নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছাইয়ের নেই আগুনের ভয়

জুলিয়ান সিদ্দিকী

জগতের সব কাজই আমি পারি না। অনেক কাজে অলস হলেও লিখতে কখনও ক্লান্তি বোধ করি না। এতে করে আমার সময়গুলো ভালো কাটে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময় কিংবা বছরান্তের সাক্ষাৎ

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:২৪





গরমের দিনে পথ চলায় যতটা ক্লান্তি আসে, রৌদ্রতাপে দেহের ঘর্মগ্রন্থি থেকে যতটা ঘাম বের হয় তাতে ভিজে যায় পরিধেয় বস্ত্রের কোনো কোনো অংশও। সেই সঙ্গে হাওয়ার সঙ্গে উড়ে আসা ধুলোবালিও মিশে যায় দেহের সিক্ত অংশে। তার ওপর পথ দীর্ঘ হলে কমবেশি তৃষ্ণায় আক্রান্ত হয় সবাই। আশ্রাবুদ্দিনকেও এ সমস্যাটির মুখোমুখি হতে হয় প্রায়ই।



সকালের দিকে দু মুঠ মুড়ি মুখে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল আশ্রাবুদ্দিন। গ্রামের উপান্তে খালের ওপর দিয়ে সরু সাঁকোটি পার হয়ে বাউটিহারা বাজারে খানিকটা থেমে সাত্তারের চা-দোকান থেকে প্লাস্টিকের গ্লাসে আধা গ্লাস পরিমাণ পানি খেয়েছিল। এখানকার বিস্বাদ পানি মোটেও ভালো লাগে না তার। মূলী-বাঁশের ভেজা-ভেজা গন্ধটা নাকে এসে ঝাপটা দিলেই যত গাঢ় তিয়াস বা পিপাসা থাকুক নিমেষেই যেন তা বিরক্তিতে পরিণত হয়। তারপর সামান্য পানি পেটে পড়লেও শুরু হয় অস্বস্তি। পথ চলতে তেমন একটা উৎসাহ পায় না। পেটের ভেতরটা থেমে থেমে তখন মোচড়াতে আরম্ভ করে। সে অবস্থায় বেশিক্ষণ চলতে পারে না। কোনো রকমে বশিরুদ্দিন বয়াতির দিঘীটা অতিক্রম করতে পারলেও প্রবল অস্থিরতা নিয়ে তড়িঘড়ি লুঙ্গিটা কোমর অবধি উঁচিয়ে বসে পড়তে হয় মোরতা ঝোপের আড়ালে।



প্রায় সময়ই সে চেষ্টা করে যাতে এখানকার পানি খেতে না হয়। কিন্তু কোনো কোনোদিন এমন হয় যে ঘরে এক রত্তি পানি থাকে না। বড়ভাই মেরাজুলের বউ রুকিয়া প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে দিয়ে এক কলস পানি আনে গ্রামের শেষ প্রান্তের ব্যাপারী বাড়ির চাপকল থেকে। তাদের গ্রামে অনেক চাপকল থাকলেও বেশিরভাগ কলের মুখেই লাল রঙ লাগিয়ে দিয়ে গেছে থানার স্বাস্থ্য বিভাগের লোকেরা। যে সব কলের পানি দিয়ে সব কাজই করা যায় কেবল খাওয়া আর খাবার রান্না করা নিষিদ্ধ।



রুকিয়া প্রায়ই কলসি ভরে পানি নিয়ে আসবার পর নাকি নাকি আর বিরক্তি পূর্ণ কণ্ঠে বলে, আর যাইতে পারমু না পানি আনতে! তোমরা দুই ভাইয়ে মিল্যা দুইবেলা পানি আইন্যা দিবা দুইটা কলস দিয়া! কিন্তু পরদিন ঠিকই সে কলস কাঁখে পানি আনতে যায়।



সকালের দিকে কোনো কোনো দিন পানি ফুরিয়ে গেলে আশ্রাবুদ্দিন নিজেই ছোট অ্যালুমিনিয়ামের কলসটা নিয়ে ব্যাপারীর বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু আজ কিছুতেই মন থেকে সায় পাচ্ছিল না সেদিকে যেতে। যদিও শতভাগ ইচ্ছে তার ছিল তবু ব্যাপারীর রক্তচক্ষুর কথা ভাবলে মোটেও ভাল লাগে না। যদিও সে অনেকবার বলেছে যে, সে পানি নিতে এলে কারো দিকেই দৃষ্টিপাত করে না। তবু ব্যাপারীর একই কথা, পানি নিতে হইলে বাড়ির বউ-মাইয়াগো পাঠাইবা। বেগানা পুরুষ মানুষ বাড়ির ভিতরে আইবা এইটা কেমন কথা। আমার বাড়ির মাইয়া বউগো ইজ্জত আব্রুর কথাডা ভাইব্যা দেখবা না?



আশ্রাবুদ্দিন একদিনই মাত্র চোখ তুলে তাকিয়েছিল ব্যাপারীর ছোট মেয়ে সখিনার দিকে। কী চমৎকার দুটি চোখ। যেন বশিরুদ্দিন বয়াতির ভর ভরন্ত দিঘী। আর সেই থেকেই সে চোখ দুটির গভীর মায়া গেঁথে আছে বুকের কোথাও। খুব একাকী অথবা নিদ্রাছুট মধ্যরাতে আচমকা সে কথা মনে পড়লে মাঝে মাঝেই তার প্রবল ইচ্ছে হয় সে চোখের গহিন কালোতে হারিয়ে যেতে। কিন্তু মানুষ বলেই হয়তো তার ইচ্ছেগুলোর সামনে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা এসে হাজির হয় । আর সে কারণেও হয়তো সব ইচ্ছেরা পাখা মেলতে পারে না। পরিস্থিতি শিক্ষা দেয় যে, সব ইচ্ছের কথা সব সময় প্রকাশ করা উচিতও নয়। নয়তো ভোরের শিশিরে ভিজে থাকা দূর্বাঘাসগুলোর মতোই স্নিগ্ধ আর কোমলতার আবরণে ছাওয়া মুখ যার, মাথার একরাশ খোলা চুল দেখে মনে হয়েছিল উত্তর-পশ্চিমাকাশে জমে থাকা বৈশাখের ঘন কালো মেঘ বুঝি। অথচ রুকিয়ার ছোট বোন মিনোরার চোখে চোখ পড়লে চৈত্রের খরায় পোড়া মধ্য মাঠের জমির মতোই যেন শুকিয়ে যায় তার বুকের জমিনও। মাঝে মধ্যে ভুলক্রমে বা অসচেতন ভাবনার ফলে কখনো কোনো স্বপ্ন উঁকি দিয়ে থাকলেও যেন তা মৃত প্রজাপতির খসে যাওয়া পাখার মতোই আড়াল হয়ে যায় ঝাড়-জঙ্গলের বিচিত্র আকৃতির শুকনো লতা-পাতার ভিড়ে।



সময় মতো বিয়ে করলে তার সম বয়সীদের ছেলে-মেয়েগুলোর মতো তার সন্তানরাও হয়তো ছুটোছুটি করতো গ্রামের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। কিন্তু বিয়ে করলে বউ নিয়ে আলাদা ঘুমাবে তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকাতে তার বিয়ে করা হয়ে ওঠে না। কনে পক্ষ বলে যায়, আগে ঘর-দুয়ার ঠিক কর, তার বাদে বিয়ার নাম লইও।



সব কিছুই মুখের কথার সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলা সম্ভব হয়ে ওঠে না। যদিও তাদের পৈত্রিক ভিটা ছিল। তাতে মাথা গোঁজবার মতো একটি ঘরও ছিল। কিন্তু মেরাজুল বিয়ের আগে সে ঘর নতুন করে মেরামত করা এবং পুরোনো টিন আর খুঁটি বদলের সময় টাকা-পয়সা দিতে পারে নি বলে, সে ঘরের ওপর কোনো অধিকার তৈরি হয় নি আশ্রাবুদ্দিনের। পৈত্রিক সূত্রে যে সামান্য অধিকারটুকু ছিল, টিন আর খুঁটি লাগিয়ে নিজের করে নিয়েছে মেরাজুল। নতুন বউ রুকিয়া বাড়িতে উঠে আসবার পর তার ঠাঁই হয়েছিল বদর মিয়ার কাচারি ঘরে। সকাল আর রাতের বেলা কেবল খাওয়ার জন্যেই সে যায় মেরাজুলের ঘরে। অন্য সময়টা নানা কাজে বাইরে বাইরেই কেটে যায় তার। এমন অবস্থা দেখে কথায় কথায় একবার রুকিয়া বলেছিল যে, মিনোরাকে কেন সে বিয়ে করে ফেলে না? তাহলেই তারা বাপের বাড়ি থেকে নতুন ঘর-দোরের ব্যবস্থা করে দিতে পারতো।



অন্য কেউ হলে কী করতো জানা নেই আশ্রাবুলের। কিন্তু এক কথায় সম্মত হতে পারে নি রুকিয়ার প্রস্তাবে। অন্যের কাছ থেকে দান গ্রহণ করলে তা যত মূল্যবান বা যৎসামান্যই হোক না কেন গ্রহীতার মর্যাদা কম বেশি প্রশ্নের মুখে পড়েই। তা ছাড়া যাকে কেন্দ্র করে এমন প্রস্তাব সেই মিনোরার চোখের দিকে তাকালে মনে কোনো ভরসা জাগে না, উলটো বুকের ভেতরটা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যায়, তেমন মানুষের সঙ্গে জীবন যাপন দূরের কথা আশপাশে থাকাটাও যে নিতান্ত অশান্তির সে কথা বিবেচনা করেই আশ্রাবুল মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল যে, এ জীবনে বিয়ে করতে না পারলে করবে না। এমন কি কাউকে অনুরোধ করবে না তার জন্যে কারো কন্যা দেখতে। মোরতা ঝোপ থেকে প্রায় উবুড় হয়ে বের হয়ে মাথা নিচু করে দিঘীর ঢালের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে তার মনে হয় বিয়ে নামের আশাটা তার জন্যে দুরাশা হয়েই হয়তো থাকে যাবে বাকিটা জীবন।



কাজ সেরে শ্লথ পায়ে দিঘীর পাড়ে উঠে সে দু পা ছড়িয়ে ঘাসের ওপর বসে থাকে কিছুক্ষণ। পেটের চাপ থেকে মুক্ত হবার পর হঠাৎ করেই কেমন ক্লান্তি লাগছিল তার। মুখের ঘাম মুছে গামছাটা দিয়ে মাথায় পাগড়ির মতো বাঁধতে বাঁধতে তার মনে পড়ে দুদিন আগে রুকিয়া বলেছিল তার বাবার শরীর নাকি তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না। আশ্রাবুল যদি দুটো দিন বাড়ি থাকে তাহলে সে বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে পারতো। কিন্তু এর মাঝে আর অবসর হয়নি তার। মন্তাজুদ্দিনের বরফ কলে প্রায় পুরো দিনই কেটে যায় তার। সপ্তাহের সাতদিনই কাজ থাকে বলে ছুটির কথা বলা হয়ে ওঠে না তার। কিন্তু যে করে হোক আজ ছুটির কথাটা সে বলবে বলেই ঠিক করেছে। কারণ জানতে চাইলে রুকিয়ার কথাটাই আবার বলে দেবে না হয়।



প্রতিদিনই আসতে আসতে সে শুনতে পায় বরফকলের বিচিত্র শব্দ। কিন্তু সে তুলনায় আজ কেমন যেন সুনসান মনে হয় চারদিক। কল চলছে না বলেই হয়তো কলঘরের ছাতা হয়ে থাকা পুরোনো আমলের বর্ষীয়ান গাছের ডালে নানা জাতের পাখির বিচিত্র ধ্বনি শুনতে পায় সে। বেশ কিছুটা অবাক হলেও একবার মুখ তুলে তাকায় গাছটির দিকে। তখনই পাশ থেকে কেউ তার উদ্দেশ্যে বলে, আশ্রাবুল তুই মন্তাজের বাড়িত যাইয়া জানাইয়া আয় যে, মন্তাজ টাউনো গেছে।



দৃষ্টি ফিরিয়ে সে তাকায় মুদি দোকানের টুলে বসে থাকা নুরালমের দিকে। তাকে মুখ ফেরাতে দেখতে পেয়েই সে আবার জানায়, মিস্তিরি না পাইলে দুই একদিন দেরি হইবো।



বরফ-কল খারাপ হয়ে যাওয়াতে মনে মনে খুশিই হয় আশ্রাবুল। কিন্তু আজই যদি মন্তাজ মিয়া মিস্ত্রি পেয়ে যায় তাহলে আজ রাতেই হয়তো কল ঠিক হয়ে যাবে। তবু আজকের পুরোটা দিনই বলা যায় তার ছুটির দিন। যে ছুটির জন্যে কারো কাছে ছোট হতে হবে না। মন্তাজ মিয়ার খিস্তি-খেউরও শুনতে হবে না।



মন্তাজুদ্দিনের বাড়িতে যাওয়ার পথে পশের কাশেম ঘরামীর বাড়ির উঠোনে লাল কিছু পরিদৃষ্ট হতেই সে আগ্রহী না হয়ে পারে না। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চোখে চোখ পড়ে মেয়েটির। লাল একটি শাড়িতে আবৃত দেহে মেয়েটিকে আগে কখনো দেখেছে বলে মনে করতে পারে না আশ্রাবুদ্দিন। এমন কি এ বাড়ির কেউ নতুন বিয়ে করেছে তেমন কোনো কথাও শুনতে পায়নি কয়েকদিনের ভেতর। তাই সে বুঝতে না পারলেও অচেনা চোখের ওপর থেকে নিজের চোখও সরাতে পারে না। হয়তো পারে না মেয়েটিও। ফলে কিছুক্ষণ পরস্পরের দৃষ্টি সেঁটে থাকে পরস্পরের চোখের ওপর। হঠাৎ করেই ভেতর বাড়ি থেকে আরেকটি নারী কণ্ঠের ডাক ভেসে এলে হয়তো মেয়েটির চমক ভাঙে বা বাস্তবতায় ফিরে যেতেই অদৃশ্য হয় বাড়ির একটি খোলা দরজার ভেতর। আর তখনই আশ্রাবুলের মনটাও কেমন কেমন করে ওঠে। আর কিছুক্ষণ কেন সে থাকলো না। ভালোমতো তো মুখটিও দেখা হলো না। ফেরার পথে কি আর একটিবার দেখতে পাবে না?



একটি আক্ষেপ নিয়েই যেন সে পা বাড়ায় মন্তাজুদ্দিনের বাড়ির দিকে। উঠোনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে সে ডাকে, ভাউজ, ভাউজ গো!



কিন্তু মন্তাজুদ্দিনের স্ত্রীর বদলে তার মা ঘর থেকে সাড়া দিয়ে বের হয়ে জিজ্ঞেস করে, কিরে আশ্রাবুল?



তখনই সে আরো খানিকটা এগিয়ে গিয়ে বলে, চাচি, মন্তাজ ভাই টাউনে গেছে হুনলাম। আপনে হুনছেন? আইজগা ফিরবো না।



উঠানের মাঝামাঝি শুকোতে দেয়া কলাই দু পায়ে নেড়ে দিতে দিতে মন্তাজের মা বলল, পোলায় টাউনে গেছে কী কামে?



-মিস্তিরির খোঁজে। নুরালম কইলো, বরফের কল খারাপ হইয়া গেছে।



মন্তাজের মা হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে বলল আবার, কল খারাপ হইলো কেমনে?



-হেইডা তো কইলো না।



-আইচ্ছা। আর কোনো কথা আছে?



-না গো চাচি। আমি তাইলে যাই!



-আইচ্ছা! বলে, ফের উঠনের ছড়িয়ে রাখা কলাইয়ের ওপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে সেগুলো নেড়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মন্তাজের মা।



আশ্রাবুল ফিরতি পথে এসে কাশেম ঘরামীর বাড়ির কাছাকাছি হতেই চলার গতি কমিয়ে দেয়। তারপর সে বাড়ির উঠোন এবং ঘরের খোলা দরজার দিকে দৃষ্টি রেখে খানিকটা ইতস্তত করে খানিকটা উচ্চৈঃস্বরে ডাকে, কাশেম কাকু বাইত্যে আছ? কাশেম কাকু!



কিন্তু কারো সাড়া-শব্দ না পেয়ে কিছুক্ষণ সেদিকে দৃষ্টি রেখেই পথ চলে সে। কিন্তু লাল শাড়ি পরিহিত মেয়েটিকে কোথাও দেখতে পায় না। হতে পারে তাদেরই কোনো স্বজন বা আত্মীয়। তার ব্যাপারে জানার এক অদম্য কৌতূহল তাকে কিছুটা চঞ্চল করে তুললেও সে সেদিকে বেশি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে না, পাছে কারো চোখে না তার গতিবিধি সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হয়।



বাড়ি ফিরে আশ্রাবুল সরাসরি মেরাজুলের ঘরের দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলে, ভাউজ, ও ভাউজ! হুনলা?



রুকিয়া মেঝেতে পাটি বিছিয়ে মাথার নিচে একটি হাত রেখে কাত হয়ে শুয়েছিল। দেখতে পেয়ে সে আবার বলে, ভাউজের কি শইল ভালা না? বলতে বলতে সে আরো খানিকটা এগিয়ে গিয়ে মুখোমুখি হয়।



-শইল ভালাই আছে।



বলতে বলতে রুকিয়ার দু চোখ বেয়ে দু ফোঁটা পানির বিন্দু গড়িয়ে পড়ে মাথার নিচে দিয়ে রাখা হাতের বাহুতে।



দৃশ্যটা ভালো লাগে না আশ্রাবুলের। তা ছাড়া রুকিয়াকে এ পর্যন্ত কোনো কারণে কাঁদতে দেখেনি বলে আজ তার আরো বেশি খারাপ লাগে। হঠাৎ রুকিয়ার মুখের দিকে ঝুঁকে পড়ে সে ফের বলে, তাইলে কান্দ ক্যান?



তখনই রুকিয়া নাক টেনে চোখে আঁচল চাপা দিয়ে নাকি কণ্ঠে বলে ওঠে, বাবারে বুঝি আর দেখতে পামু না!



-ও। তাইলে যাও না। দেইখ্যা আইও গিয়া!



বলতে বলতে আশ্রাবুল সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ফিরতে উদ্যত হলে শুনতে পায় রুকিয়া বলছে, তোমার ভাই তো কাজ ফালাইয়া যাইতে পারতাছে না, তুমিও কাজ বন্ধ দিয়া আমারে নিয়া যাইতে পারবা না!



-আমার সময় আছে। বিয়ানে গিয়া দেখি কাজ নাই। কল খারাপ হইয়া গেছে দেইখ্যা ফিরা আইছি।



-হাচা?



বলেই কেমন অস্থির হয়ে উঠে বসে পড়ে রুকিয়া আবার বলে, তাইলে তোমার ভাইয়েরে একটা খবর দিতে পারবা? দক্ষিণের চকে গেছে।



রুকিয়া উঠে পড়ে পাটিটা তুলে বেড়ার গায়ে বাঁধা বাঁশের কঞ্চির দুটো আংটার সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়। তারপর ভীত কবুতরের মতো তৎপরতার সঙ্গে ঘরের কোণে ঝুলতে থাকা মাচা থেকে পুরোনো একটি সুটকেস নামিয়ে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে। তারপর আশ্রাবুলের দিকে একবার তাকিয়ে সুটকেসের ডালা খুলতে খুলতে বলে, কিছু কইলাম হুনলা? সেইসঙ্গে আরো কিছু কাপড়ের ভাঁজের নিচ থেকে হলুদ রঙের একটি ভাঁজ করা কাপড় বের করে আনে। তা পাশের চৌকির ওপর রেখে সুটকেসটা বন্ধ করে ফের মাচার ওপর প্রায় ছুঁড়ে দিয়ে আশ্রাবুলের উদ্দেশ্যে বলে, চালাইয়া যাও না ভাই!



আশ্রাবুল মেরাজকে সংবাদটা জানাতে ঘর থেকে বের হয়ে চকের দিকে হেঁটে যায়। কিন্তু তাকে দেখতে পেয়েই যেন মেরাজুল কিছুটা অস্থিরতা নিয়ে প্রায় ছুটে আসতে আসতে বলে, কী হইছেরে আশ্রাবুল, তুই কোন খারাপ খবর হুনাইতে আইলি?



বলতে বলতে বিকৃত হয়ে যায় মেরাজের মুখ।



মেরাজের অবস্থা দেখে হেসে ফেলে আশ্রাবুল। বলে, না বেশি খারাপ খবর না।



-তাইলে কী?



মেরাজুলকে বেশ খানিকটা বিভ্রান্ত দেখায়।



-তুমি বাইত্যে যাও। ভাউজরে নিয়া দুইদিন বেড়াইয়া আইও গিয়া।



-আমার খাইয়া আর কাম নাই!



বিরক্ত কণ্ঠে বলতে বলতে ফেরে মেরাজুল।



পেছন থেকে আশ্রাবুল বলল, তাওইর শইল বেশি খারাপ হুনলাম।



-তর কাজ-কাম না থাকলে তুই নিয়া যা তর ভাউজরে!



-তুমি যাও। ক্ষেতের কাজ আমি সামলাইয়া নিমু!



-আমি গেলে এত খরচ করনের ট্যাকা-পয়সা নাই। সার ওষুধ কিনন লাগবো কাইল পশশু! তুই গেলে আমার বেইজ্জত হইতে হইবো না।



মেরাজুল আর দাড়ায় না। ক্ষেতের দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায়।



খানিকটা দাঁড়িয়ে থেকে আশ্রাবুল মেরাজের কথাগুলো ভাবতে গিয়ে আবার টের পায় যে, সে সত্যিই সত্যিই চালাক। সেই সঙ্গে বেশ কিছুটা অসৎও। নিজের মনে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে এসে দেখতে পায় মেরাজের ঘরের দরজার মাঝ বরাবর হলুদ হয়ে আছে। রুকিয়ার পরনে হলুদ জামা পাজামা এমন কি বুকের ওপর মেলে রাখা ওড়নাটাও একই রঙের। এমন পোশাকে রুকিয়াকে কখনো দেখেনি সে। হতে পারে নতুন বানিয়েছে। আর তা দেখানোর জন্যেও বাপের বাড়িতে যাওয়ার একটা কারণ খুঁজে বের করেছে। এমনিতে মেরাজের শ্বশুর বছর কাবারি হাঁপানির রুগী। মাঝে মাঝেই রুকিয়ার বাপের বাড়ি থেকে খবর আসে তার বাবার হাঁপানি বেড়ে গেছে, বাঁচে কিনা সন্দেহ। এবারও একই সংবাদ পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে সে। যা নিয়ে আগের বার কখনো এতটা অস্থিরতা দেখায়নি সে।



তাকে দেখতে পেয়েই রুকিয়া বলে উঠলো, তোমার ভাই আইবো না আমি জানি। খবিসের খরচের ডরে যাওনের ইচ্ছা নাই। তুমি কয়ডা ভাত খাইয়া লও। একজনের মতনই হইবো আছে।



-তুমি খাইয়া লও। আমার পেট ভালা না। রাস্তায় গিয়া বিপদে পড়তে চাই না।



বলতে বলতে আশ্রাবুল ঘরের ভেতর চৌকিতে পাতা বিছানার দিকে এগিয়ে যায়।



রুকিয়া দ্বিরুক্তি না করেই খেতে বসে যায়। আশ্রাবুল তার দেবর হলেও তেমন একটা ইয়ার্কি ফাজলামি বা মিথ্যাচার করার মানুষ না তা তার জানা হয়ে গেছে এই দু বছরের ভেতর। তাই তার কথার ভিন্ন অর্থ অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হতে হয় না তাকে।



বিছানার ওপর বসে আশ্রাবুল ফের তাকায় রুকিয়ার দিকে। হালকা পাতলা গড়নের এ মেয়েটি তুলনামূলক ভাবে মন্দ নয়। যতটা মন্দ তার ভাই মেরাজুল। খানিকটা বেশি স্বার্থপর বলেই মানুষ তাকে আড়ালে কখনো কখনো খবিস মেরাজ বলেও ডাকে। নয়তো রুকিয়া তার বিয়ে আর সংসার-ঘর-দোর নিয়ে যতটা ভেবেছে, উপায় হিসেবে নিজের বোনের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে সরাসরি। লোভ দেখিয়েছে ভালো যৌতুকেরও। কিন্তু মেরাজুল সে বিষয়ে টু শব্দটিও করেনি এ পর্যন্ত।



খাওয়া হয়ে গেলে রুকিয়া শূন্য হাড়ি-বাসন নিয়ে বাইরে বের হয়ে দরজার কাছে রাখা একটি মাটির কলস থেকে পানি নিয়ে সেগুলোকে কোনো রকম ধুয়ে ঘরে রাখতে বলে, আমার হইছে। তুমি মেলা কর!



আশ্রাবুল ঘর থেকে বের হতে হতে বলে, আমার কাছে কিন্তু বেশি ট্যাকা-টুকা নাই। তুমি কিছু না লইলে গাড়ি ভাড়া টান পড়তে পারে।



রুকিয়া ঘর থেকে বের হয়ে দরজাটা টেনে বাইরে দিয়ে আটকে দিতে দিতে কারো উদ্দেশ্যে প্রায় চেঁচিয়ে বলে, ঘরডা দেইখ্যেন গো চাচি! আমি সিদ্ধেশ্বরী যাইতাছি!



তারপর আশ্রাবুলের দিকে তাকিয়ে বলে, গাড়ি ভাড়া নিয়া তোমার মাথা নষ্ট করনের কাজ নাই। আমার কাছে আছে।



বেশ কিছু হাঁটা পথ। তারপর ফের মুড়ির টিন কথিত ছোট আর ধীর গতির বাসে চড়ে প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের একঘেয়ে যাত্রার পর আবারো গাঁয়ের পথ ধরে সিদ্ধেশ্বরী রুকিয়ার বাপের বাড়ি। এক বছরেরও কিছুটা বেশি সময় হয়ে গেছে সে এ গ্রামে আসবার প্রয়োজন পড়েনি। এরই মাঝে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। যেখানে আগে ধান ক্ষেত বা অন্যান্য ফসলের জমি ছিল তার অনেকটা জায়গা জুড়েই নতুন ঘরবাড়ি উঠেছে। সেগুলোর মাঝে পাকা বাড়িও দেখা যায় দুটো।



আশ্রাবুল পথ চলতে চলতে ভাবে যে, কত মানুষের হাতেই কত ভাবে অজস্র টাকা পয়সা চলে আসে। এমন কি মেরাজুলের মতো এক সময়ের অলস লোকও ঘরের পুরোনো টিন খুঁটি বদলের মতো সামর্থ্য অর্জন করে ফেলে অথচ দিনভর প্রাণান্ত শ্রমেও নিজের ভাগ্যের কোনো উন্নতি ঘটাতে পারলো না সে। একবার তার ইচ্ছে হয় কাঁচা পয়সার মালিকদের ঘরে ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করে যে, কী এমন ভাগ্য নিয়ে জন্ম নিয়েছে তারা অথবা কী এমন কাজ তারা করে, যে কারণে এক বছরের ভেতর ফসলের জমি ভরাট করে নতুন বাড়ি করে ফেলবার মতো অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে যায়? কিন্তু তার মনের জিজ্ঞাসা মনেই ঘুরপাক খায়, কাউকে আর জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠে না।



বাপের বাড়ি যতটাই এগিয়ে আসছিলো রুকিয়ার হাঁটবার গতির সঙ্গে তাল রাখতে না পেরে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছিলো আশ্রাবুল। কিছুটা দূর এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে পড়া দেবরের জন্য বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে থাকে সে। আশ্রাবুল তার সমান হলে ফের হাঁটতে আরম্ভ করে সে। কিন্তু আশ্রাবুলের ইচ্ছে হয় না শুধু শুধু হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেহের ঘাম ঝরিয়ে অস্বস্তি নিয়ে পথ চলতে। তাই সে বলে, তোমার বাপের বাড়ি চিন্যা আইতে পারমু, যাও তুমি।



হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে রুকিয়া কোঁচকানো দৃষ্টিতে বলে, পরে তো কইবা বাপের বাইত্যে ব্যাঙের মতন ফাল পাড়তে পাড়তে গেছি, তোমার দিক ফিরাও চাই নাই!



-কিছুই কমু না। তুমি যাও। জোরে হাঁটতে আমার ভালা লাগে না।



আশ্রাবুলের কথা শুনে কেমন একটা মুখ ভঙ্গি করে রুকিয়া দেখতে দেখতে সত্যিই তার বাপের বাড়ির সীমানায় চলে যায়। কিছুক্ষণের ভেতর অদৃশ্য হয়ে যায় বাড়ির ভেতর। কিন্তু তার ইচ্ছে হয় না রুকিয়ার বাপের বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে। তার চলার গতি যেমন ছিল তার চেয়ে আরো কম হয়ে যায় যেন পদক্ষেপের মাত্রা। তার দারিদ্র্য ক্লিষ্ট অবস্থা দেখেই একদিন রুকিয়া প্রস্তাব দিয়েছিল অদ্ভুত দর্শন চোখের বোন মিনোরাকে বিয়ে করে অবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্যে। কিন্তু তাই যদি করতে হবে তাহলে মিনোরাকেই কেন বিয়ে করতে হবে? আশপাশের গ্রামে কি আরো কুদর্শনা কেউ নেই যার বাপ আরো বেশি আর্থিক মূল্য পরিশোধ করবে তার উদ্দেশ্যে? রুকিয়ার প্রস্তাবের কথা নিশ্চয় মিনোরার কানেও গিয়ে থাকবে। আর তা ভেবেই যেন তার যাবতীয় অনিচ্ছাগুলো আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরে তার দু পা। কিন্তু ভাবতে ভাবতে অনেকখানি পথও সে এগিয়ে এসেছে। আর একটু এগিয়ে গেলেই তাদের বাড়ির উঠোন দেখতে পাবে। সেদিকে তাকিয়ে সে কিছু দেখে বা দেখে না। বা একবার এক পলকের জন্যে রুকিয়ার হলুদ ঝলকই যেন দেখতে পেয়েছিল বলে মনে হয়। তার পরপরই বিচিত্র রঙের শাড়ি পরনে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখে সে। চিনতে পারে না বলে, তার দিকে ভালো মতো দৃষ্টিও দেয় না। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুনতে পায়, বেয়াই কি আমাগো বাড়ির পথ ভুইল্যা গেছেন?



চমকে উঠে আশ্রাবুল মুখ তুললে দেখতে পায় কাজল টানা দুটি কৌতূহলী দৃষ্টি যেন তাকে ব্যাঙ্গ করছে। তখনই তার মনে পড়ে যায় সকালের দিকে মন্তাজের বাড়ি থেকে ফিরে আসবার পথে কাশেম ঘরামীর বাড়ির উঠোনে লাল শাড়ি আবৃত মেয়েটিকে আরেকবার দেখার ব্যাকুলতার কথা। কিন্তু এ কি তার সেই বুভুক্ষা মিটিয়ে দিতেই দৃষ্টিতে ব্যাঙ্গ ঝরিয়ে তাকে উপহাস করছে? সঙ্গে সঙ্গেই যেন তার ধ্যান ভঙ্গ ঘটে হাসির তরঙ্গে। আরে এ যে মিনোরা। এক বছরে কতটা বদল হয়ে গেছে তার। ঠিক যেন ফসলের জমি ভরাট করে নতুন বাড়ি তুলে ফেলবার মতোই আরেক অদ্ভুত ঘটনা। আশ্রাবুল সত্যি সত্যিই অবাক না হয়ে পারে না।



মিনোরা তার হাসি থামিয়ে বলে, বেয়াইরে কি হাত ধইরা বাইত্যে নেওন লাগবো?



-না না।



নিজের অজান্তেই যেন আঁতকে ওঠে আশ্রাবুল। মিনোরার পেছন পেছন এগিয়ে যেতে যেতে তার মনে হয় এক বছর কি খুব বেশি সময়? বার মাসের হিসেবে বা তিনশ পঁয়ষট্টি দিনের হিসেবে কতটা দীর্ঘ সে সময়? নাকি মেয়েরাই অতটা দ্রুত বদলে যায়? নিজের ভেতরে উথলে ওঠা জিজ্ঞাসাগুলোর কোনো জবাব হয়তো তার প্রত্যাশায় থাকে না। যে কারণে হঠাৎ করেই বলে ওঠে, মিনোরা ভালা আছস? কত্ত বদলাইয়া গেছস তুই!



আশ্রাবুলের কথা শুনে মিনোরা এক হাতে নিজের মুখ ঢাকে কেবল। হাতের আড়ালে সে হাসে কি না তা বুঝতে পারে না আশ্রাবুল।

(সমাপ্ত)



মন্তব্য ৫৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৪০

ঢাকাবাসী বলেছেন: হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে ঢাকাবাসীকে অনেক ধন্যবাদ।

২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৪৫

সুমন কর বলেছেন: অনেক সুন্দর লাগল। কাহিনী আর বলার ধরণটা বেশী ভাল হয়েছে।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:০৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন কর। ভালো থাকবেন সব সময়।

৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৭

মামুন রশিদ বলেছেন: দুর্দান্ত গল্প! গ্রামীন পরিবেশ আমাদের মনোজগতে এতটাই ক্ষীণ হয়ে এসেছে যে, গ্রাম আমাদের সাহিত্য থেকে হারিয়ে যাবার পথে । গ্রামের এই সহজ সরল মানুষ আশ্রাবুলের পাওয়া না পাওয়া চমৎকার ভাবে তুলে এনেছেন । গ্রামের আবহ আর চরিত্র অংকনের সরলতা দেখার মত । কিছু কিছু আন্চলিক শব্দের অর্থ না বুঝলেও বর্ণনার যাদুতে গল্প বুঝতে একটুও সমস্যা হয়নি ।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: কোন শব্দগুলো বোঝেন নাই, প্রাচীন শব্দ ভাউজ ছাড়া তো আর তেমন দুর্বোধ্য আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করি নাই। যাই হোক, অনেক শব্দ না বুঝলেও গল্পের রস আস্বাদন থেকে বঞ্চিত হন নাই জেনে ভালো লেগেছে।

গ্রামের চরিত্র আঁকতে হলে তার সঙ্গে একটা নিবিড় সম্পর্ক থাকতে হয়, আর তা না হলে বিগত সময়ের গ্রামীন স্মৃতিই ভরসা। তা ছাড়া গ্রামীন আবহটা আমার কাছে আপন মনে হয় বেশি।

ভাল থাকুন সব সময়।

৪| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৮

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আশ্রাফুলকে কেন্দ্র করেই লেখাটি ।তাকে কেন্দ্র করে ডালপালা ছড়িয়েছে। বর্ণণা অত্যন্ত ভাল হয়েছে। কিছুটা বাস্তবতার ছোঁয়া পেলাম। বর্ণাণাগুণে তা মুগ্ধ করেছে আমাকে । আঞ্চলিক শব্দের কয়েকটি বুঝিনি। শুরুথেকে শেষ পর্যন্ত চমৎকার গল্প বলা যায় । :)

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ সেলিম আনোয়ার। শ্যামল জাহির দুটোর অর্থ বলে দিয়েছেন। অনেকে 'মোরতা' বোঝেন না। কোনো কোনো এলাকায় একে মোরতাগ বলে। সোজা কথায় শীতল পাটি বুনতে মোরতা প্রয়োজন হয়। শনের চাল বানতেও বেতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার চলে।

৫| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৬

নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: গল্প পড়ার সময় যদি কোন গল্প ভালো লাগে তাহলে কি এক অজানা কারণে আমার চোখে পানি জমে যায় আর তার শেষ হয় গল্পটি শেষ হওয়ার মাধ্যমে। আপনার লেখা গল্পটির ক্ষেত্রে আমার একই অনুভূতি। অসাধারণ লিখেছেন ভাই। শেষ পর্যন্ত পড়তে বাধ্য হইছি। আশা করি এরকম অনেক অনেক গল্প আমাদেরকে উপহার দিবেন। আপনার প্রতি শুভ কামনা রইলো।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:০০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ সোহাগ। আমি চেষ্টা করি পাঠককে ভালো গল্প দিতে। সঙ্গে থাকুন অবশ্যই ভালো গল্প পাবেন।

৬| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৮

এহসান সাবির বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন ভাইয়া।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ এহসান সাবির।

৭| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০১

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: বর্ণনা ভাল লেগেছে । উপমা গুলো ও জুতসই । সব মিলিয়ে ভাল লাগা আছে ।

ভাল থাকুন জুলিয়ান দা ।

শুভকামনা ।




০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভ কামনা আপনার জন্যেও।

৮| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১০

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: দারুন একটা লেখা!! মোবাইল দিয়া কমেন্টাইলাম। :-)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ, কা_ভা। মোবাইল থেকে কমেন্ট করতে পারলেও তো মনে করি ভালো। অনেক সময় পিসি থেকেও কমেন্ট করা সম্ভব হয় না।

৯| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৮

ইখতামিন বলেছেন:
গল্প অনেক ভালো লেগেছে
পড়তে অনেক সময়ও লেগেছে

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ ইখতামিন। তবে যে সব গল্প পড়ে মুগ্ধ হওয়ার মতন উপাদান বেশি পেয়েছি সে সবের আকৃতি মোটামুটি দীর্ঘ। ছোট বলতে সব ছোটই বেশির ভাগই ছোট। তেমন গল্পের ক্ষেত্রেও। ভালো থাকুন।

১০| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৪

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: ভালো লাগোলো !

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ নাসিফ। সেই সঙ্গে স্বাগতম আমার পোস্টে।

১১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৯

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: সুন্দর একটা গল্প । কাব্য কাব্য ধাঁচটা মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো । ভালো লাগলো ! শুভেচ্ছা জানবেন ।

১২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২০

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: সুন্দর একটা গল্প । গ্রাম্য ধাঁচটা মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো । অনেকদিন পর নাগরিক গল্পের বাহরে একটা গল্প পড়লাম । ভালো লাগলো ! ভাউজ কোন অঞ্চলের ভাষা?? শুভেচ্ছা জানবেন ।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

ভাউজ শব্দটা আমি কুমিল্লার কিছু কিছু এলাকায় শুনেছি। বিশেষ করে প্রাচীনদের অনেকেই এখনো বলেন।

শুভকামনা আপনার জন্যেও।

১৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১২

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: অনেক দিন গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের কিছু পড়া হয় না , আপনি লিখেছেন তাই পড়লাম , ভালো লাগলো!

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ অভি।
গ্রামীন প্রেক্ষাপটের গল্প আজকাল খুব বেশি লেখা হয় না, আর হলেও সেই আবহটা তেমন করে ফুটে ওঠে না বলা যায়।

১৪| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪২

সুপান্থ সুরাহী বলেছেন:
মনে হচ্ছিল আমার গায়েরই ঘটনাটা।

গল্পের ভেতর হারিয়ে যাওয়ার মত একটা গল্প...

ধন্যবাদ জুলিয়ান ভাই।

সময় করে আবার আসবো...

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৭

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ সুপান্থ। আবার এলে আর যাই হোক খুব বেশি মন্দ-সন্দ বইলেন না। :P

১৫| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২০

খেয়া ঘাট বলেছেন: মামুন রশিদ বলেছেন: দুর্দান্ত গল্প! গ্রামীন পরিবেশ আমাদের মনোজগতে এতটাই ক্ষীণ হয়ে এসেছে যে, গ্রাম আমাদের সাহিত্য থেকে হারিয়ে যাবার পথে । গ্রামের এই সহজ সরল মানুষ আশ্রাবুলের পাওয়া না পাওয়া চমৎকার ভাবে তুলে এনেছেন । গ্রামের আবহ আর চরিত্র অংকনের সরলতা দেখার মত । কিছু কিছু আন্চলিক শব্দের অর্থ না বুঝলেও বর্ণনার যাদুতে গল্প বুঝতে একটুও সমস্যা হয়নি ।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ খেয়া ঘাট। ভালো থাকুন সব সময়।

১৬| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৩

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
শহুরে মানুশগুলা শহর জীবনে এতটাই ব্যাস্ত হয়ে গেছে যে গ্রামের কথা ভুলেই গেছে। গ্রামীণ পটভূমিকায় চমৎকার একটা গল্প পড়লাম। তবে কেন যেন মনে হল শেষটা তেমনভাবে কোথাও গেল না। পারফেক্ট ছোট গল্প হয়ত এমনই হয়, শেষ হইয়াও হইল না শেষ।

মাঝে মাঝে চিন্তা করি গ্রামের পটভুমিতে লিখব, হয়ে ওঠে না।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ নাজিম।
গ্রাম কিন্তু এখন আর সেই গ্রামের পর্যায়ে নাই। গ্রামের মানুষগুলোও অনেকটা বদলে গেছে। এক সময় গ্রামে পাশের গ্রামে বা গ্রামের আত্মীয়বাড়ী গেলে শুরুতে চুড়া-মুড়ি সঙ্গে গুড় বা বাতাসা দিতো। কিন্তু এখন ব্যাপারটা যেন ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।

লেখেন গ্রামের পটভূমিতে ভাল-মন্দ নিয়ে মাথা ঘামানোর কাজ নেই। গ্রাম কিন্তু খুব শীঘ্রই আর গ্রাম থাকবে না।

আরব দেশে গ্রাম নাই। সবই শহর। পাঁচ-সাতটা বাড়ি হলেই শহর। গ্রামের জায়গাটা আলাদা হয়ে গেছে কেবল চাষ আর জমি প্রসঙ্গে। সেখানে কামলা আর রাখাল ছাড়া অন্য কেউ থাকে না।

১৭| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:১৩

শ্যামল জাহির বলেছেন: মোরতা ঝোপে কাজটা সেরে দিঘীর জলে যে কারবারটা করছে আশ্রাবুদ্দিন, ভাগ্যিস কেউ দেখে নাই! আর কোন রকম যদি ক্যামেরাবন্দী হইতো সে দৃশ্য তাইলেই বিয়ের ১৩টা বাজতো। =p~

ভাউজ(ভাবি), চালাইয়া(জলদি) আঞ্চলিক শব্দ গুলোর সঙ্গে বেশ পরিচিত ছিলাম এক সময়। মোরতা ঝোপের সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক শব্দ গুলিও হারিয়ে যাচ্ছে, দিন বদলের পালায়।

অভাবে আশ্রাবুদ্দিনদের স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে যায়! অবশেষে বাধ্য হয়েই অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় মেনে নিতে হয়।
বাস্তবতার উপর গল্প চরম লাগলো।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: বান্দরের হাতে খুন্তি দিতে নাই।

ইউটিউবে এমন একটা দৃশ্য দেখেছিলাম ভারতের। কয়েক মানব-বান্দর তাদের বন্ধুর এমন খোলা নিতম্বের ভিডিও করেছে।

গ্রাম যতই আধুনিক হচ্ছে ততই হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন শব্দগুলো। যাদের বয়স ৫০ এর নিচে তাদের কেউ হয়তো ভাউজ শব্দটা ব্যবহার করে না এখন।

মানুষকে বাধ্য হয়ে অনেক কিছুই করতে হয়ম ঠেকায় পড়লে বাঘের ঘাস খাওয়ার মতন করুণ অবস্থার চেয়েও আরো বেশি করুণ মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণীর হয় না।

ভালো থাকুন সব সময়।

১৮| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩

সোমহেপি বলেছেন: অনেক ভালো লাগা সিদ্দিক ভাই । সুন্দর আর প্রাণবন্ত। মেয়ে মানুষ এমনই কলাগাছের মত বড় অয়। ক্লাশ ৫ এ পড়নের সময় এক মাইয়ারে দেইখা একটু ভাব লাগানের চেষ্টা করছিলাম। মাইয়া ছোড আছিল তাই কিচ্ছু বুঝে নাই। মাইয়াডা ছিলো আমার বিয়াইন মানে ভাবির বোন। এর কয় বছর পর ভাবি সব কি মনে কইরা আমারে তার বোনের ঘরে নিয়া দুজনরে একখানে থুইয়া ভাইগা যায়। আমি তো মাইয়ারে দেইখা শরমে মরি মরি অবস্থা। বিয়াইনও দেহি জবর পাইকা গ্যাছে। আমারে যেনো কিসের ইশারা করে করে। আর তো মরি মরি। ছোড কালের হেই বিয়াইন আর নাই ।ইয়া বড় শইল অইছে । আর ইয়া বড় বড় ....। হেই তুলনায় আমি কিন্ত্ত অনেক ছোড ই রইলাম।

অনেক বালা লাগলো সিদ্দিকী ভাই।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: আসলে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু। তেমনই আপনার আর আশ্রাবুদ্দিনের দৃষ্টির পার্থক্যটাও। তা ছাড়া মেয়েদের গ্রোথ ছেলেদের তুলনায় বেশি প্রাকৃতিক ভাবেই। আমার বয়সের নারীরা অনেকেই রিয়েল নানি দাদি হইয়া গেছে।

১৯| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৭

একজন আরমান বলেছেন:
সুন্দর বর্ণনা !

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ আরমান ভালো থাকুন সব সময়।

২০| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৫৮

কয়েস সামী বলেছেন: বলার ধরন ভালো লেগেছে।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ কয়েস সামী। ভালো থাকুন সব সময়।

২১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৪

মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: অনেকক্ষণ ধরে পাঠককে ধরে রাখার মত গল্প।

শুভকামনা নিরন্তর।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ খান। পাঠককে ধরে রাখতে পারাটাই মনে করি কোনো লেখার বড় গুণ।

২২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৭

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:




শুধু বলব দুর্দান্ত একটা লেখা।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৫

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ কান্ডারি। ভালো থাকুন সব সময়।

২৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৫

রাবেয়া রব্বানি বলেছেন: এক বছর অনেক আসলেই। গল্প বরাবরের মতো।গ্রাম্য যুবক আর ভাবী আর দেবরের ক্যামেস্ট্রি রিপিটেশন কিছুটা আপনার লেখায়। একি ৃশ্য একবার দুবার নয় রেগুলার পাঠক হিসাবে অনেকবার পড়েছি লাগে। শুভকামনা ভাইজান।

২৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৮

রাবেয়া রব্বানি বলেছেন: একটা কথা বলা হয়নি আমার মনে হয়েছে এক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় মনারার পাল্টে যাওয়া নয় চরিত্রের এক বছরে ভেতরের বুভুক্ষুতা চরমে পৌছানো এবং মনোরা বর্তমানে সুন্দর তার প্রয়োজনের ৃষ্টিতে বেশি যতটা না পাটে যাওয়ায় ।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৫

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: লেখক বলেছেন: ঠিক বলেছেন, দেবর ভাবির রসায়ন আমার লেখায় আছে। কিন্তু তা কি ঠিক এমনই? আমার মনে হয় নিগাবান কয়েকবার পড়ে ফেলেছেন, যে কারণে এ গল্পের দেবর ভাবি ব্যাপারটা আপনার চোখে পড়েছে। তেমন বেয়াই-বেয়ান ব্যাপারগুলোও আমার আরো লেখায় এসেছে। রিপিটেশন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন, তবে আমি কোনো লেখায় চরিত্রের বদলে শব্দের রিপিটেশনের ব্যাপারটা ভাল নয় বলে স্বীকার করতে চাই।

গুরুস্থানীয় লেখকরা সবই লিখে ফেলেছেন বলে কোথাও কোথাও লেখা দেখি বা কারো কারো কথায় জানতে পাই। সে হিসেবে আর লেখালেখি চলার কথা নয়। কিন্তু তারপরও লেখা হচ্ছে, এবং ব্যাপক হারেই হচ্ছে। তবে কোনো লেখকের এমন দিক নিয়ে মাথা ঘামানোটাই মনে করি লেখালেখির ক্ষেত্রে অ-মঙ্গলজনক। এমন শ্রেণীভেদ বা নিয়মের নিগড়ে আটকা পড়ে গেলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবটা আর আসবে না লেখায়। সাবলীলতার বদলে নির্মাণ কৌশলটাই পাঠকের চোখে পড়বে- গল্প নয়। আবার এসব ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে ভাবতে গিয়ে লেখকের লেখালেখিতেও বাধার সৃষ্টি হতে পারে। দৈনন্দিন জীবনে একই ব্যাপার বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে যার অনেক কিছুই মানুষের পক্ষে উপেক্ষা করা অসম্ভব। কাজেই রিপিটেশন (চরিত্রের বা ঘটনার) কোনো ত্রুটি তাও মনে করি না।

সুতরাং আমি বরং এভাবেই দেখি যে, ম্যাক্সিম গোর্কি মা লিখেছেন, আমাদের আনিসুল হকও মা লিখেছেন। আবার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন জননী সেই একই শিরোনামে আমাদের শওকত ওসমান লিখেছেন জননী।

আশ্রাবুলের দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো পালটায় নি বা মিনোরারও খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি, কিন্তু ঘরামীর বাড়ির উঠোনের লাল শাড়ি তাকে আচ্ছন্ন করে, আবার ব্যাপারী বাড়ির মেয়েটিও তাকে মুগ্ধ করে, বলা যেতে পারে মিনোরার প্রতি তার মনোভাবের কোনো রকম পরিবর্তন না ঘটেও এমন আচরণ অস্বাভাবিক নয়। যেহেতু সে কু-রূপা বা সু-রূপার মূল্যায়ন করতে পারে তার বুভুক্ষা চরমে পৌঁছুবার সুযোগটা হয়তো বেশি থাকে না।

ভালো থাকুন আর সাবলীল লেখা উপহার দিন আমাদের।

২৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৮

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: বর্ণনা শৈলী সত্যিই চমৎকার! ভাল লাগলো লেখাটি।


ধন্যবাদ। ভাল থাববেন।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৫

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ দেশ প্রেমিক বাঙালী। ভালো থাকুন সব সময়।

২৬| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৭

রাবেয়া রব্বানি বলেছেন: কাজেই রিপিটেশন (চরিত্রের বা ঘটনার) কোনো ত্রুটি তাও মনে করি না।
কথাটা ভালো লাগলো ভাইজান।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: মনের সুখে লিখতে থাকেন। অকাজের বিষয় নিয়া ভাইব্যা কাজ নাই। যারা এইসব পণ্ডিতি বিষয় দিয়া আমাদের মাথা আউলাইতে চায় তাদের বেশির ভাগ লোকজনেরই চিরুনি কাজে লাগে না।

২৭| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৭

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
গল্প দীর্ঘ দেখলেই ভয় লাগে।
কিন্তু আপনার গল্প ধরে রাখলো সময়টা।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪২

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ কবি। ভালো থাইকেন।

২৮| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪১

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: পড়তে সময় লাগলো তবে বিরক্তি আসে নি মোটেই, ঝরঝরে লেখার প্রশংসা জানাতেই হয়!


++++++++++++++++++++++++++++++++++


শত শুভকামনা রইলো জুলিয়ান ভাই।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভ কামনা আপনার জন্যেও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.