাবার সিদ্ধান্ত ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবেন। আমি সে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কমার্সে পড়েছি। এখন বুঝতে পারছি ওটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: বাবার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো না, তা যখন বুঝতে পারছেন তাহলে আপনার মনে হেরে যাওয়ার একটা ভয় কাজ করবে সব সময়। আর তা হবে আপনার এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। যেহেতু ভুল করেই ফেলেছেন একটা, সামনের দিনগুলোতে ভুল করা যাবে না সে কথাও আপনাকে সতর্ক রাখবে সব সময়।

ভাল থাকুন আর এগিয়ে যান ভবিষ্যত সাফল্যের পথে। শুভকামনা থাকলো অপার।

১৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৪

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন:
প্রথমত এটিকে একটা কিশোর গল্প মানতে পারছিনা। এখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজন রাগী পিতার উপদেশ বর্ষণ দেখছি, যে ক্রুদ্ধ তার সন্তানের প্রতি, পায়খানার বাঁশের সাথে তুলনা করার মত হতাশ,- কিন্তু কোথাও লেখক আমাদের বলেন নাই ষোল বছরের পুত্রের ব্যর্থতা কী? পড়াশোনায় মোটেই ভালো করছে না বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু সেটা কোনো স্খলন নয়, স্রেফ না পারা। পুত্র তার বান্ধবীর অপছন্দে সিগারেট ছেড়ে দেয়, বর্তমান সময়ে সে খুবই বাধ্য লক্ষ্মী ছেলে বলতে হবে।

আচ্ছা তোমার মায়ের সঙ্গে কয়বার কথা হয় দিনে? সে দেখা করে কখন তোমার সঙ্গে?

-কথাও হয় না, দেখাও হয় না।

কিন্তু কথাগুলো বলবার সময় সে তার বাবার চোখের দিকে তাকাতে পারে না। কোনো একটা অস্বস্তির ভার যেন তার মাথাটাকে নিচু করে রাখে


ষোল বছরের পুত্রের মায়ের সাথে নিয়মিত দেখা না হবার অস্বস্তি পুত্র কেন বোধ করবে সেটা লেখক পরিস্কার করেন নি। কল্পনা করে নেওয়া যেতে পারে, তবে সেটা কিশোর গল্পের কল্পনার দৌড়ের সাথে ঠিক মেলাতে পারছি না।

একটা কথা মনে রেখো, বাবা তার সন্তানদের ব্যাপারে কখনোই ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে না
- এই ধরণের ত্রুটিপূর্ন কিছু সত্য আছে উপদেশামালায়। অন্যের জীবনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়াটাই প্রথম ভুল, সেটা নিজের সন্তান হলে তো অবশ্যই! তার মানে এটা না সন্তান নেশা করার সিদ্ধান্ত নিলে সেটাতে বাঁধা দেওয়া যাবে না। কিন্তু সিদ্ধান্ত হয় তুমি ডাক্তার হও, মোক্তার হও, উকিল হও,- এগুলো সন্তানের নিজস্ব বিকাশের সম্ভাবনাকে হত্যা করে! প্রতিবছর হাজার হাজার তরুন স্বপ্ন বাবা মায়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষী মোহে চাপা পড়ছে!

- ব্লগে দ্বিমত কঠিনভাবে সরাসরি প্রকাশ আমি আপনার কাছ থেকে শিখেছি, আপনার উপরেই প্রয়োগ করলাম! গুরুমারা বিদ্যা বুঝি একেই বলে! আমি জানি আপনি আমার সমালোচনা যথাযথভাবে নিতে পারবেন এবং ছুরি কেটে খণ্ডাবেন। কিন্তু একজন কিশোর হিসেবে এই রাগী বাবাটার সামনে দাঁড়িয়ে রাগ হল, তাই এতো কথা লিখে ফেললাম!


শুভকামনা!

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:৫৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: প্রথম রিপ্লাইটা হারিয়ে গেছে। তাই নতুন করে আবার লিখছি। মনে হচ্ছিল আগের কথাগুলো বেশি ভালো ছিল। যাই হোক, সামুর মর্জি-মেজাজের সঙ্গে রাগারাগি করাটা বোকামি বলেই আবার লিখছি যতটা পারি। আপনি বলেছেন-

১> প্রথমত এটিকে একটা কিশোর গল্প মানতে পারছিনা। এখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজন রাগী পিতার উপদেশ বর্ষণ দেখছি, যে ক্রুদ্ধ তার সন্তানের প্রতি, পায়খানার বাঁশের সাথে তুলনা করার মত হতাশ,- কিন্তু কোথাও লেখক আমাদের বলেন নাই ষোল বছরের পুত্রের ব্যর্থতা কী?

-কিশোর গল্প হিসেবে এই লেখাটাকে আপনি মানতে পারেন নি সত্য। কিন্তু কিশোর গল্পের কোনো দিক নির্দেশনাও কিন্তু দেন নি। মানি না, মানবো না বললে, কেন বলে একটা অবধারিত জিজ্ঞাসার জন্ম হয়, সে জিজ্ঞাসার উত্তরে নীরবতা কঠিন বলেই মানি না বলার সঙ্গেই না মানার কারণটাও উল্লেখ জরুরি। পিতাদের রাগী হওয়াটাই মানায়। বদরাগী নয়। পিতা সম্পর্কে সন্তানের মনে সমীহ মেশানো বন্ধু-সুলভ ভালোবাসাটাকেই মনে হয় সন্তানদের কাম্য। আমি নিজে তেমন সন্তান ছিলাম। পুত্রের ব্যর্থতা হিসেবে গল্পে বলা আছে যে, সে বাবার কথা মতো গ্রামে চলে যায় নি। অন্যের কথাতে উৎসাহী হয়েছে শহরে থাকতে। গল্পে যেখানে উল্লেখ আছে-
কোনটা শুনলে? আমি বললাম গ্রামে চলে যাও। গিয়েছিলে? একটা বছর লস হলে এমন কিছু হতো না। আরো ভাল করে সামনে আগাতে পারতে।

২> ষোল বছরের পুত্রের মায়ের সাথে নিয়মিত দেখা না হবার অস্বস্তি পুত্র কেন বোধ করবে সেটা লেখক পরিস্কার করেন নি। কল্পনা করে নেওয়া যেতে পারে, তবে সেটা কিশোর গল্পের কল্পনার দৌড়ের সাথে ঠিক মেলাতে পারছি না।

-এ প্রসঙ্গে আমি টেনে আনবো ড. জাফর ইকবালের গল্প দীপু নাম্বার টু সিনেমাটার কথা। গল্পটি আমি পড়িনি। কিন্তু সিনেমাতে দেখেছি দীপুটা থাকে তার বাবা (বুলবুল আহমেদ)র সঙ্গে। মা (ববিতা) থাকেন অন্য কোথাও। দর্শক হিসেবে আমার কোনো কৌতূহল জাগেনি কেন তার বাবা মা বিচ্ছিন্ন? সামজিক অনেক ব্যাপার থাকে যা আদতে অস্বাভাবিক হলেও আমরা মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। ব্যক্তিভেদে কৌতূহলের তারতম্য ঘটতেই পারে। আপনার জিজ্ঞাসাও তাই অপ্রাসঙ্গিক মনে করছি না।

একটা গল্পে ততটুকুই আপনি পরিবেশন করতে পারবেন আপনার দৃষ্টি যতটা গ্রহণ করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ক্যামেরায় আপনি একটি পুরো এলাকা ধারন করতে পারবেন না। ফ্রেমের ভেতর যতটা দৃশ্যমান হয় বা আপনার চোখ যতটা দেখতে পায় তার বেশি আপনি দেখতে পাবেন না। কাজেই পিতা পুত্র যখন একটা ঘরে বসে কথাবার্তা বলছে, মায়ের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হওয়া বা না হওয়ার প্রসঙ্গটা তখনই উল্লেখ করা যেতো যদি আলাপ প্রসঙ্গে তারা বিষয়টা লেখকের সামনে নিয়ে আসতো। অবশ্য এখানে লেখক হিসেবে একটি দৃশ্য বা আলাপচারীতায় তা যোগ করে দিতে পারতাম। কিন্তু সেটা হয়তো পাঠকের কৌতূহলের বদলে বিরক্তি উৎপাদন করতে পারতো। কাজেই ব্যাপারটা কল্পনা করতে সমস্যা হবার কথা নয়।


৩> একটা কথা মনে রেখো, বাবা তার সন্তানদের ব্যাপারে কখনোই ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে না - এই ধরণের ত্রুটিপূর্ন কিছু সত্য আছে উপদেশামালায়। অন্যের জীবনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়াটাই প্রথম ভুল, সেটা নিজের সন্তান হলে তো অবশ্যই!

-আপনার কথাটা বরং আমি মানতে পারছি না এ কারণেই যে, বেশিরভাগ কিশোরই সুস্থির ভাবে ভাবতে শেখে না। বা সেই সুযোগটা তারা পেলেও তেমন একটা গা করে না। আপনার মন্তব্যের আগেই আরেক বাবার সন্তান নাজিম স্বীকার করে গেলেন বাবার সিদ্ধান্ত অনুসরণ না করে ভুল করেছেন। কাজেই আপনার কথাটাকে আমি নই অন্য একজন সন্তানের স্বীকারোক্তিতেই প্রমাণিত যে, সন্তানেরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নয় সব সময়।

প্রসঙ্গত নিজের কথা বলার লোভটা সামলাতে পারলাম না বলেই বলতে বাধ্য হচ্ছি। কৈশোরে কিন্তু আমি লক্ষ্যভ্রষ্ট ছিলাম না। আমার ইচ্ছে ছিল ম্যাট্রিক পাশ করে এক বছরের কোর্স ডিপ্লোমা আর্কিটেকচার পড়বো। কিন্তু ম্যাট্রিকের ফলাফলের আগেই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নিয়ম করে ফেলেছে ইন্টার করার পর ডিপ্লোমা করতে হবে। তাও দু বছরে। আমিও সে আশায় ইন্টারে ভর্তি হয়ে গেলাম। তখনই আবার লেখালেখিকে ভালোবেসে ফেলেছি অনেকটা। রাত জেগে লিখি, সকালে আমি ঘুমিয়ে থাকতে থাকতে বাবা সে লেখা পড়ে ফেলেন চুপিসারে। তারও কিছুদিন পর থেকে একটা দুটো লেখা ছাপা হতে লাগলো কুমিল্লার সাপ্তাহিক আমোদ-এ। তা দেখে বাবা খুশি। আমি তো আরো বেশি। কিন্তু আমার ডিপ্লোমা পড়া হয়নি বাবা আর মেজ ভাইয়ের চাপে। তারা আমাকে বাধ্য করলেন উঁচু ক্লাসে ভর্তি হতে। বাবা কারণ হিসেবে জানালেন তাঁর মেজ ছেলেও বলেছে ডিপ্লোমা আমার জন্য উপযুক্ত নয়। সেটা আমার লাইনের শিক্ষা নয়। কিন্তু আজ বুঝি আমার ব্যাপারে তাঁদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। যদিও ডিগ্রি অর্জনের দিক দিয়ে তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি, কিন্তু আমার সেই ব্যর্থতা নিয়ে বাবা-মা ভাই-বোন কেউ কটুক্তি করেন নি। এবং তারা আমার আগেই জানতেন যে লেখালেখিকে একবার ভালবাসলে বাকি জীবন তার প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকতে হয়, আর তা করতে হলে প্রচুর পড়াশুনা চাই। তারা কৌশলে প্রচুর পড়াশুনার সুযোগ করে দিয়ে আড়ালে চেয়েছিলেন আমাকে সম্পৃক্ত রাখতে লেখালেখির সঙ্গেই। ডিপ্লোমা করে কর্মজীবনে ঢুকে যেতাম, হারিয়ে যেতাম জীবনের যাঁতাকলে আমার লেখালেখির অল্পস্বল্প ইচ্ছেগুলোকে নিয়েই।


৪> ব্লগে দ্বিমত কঠিনভাবে সরাসরি প্রকাশ আমি আপনার কাছ থেকে শিখেছি, আপনার উপরেই প্রয়োগ করলাম! গুরুমারা বিদ্যা বুঝি একেই বলে!

-যদি বলি ব্যাপারটা খুব পছন্দ হয়েছে বা এমন ব্যাপারগুলো আমার বেশ পছন্দ। তাহলে কথাগুলোকে কেমন পানসে বা লুতুপুতু টাইপের মনে হতো না? কিন্তু যদি বলতাম- আই অ্যাপ্রিশিয়েট ইট! তাহলে বেশ শক্র-পোক্ত আর ভাবগম্ভীর একটা অনুভূতির প্রকাশ ঘটতো। কাজেই গুরু-হত্যা বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জনের চেয়ে গুরুমারা বিদ্যা ঢের ভালো।


৫> কিন্তু একজন কিশোর হিসেবে এই রাগী বাবাটার সামনে দাঁড়িয়ে রাগ হল, তাই এতো কথা লিখে ফেললাম!

-খানিকটা রাগী না হলে বাবা হিসেবে তেমন একটা মানায় না পুরুষদের। বিশেষ করে বদরাগী বাবাদের চেয়ে খানিকটা রাগী বাবাদের বেশি পছন্দ করে সন্তানরা। যেই বাবাগুলো একই সঙ্গে প্রকাশ করে রাগ আর ভালোবাসা তাদের সন্তানের প্রতি। যাচাই প্রার্থনীয়!

১৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:২৭

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: দুঃখিত জুলিয়ান দা, মন্তব্য করে ফেলে দেখছি এইটা আপনার গল্পের এক ছায়া গল্প, এটা জেনে উপরের মন্তব্য অযৌক্তিক কঠিন সমালোচনা মনে হচ্ছে! :( তবে গল্পে আপনি যে রাগী বাবার ছবি এঁকেছেন, আমি কিন্তু তার উপরের রাগটা প্রকাশ করেছি, তোমরা বাবারাও কিছু কথা মোটেই বুঝতে চাওনা, মুদ্রার আরেকপাশের কথা বলতে পারেন! আপনি লিখেছেন- 'পিতা পুত্রকে', আমারটাকে ভাবতে পারেন 'পুত্র পিতাকে' !

শুভরাত্রি!

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:০১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: এটা কোনো ব্যাপার না। দুঃখিত হবার কী আছে। গল্প তো জীবন থেকেই উঠে আসে। সব গল্পই কোনো না কোনো বা কারো না কারো জীবনের ছায়া! :P

১৬| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৪০

আমিনুর রহমান বলেছেন:




পিতা-পুত্রের গল্পে +++

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:০২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সব সময়।

১৭| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২৪

জুন বলেছেন: মার পুজি আবেগ - সেটাও ঠিক ।
অধিকাংশ পোলা বদ হয় মায়ের লাই পেয়ে ।

কথাটা খুব নির্মম লাগলো জুলিয়ান সিদ্দিকী :(
কিন্ত ১৬ বছরের একটা স্কুল ছাত্র সিগ্রেট খাচ্ছে প্রেম করছে আমারতো শুনে হার্ট এটাক হওয়ার অবস্থা ।
সুন্দর লিখেছেন পিতা পুত্র কাহিনী তবে আমি দিয়ে গেলাম মাতা পুত্রের কাহিনীর লিঙ্ক।
Click This Link

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:০৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: আপি, কথাটা নির্মম তা মেনে নিচ্ছি, কিন্তু পুরোপুরি মিথ্যা কি?

কিন্ত ১৬ বছরের একটা স্কুল ছাত্র সিগ্রেট খাচ্ছে প্রেম করছে আমারতো শুনে হার্ট এটাক হওয়ার অবস্থা।

-তার পাশেই কিন্তু আরো ড্রাগের কথা উল্লেখ আছে। এখন বাংলাদেশের টিন জগতের ভিন্ন দৃশ্য। আপনি দেখলে না কেবল শুনলেই অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।

ধন্যবাদ আপু। মাতা পুত্রের কাহিনী অবশ্যই পড়বো। ভাল থাকুন সব সব সময়।

১৮| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: এবার তাহলে শুনুন 'পুত্র পিতাকে'-

কিছু জিনিসের কোনো সংজ্ঞা তো হয়না! কে কবে কিশোর গল্পের, কবিতার, ছোট গল্পের সংজ্ঞা দিতে পেরেছে বা পারবে? আমাদের মধ্যেই অব্যক্ত রূপ নেয় এই ধারণাগুলো! সেই ভাবনা থেকেই আমরা মান বিচার করতে বসি। সেই বিচারটাও আপেক্ষিক আর ব্যক্তিগত, কারও সাথে কারওটা মিলবে না। আমার কাছে যে জিনিসটা মহাকাব্য মনে হচ্ছে, আপনার কাছে সেটার সাহিত্য মূল্য দলিল দস্তাবেজের থেকে বেশি নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা দুইজনেই সঠিক। এইবার কেন আপনার গল্প কিশোর গল্প লাগে নাই আমার কাছে তার কিছু ভাবনা ধরার চেষ্টা করতে পারি, যেমন আমার মনে হয়েছে এইটা কিশোর গল্পের থেকে অনেক বেশী সার্থক বাবা মা গল্প হিসেবে। একটা কিশোর গল্পে লেখক কে কিশোরদের মনোজগতে প্রবেশ করে তাদের চিন্তা, ভাবনা, স্বপ্ন, আবেগ দিয়েই গল্প বর্ননা করবে। এখানে কিশোরের কিছুই পেলাম না, এখানে পেলাম এক বাবার তার পুত্রকে দেওয়া কিছু উপদেশমালা, অন্য কিশোরদের চাইতে অন্য বাবারাই গল্পটা বেশী পছন্দ করবে।

পিতাদের রাগী হওয়ায় মানায়
- এইটা নিতান্তই বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত এক প্রচলিত মানুসিকতা, এইটা নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না। যে মানুষ ব্যক্তি আচারে রাগী, সে পিতা হিসেবেও রাগী হবে। কিন্তু পিতা যখন পুত্রের সামনে তখন তাকে রাগী হইতে হবে এইটার কোনো মানে হয় না, এইটা করবে দুর্বল পিতা, অফিসের বড় স্যার যেমন খুব বদমেজাজের সাহায্য নিয়ে অফিস নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।

আপনি খুব চমৎকার একটা গল্পের রেফারেন্স দিয়েছেন, 'দিপু নাম্বার টু'। সেখানে প্রশ্ন জাগে না, কারন সেখানের বাবা কখনও দিপুকে ডেকে বলেন নি 'তোর মা কেন তর সাথে দেখা করে না?' এইটার অস্বস্তি দায় বাবা মায়ের, ষোল বছরের পুত্রের নয়, পিতা তার মা কে পুত্রের সাথে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে! এই দায়ে পিতা অস্বস্তি না পেয়ে পুত্র অস্বস্তিতে মাথা নিচু কইরা ফেললো- এই জন্য এইটা আমার কাছে কিশোর গল্প না, বাবা গল্প মনে হয়েছে।

উদাহরণ কখনও কোনো সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে না, কারণ উদাহরণের পাল্টা উদাহরণ থাকে। যেমন নাজিম ভাই যেমন তার কথা বললেন, আমি আমার এক বন্ধুর কথা বলি, ছবি আঁকায়, কবিতা লেখায় তুখোড় ছিল সেই ছাত্র বেলা থেকেই। ও যখন লিখত তখন আমাকে কেউ কবিতার এক লাইন লিখতে বললে আমি চার হাত পায়ে আত্মসমর্পন! কিন্তু তার বাবার একটা ভয় ছিল শিল্পীদের জীবন কাটে খুব কষ্টে, তো এইসব শিল্প চর্চা নিয়ে বাড়াবাড়ি কইরো না, শখের পর্যায়ে রাখ। আমার বন্ধু অবাধ্য বেয়াদপ হতে পারেনি। সে চারুকলায় ভর্তি পরীক্ষা দিলো না, একসময় আর্ট গেলো তার জীবন থেকে হারিয়ে, এখন সে একটা ব্যাংকের চাকুরে, মানুষের টেকাটুকা ঠিকঠাক গুনে রাখাটাই যাদের কাজ!

ষোল বছরের একটা ছেলেকে এক বছরের জন্য গ্রামে যেতে বললে সেটা কি এতই সহজ? ষোল বছর বন্ধু জগত, পরিচিত গন্ডী সবকিছু ছেড়ে গ্রামে গিয়ে এক বছরের জন্য থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কিন্তু খুব কঠিন, যেখানে মা খালু মানে এক পক্ষের সমর্থন আছে?- কিশোর গল্পে একটা কিশোরের এই যাতনার ছোঁয়া দেখতে চাই, কারণ এটা তো তার গল্প! জ্ঞানপাপী সভ্যতা সবুজ মাড়িয়ে নগরে গিয়ে নির্বাণ খুঁজতে চায়, - এ তো ষোল বছরের কিশোর!

অধিকাংশ পোলা বদ হয় মায়ের লাই পেয়ে - এইটাও একটা ত্রুটিপূর্ন সত্য, এই অংশটুকুকে এভাবে বলা যায় যে একজন পিতা তার পুত্রকে দিচ্ছেন পুরুষতান্ত্রিকতার পাঠ, পুত্রের যখন সন্তান হবে তখন যেন সে মাথায় রাখে যে সে পুরুষ, সে বাবা, যে নারী মা হবে তার থেকে বাবা হিসেবে সেই দেবে নির্ভূল সিদ্ধান্ত!


অনেক সমালোচনা হইলো জুলিয়ান দা! আপনার পোস্ট বলেই আমি এটা পেরেছি অসংকোচে! আপনার যুক্তির শানিত তলোয়ার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুন এবং সমালোচনা যুক্তিগুলোকে মেরে কেটে কচুকাটা করে দিন!

শুভকামনা!


* সামুর সার্ভারের উপরের রাগ আর বখে যাওয়া পুত্রের উপরে পিতার অভিমান এক জায়গায় মিল আছে। যে রাগ অভিমান করে তারই কষ্ট হয়, অন্য পক্ষের কিছু হয়না! মন্তব্য বড় হলে ওয়ার্ডে একটা ব্যাকআপ নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ! :P একটা বড় মন্তব্য অনেকক্ষন ধরে লিখে সেটা যদি হারিয়ে যায় মেজাজটা যা খারাপ হয়! অন্যের পোস্ট হল আমি অনেক সময় আবার মন্তব্য না লিখেই চলে আসি, কিন্তু সেটা নিজের পোস্টে হলে কিছুই করার নেই, উত্তর যে আবার লিখতেই হবে!

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: কিছু জিনিসের কোনো সংজ্ঞা তো হয়না! কে কবে কিশোর গল্পের, কবিতার, ছোট গল্পের সংজ্ঞা দিতে পেরেছে বা পারবে? আমাদের মধ্যেই অব্যক্ত রূপ নেয় এই ধারণাগুলো! সেই ভাবনা থেকেই আমরা মান বিচার করতে বসি। সেই বিচারটাও আপেক্ষিক আর ব্যক্তিগত, কারও সাথে কারওটা মিলবে না।

-সমাধান নিজেই দিয়ে দিলেন। তারপরও বাতাসের সঙ্গে বিতর্কটা চালিয়ে গেলেন। আপচুচ!

আপনার তরবারির ঝা-চকচকে-শান দেখে মনে হচ্ছে বাবা হন নি। জগতটাকে সেই কিশোরের চোখেই দেখছেন। কাজেই আপনাকে বোঝাতে গেলে বাতাস আলোড়িত হবে কাজের কাজ কিছু হবে না। :P

১৯| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: তিন খণ্ড ৎ এর অনেক মন্তব্যও, প্রতি মন্তব্যও আর সহব্লগারদের মন্তব্যও এবং লেখকের প্রতি উত্তর খুব উপভোগ করলাম। তাই সেসব দিকে না যাই আর !

বাবা- মা যেই হওন না কেন,সন্তান তাদের আদর স্নেহ-ভালবাসার পাশাপাশি জীবনের লক্ষ্য ঠিক রাখার ব্যাপারে সঠিক দিক নির্দেশনা পাবার অধিকার রাখে। গল্পে যদিও বলা হয়নি কেন ইশতিয়াক কে গ্রামে যেতে বলা হলো কিংবা কেন মায়ের সাথে কথা বললে আহমদ সাহেব পছন্দ করেন না বরং বিরক্ত হন । আমি মনে করি গল্পটা রিরাইট করলে ভালো হতো। যদিও জীবনের কিছু অংশ এখানে ঢুকে গেছে তাই আরেকটু ক্লিয়ার করার দরকার কেন ইশতিয়াককে মায়ের সাথে দেখা করার জন্য ছল চাতুরি করার প্রয়োজন হচ্ছে, কেন ইশতিয়াক তার বাবার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না ইত্যাদি।

তবে লেখাপড়ার বিকল্প যেহেতু নেই জীবনে সেহেতু বুদ্ধিমানের কাজ হবে সেদিকেই মনোযোগ দেয়া ছলচাতুরির আশ্রয় না নিয়ে। আর দুই নৌকায় পা দিয়ে জীবন চালানো সম্ভব না বলেই নিজের জন্য যেটা ভালো হয় সেদিকেই যাওয়া উচিত।

কৈশোর খুব মারাত্মক বয়স, অভিমানের বয়স, নষ্ট হবার বয়স আবার জীবনকে সুন্দর ভাবে গড়ে নেবারও বয়স সঠিক মানুষের সাহচর্যে। এখন দেখতে হবে একটা কিশোর সে বয়সে কাদের সাহচর্যে আসছে। এজন্য একজন মায়ের শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। বাবার চেয়ে মাকেই সন্তান কাছে পায় বেশি, আর তাই সন্তান মায়ের দ্বারাই প্রভাবিত হয় এই বয়সে।

আপনার গল্পটা ভাবালো আমাকে। ভালো থাকবেন ।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৩০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: কৈশোর অবশ্যই মারাত্মক। এ সময়টাতে কিশোর এবং তার মা-বাবা দুজনকেই সতর্ক থাকা জরুরি। আর এ সময়ই যদি কিশোরটির মাথা বিগড়ে যায় তাহলে তার সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছুই নেই।

আপনার কথার সূত্র ধরেই বলতে চাচ্ছি, কোনো এক মা, যার তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই যে, চাকরি করে নিজের খাবারটা সংগ্রহ করতে পারবেন। সেই তিনিই স্বামীকে তালাকের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন- তগো বাপ না দেখলে আমি তগোরে পালুম!

কিন্তু মুখের কথাই সব নয়। বাস্তবতা বড্ড কঠিন। যিনি নিজেই প্রয়াশ্রয়ী তিনি সন্তানদের নানা মিথ্যা প্রলোভনে নিজের কাছে রেখে দেওয়া মানে তাদের ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া। তা বুঝতে চান না। বেশ কিছুদিন আগেও এমন একজন মায়ের আকুতি সম্বলিত পোস্ট দেখেছিলাম সামিতেই। ৯বছর বয়সের ছেলেকে ফেরত চান তিনি। আমি সেখানে মন্তব্য করেছিলাম, আপনার সন্তানের খরচ জোগানোর সামর্থ্য না থাকলে এমন দুরাশা করবেন না, এমন টাইপের কিছু কথা বলেছিলাম।

এ কারণেই মা শিক্ষিত হলে সন্তানদের ক্ষতিটা কম হয়। মূর্খ জননী ভাববেন সন্তান তার কাছে থাকলে তিনি জিতে গেলেন। আত্মীয়-স্বজনের কাছে হাত পাততে সুবিধা হবে তাতে। আমার কথাটি নিষ্ঠুর মনে হলেও বাস্তবে আমি তেমনটাই দেখতে পাচ্ছি অনেক।

যার যার জীবন তার তার। নিজের জীবনের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষায় অনেক ধৈর্য্য আর ত্যাগেরও প্রয়োজন পড়তে পারে। অন্যেরা তৈরি করে দিয়ে যাবে না- ফাঁকা বুলি ছুঁড়ে সরে যায় বেশিরভাগ মানুষ। এটাও বুঝতে হয়। কথায় বলে পাগলেও নিজের ভালো বোঝে, কিন্তু কিছু উন্মাদ থাকে যারা নিজের ভালোটা তো বোঝেই না, তাকে বোঝানোও যায় না।

আর হ্যাঁ, এটা এমনিই লেখা। কেবল ব্লগের জন্য। আপাতত রি-রাইটের ইচ্ছে নেই।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সব সময়।

২০| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্প ভাবালো প্রিয় জুলিয়ান। গল্পের পেছনে আরেক গল্প দেখতে পাচ্ছি। চমৎকার।

শুভকামনা রইল।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৩২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ শঙ্কু। গল্পের পেছনে গল্প না থাকলে সেটা আবার কেমন গল্প?

ভালো থাকুন সব সময়।

২১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৩

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: জুলিয়ানদা, আমি অনুজ, আমাকে "তুমি" ডাকলে খুশি হব। :)

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৩৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: নাজিম দা, আমি আপনার অগ্রজ সে কথা মিথ্যে নয়, কিন্তু আমি মানুষটা যে এমনই, তুমি করে বলার চান্স পেলেও সহজে আপনি সম্বোধন থেকে নেমে আসতে পারি না। তা ছাড়া স্বাভাবিক ভাবেই আপনি শব্দটা ব্যবহার করি। কাজেই মেনে নেন। সঙ্কুচিত হবার কিছু নাই। :)

২২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়লাম। পড়া শেষে বাকরুদ্ধ।

আমি নিজে একজন বাবা- বড় ছেলে ২ন্ড ইয়ারে এবং মেয়ে ১র্স্ট ইয়ারে পড়ে। ছেলেমেয়েদেরকে কীভাবে এবং কী কী উপদেশ দিই- গল্পটা পড়তে পড়তে সেগুলো মনে পড়লো।

গল্পে মায়ের উপস্থিতি নেই, কিন্তু আহমদের কথা থেকে ছেলেকে মাথায়-ওঠানো মায়ের (চিরায়ত মায়ের) পরিচয় পাওয়া গেলো। আর এক খালুর চরিত্রও এক বাক্যেই খুব সুস্পষ্ট হলো।

একটা কথা মনে রেখো যে, বাবার কারণে খুব কম ছেলে-মেয়েই নষ্ট হয় যতটা না নষ্ট হয় মায়ের নির্বোধ প্রশ্রয়ে।
মানি। যে ছেলেরা নষ্ট হয়, মায়ের কারণেই মনে হয় বেশি হয়ে থাকে। এর উলটোটা দেখেছি আমাদের ক্লাসমেট শাহনাজকে- বাবার শাসন তারা সইতেই পারে না, কিন্তু মা তাদেরকে ঠিকই ইঞ্জিনিয়ার আর ল-ইয়ার করে ফেললো বলে ;)

এবার ছেলের কথায় আসি। বাবার মুখের কথা থেকে মনে হয়েছে ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেছে, পড়াশোনা বোধ হয় করে না, কিন্তু টাকা নষ্ট করার বিভিন্ন পথ যোগাড় করে ফেলছে, কিন্তু ইশতিয়াক মাঝে মধ্যে যে টুক-টাক কথা বললো তা থেকে তাকে নিরীহ মনে হয়েছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া ছেলেদের মতো সে এ্যারোগেন্ট নয়, তার নেশাও নেই; এবং জনৈকা তরুণীর সাথে তার বন্ধুত্ব রয়েছে যার কথায় সে সিগার ছেড়েছে- এ কথাটিও বাবার কাছে অকপটে স্বীকার করেছে। ছেলেটির শেষ কথায় ছেলেটিকে বুদ্ধিমান মনে হয়েছে, এবং রেজাল্ট ভালো হবে এ ব্যাপারে সে কনফিডেন্ট বলেও বাবাকে নিশ্চিত করতে চালি।

এবার বাবার কথায় আসি। বাবা তো বাবাই, উপদেশ দেবার তার একচ্ছত্র অধিকার ও ক্ষমতা রয়েছে। গল্পের বাবাকে অবস্থাপন্ন মনে হয় নি, সন্তানের পড়ালেখার জন্য খরচ বাড়াটা তার চিন্তার কারণ, যদিও সে তা নিয়মিতই নিজে দিয়ে থাকে, ছেলের খালু-মামারা নয়। কিন্তু বাবার চরিত্রটা খুব কড়া মনে হলো। সংসারের টানাপোড়েনে তার মেজাজ এরকম হয়ে থাকতে পারে। বাবা এখানে একের পর এক কড়া ও কটু কথা বলেছেন, অপমানসূচক কথাও বলেছেন, ছেলেটা মুখ বুজে সহ্য করেছে, যদিও একবার তার ইচ্ছে হয়েছিল পালিয়ে যেতে। সন্তানকে উপদেশ আর শাসন করাই কি বাবার সার্বক্ষণিক কাজ?

আমার ব্যক্তিগত দর্শন হলো, বাবা হবেন সন্তানদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু, শাসন করার কাজটা থাকবে মায়ের হাতে। মা যদি সন্তানদেরকে কেটে টুকরো টুকরোও করে, সন্তানরা মাকে ভুলবে না; কিন্তু বাবা যদি মায়ের চার ভাগের একভাগও কড়াকড়ি করে, সন্তানরা বখে যেতে পারে। এজন্য আমি মনে করি, বাবাকে হতে হবে সন্তানদের নিরাপদ আশ্রুস্থল, মায়ের দাবড়ানি খেয়ে সন্তানরা যাতে দৌড়ে বাবার আড়ালে এসে লুকায়- যে বাবা তাদের সাত খুন মাফ করে দেয়। কড়া ভাষায় না বলে বাৎসল্যের সুরে সন্তানদের বোঝানো উচিত তারা যে-খারাপ কাজটি করছে তা কখনোই মঙ্গলজনক নয়।

জুলিয়ান ভাই, আমি জানি না এ গল্পে আপনার টান কার প্রতি ছিল- ছেলে, নাকি বাবা। গল্পে হয়তো সন্তানদের জন্য কিছু সদুপদেশের (অবশ্য পালনীয়) একটা তালিকা করেছেন, কিন্তু এ গল্পের মূল বাণী আমার কাছে যেভাবে ধরা দিল তা হলো একজন বাবার অসংযত আচরণ সন্তানদের মনে খুবই বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে; এজন্য সন্তানদের সাথে আচরণে বাবাকে হতে হবে বন্ধু বৎসল, যাতে তারা মন খুলে বাবার সাথে সব কিছু শেয়ার করতে পারে।

গল্পের কথোপকথন ছিল চুম্বকাকর্ষের মতো। পড়া শুরু করলে শেষ না করে স্বস্তি নেই। বর্ণনার বাহুল্যটুকু নেই কোথাও, প্রতিটা বাক্য পড়তেই পরেরটার জন্য মন আকুল হয়। একেবারে নিখুঁত, নিটোল একটা গল্প পড়লাম জুলিয়ান ভাই।

শুভ কামনা।

২৩| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: জুলিয়ান ভাই, আমি জানি না এ গল্পে আপনার টান কার প্রতি ছিল- ছেলে, নাকি বাবা। গল্পে হয়তো সন্তানদের জন্য কিছু সদুপদেশের (অবশ্য পালনীয়) একটা তালিকা করেছেন, কিন্তু এ গল্পের মূল বাণী আমার কাছে যেভাবে ধরা দিল তা হলো একজন বাবার অসংযত আচরণ সন্তানদের মনে খুবই বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে; এজন্য সন্তানদের সাথে আচরণে বাবাকে হতে হবে বন্ধু বৎসল, যাতে তারা মন খুলে বাবার সাথে সব কিছু শেয়ার করতে পারে।

ধন্যবাদ সোনাভাই। বাবা, পুত্র কারো প্রতিই আমার টান ছল না। একটা ছবি আঁকতে চেয়েছিলাম। তবে স্বাভাবিক ভাবেই এখন আমি থাকবো বাবাটার পক্ষে। বাবা যতই বন্ধু সুলভ হন না কেন, সুফল ততটা আসে না হয়তো। বাবারা বাস্তব জীবনে সন্তানদের কাছে যম সদৃশ হলেই ভালো হয়তো, যার ফলে বাচ্চারা মানসিক বা বাস্তব কোনো স্বাধীনতাই পেতো না। বাচ্চারা আজকাল খুব বেশি সুবিধা আর বেশি স্বাধীনতা পেয়ে যাচ্ছে। যে কারণে তাদের নষ্টের হারও বেড়ে যাচ্ছে।

যদিও আমার মতের স্বপক্ষে কেউই বলবেন না, তবে সব সন্তানের জন্য কাঠিন্য প্রয়োজন হয় না। একটা সিনেমা দেখেছিলাম যেখানে বাবার শাসন, সদুপদেশ, লেখাপড়ার ব্যাপারে খোঁজ-খবর করা সন্তানের পছন্দ নয় বলে সে বাবাকে খুব করে ফেলে।

শুভকামনা থাকলো আপনার জন্য।

২৪| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:১৪

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: পুরোটা একটানে পড়লাম ভাইয়া। আর মিলিয়ে নিলাম আমার বাবার সাথে আমাদের ভাইবোনদের সম্পর্ককে। আমরা যাই করি না কেন, ঝড় ঝাপ্টা বেশির ভাগই যেত মায়ের উপর দিয়ে :( চিরাচরিত নিয়মে বাবার অভিযোগ ছিলো মায়ের কাছে "তোমার ছেলে এইটা করছে/সেইটা করছে" !! "এভাবে করলে হবে ??" আর যদি ভুলেও কোন দিন ঝাপ্টা আমাদের উপর দিয়ে যেত, তো কর্ম সাবাড় !! সেইদিন আর দেখতে হইতো না দুনিয়াটা লাল না নীল :( :(

পুরো লেখাটা ভালো লাগলো ভাইয়া। সেই সাথে সহ ব্লগারদের চমৎকার সব মন্তব্য আর তার উত্তর।

"আমার প্যান্টের পকেট যে আরো নষ্ট করবে ঈশ্বর আমাকে সেদিনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন? মূর্খ বলে সেদিন ধরতে পারিনি সেই ইঙ্গিতটা।" এই লাইনটা পড়ে হেসেছি খুউব :)

২৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:২১

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: আমরা ছোট থাকায় বেঁচে গেছিলাম। আমরা বাবার ধোলাই ভাগে পাইনাই। আমাদের উপরদিকের ভাইয়েরা পুরা ভাগ পাইছেন।
পুত্ররা যদি বাপের আজ্ঞাবহ না হয় আর মা যদি নির্বোধ হয় তাহলে সেই পোলাপানের ভবিষ্যৎ ভালো হয় না। বাবা বোঝাবে এক রকম আর মা বাবা সম্পর্কে ঘৃণার তালিম দিবেন সন্তানদের, সুতরাং আশা নাই । বাপের পকেট নষ্ট করাই সার।

পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.